এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ল্যাটেরাইট মাটি ও সিরোজেম মাটি বলতে কী বোঝো? ল্যাটেরাইট ও সিরোজেম মাটির পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ল্যাটেরাইট মাটি ও সিরোজেম মাটি বলতে কী বোঝো?
ল্যাটেরাইট মাটি –
ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অংশে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সিলিকা জাতীয় পদার্থ অপসৃত হলে এবং লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড উপরিভাগে অবশিষ্ট থাকলে এই ধরনের লাল বর্ণের মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য –
- আর্দ্র ল্যাটেরাইট মাটি থকথকে হলেও শুষ্কমাটি শক্ত ইটের মতো হয়।
- মাটি লাল, বাদামি বা হলদে বাদামি রঙের হয়।
- মাটিতে অ্যালুমিনিয়াম, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, অক্সাইড বেশি পরিমাণে থাকে।
- জৈব অংশ কম থাকায় মাটি অনুর্বর হয় এবং কৃষিকার্য ভালো হয় না।
- সার প্রয়োগ ও পর্যাপ্ত সেচকার্যের দ্বারা চা, কফি, রবার, বাদাম, তৈলবীজ প্রভৃতির চাষ হয়।
সিরোজেম মাটি –
ভারতের মোট আয়তনের প্রায় 4.5% (প্রায় 1.50 লক্ষ বর্গ কিমি) অঞ্চল জুড়ে মরু মৃত্তিকা অবস্থান করছে। এদেশের পশ্চিম রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা দক্ষিণাংশ এবং গুজরাটের কচ্ছের রান অঞ্চলে মরু মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়। স্বল্প বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রভাবে বেলেপাথর জাতীয় শিলাস্তর থেকে মরু মৃত্তিকা বা সিরোজেম মাটি সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য –
- স্বল্প বৃষ্টিপাত ও অধিক বাষ্পীভবন যুক্ত অঞ্চলে অধিক বাষ্পীভবনের কারণে কৈশিক প্রক্রিয়ায় ভূ-অভ্যন্তরের লবণ উপরে উঠে এসে মৃত্তিকা স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এই মৃত্তিকা লবণাক্ত হয়।
- এই মৃত্তিকা বাদামি হলুদ বা হালকা হলুদ বর্ণের হয়।
- বালির ভাগ বেশি বলে এই মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতা কম।
- মরু মৃত্তিকা অধ্যুষিত অঞ্চল উদ্ভিদ বিরল বলে এই মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম থাকে। তাই এই মৃত্তিকা অনুর্বর।
ল্যাটেরাইট ও সিরোজেম মাটির পার্থক্য লেখো।
ল্যাটেরাইট ও সিরোজেম মাটির মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | ল্যাটেরাইট মাটি | সিরোজেম মাটি |
বর্ণ | ল্যাটেরাইট মাটি লাল বর্ণের হয়। | সিরোজেম মাটি হালকা ধূসর বর্ণের হয়। |
উৎস | অধিক উষ্ণ আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ুতে এই মাটি দেখা যায়। | উষ্ণ-শুষ্ক মরু জলবায়ুতে সিরোজেম মাটি সৃষ্টি হয়। |
উপাদান | লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড সমৃদ্ধ মাটি। | ক্ষার ও লবণ সমৃদ্ধ মাটি। |
শ্রেণি | এই মাটি অম্লধর্মী ও পেডালফার শ্রেণিভুক্ত। | এই মাটি ক্ষারধর্মী ও পেডোক্যাল শ্রেণিভুক্ত। |
গ্রথন | খনিজ পদার্থ ও জৈবপদার্থহীন এই মাটি কাঁকড় দিয়ে গঠিত। | জৈব পদার্থহীন এই মাটি ছিদ্র ও ছোটোদানাযুক্ত হয়। |
উৎপন্ন ফসল | জলসেচের সাহায্যে মিলেট, বাদাম, তৈলবীজ চাষ হয়। | জলসেচের সাহায্যে মিলেট জাতীয় শস্য চাষ হয়। |
বিস্তৃতি | ছোটোনাগপুর ও মেঘালয় মালভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। | রাজস্থানের মরু অঞ্চল ও গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ল্যাটেরাইট মাটি কী?
ল্যাটেরাইট মাটি হল লাল বা হলদে-বাদামি রঙের মাটি, যা প্রধানত উচ্চ বৃষ্টিপাতযুক্ত ক্রান্তীয় অঞ্চলে (যেমন – ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক) গঠিত হয়। সিলিকা অপসৃত হয়ে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড জমা হলে এই মাটি তৈরি হয়।
সিরোজেম মাটি কী?
সিরোজেম মাটি হল মরু অঞ্চলের বালিময় ও লবণাক্ত মাটি, যা রাজস্থান, গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে দেখা যায়। স্বল্প বৃষ্টিপাত ও উচ্চ বাষ্পীভবনের কারণে এই মাটিতে লবণ ও ক্ষার বেশি থাকে।
ল্যাটেরাইট মাটি অনুর্বর কেন?
ল্যাটেরাইট মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম এবং লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের আধিক্য থাকায় এটি অনুর্বর। তবে সঠিক সেচ ও সারের মাধ্যমে কিছু ফসল চাষ করা যায়।
সিরোজেম মাটিতে লবণাক্ততা বেশি কেন?
শুষ্ক অঞ্চলে বাষ্পীভবনের হার বেশি হওয়ায় ভূগর্ভস্থ লবণ কৈশিক প্রক্রিয়ায় মাটির উপরিভাগে জমা হয়, ফলে সিরোজেম মাটি লবণাক্ত হয়।
কোন মাটি কৃষির জন্য বেশি উপযোগী?
উভয় মাটিই প্রাকৃতিকভাবে অনুর্বর, তবে ল্যাটেরাইট মাটিতে সেচ ও সারের মাধ্যমে চা, কফি, রাবার চাষ সম্ভব, আর সিরোজেম মাটিতে মিলেট জাতীয় শস্য চাষ করা যায়।
ল্যাটেরাইট মাটির রং লাল কেন?
লৌহ অক্সাইড (হেমাটাইট) এর উপস্থিতির কারণে ল্যাটেরাইট মাটির রং লাল বা বাদামি হয়।
সিরোজেম মাটি কোথায় দেখা যায়?
প্রধানত রাজস্থানের থর মরুভূমি, গুজরাটের কচ্ছ ও হরিয়ানার কিছু অংশে সিরোজেম মাটি দেখা যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ল্যাটেরাইট মাটি ও সিরোজেম মাটি বলতে কী বোঝো? ল্যাটেরাইট ও সিরোজেম মাটির পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন