প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে? প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে? প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে? প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে? প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে?

প্রচলিত শক্তির উৎস –

যেসব উৎস থেকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক হারে শক্তি উৎপাদিত হয়ে আসছে তাদের প্রচলিত শক্তির উৎস বলে। প্রচলিত শক্তির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি, জলবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ প্রভৃতি।

অপ্রচলিত শক্তির উৎস –

যেসব শক্তির উৎসের ব্যবহার এখনো পর্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রচলিত নয় বা যেসব উৎস থেকে কম শক্তি আহরণ করা হয় তাদের অপ্রচলিত শক্তির উৎস বলে।

অপ্রচলিত শক্তির গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলি হল-সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, কোটাল শক্তি, ভূতাপীয় শক্তি, গোবর গ্যাস শক্তি ও বায়োমাস থেকে উৎপন্ন শক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি, সমুদ্র জলের তাপশক্তি, বর্জ্য পদার্থ থেকে উৎপাদিত শক্তি ইত্যাদি।

প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

অথবা, চিরাচরিত ও অচিরাচরিত শক্তি উৎসের পার্থক্য লেখো।

পার্থক্যের বিষয়প্রচলিত শক্তি (Conventional Energy)অপ্রচলিত শক্তি (Non-conventional Energy)
শক্তির উৎসপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলি হল কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেজস্ক্রিয় খনিজ দ্রব্য এবং বড়ো আকারের খরস্রোতা নদী।অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলি হল সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ারভাটাশক্তি, ভূতাপশক্তি, জৈবগ্যাস, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি।
ব্যবহারের ধরণএই শক্তি বহু বছর ধরে ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।অল্প কয়েক বছর এবং কম পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পুনর্নবীকরণখরস্রোতা নদীভিত্তিক জলবিদ্যুৎ শক্তি ছাড়া বাকিগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়।এগুলি সবই পুনর্নবীকরণযোগ্য।
পরিবেশদূষণের মাত্রাএগুলির ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় (জলবিদ্যুৎ ছাড়া)।এগুলি ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না।
উৎপাদন ব্যয়উৎপাদনের প্রাথমিক খরচ কম হলেও পরবর্তী সময়ে ইউনিট পিছু উৎপাদনে ব্যয় বেশি হয়।প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও পরবর্তী সময়ে ইউনিট পিছু উৎপাদন ব্যয় কম হয়।
স্থানান্তরউৎসগুলি স্থানান্তরযোগ্য (খরস্রোতা নদী ছাড়া)।এর অধিকাংশ উৎস স্থানান্তরযোগ্য নয়।
নির্ভরতাএই শক্তি উৎপাদনে প্রকৃতির ওপর নির্ভরতা কম।এই শক্তি উৎপাদনে প্রকৃতির ওপরই অধিক নির্ভর করতে হয়।
লভ্যতাএই শক্তি পৃথিবীর সর্বত্র একই পরিমাণে পাওয়া যায় না।এই শক্তি পৃথিবীর সকল স্থানে মোটামুটি সমান পরিমাণে লভ্য।
বিপদসংকুলতাএই প্রকার শক্তি উৎপাদনে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি।এই প্রকার শক্তি উৎপাদনে বিপদের মাত্রা অনেক কম।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রচলিত শক্তির উৎস কী?

প্রচলিত শক্তির উৎস হল সেইসব শক্তি যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন – কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি, জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ।

অপ্রচলিত শক্তির উৎস কী?

অপ্রচলিত শক্তির উৎস হল সেইসব শক্তি যা এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না বা কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। যেমন – সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি, ভূতাপীয় শক্তি, বায়োগ্যাস ও বর্জ্য থেকে উৎপন্ন শক্তি।

অপ্রচলিত শক্তির উৎসের সুবিধা কী?

অপ্রচলিত শক্তির উৎসের সুবিধা হল –
1. পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত।
2. পুনর্নবীকরণযোগ্য, তাই শক্তির স্থায়িত্ব বেশি।
3. দীর্ঘমেয়াদে সস্তা।
4. গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে ব্যবহারযোগ্য।

প্রচলিত শক্তির উৎসের অসুবিধা কী?

প্রচলিত শক্তির উৎসের অসুবিধা হল –
1. অধিকাংশই অপুনর্নবীকরণযোগ্য, তাই একসময় ফুরিয়ে যাবে।
2. পরিবেশ দূষণ করে (গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, অম্লবৃষ্টি ইত্যাদি)।
3. খনিজ তেল ও কয়লার মতো উৎসের মজুদ সীমিত।

জলবিদ্যুৎ প্রচলিত নাকি অপ্রচলিত শক্তি?

জলবিদ্যুৎ একটি প্রচলিত শক্তি, কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এটি পুনর্নবীকরণযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব।

অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা কী?

অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা হল –
1. প্রচলিত শক্তির মজুদ সীমিত ও দূষণকারী।
2. অপ্রচলিত শক্তি (সৌর, বায়ু) অফুরন্ত ও পরিবেশবান্ধব।
3. জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়ক।

ভারতে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার কেমন?

ভারত সৌরশক্তি (সোলার প্যানেল), বায়ুশক্তি (উইন্ড মিল), বায়োগ্যাস (গোবর গ্যাস) ও ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে।

পারমাণবিক শক্তি প্রচলিত নাকি অপ্রচলিত?

পারমাণবিক শক্তি একটি প্রচলিত শক্তি, কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে, যদিও এটি অপুনর্নবীকরণযোগ্য ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।

ভূ-তাপীয় শক্তি কীভাবে কাজ করে?

ভূ-তাপীয় শক্তি পৃথিবীর অভ্যন্তরের তাপ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটি একটি অপ্রচলিত কিন্তু কার্যকর শক্তি উৎস, বিশেষত আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে? প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে? প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

মিথেন হাইড্রেট থেকে কীভাবে মিথেন সংগ্রহ করা হয়? মিথেন হাইড্রেট হল ভবিষ্যতের অন্যতম বিকল্প শক্তি - ব্যাখ্যা করো।

মিথেন হাইড্রেট হল ভবিষ্যতের অন্যতম বিকল্প শক্তি – ব্যাখ্যা করো।

মিথেন হাইড্রেট কী? মিথেন হাইড্রেটকে ফায়ার আইস বলা হয় কেন?

মিথেন হাইড্রেট কী? মিথেন হাইড্রেটকে ফায়ার আইস বলা হয় কেন?

জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী? জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের দুটি উপায় উল্লেখ করো। জীবাশ্ম জ্বালানি অতিরিক্ত ব্যবহারের কুপ্রভাবগুলি লেখো।

জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী? জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের উপায় ও অতিরিক্ত ব্যবহারের কুপ্রভাবগুলি লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতে বর্ষাকালীন শস্যচাষের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয় কেন?

উত্তর-পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদন বেশি হয় কেন?

শীতকালে ভারতে গম চাষ করার কারণ ব্যাখ্যা করো।

প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎস কাকে বলে? প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসের মধ্যে পার্থক্য

মিথেন হাইড্রেট হল ভবিষ্যতের অন্যতম বিকল্প শক্তি – ব্যাখ্যা করো।