এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় কৃষির সমস্যার সমাধানগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় কৃষির সমস্যার সমাধানগুলি আলোচনা করো।
ভারতীয় কৃষিতে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন –
সমবায় পদ্ধতিতে কৃষিকাজ –
বর্তমান দেশে সমবায় কৃষি পদ্ধতিতে চাষ করলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমির একত্রীকরণ এবং উৎকৃষ্ট বীজ ও সার সংগ্রহে সুবিধা হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে চাষীদের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি ঘটবে।
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ –
বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও সরকারের বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণের ফলে ভারতের হেক্টর প্রতি ফসলের উৎপাদন সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার –
কৃষিকাজে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। এজন্য জাতীয় বীজ নিগম (National Seed Corporation) স্থাপিত হয়েছে।
রাসায়নিক সারের প্রয়োগ –
উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন, পটাশ প্রভৃতি সার প্রয়োগ করা হচ্ছে। রাসায়নিক সার উৎপাদনে অগ্রণী সংস্থাগুলি হল – Hindustan Fertilizer Corporation এবং Fertilizer Corporation of India Ltd.।
জলসেচের প্রসার –
জলসেচ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ জলসেচ ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ভূমিক্ষয় রোধ –
ভূমিক্ষয় রোধ করতে সরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ এবং অত্যধিক পশুচারণ নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।
কৃষি-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান –
কৃষির উন্নতির জন্য বর্তমানে ভারতের প্রতিটি রাজ্যে একটি করে এবং মহারাষ্ট্রে ও উত্তরপ্রদেশে একাধিক কৃষি মহাবিদ্যালয়, 393টি কৃষি-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে।
কৃষিঋণ প্রদান –
কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে NABARD (National Bank for Agricultural and Rural Development) -এর পক্ষ থেকে ঋণদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC) -এর প্রচলন করা হয়েছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতীয় কৃষির প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?
ভারতীয় কৃষির প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে —
1. জমির খণ্ডকরণ ও ক্ষুদ্র কৃষিজ holdings।
2. অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও জলসেচের অভাব।
3. অপ্রচলিত কৃষি পদ্ধতি।
4. মাটির উর্বরতা হ্রাস ও ভূমিক্ষয়।
5. কৃষিঋণের অভাব ও ঋণগ্রস্ততা।
6. ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া।
7. কৃষি বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতা।
8. প্রাকৃতিক দুর্যোগ (খরা, বন্যা, পোকামাকড়ের আক্রমণ)।
সমবায় কৃষি পদ্ধতি কীভাবে সমস্যা সমাধান করে?
সমবায় কৃষি পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র কৃষকরা একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে চাষাবাদ করে, যা নিম্নলিখিত সুবিধা দেয় —
1. জমির একত্রীকরণ করে বড় আকারে চাষ।
2. উন্নত বীজ, সার ও যন্ত্রপাতি কেনার সামর্থ্য বৃদ্ধি।
3. উৎপাদন ব্যয় কমানো ও বাজারজাতকরণে সুবিধা।
4. সরকারি সহায়তা ও ঋণ পাওয়া সহজ হয়।
উচ্চফলনশীল বীজ (HYV) ব্যবহারের সুবিধা কী?
উচ্চফলনশীল বীজ (HYV – High Yielding Variety) ব্যবহারের সুবিধাগুলি হলো —
1. ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে (যেমন – সবুজ বিপ্লব)।
2. রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী জাতের বীজ।
3. কম সময়ে বেশি ফলন।
4. জাতীয় বীজ নিগম (NSC) ও ICAR -এর মাধ্যমে উন্নত বীজ সরবরাহ।
জলসেচের প্রসারে ভারত সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলি হলো —
1. বহুমুখী নদী পরিকল্পনা (যেমন – ভাকরা নাঙ্গাল, দামোদর ভ্যালি)।
2. ড্রিপ ও স্প্রিংকলার সেচ পদ্ধতির প্রচলন।
3. জল সংরক্ষণ (বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, কূপ খনন)।
4. PMKSY (প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চি যোজনা) চালু করা।
ভূমিক্ষয় রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
ভূমিক্ষয় রোধের উপায়গুলি হলো —
1. বৃক্ষরোপণ (সামাজিক বনায়ন, বনসংরক্ষণ)।
2. সোপান চাষ (পাহাড়ি অঞ্চলে)।
3. অত্যধিক পশুচারণ নিষিদ্ধকরণ।
4. জৈব সার ও ফসল আবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ।
ভারতের কৃষি শিক্ষার গুরুত্ব কী?
কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (যেমন – ICAR, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) নিম্নলিখিতভাবে সাহায্য করে —
1. আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি শেখানো।
2. কৃষক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ।
3. টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচার।
ভারত সরকারের কৃষি-সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নাম বলুন।
ভারত সরকারের কৃষি-সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলো –
1. PM-KISAN (কৃষকদের আর্থিক সহায়তা)।
2. e-NAM (জাতীয় কৃষি বাজার)।
3. মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড যোজনা।
4. পরম্পরা কৃষি বিকাশ যোজনা (PKVY)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় কৃষির সমস্যার সমাধানগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন