কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বলতে কী বোঝো? কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে পার্থক্য

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বলতে কী বোঝো? কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বলতে কী বোঝো
কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বলতে কী বোঝো
Contents Show

কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বলতে কী বোঝো?

কৃষ্ণ মৃত্তিকা –

অবস্থান – দাক্ষিণাত্য মালভূমির প্রায় অর্ধেক অংশই কৃষ্ণ মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত। ভারতের প্রায় 5.46 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় 17% স্থান জুড়ে এই মাটি দেখা যায়। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশ, কর্নাটকের উত্তরাংশ, তামিলনাড়ুর উত্তরাংশ, গুজরাটের দক্ষিণ পূর্বাংশ, রাজস্থানের দক্ষিণাংশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে এই মাটি দেখা যায়। এই মাটিকে স্থানীয় ভাষায় রেগুর মাটি বলা হয়।

উৎপত্তি – স্বল্প বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে (50 থেকে 60 সেন্টিমিটার) প্রধানত ব্যাসল্ট জাতীয় ক্ষারকীয় আগ্নেয় শিলার থেকে এই মাটির সৃষ্টি হয়।

উপাদান – এই মাটির প্রধান উপাদান হলো কাদা। কেওলিনাইট ও মন্টমরিলোনাইট প্রকৃতির কর্দম কণা এই মাটির প্রধান উপাদান। এই মাটিতে বালির পরিমাণ কম থাকে।

বৈশিষ্ট্য –

  • এই মাটিতে টাইটেনিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই মাটির রঙ কালো।
  • এই মাটি মোটামুটি সূক্ষ্ম গ্রথনের হয়ে থাকে।
  • এই মাটিতে বালির পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং কাদার ভাগ (50-75%) বেশি থাকায় এই মাটির জল ধারণ ক্ষমতা বেশি হয়।
  • এই মাটি প্রধানত মন্টমরিলোনাইট, নাইট্রোজেন, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম খনিজ সমৃদ্ধ হয়। তবে পটাশ, ফসফেট, নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম। এই মাটি অত্যন্ত উর্বর।

উৎপাদিত শস্য – কার্পাস এই মাটিতে সব থেকে বেশি ভালো জন্মায় তাই এই মৃত্তিকার নাম ‘কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা’। এছাড়া ভুট্টা, মিলেট, তামাক, আখ, তৈলবীজ, ডাল, পিঁয়াজ, আঙ্গুর চাষ হয়।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা –

অবস্থান – হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল, পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চল, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড, তামিলনাড়ু, পশ্চিমঘাট পর্বত ও মেঘালয় মালভূমির কিছু অংশে এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশে এই মাটি দেখা যায়। ভারতের প্রায় 2.5 লক্ষ বর্গ কিমি বা 8% স্থান জুড়ে এই মাটি অবস্থান করে।

উৎপত্তি – ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে সৃষ্টি হয়। এই মাটি প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে প্রাচীন শিলা আবহবিকারের ফলে উৎপন্ন হয়। প্রাচীন শিলাস্তর থেকে সিলিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ বেড়িয়ে আসার পর পড়ে থাকে লোহা অ্যালুমিনিয়ামের বিভিন্ন অক্সাইড যৌগ। এরাই একত্রিত হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি করেছে।

উপাদান – এই মাটিতে অধিক পরিমাণে অক্সাইড ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড থাকে এবং জৈব পদার্থ ও সিলিকার পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে। এই মাটির কাদার কণাগুলি কেওলিনাইট শ্রেণীর হয়।

বৈশিষ্ট্য –

  • এই মাটির রং লাল বাদামী, বাদামী বা হলদে বাদামি হয়ে থাকে।
  • এতে চুন, পটাশ, ফসফরাস ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম থাকায় এই মাটি অনুর্বর হয়ে থাকে।
  • এই মাটিতে লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, অক্সাইড, বক্সাইট ও কোয়ার্টজ এর উপস্থিতি দেখা যায়।
  • এই মাটি আম্লিক প্রকৃতির হয়ে থাকে এর pH এর মান 5.5 এর কম হয়।

উৎপাদিত শস্য – স্বাভাবিকভাবে এই মাটি অনুর্বর হওয়ায় জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে চা-কফি, রাবার, বাদাম প্রভৃতির চাষ করা হয়।

কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে পার্থক্য লেখো।

কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে পার্থক্য –

বিষয়কৃষ্ণ মৃত্তিকাল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
উপাদানটাইটানিয়াম অক্সাইড ও ক্যালশিয়াম অক্সাইড হল এর মূল উপাদান।অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, লৌহ অক্সাইড হল এর মূল উপাদান।
স্থানীয় নামএর স্থানীয় নাম রেগুর মাটি।এর স্থানীয় নাম মোরাম।
জনক শিলাব্যাসল্ট জাতীয় উপপাতালিক আগ্নেয় শিলা হল এর জনক শিলা।গ্রানাইট জাতীয় পাতালিক আগ্নেয় শিলা হল এই মাটির জনক শিলা।
বর্ণ বা রংএই মাটির রং কালো।এই মাটির রং লাল বা বাদামি।
গ্রথনসূক্ষ্ম দানাগুলি ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে মাটিতে অবস্থান করে।কাঁকর কণাগুলি বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে।
জলধারণ ক্ষমতাজলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি।জলধারণ ক্ষমতা অনেক কম।
উর্বরতাএই মাটি বেশ উর্বর প্রকৃতির হয়।এই মাটি বেশ অনুর্বর হয়।
উৎপন্ন ফসলকার্পাস, আখ, চিনাবাদাম প্রভৃতি চাষ হয়।জলসেচের মাধ্যমে মিলেট, কাজুবাদাম, তৈলবীজ চাষ হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

কৃষ্ণ মৃত্তিকা কোথায় পাওয়া যায়?

কৃষ্ণ মৃত্তিকা প্রধানত দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলে দেখা যায়, বিশেষত মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে। এটি ভারতের প্রায় 5.46 লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

কৃষ্ণ মৃত্তিকার রং কালো হয় কেন?

এই মাটিতে টাইটানিয়াম অক্সাইড ও লৌহ অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকায় এর রং কালো দেখায়।

কৃষ্ণ মৃত্তিকার স্থানীয় নাম কী?

কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে স্থানীয় ভাষায় “রেগুর মাটি” বলা হয়।

কৃষ্ণ মৃত্তিকা কী ধরনের শস্য চাষের জন্য উপযোগী?

এই মাটি কার্পাস (তুলা) চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, তাই একে “কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা” ও বলা হয়। এছাড়া ভুট্টা, আখ, তামাক, মিলেট, পিঁয়াজ, ডাল ও তৈলবীজ চাষ হয়।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা কোথায় পাওয়া যায়?

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা প্রধানত পশ্চিমঘাট পর্বত, পূর্বঘাট পর্বত, মেঘালয় মালভূমি, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে দেখা যায়।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার রং লাল বা বাদামি হয় কেন?

এই মাটিতে লৌহ অক্সাইড (Fe₂O₃) ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O₃) বেশি থাকায় এর রং লাল বা বাদামি হয়।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অনুর্বর কেন?

এই মাটিতে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশের পরিমাণ কম এবং এটি অম্লীয় প্রকৃতির (pH < 5.5) হওয়ায় এটি স্বাভাবিকভাবে অনুর্বর।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় কী ধরনের ফসল চাষ করা হয়?

জলসেচ ও সারের সাহায্যে এখানে চা, কফি, রাবার, কাজুবাদাম, মিলেট ও তৈলবীজ চাষ করা হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বলতে কী বোঝো? কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

কৃষি বনসৃজন সম্পর্কে টীকা লেখো

কৃষি বনসৃজন সম্পর্কে টীকা লেখো।

গ্রিনহাউস গ্যাস কাকে বলে? কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখো। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির বিভিন্ন উৎসগুলি লেখো।

গ্রিনহাউস গ্যাস কাকে বলে? কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম ও উৎসগুলি লেখো।

কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বোঝো

কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বোঝো? ভারতে কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের পার্থক্য

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কৃষি বনসৃজন সম্পর্কে টীকা লেখো।

ওজোন গহ্বর কাকে বলে? কী কারণে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়?

ওজোন স্তর কাকে বলে? ওজোন স্তরের সৃষ্টি হয় কীভাবে?

গ্রিনহাউস গ্যাস কাকে বলে? কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম ও উৎসগুলি লেখো।

কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বোঝো? ভারতে কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের পার্থক্য