এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
ভারতীয় নগরায়ণের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হল –
প্রাচীনত্ব –
ভারতে নগরায়ণের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ভারতে 2350 খ্রিস্টপূর্বাব্দে হরপ্পায় প্রথম নগরায়ণের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং এই প্রক্রিয়া বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে বর্তমানেও চলছে।
জীবিকাসত্তাভিত্তিক নগরায়ণ –
ভারতে নগরায়ণ মূলত জীবিকাসত্তাভিত্তিক (Subsistence) প্রকৃতির। ভারতের গ্রামীণ জনসাধারণ শহরে জীবিকার খোঁজে, অর্থ উপার্জনের জন্য আসে। নিকৃষ্টমানের খাবার খেয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কৃচ্ছসাধন করেও তাঁরা শহরে পড়ে থাকেন শুধু জীবিকানির্বাহের উদ্দেশ্যে।
মিলিয়ন শহরকেন্দ্রিক নগরায়ণ –
ইংরেজদের শাসনকালে বন্দরকেন্দ্রিক মিলিয়ন শহরে (যেমন – কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই) নগরায়ণ সবচেয়ে বিকাশ লাভ করেছিল। মিলিয়ন নগরই ভারতের সামগ্রিক পৌর দৃশ্যকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ ভারতের মোট শহরবাসী জনসংখ্যার 42.6 শতাংশ জনগণ মিলিয়ন নগরসমূহে বসবাস করেন। 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে ভারতে মিলিয়ন নগরের সংখ্যা 53টি।

সেবামূলক ক্ষেত্রনির্ভর নগরায়ণ –
ভারতীয় শহর ও নগরগুলি প্রাথমিকভাবে শিল্পায়ন বা গৌণক্ষেত্রের তুলনায় সেবামূলক বা তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অবশ্য জেলা সদরগুলিতে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটায় তা নগরায়ণের পথকে প্রশস্ত করছে।
অসম নগরায়ণ –
সম্পদের প্রাচুর্য এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে আধুনিক নগরায়ণের ইতিহাসের পার্থক্য হেতু সর্বত্র সমানভাবে নগরায়ণ ঘটেনি। পূর্ব ভারতের চেয়ে পশ্চিম ভারতে এবং উত্তর ভারতের চেয়ে দক্ষিণ ভারতে নগরায়ণের মাত্রা বেশি।
বস্তির অস্তিত্ব –
ভারতের শহর বা নগরগুলির বিশেষ বিশেষ অংশে বস্তির অস্তিত্ব ভারতীয় নগরায়ণের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। জীবিকার সন্ধানে যে সমস্ত গ্রামবাসী শহরে আসেন তাঁরা আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল হওয়ায় শহরের বিশেষ বিশেষ স্থানে ঝুপড়ি বানিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে কলকাতা, সল্টলেক, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার বস্তির কথা উল্লেখ করা যায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের নগরায়ণের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
ভারতের নগরায়ণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে –
1. প্রাচীনত্ব (হরপ্পা সভ্যতা থেকে শুরু)।
2. জীবিকাসত্তাভিত্তিক নগরায়ণ (গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শহরমুখী হওয়া)।
3. মিলিয়ন শহরকেন্দ্রিক নগরায়ণ (বড় শহরগুলিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব)।
4. সেবামূলক ক্ষেত্রনির্ভর নগরায়ণ (তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রাধান্য)।
5. অসম নগরায়ণ (পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে বেশি নগরায়ণ)।
6. বস্তির অস্তিত্ব (অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর বসতি)।
ভারতের নগরায়ণের ইতিহাস কতটা প্রাচীন?
ভারতের নগরায়ণের ইতিহাস প্রায় 8,500 বছরের পুরনো। হরপ্পা সভ্যতা (2350 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) থেকে নগরায়ণের সূচনা হয়েছিল, যেখানে সুপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা ছিল।
ভারতের নগরায়ণ কেন জীবিকাসত্তাভিত্তিক?
ভারতের গ্রামীণ জনগণ জীবিকার সন্ধানে শহরে আসে। দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের অভাবে তারা শহরে বসবাস করে, কিন্তু অনেকেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বস্তিতে বাস করে।
মিলিয়ন শহর বলতে কী বোঝায়? ভারতে এর প্রভাব কেমন?
মিলিয়ন শহর হলো এমন শহর যেখানে 10 লক্ষ বা তার বেশি জনসংখ্যা বসবাস করে। 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতে 53টি মিলিয়ন শহর রয়েছে। 42.6% শহুরে জনসংখ্যা মিলিয়ন শহরগুলিতে বাস করে। উদাহরণ – মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু।
ভারতের নগরায়ণে সেবামূলক ক্ষেত্রের ভূমিকা কী?
ভারতের নগরায়ণে সেবামূলক ক্ষেত্রের ভূমিকা –
1. ভারতীয় শহরগুলি শিল্পের চেয়ে সেবা খণ্ডের (tertiary sector) উপর বেশি নির্ভরশীল।
2. আইটি, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন ইত্যাদি সেবামূলক খাত নগরায়ণকে ত্বরান্বিত করছে।
উদাহরণ – বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, গুরগাঁও আইটি ও সেবাখাতনির্ভর শহর।
ভারতে নগরায়ণ কেন অসম?
ভারতে নগরায়ণ অসম হওয়ার কারণ –
1. পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে নগরায়ণের হার বেশি (মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই)।
2. পূর্ব ও উত্তর ভারতে নগরায়ণের হার তুলনামূলক কম।
ভারতীয় শহরগুলিতে বস্তি সমস্যা কেন দেখা যায়?
ভারতীয় শহরগুলিতে বস্তি সমস্যা দেখা যায় কারণ –
1. দারিদ্র্য ও গ্রামীণ-শহুরে অভিবাসনের ফলে মানুষ বস্তিতে বসবাস করে।
2. অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কর্মসংস্থানের অভাব ও বাসস্থানের উচ্চমূল্য বস্তি সৃষ্টির কারণ।
উদাহরণ – মুম্বাইয়ের ধারাবি, কলকাতার রাজাবাজার বস্তি।
ভারতের নগরায়ণের চ্যালেঞ্জগুলি কী কী?
ভারতের নগরায়ণের চ্যালেঞ্জগুলি হলো –
1. অপরিকল্পিত নগরায়ণ।
2. যানজট ও পরিবহন সমস্যা।
3. জল ও বায়ু দূষণ।
4. বস্তির বিস্তার।
5. স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা।
ভারত সরকার নগরায়ণ সমস্যা মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
ভারত সরকার নগরায়ণ সমস্যা মোকাবিলায় যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছেন সেগুলি হলো –
1. স্মার্ট সিটি মিশন (100 স্মার্ট সিটি গঠন)।
2. আম আদমি আওয়াস যোজনা (সাশ্রয়ী বাসস্থান)।
3. স্বচ্ছ ভারত মিশন (নগর পরিষ্কারকরণ)।
4. মেট্রো রেল প্রকল্প (যানজট হ্রাস)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন