স্ট্যাটুইটারি টাউন ও সেনসাস টাউন কাকে বলে? ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি কী কী?

Rohit

 এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “স্ট্যাটুইটারি টাউন ও সেনসাস টাউন কাকে বলে? ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

স্ট্যাটুইটারি টাউন ও সেনসাস টাউন কাকে বলে
স্ট্যাটুইটারি টাউন ও সেনসাস টাউন কাকে বলে

স্ট্যাটুইটারি টাউন ও সেনসাস টাউন কাকে বলে? ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি কী কী?

স্ট্যাটুইটারি টাউন –

যে সকল শহরে মিউনিসিপ্যালিটি, করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড শহরতলি কমিটি সবকিছু বর্তমান থাকে, তাকে স্ট্যাটুইটারি টাউন বলে। ভারতে মোট 4041টি স্ট্যাটুইটারি টাউন রয়েছে। এক্ষেত্রে শহরের জনঘনত্ব 400 জন/বর্গকিমি হতে হবে।

উদাহরণ – কলকাতা, আলিপুরদুয়ার, উলুবেড়িয়া, রিষড়া, কল্যাণী প্রভৃতি হল স্ট্যাটুইটারি টাউন।

সেনসাস টাউন –

ভারতের আদমশুমারি অনুযায়ী, যে অঞ্চলের জনসংখ্যা 5000 জনের বেশি, জনঘনত্ব 400 জন/বর্গকিমি, মোট জনসংখ্যার 75% -এর বেশি মানুষ কৃষি ছাড়া অন্যান্য জীবিকার সঙ্গে নিযুক্ত, তাকে সেনসাস শহর বলে। যেমন – দীঘা, দার্জিলিং, মিরিক, বোলপুর প্রভৃতি।

ভারতে নগরায়ণের সমস্যা –

অপরিকল্পিত নগরায়ণ –

সাম্প্রতিককালে ভারতে দ্রুত নগরায়ণ ঘটে চলেছে। 2001 খ্রিস্টাব্দে ভারতে যেখানে মাত্র 1টি মেট্রোপলিটান শহর (কলকাতা) ছিল, সেখানে 2011 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে হয়েছে 53টি। গ্রামগঞ্জ এবং সেন্সাস শহর থেকে বড়ো শহরমুখী পরিব্রাজনের ফলে শহরতলির ক্ষেত্রমান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর থেকে নগরের এই দ্রুত বৃদ্ধি প্রায় সর্বত্রই অপরিকল্পিত। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ভারতের প্রচুর কৃষিজমি শহর ও নগরকে গ্রাস করে ফেলেছে। পরিকল্পনার অভাবে রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা অপ্রতুল ও বিপর্যস্ত। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে নগরায়ণের ফলে সরকারি খাস জমিতে ঘিঞ্জি বস্তি গড়ে ওঠা, ফুটপাথ দখল করে পরিবহণ ও যাতায়াতের জটিল সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং পরিবহণ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছে।

বাসস্থানের সমস্যা –

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিনোদন, কর্মসংস্থান প্রভৃতির সুযোগ গ্রহণ করার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষের শহরে বাস করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তীব্রভাবে বাসস্থানগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। দরিদ্র শ্রেণির মানুষ রোজগারের তাগিদে শহরে সরকারি জমিতে, রেললাইন বা সড়কপথের ধারে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বস্তি অঞ্চল গড়ে তুলেছে। তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে পরিবেশগত জটিল সমস্যা তৈরি করে।

পরিকাঠামোর অভাব –

  1. জলনিকাশি সমস্যা – শহরের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়লা ও দূষিত জল নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে নানান সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারতের কোনো শহরের জলনিকাশি ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানসম্মত নয়। দূষিত জল ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। ভারতের প্রায় 36% শহরবাসী পয়ঃপ্রণালীর কোনো সুযোগ পায় না।
  2. পানীয় জলের সমস্যা – ভারতের শহরবাসীরা প্রয়োজনের তুলনায় 10-20% জল কম পেয়ে থাকে। যেমন – দিল্লিতে অধিকাংশ মানুষ দিনে 25 লিটারেরও কম জল পেয়ে থাকে। মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাইতে পানীয় জলের সমস্যা তীব্রতর। পানীয় জলের সংকট মেটাতে গিয়ে ভৌমজলস্তর অনেক নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে এবং আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
  3. বিদ্যুতের সমস্যা – জনসংখ্যা, বিনোদন, কলকারখানা, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে, পরিবহণ ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালে এর চাহিদা থাকলেও বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা মাঝেমধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
  4. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যা – উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য (চিকিৎসা) ব্যবস্থার ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্কুলে, কলেজে পছন্দ বা চাহিদা মতো ভরতি হতে না পারার সমস্যা লেগেই থাকে। হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলি রোগীর চাপে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।
  5. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা – শহরে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নানারকম বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্জ্য নিক্ষেপের স্থানাভাব, তার ব্যবস্থাপনা বর্তমানে পৌরনিগমগুলির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

স্ট্যাটুইটারি টাউন কাকে বলে?

যে শহরে মিউনিসিপ্যালিটি, করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বা নগর প্রশাসনিক সংস্থা থাকে, তাকে স্ট্যাটুইটারি টাউন বলে। এর জনঘনত্ব 400 জন/বর্গকিমি হতে হবে।
উদাহরণ – কলকাতা, আলিপুরদুয়ার, রিষড়া।

সেনসাস টাউন কাকে বলে?

আদমশুমারি অনুযায়ী, যে অঞ্চলের জনসংখ্যা 5000+ এবং জনঘনত্ব 400 জন/বর্গকিমি, যেখানে 75% মানুষ কৃষি ছাড়া অন্য পেশায় নিযুক্ত, তাকে সেনসাস টাউন বলে।
উদাহরণ – দীঘা, দার্জিলিং, বোলপুর।

ভারতে নগরায়ণের প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?

ভারতে নগরায়ণের প্রধান সমস্যাগুলি হলো –
1. অপরিকল্পিত নগরায়ণ।
2. বাসস্থানের সংকট ও বস্তি বৃদ্ধি।
3. জলনিকাশি ও পয়ঃপ্রণালীর সমস্যা।
4. পানীয় জলের অভাব।
5. বিদ্যুৎ সংকট।
6. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার চাপ।
7. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা।

অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব কী?

অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাবগুলি হলো –
1. কৃষিজমি হ্রাস।
2. যানজট ও পরিবহণ সমস্যা।
3. অবৈধ বস্তি বৃদ্ধি।
4. পরিবেশ দূষণ।

শহরগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা কেন হয়?

শহরগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা হওয়ার কারণ –
1. জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাহিদা মেটাতে না পারা।
2. ভৌমজলের অত্যধিক ব্যবহার।
3. দূষিত জল সরবরাহ।
4. অবৈধ জল ব্যবহার।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়?

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমাধান করার উপায় গুলো হলো –
1. বর্জ্য পুনর্ব্যবহার (Recycling)।
2. বিজ্ঞানসম্মত ডাম্পিং সিস্টেম।
3. জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
4. কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি প্রয়োগ।

ভারতে নগরায়ণের হার কত?

2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার 31.16% শহরাঞ্চলে বাস করে। বর্তমানে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ~35% হতে পারে।

মেট্রোপলিটান শহর কাকে বলে?

যে শহরের জনসংখ্যা 10 লক্ষ বা তার বেশি এবং যেখানে উন্নত নাগরিক সুবিধা রয়েছে, তাকে মেট্রোপলিটান শহর বলে। উদাহরণ – মুম্বাই, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “স্ট্যাটুইটারি টাউন ও সেনসাস টাউন কাকে বলে? ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি লেখো

ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি লেখো।

ভারতের নগরায়ণের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ আলোচনা করো

ভারতের নগরায়ণের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ আলোচনা করো।

জনঘনত্ব অনুসারে ভারতবর্ষকে শ্রেণিবিভাগ করো

জনঘনত্ব অনুসারে ভারতবর্ষকে শ্রেণিবিভাগ করো।

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি লেখো।

স্ট্যাটুইটারি টাউন ও সেনসাস টাউন কাকে বলে? ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি কী কী?

ভারতের নগরায়ণের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ আলোচনা করো।

জনঘনত্ব অনুসারে ভারতবর্ষকে শ্রেণিবিভাগ করো।

ভারতের নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?