আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা ২০২০ সালের মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্র ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই উত্তরসহ প্রশ্নপত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। Madhyamik Bengali Question Paper 2020 with Answers বিশ্লেষণের মাধ্যমে, আপনি পরীক্ষার ধরন, প্রশ্নের মান, এবং মূল্যায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। এছাড়াও, এই Madhyamik Bengali Question Paper 2020 with Answers অনুশীলন করার মাধ্যমে, আপনি আপনার লেখার দক্ষতা উন্নত করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় সময়ে নার্ভাসন কমাতে পারবেন।
Madhyamik Bengali Question Paper 2020 With Answer
১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করাে (১৭×১=১৭) (Madhyamik Bengali 2020)
১.১ পুলিশ সেজে হরিদা দাঁড়িয়েছিলেন –
(ক) জগদীশবাবুর বাড়ি
(খ) চকের বাসস্ট্যান্ডে
(গ) দয়ালবাবুর লিচুবাগানে
(ঘ) চায়ের দোকানে
উত্তরঃ (গ) দয়ালবাবুর লিচুবাগানে
১.২ নদেরচাঁদের বয়স –
(ক) পঁচিশ বছর
(খ) ত্রিশ বছর
(গ) পঁয়ত্রিশ বছর
(ঘ) চল্লিশ বছর
উত্তরঃ (খ) ত্রিশ বছর
১.৩ ছােটোমাসি তপনের থেকে কত বছরের বড়াে –
(ক) বছর পাঁচেকের
(খ) বছর আষ্টেকের
(গ) বছর দশেকের
(ঘ) বছর বারাের
উত্তরঃ (খ) বছর আষ্টেকের
১.৪ ‘অভিষেক’ শীর্ষক কাব্যাংশটি ‘মেঘনাদবধকাব্য’ – এর কোন্ সর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে?
(ক) প্রথম সর্গ
(খ) তৃতীয় সর্গ
(গ) নবম সর্গ
(ঘ) পঞ্চম সর্গ
উত্তরঃ (ক) প্রথম সর্গ
১.৫ “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না?
(ক) সেই মেয়েটি
(খ) গির্জার নান
(গ) কবিতার কথক
(ঘ) শান্ত হলুদ দেবতারা
উত্তরঃ (ঘ) শান্ত হলুদ দেবতারা
১.৬ “গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে – কে গান বাঁধবে?
(ক) চিল
(খ) কোকিল
(গ) শকুন
(ঘ) ময়ূর
উত্তরঃ (খ) কোকিল
১.৭ পালকের কলমের ইংরেজি নাম হ’ল –
(ক) স্টাইলাস
(খ) ফাউন্টেন পেন
(গ) কুইল
(ঘ) রিজার্ভার পেন
উত্তরঃ (গ) কুইল
১.৮ কানে কলম খুঁজে দুনিয়া খোজেন –
(ক) প্রাবন্ধিক
(খ) দার্শনিক
(গ) গল্পকার
(ঘ) নাট্যকার
উত্তরঃ (খ) দার্শনিক
১.৯ “হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড” – উক্তিটি
(ক) রবীন্দ্রনাথের
(খ) বকিমচন্দ্রের
(গ) কালিদাসের
(ঘ) বিদ্যাসাগরের
উত্তরঃ (গ) কালিদাসের
১.১০ অনুসর্গের দৃষ্টান্ত কোনটি?
(ক) জন্য
(খ) খানা
(গ) টি
(ঘ) গাছা
উত্তরঃ (ক) জন্য
১.১১ দ্বন্দ্ব সমাসে অর্থ প্রাধান্য থাকে –
(ক) পূর্ব পদের
(খ) উভয় পদের
(গ) পর পদের
(ঘ) অন্য পদের
উত্তরঃ (খ) উভয় পদের
১.১২ ‘ইসাবের মেজাজ চড়ে গেল’ – নিম্নরেখ পদটি কোন কারকের উদাহরণ?
(ক) কর্ম কারক
(খ) করণ কারক
(গ) কর্তৃ কারক
(ঘ) অপাদান কারক
উত্তরঃ (ক) কর্ম কারক
১.১৩ ‘ফেলাইলা কনক-বলয় দূরে’ – নিম্নরেখ পদটি যে সমাসের উদাহরণ তা হল
(ক) তৎপুরুষ
(খ) অব্যয়ীভাব
(গ) বহুব্রীহি
(ঘ) মধ্যপদলােপী কর্মধারয়
উত্তরঃ (ঘ) মধ্যপদলােপী কর্মধারয়
১.১৪ ‘বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না’ – এটি কী ধরনের বাক্য?
(ক) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
(খ) নির্দেশক বাক্য
(গ) বিস্ময়সূচক বাক্য
(ঘ) প্রশ্নবােধক বাক্য
উত্তরঃ (ক) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
১.১৫ ‘আমি মহারাজ নই, আমি এই সৃষ্টির মধ্যে এককণা ধূলি’ – এটি কোন্ শ্রেণির বাক্য?
(ক) সরল বাক্য
(খ) যৌগিক বাক্য
(গ) জটিল বাক্য
(ঘ) মিশ্র বাক্য
উত্তরঃ (খ) যৌগিক বাক্য
১.১৬ ‘জগদীশবাবু সিড়ি ধরে নেমে যান’ – বাক্যটির ভাববাচ্যের রূপ হ’ল –
(ক) জগদীশবাবুর সিঁড়ি ধরে নামা হয়
(খ) জগদীশবাবুর দ্বারা সিঁড়ি ধরে নামা হয়
(গ) জগদীশবাবু সিড়ি ধরে নামেন
(ঘ) জগদীশবাবু সিঁড়ি ধরে নেমে আসেন
উত্তরঃ (ক) জগদীশবাবুর সিঁড়ি ধরে নামা হয়
১.১৭ ‘নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে’ – এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ
(ক) কর্মবাচ্য
(খ) ভাববাচ্য
(গ) কর্তৃবাচ্য
(ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
উত্তরঃ (গ) কর্তৃবাচ্য
২. কমবেশি ২০টি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (১×১৯ =১৯) (Madhyamik Bengali 2020)
২.১ যে – কোনো ৪টি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১×৪=৪
২.১.১ ‘বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের” – নদেরচাঁদের কেন ভয় করতে লাগল?
উত্তরঃ ক্ষোভে রোষে উন্মত্ত জলরাশির দিকে দৃষ্টিপাত করে তার ভয় করতে লাগল।
২.১.২ “অমৃত ফতোয়া জারি করে দিল,” – অমৃত কী ‘ফতোয়া’ জারি করেছিল?
উত্তরঃ ঠিক ইসাবের মতো জামাটি না পেলে ও ইস্কুলে যাবে না, এই ফতোয়া জারি করেছিল অমৃত।
২.১.৩ “বুড়োমানুষের কথাটা শুনো” – বুড়োমানুষের কোন কথা শুনতে বলা হয়েছে?
উত্তরঃ বুড়োমানুষ অর্থাৎ নিমাইবাবু যে কথাটি গিরিশ মহাপাত্রকে শুনতে বলেছিলেন তা হল – “আর (গাঁজা) খেও না।”
২.১.৪ “আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো?” – বক্তা একথা কাকে বলেছিলেন?
উত্তরঃ বক্তা অর্থাৎ বিরাগী জগদীশবাবুকে একথা বলেছিলেন।
২.১.৫ “আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।” – বক্তার কোন দিনটি সবচেয়ে দুঃখের?
উত্তরঃ যেদিন বক্তা অর্থাৎ তপন নিজের লেখা গল্পটি মুদ্রিত আকারে হাতে পেয়েছিল।
২.২ যে – কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৪×১=৪
২.২.১ “এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে” – ওরা কারা?
উত্তরঃ ওরা বলতে ঔপনিবেশিক শক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
২.২.২ “হায়, বিধি বাম মম প্রতি।” বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তরঃ দেবতাদের অনুগ্রহে রাম-লক্ষণ মরেও বেঁচে উঠেছিল। এইজন্য রাক্ষসরাজ রাবণ এরকম মন্তব্য করেছেন।
২.২.৩ “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান” – গান কোথায় বেড়াবে?
উত্তরঃ নদীতে, দেশ-গাঁয়ে বেড়াবে গান।
২.২.৪ “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?” – কবি এ প্রশ্ন কাদের উদ্দেশ্যে করেছেন?
উত্তরঃ কবি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করেছেন।
২.২.৫ ‘সিন্ধুতীরে রহিছে মাঞ্জস।’ – “মাঞ্জস” শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ ‘মাঞ্জস’ শব্দের অর্থ ভেলা।
২.৩ যে – কোনাে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৩×১=৩
২.৩.১ “তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি।” – কী নিয়ে লেখকদের ‘প্রথম লেখালেখি’?
উত্তরঃ বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি এবং লেখার জন্য কলাপাতা – এই নিয়ে লেখকদের প্রথম লেখালেখি।
২.৩.২ “লাঠি তােমার দিন ফুরাইয়াছে।” – কথাটি কে বলেছিলেন?
উত্তরঃ কথাটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
২.৩.৩ “এতে রচনা উৎকট হয়।” – রচনা ‘উৎকট’ হয় কীসে?
উত্তরঃ লেখক যদি ইংরেজিতে তার বক্তব্য ভাবেন এবং সেটিকে যথাযথ বাংলা অনুবাদ করে প্রকাশ করতে চান, তখন রচনা উৎকট হয়।
২.৩.৪ প্রয়ােজনমতাে বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলে কী করা উচিত বলে লেখক মনে করেছেন?
উত্তরঃ প্রয়ােজনমতাে বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলে ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে লেখা উচিত বলে লেখক মনে করেছেন।
২.৪ যে–কোনাে আটটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৮×১=৮
২.৪.১ তির্যক বিভক্তি কাকে বলে?
উত্তর: যেসব বিভক্তি একাধিক কারকে প্রযুক্ত হয় তাদেরকে তির্যক বিভক্তি বলে।
২.৪.২ সম্বন্ধপদ কারক নয় কেন?
উত্তর: বাক্যের অন্তর্গত যে নামপদের ক্রিয়াপদের সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক থাকে না, বরং অন্য কোনো নামপদের সঙ্গে সম্বন্ধ থাকে তাকে সম্বন্ধপদ বলে।
২.৪.৩ অব্যয়ীভাব সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: উপকূল = কূলের সমীপে
২.৪.৪ নিরপেক্ষ কর্তার উদাহরণ দাও।
উত্তর: শ্রেয়া গান গাইলে অমৃতা আবৃত্তি করবে – এই বাক্যে শ্রেয়া হল নিরপেক্ষ কর্তা।
২.৪.৫ নিম্নরেখ শব্দটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো – “পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে।”
উত্তর: পৃথিবী – কর্তৃকারক, শূন্য বিভক্তি।
২.৪.৬ উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ চিহ্নিত করো – “ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল।”
উত্তর: উদ্দেশ্য – ‘ওরা’, বিধেয় – ‘ভয়ে কাঠ হয়ে গেল’।
২.৪.৭ সূর্য পশ্চিমদিকে উদিত হয় – বাক্যনির্মাণের কোন শর্ত এখানে লঙ্ঘন করা হয়েছে?
উত্তর: এখানে বাক্যনির্মাণের যে শর্তটি লঙ্ঘন করা হয়েছে তা হল – যোগ্যতা।
২.৪.৮ ‘বহুরূপী’ – শব্দটির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম করো।
উত্তর: বহুরূপী = বহু রূপ আছে যার।
২.৪.৯ ‘কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য।’ – জটিল বাক্যে পরিবর্তন করো।
উত্তর: তাদের কাছে আজ যা অস্পৃশ্য তা হল কলম।
২.৪.১০ ‘নদীর ধারে তার জন্ম হইয়াছে’ – কর্তৃবাচ্যে পরিণত করো।
উত্তর: তিনি নদীর ধারে জন্মেছেন।
৩। প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কম-বেশি ৬০টি শব্দে উত্তর দাও (৩+৩=৬) (Madhyamik Bengali 2020)
৩.১ যে–কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৩.১.১ “ছেলেদুটোর সবই একরকম, তফাত শুধু এই যে” – ছেলেদুটি কে কে? তাদের মধ্যে তফাত কোথায়? (১+২)
উত্তরঃ ‘ছেলেদুটো’-র পরিচয় – উল্লিখিত অংশে ‘ছেলেদুটো’ বলতে অমৃত আর ইসাবের কথা বলা হয়েছে।
প্রখ্যাত গুজরাতি লেখক পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পের দুই বন্ধু অমৃত ও ইসাব একই ক্লাসে এবং একই স্কুলে পড়ত। তাদের বাড়ি ছিল মুখোমুখি, দুজনেরই বাবা পেশায় ছিল চাষি। জমির পরিমাণও তাদের প্রায় এক। দুজনের বাবাকেই বিপদে-আপদে ধার নিতে হত। এইগুলোই ছিল তাদের মধ্যে মিল। কেবল একটি জায়গাতেই তাদের অমিল ছিল—অমৃত তার মা, বাবা আর তিন ভাইয়ের সঙ্গে থাকত, কিন্তু ইসাবের শুধু বাবাই ছিল।
৩.১.২ “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।” – কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে? তা দুর্লভ কেন? (১+২)
উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পের আলোচ্য অংশে দুর্লভ জিনিসটি হলো জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো।
তিনি ‘খুবই উঁচু দরের’ সন্ন্যাসী। তার বয়স হাজার বছরেরও বেশি। হিমালয়ের গুহায় একটি হরীতকী খেয়ে তিনি জীবনধারণ করে চলেছেন। তাই তার পায়ের ধুলো দুর্লভ।
৩.২ যে – কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : (১×৩=৩)
৩.২.১ “এসাে যুগান্তের কবি,”– ‘যুগান্তের কবি’ কে কেন আহ্বান করা হয়েছে?
উত্তরঃ সভা পুনিয়ার বর্বরোচিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতি আক্রমণ নয়, মানবতার পূজারী রবীন্দ্রনাথ ‘যুগান্তের কবি’র কাছে আহ্বান জানিয়েছেন আবির্ভূত হয়ে ক্ষমা প্রদান করতে। তিনি মানবতার পুণ্যা বাণী দ্বারা সকলকে উদ্বুদ্ধ করবেন এই বিশ্বাস থেকেই কবি তাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
৩.২.২ “সে জানত না আমি আর কখনাে ফিরে আসব না।” – ‘সে’ কে? ‘আমি আর কখনাে ফিরে আসব না’ বলার কারণ কী? (১+২)
উত্তরঃ পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার প্রশ্নোদৃত অংশে কবি তাঁর প্রিয়তমার কথা বলেছেন।
কবি এখানে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাঁর না ফেরার কথা জানিয়েছেন। পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছে যে মানুষ, স্বাধীনতা কিংবা শোষণমুক্তিই তার লক্ষ্য। এই লড়াইয়ের পথ কখনোই মসৃণ নয়। তাই বিরুদ্ধ শক্তির প্রবল বাধা এবং প্রত্যাঘাতে মৃত্যুকেই সেখানে স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করতে হয়। এই কারণেই কবি ফিরে না আসার কথা বলেছেন।
৪। কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও (৫) (Madhyamik Bengali 2020)
৪.১ “ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে।” – কে, কাকে শিখিয়েছে? ‘খাঁটি জিনিস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? (২+৩)
উত্তরঃ
উল্লিখিত অংশে ‘ও’ বলতে অমৃতকে বোঝানো হয়েছে। ইসাবের বাবা, ইসাব আর অমৃতের জামা বদলের ঘটনাটা আড়াল থেকে দেখেছিলেন। ইসাবকে অমৃত তার ভালো জামাটা দিয়ে ইসাবের ছেঁড়া জামাটা নিজে নিয়ে বলেছিল যে অমৃতের বাবা অমৃতকে মারলে তার মা তাকে রক্ষা করবেন। অমৃতের এই মন্তব্যকেই ইসাবের বাবা ‘খাঁটি জিনিস’ বলে মনে করেছেন। সংসারে মায়ের যে কতখানি মূল্য তা অমৃত-ই যেন ইসাবের বাবাকে শিখিয়েছিল।
‘অদল বদল’ গল্পে বন্ধুকে বাঁচাতে জামা অদলবদলের পরে ইসাব অমৃতকে জিজ্ঞাসা করেছিল তোর বাবা যদি তোকে মারে কী হবে? অমৃতের উত্তর ছিল আমার তো মা রয়েছে। একদিকে মায়ের প্রতি আস্থা অন্যদিকে বন্ধুপ্রীতি – এই দুটি বিষয়কেই ইসাবের বাবা ‘খাঁটি জিনিস’ বলেছেন।
ইসাবের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত আর ইসাবের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং সরলতা দেখে। অমৃত জানে, তাকে তার বাবা মারলে অমৃতকে তার মা রক্ষা করবে। কিন্তু ইসাবের মা নেই। অমৃতের অনুভবের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা। ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই তার কাছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসাবের বাবা নিজের চোখে বন্ধুত্বের সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখেছিলেন। দশ বছরের এই ছোট ছেলেটির নিষ্পাপ হৃদয় ও সরলতা তাঁকে বিস্মিত করেছিল। নিজের প্রতিবেশীদেরও তিনি সেই অবাক করা ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। এভাবেই অমৃতের দেওয়া জবাবে জীবন সম্পর্কে ইসাবের বাবার উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল।
৪.২ “তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গােপন করিল” — কে হাসি গােপন করল? তার হাসি পাওয়ার কারণ কী? ১+৪
উত্তরঃ অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব মুখ ফিরিয়ে হাসি গোপন করেছিল। গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত সাজসজ্জা দেখে অপূর্বের মনে হাসির উদ্রেক ঘটেছিল। আসলে, শুধু অপূর্ব নয়, গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা থানায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
গিরীশ মহাপাত্র থানায় প্রবেশ করলেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেন তার অদ্ভুত সাজসজ্জা। তার মাথার সামনের দিকে ঘন কৃষ্ণচূড়া, যেন কোন রাজকুমারের মতো, কিন্তু দুপাশে ও পিছনে সম্পূর্ণ খালি। সেই চুল থেকে নেবুর তেলের তীব্র গন্ধ সকলের নাকের সাথে লড়াই করছিল।
পোশাকও ছিল বেশ অদ্ভুত। জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবির সাথে বিলেতি মিলের কালো মখমল পাড়ের শাড়ি। পাঞ্জাবির বুক পকেট থেকে বাঘ আঁকা রুমালের এক প্রান্ত ঝুলছে, উত্তরীয় নেই।
পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, হাটুর উপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা। আর জুতা? বার্নিশ করা পাম্প শু, যার তলায় মজবুত লোহার নাল! হাতে হরিণের শিং দিয়ে তৈরি বেতের ছড়ি, যা সমুদ্র ভ্রমণের ধকলে নোংরা হয়ে গেছে।
গিরীশ মহাপাত্রের এই অদ্ভুত সাজসজ্জা দেখে সকলেই হতবাক। কেউ কেউ হাসছিল, কেউ কেউ মাথা নাড়ছিল। কিন্তু একথা নিশ্চিত, সকলের মনেই ছাপ ফেলে গেল এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব!
৫। কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : (৫) (Madhyamik Bengali 2020)
৫.১ “অভিষেক করিলা কুমারে।” – ‘কুমার’ কে? পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে কুমারের চরিত্র আলােচনা করাে। ১+৪
উত্তরঃ অভিষেক’ কাব্যাংশে ‘কুমার’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রধান চরিত্র ইন্দ্রজিৎ। তাকে আশ্রয় করেই কাহিনির বিকাশ। সেখানে ইন্দ্রজিতের বেশ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় —
বীরত্ব ও আত্মবিশ্বাস – ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মীর কাছে লঙ্কার সর্বনাশ এবং বীরবাহুর মৃত্যুর খবর শুনে ইন্দ্রজিৎ বলে উঠেছিলেন, “ঘুচাব ও অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” দু-দুবার রামচন্দ্রকে যুদ্ধে হারিয়েছেন ইন্দ্রজিৎ। তৃতীয় বারও পরাজিত করতে আত্মবিশ্বাসী ইন্দ্রজিৎ রাবণকে বলেছেন — “সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজি।”
কর্তব্য সচেতনতা – ইন্দ্রজিৎ শুধু পিতৃভক্তই নন, নিজের কর্তব্য সম্পর্কেও তিনি অত্যন্ত সচেতন। তাই তিনি বলেন- “থাকিতে দাস, যদি যাও রণে/তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।”
স্বদেশপ্রেম – ইন্দ্রজিৎ স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি একনিষ্ঠ। তাই তিনি বলে ওঠেন-“হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা।”
আত্মমূল্যায়নের মানসিকতা – লঙ্কার দুর্দশা এবং বীরবাহুর মৃত্যুর পরে তিনি নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন -“হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল করে নিকুম্ভিলা যজ্ঞগৃহে যজ্ঞ সমাপ্ত করেন এবং পরদিন প্রভাতে যুদ্ধক্ষেত্রে যান।
৫.২ “আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি” – কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখাে। ৫
উত্তরঃ
আর্দশহীনতা – কবিকে ব্যথিত করেছে রাজনৈতিক আদর্শহীনতা। ডান দিকে ধস আর বাম দিকে গিরিখাত জীবনের চলার পথকেই দুর্গম করে তোলে। মাথার ওপরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাণ্ডব, চারপাশে ধর্মান্ধতা, মধ্যযুগীয় বর্বরতা ইত্যাদি যেন ক্রমশই পথকে ধূসর করে দেয়। মৃত্যুর আতঙ্ক তাড়া করে সব মানুষকেই।
প্রকৃত ইতিহাসের অভাব – যে জাতীয়তার ধারণা মানুষের সঙ্গে মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধতে পারত তা-ও বিরল। কারণ, “আমাদের ইতিহাস নেই”। তাই ইতিহাসের সত্যকে মানুষ পায় না, যা তাদের পথ দেখাতে পারে। ক্ষমতাবান শাসকেরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের মতো করে ইতিহাস তৈরি করে নেয়। সাধারণ মানুষ সেখানে উপেক্ষিত হয়। “আমাদের কথা কে-বা জানে/ আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।”
মানব মৈত্রীর সেতুবন্ধন – তবুও কিছু মানুষ থেকে যায়, মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তার সেতুবন্ধ তৈরি করাই যাদের কাজ। শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘এ আমরা কী করছি’ গদ্যরচনায় লিখেছিলেন-“আমাদের রাষ্ট্রনায়কেরা এমন এক মুঢ় অহমিকা প্রকট করে তুলতে চাইছেন দেশবাসীর মনে, ফ্যাসিবাদ যার সুনিশ্চিত পরিণাম। অথচ আজও মানুষের মনে এক স্বাভাবিক মিলনক্ষুধা আছে, এক দেশের মানুষকে আর-এক দেশের মানুষ অন্তরঙ্গ ভালোবাসাতেই জড়িয়ে নিতে চায় আজও…”। এই ভালোবাসা আর মানবমৈত্রীর কথাই কবি উচ্চারণ করেছেন ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায়। উঠেছেন।
উপসংহার – শব্দ ব্যবহারে জটিলতা এড়িয়ে তিনি কবিতাকে আন্তরিক করে তুলেছেন। সময়ের বিপন্নতা, আর তা থেকে মুক্তির চেষ্টা-দুটোই তাই আবেগময় হয়ে উঠেছে।
৬। কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে – কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও (৫) (Madhyamik Bengali 2020)
৬.১ “বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় এখনও নানারকম বাধা আছে।” – লেখক কোন্ ধরনের বাধার কথা বলেছেন? ৫
উত্তরঃ
প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অসুবিধের কথা বলেছেন। যেমন –
পারিভাষিক শব্দ – প্রথমেই যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে তা হল পারিভাষিক শব্দের অভাব। লেখক জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ সমস্যার সমাধান সম্পূর্ণরূপে সম্ভব হয়নি।
বৈজ্ঞানিক জ্ঞান – দ্বিতীয় সমস্যা হল, পাশ্চাত্য জনসাধারণের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান খুব কম। বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারণাগুলির সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক লেখা বোঝা কঠিন। বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার ঘটলে এ সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।
রচনাপদ্ধতি অনুসরণ – তৃতীয় সমস্যা, বিজ্ঞান রচনার জন্য যে রচনাপদ্ধতির দরকার, তা এখনও আমাদের লেখকরা রপ্ত করতে পারেননি। বহুক্ষেত্রেই লেখার ভাষায় আড়ষ্টতা থাকে এবং তা ইংরেজি ভাষার আক্ষরিক অনুবাদ হয়ে পড়ে। ফলে রচনাটি উৎকট হয়ে খায়। এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচবার জন্য, বাংলা ভাষার প্রকৃতি অনুযায়ী লেখার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে।
অল্পবিদ্যা – চতুর্থ সমস্যাটি হল, লেখকের অল্পবিদ্যার সমস্যা। লেখক বিজ্ঞান কম জানলে তাঁর রচনায় থাকা ভুল তথ্য বা অস্পষ্ট তথ্য সাধারণ পাঠকের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
উপসংহার – তাই প্রাবন্ধিকেরা পরামর্শ হল, বৈজ্ঞানিক লেখা প্রকাশের আগে অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে তা অবশ্যই যাচাই করে নেওয়া উচিত।
৬.২ “আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা” – বক্তার আসল নাম কী? তাঁর ফাউন্টেন কেনার ঘটনাটি সংক্ষেপে বিবৃত করাে। (১+৪)
উত্তরঃ বক্তার আসল নাম – নিখিল সরকার।
স্থান – ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনায় লেখক জানিয়েছেন কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের একটি নামি দোকানে তিনি ফাউন্টেন পেন কিনতে গিয়েছিলেন।
অভিজ্ঞতা – ফাউন্টেন পেন আবিষ্কার পেনের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে এক অফুরন্ত কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিল। ফাউন্টেন পেন কিনতে যাওয়া – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকবছর পরে কোনো – একদিন লেখক কলেজ স্ট্রিটের একটি নামি দোকানে ফাউন্টেন পেন কিনতে গিয়েছিলেন। দোকানদার তাঁকে পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সোয়ান, পাইলট হরেক রকম পেনের নাম ও তাদের দামের কথাও বলেন। তাঁর পকেটের অবস্থা বুঝতে পেরে দোকানদার তাঁকে একটা সস্তা জাপানি পাইলট কলম কিনতে বলেন। দোকানদার পেনটির ঢাকনা খুলে একটি কাঠের বোর্ডের ওপর ছুঁড়ে দেন। সার্কাসে যেমন জীবন্ত মানুষের দিকে ছুরি ছুঁড়ে দেওয়ার পরও সে অক্ষত থাকে, বোর্ড থেকে খুলে দোকানদারও দেখান, পেনটার নিব অক্ষত আছে। তারপর তিনি দু-এক ছত্র লিখেও দেখান। আনুমানিক পনেরো-ষোলো বছরের কিশোর লেখকের কাছে পেনটি জাদুপেন বলেই মনে হয়। তবুও – লেখক পরবর্তীকালে অনেক ফাউন্টেন পেন কিনলেও বহুদিন ওই জাপানি পাইলটটি তিনি যত্ন করে রেখেছিলেন।
৭। কম-বেশি ১২৫ শব্দে যে – কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও (৪)(Madhyamik Bengali 2020)
৭.১ “এইবার হয় তাে শেষ যুদ্ধ!” – কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কেন? (১+৩)
উত্তরঃ
এখানে পলাশির যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
কখনোই কোনো যুদ্ধের আগাম পরিণাম জানানো যায় না। পলাশির যুদ্ধের মতো যুদ্ধের ক্ষেত্রে তো নয়ই। কারণ এই যুদ্ধে লিপ্ত ছিল একাধিক পক্ষ এবং প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা রকমের। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি, পারিবারিক প্রতিহিংসা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের বাসনা ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতা এর সঙ্গে মিশে ছিল। তাই লড়াইটা যে নিছক সিরাজ বনাম কোম্পানি ছিল না-সেটা নবাব নিজেও বুঝেছিলেন। তাঁর সপক্ষে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মীরজাফর, রাজবল্লভ যে চূড়ান্ত যুদ্ধে তাঁর পাশে নাও থাকতে পারেন-এই সত্যটি বুঝতে সিরাজের কোনো অসুবিধেই হয়নি। এই যুদ্ধ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যার ঘটনাস্থল পলাশি। চূড়ান্ত ক্ষয় ও বিনষ্টের ছবিটি আগাম দেখতে পেয়ে তাই সংবেদনশীল নবাবের হৃদয় হাহাকার করে উঠেছে, যার প্রকাশ ঘটেছে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যের মাধ্যমে।
৭.২ “দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা।” – বক্তা কে? তারা কেন দরবার ত্যাগ করতে চান? (১+৩)
উত্তরঃ
বক্তা নবাব সিরাজের প্রধান সিপাহসালার মীরজাফর।
বাংলার নবাবি রাজত্বের গৃহবিবাদের একটি স্পষ্ট মুহূর্ত ধরা পড়েছে নাট্যাংশের এই অংশে। সিরাজকে সমর্থন ও সহযোগিতা জুগিয়ে যেতে চান যাঁরা, সেই মোহনলাল, মীরমদন এবং গোলাম হোসেনদের পদ, তাঁদের ক্ষমতা এবং নবাবের বিচক্ষণতাকে মীরজাফর কটাক্ষ করেছেন। এই মন্তব্যে মীরজাফরের সিরাজের শিবির ত্যাগ করে বিরোধী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে যোগদানের ইচ্ছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মীরমদন এবং অন্যরা মীরজাফরের নিষ্ক্রিয়তা, নবাবের সপক্ষে অস্ত্রধারণে অনীহার সমালোচনা করেন। এইসময় অনিবার্যভাবই উভয়পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ ও পালটা দোষারোপ করতে থাকেন। তখন মীরমদন নবাবকে পূর্ণ সাহায্যদানের কথা ঘোষণা করলে ক্ষিপ্ত সিপাহসালার তাঁর অনুগামী – জগৎশেঠ, রায়বল্লভদের নিয়ে দরবার ত্যাগ করতে উদ্যত হন। বস্তুতপক্ষে মীরজাফরের এমন কটাক্ষ এবং অভিযোগ আসলে অজুহাত মাত্র। তাঁদের নবাবের সঙ্গত্যাগ গোপন চক্রান্তেরই অংশ ছিল।
৮। কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে – কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও (৫×২=১০) (Madhyamik Bengali 2020)
৮.১ “ফাইট কোনি, ফাইট” – সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে গিয়ে কোনিকে কী ধরনের ‘ফাইট’ করতে হয়েছিল, নিজের ভাষায় লেখ। ৫
উত্তরঃ
সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠার পথে কোনির লড়াই ছিল ত্রিমুখী।
প্রথমত, তার লড়াই ছিল নিজের সঙ্গে। গঙ্গায় সাঁতার কেটেই খুশী কোনি প্রথমে প্রত্যাখ্যান করেছিল ক্ষিতীশকে। “আমার দরকার নেই শিখে, যা জানি তাই যথেষ্ট।”- ক্ষিতীশের সাঁতার শেখানোর প্রস্তাবে এই ছিল ক্ষিতীশের উত্তর। এমনকি প্রথমদিকের অনুশীলনেও সে মনোযোগী ছিল না। এখান থেকে নিজের মানসিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। দ্বিতীয়ত, কোনির লড়াই ছিল অভাবের সঙ্গে। টিফিনের পয়সা বাড়িতে দিয়ে, লীলাবতীর দোকানে কাজ করে সে যেন অভাবের সঙ্গে এক অসমযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। বড়োলোকের মেয়ে হিয়ার প্রতি তাই এক সহজাত ক্রোধ বয়ে নিয়ে গিয়েছে সে। এই লড়াইটা তাকে নিজেকেই করতে হয়েছে। মাদ্রাজে বাংলা দলে তাকে আলাদা করে রাখা হয়েছে, চোর বদনাম দেওয়া হয়েছে। অপমান তার ভিতরে প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়েছে। আর সাঁতারের পুলে যেন তারই বিস্ফোরণ ঘটেছে, তৃতীয়ত, কর্মকর্তাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধেও তাকে লড়তে হয়েছে। ক্ষিতীশের সঙ্গে বৈরিতার শিকার হয়েছে কোনি, জুপিটারের প্রতিযোগিতা, রাজ্য সাঁতার সর্বত্র তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, যা চরম পর্যায়ে গিয়েছে জাতীয় সাঁতারে তাকে বঞ্চিত করে। কিন্তু একটা অতর্কিত সুযোগ তার ভিতরের আগুনকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সব অপমানের জবাব দিয়েছে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে। লড়াই তাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
৮.২ “খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?” – বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছেন? (১+৪)
উত্তরঃ
উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা কোনি।
খিদ্দা কোনিদের বাড়িতে গিয়েছিল অনুশীলনে কোনির গরহাজির থাকার খবর নিতে। সেখানে গিয়েই জানতে পারে যে, আগের রাত্রে কোনির দাদা কমলের মৃত্যু হয়েছে। কমল ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাই তার মৃত্যুতে অসহায় কোনির মনে বেঁচে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা ধরা পড়েছে। ক্ষিদ্দা এর আগেই কোনিকে টিফিনের জন্য এক টাকা করে দিত, যা কোনি বাড়িতে দিত। এবারে তার বাড়িতেই কোনির খাওয়ার ব্যবস্থা করে ক্ষিদ্দা। স্ত্রী লীলাবতীর দোকানে তালা খোলা, ঝাঁট দেওয়া, জল তোলা এবং ফাইফরমাস খাটার কাজেও লাগিয়ে দেয়। মাইনে মাসে চল্লিশ টাকা। এ ছাড়া লন্ড্রির দোকানে সরবরাহের জন্য দর্জির দোকানের ছাঁট কাপড় কিনে তা কাটতে দেয় কোনির বাড়িতে। এতেও কোনির পরিবারের কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ হয়। এভাবেই ক্ষিদ্দা কোনি এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।
৮.৩ “খাওয়ায় আমার লােভ নেই। ডায়েটিং করি।” – বক্তা কে ? তার ডায়েটিং – এর পরিচয় দাও। (১+৪)
উত্তরঃ
মতি নন্দীর লেখা কোনি উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়ে বিষ্টু ধর তাঁর ডায়েটিং – এর জন্য গর্ব প্রকাশ করেছেন।
সাড়ে তিন মন ওজনের বিষ্টু ধর তাঁর নিজের মতো করে ডায়েটিং করতেন। সেই কারণে তিনি যথেষ্ট গর্বিতও ছিলেন। বিষ্টু ধর গঙ্গার ধারে বসে ক্ষিতীশকে নিজের ডায়েটিংয়ের কথা বিস্তৃতভাবে জানিয়েছেন। বিষ্ট ধর আগে রোজ আধ কিলো ক্ষীর খেতেন। এখন সেটা তিনশো গ্রাম হয়েছে। আগে জলখাবারে কুড়িটা লুচি খেতেন, এখন তা পনেরোটা হয়েছে। এখন নিয়ম করে মেপে তিনি আড়াইশো গ্রাম চালের ভাত খান। রাত্রে খান মাত্র বারোটা রুটি। ঘি খাওয়া তিনি প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। শুধু গরম ভাতের সঙ্গে তিনি চার চামচ ঘি খান। বিকেলে তাঁর খাবার তালিকায় রয়েছে দু-গ্লাস মিছরির শরবত আর কেবল চারটে কড়াপাকের সন্দেশ। প্রসঙ্গত বিষ্ট্র ধর জানিয়ে দেন যে, বাড়িতে রাধাগোবিন্দের মূর্তি থাকায় মাছ মাংস তিনি ছুঁয়েও দেখেন না। এত কিছুর পরেও বিছু ধর গর্বিতভাবে বলেন যে, সংযম ও শারীরিক কষ্ট স্বীকারে তিনি যথেষ্টই সক্ষম। তাঁদের বংশে কখনোও কারও হাটের অসুখ হয়নি।
৯। চলিত গদ্যে বঙ্গানুবাদ করাে (৪) (Madhyamik Bengali 2020)
Home is the first school where the child learns his first lesson. He sees, hears and begins to learn at home. In a good home honest and healthy men are made. Bad influence at home spoils a child.
উত্তরঃ গৃহই হল প্রথম বিদ্যালয় যেখানে শিশু তার প্রথম পাঠ গ্রহণ করে। সে দেখে, শুনে এবং গৃহেই শিখতে শুরু করে। উত্তম গৃহে সৎ এবং স্বাস্থ্যবান মানুষ তৈরি হয়। গৃহের কুপ্রভাব একটি শিশুকে নষ্ট করে দেয়।
১০। কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে – কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও (৫×১=৫) (Madhyamik Bengali 2020)
১০.১ মাধ্যমিকের পর কী বিষয় নিয়ে পড়বে, এ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করাে।
উত্তরঃ
অনিমা – আচ্ছা, মাধ্যমিকের পর কী নিয়ে পড়বি ভেবে রেখেছিস কিছু?
দীপালি – আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা আমি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করি। ফলে আমাকে সায়েন্স নিয়েই পড়তে হবে।
অনিমা – ‘পড়তে হবে’ – এভাবে বলছিস কেন? তুইও কি তাই চাস না?
দীপালি – না রে, আমার বরাবরের শখ সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার। যদি আমাকে আমার ইচ্ছেমতো পড়তে দেওয়া হত, তাহলে আমি নিশ্চয়ই সাহিত্য বিভাগের কোনো একটা বিষয়ই বেছে নিতাম।
অনিমা – সে কী! তুই তোর নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুযায়ী পড়তে পারবি না কেন? দ্যাখ দীপালি, এই সিদ্ধান্তটা কিন্তু জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত। এর ওপরেই নির্ভর করছে তুই ভবিষ্যতে কী নিয়ে পড়াশোনা করবি, কোন্ দিকে এগোবি, এমনকি তোর পেশা কী হতে চলেছে-সব।
দীপালি – বুঝতে পারছি। কিন্তু বিজ্ঞান শাখায় আমার পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই বেশ ভালো হয়। তাই বাবা-মাও আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
অনিমা – কিন্তু এটা তো ঝাকহ নেওয়া হয়ে যাচ্ছে, তাহ না? তুহ পড়তে ভালোবাসিস একটা বিষয়, তোকে পড়তে হবে অন্য আর – একটা বিষয় – এটা কি ঝুঁকি নয়?
দীপালি – হ্যাঁ, কিন্তু ওঁদের মতে, চাকরির বাজারে যে পরিমাণ মন্দা, তাতে নাকি সায়েন্স পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অনিমা – এখন আর চাকরি সম্পর্কে সেই পুরোনো ধারণা নিয়ে পড়ে থাকার কোনো অর্থ হয় না। বিভিন্ন বিষয়ের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়ে গেছে বিবিধ গবেষণার সুযোগও। তাই এই ভয়টা অমূলক। কিন্তু নিজের পড়ার বিষয়টার প্রতি যদি তোর ভালোবাসাই না থাকে, তবে সেটা নিয়ে এগোবি কী করে?
দীপালি – দেখি, বাবা-মাকে এটাই বোঝাতে হবে যে, শুধু চাকরি পাওয়ার জন্যই নয়, ভালোবেসেও বিষয়টি পড়তে হয়। নাহলে সায়েন্স নিয়ে পড়ে ফল খারাপ হলে চাকরি পেতেও সমস্যাই হবে।
১০.২ তােমার এলাকায় অরণ্য সপ্তাহ পালিত হ’ল – এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করাে।
উত্তরঃ
অরণ্য-সপ্তাহ উদ্যাপনে মধ্যমগ্রাম
বিশেষ সংবাদদাতা, মধ্যমগ্রাম, ৮ আগস্ট – মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা গত ৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পালন করল অরণ্য-সপ্তাহ। সপ্তাহব্যাপী এই অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকগণ এবং এলাকার বিধায়ক, পুরপিতা ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। ৩০ জুলাই মধ্যমগ্রাম চৌমাথা থেকে মধ্যমগ্রাম স্টেশন পর্যন্ত শোভাযাত্রা সহকারে বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠান পালিত হয়। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় নজরুল শতবার্ষিকী সদনে অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক গীতি-আলেখ্য ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ পরিবেশিত হয়। এলাকার বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এবং এ – বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করেন। পুরসভার চেয়ারম্যান পরিবেশদূষণ থেকে মধ্যমগ্রামকে মুক্ত করার সংকল্প ঘোষণা করেন। চেয়ারম্যান তাঁর বক্তব্যে জঞ্জালে ভরা মধ্যমগ্রামের ক্রমশ বেড়ে চলা প্রাকৃতিক দূষণের কথা বলতে গিয়ে আরও বেশি করে গাছ লাগানোর ব্যাপারে সকলকে এগিয়ে আসতে বলেন। অঞ্চলের প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের তিনি এই বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সমাপ্তি ভাষণ দেন মধ্যমগ্রামের কুমুদপুর হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক সন্তোষ বিশ্বাস মহাশয়।
১১। কম-বেশি ৪০০ শব্দে যে – কোনাে একটি বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করাে (১০) (Madhyamik Bengali 2020)
১১.১ বিজ্ঞানের ভালাে মন্দ
উত্তরঃ
“তোমার কাজ/ আগুনকে ভালোবেসে উন্মাদ হয়ে যাওয়া নয়/
আগুনকে ব্যবহার করতে শেখা।”
– বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ভূমিকা – পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। দৈনন্দিন জীবন থেকে গ্রহান্তরে জীবনের সন্ধান করা- প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানই হয়েছে মানুষের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সবক্ষেত্রে মানুষের বিজ্ঞাননির্ভরতা কখনও মানুষের আবেগ অনুভূতি ও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করে দিচ্ছে কিনা এটাই হয়ে উঠেছে একুশ শতকের চেতনাসম্পন্ন মানুষের অন্যতম বিবেচ্য বিষয়।
বিজ্ঞানের অবদান – আজকের গোটা মানবসভ্যতাই বিজ্ঞানের অবদান। প্রতিদিনের জীবনে সকাল থেকে সন্ধে বিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়েই মানুষ চলে। বিজ্ঞান যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শরীরে অদৃশ্য ডানা লাগিয়ে মানুষ এখন অনায়াসে চলে যেতে পারে পৃথিবীর যে – কোনো প্রান্তে। হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোন মুহূর্তে সংযোগ গড়ে দেয় অন্য গোলার্ধের কোনো মানুষের সঙ্গে। শুধু কথা বলা নয়, লাইন, স্কাইপ ইত্যাদির সাহায্যে মা তাঁর বহুদূরে থাকা ছেলেকে পর্দায় দেখতে পারেন। কৃষিতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ নিয়ে এসেছে যুগান্তর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি মৃত্যুকে হয়তো পরাজিত করতে পারেনি, কিন্তু মানুষের জীবনকালকে আরও দীর্ঘ করেছে। কম্পিউটারের আবিষ্কার আলাদিনের আশ্চর্যপ্রদীপের সন্ধান দিয়েছে মানুষকে। নেট-ব্যাংকিং, অনলাইন কেনাকাটা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের হদিস-সবই সম্ভব হয় ইনটারনেট সংযোগের মাধ্যমে। বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবীর বুকে আজ মানুষের ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।
সংকটের স্বরূপ – দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের ঝোঁক তাকে ক্রমশই ভোগবাদের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছে। সুখস্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি আকর্ষণ মানুষের মধ্যে জন্ম দিচ্ছে সীমাহীন লোভ ও চাহিদার। মানুষ নিজের সুখের স্বার্থে পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের অবহেলা করছে, তাদের থাকার জায়গার সংকট তৈরি করছে, মানুষ তার নিজের স্বার্থে জীববৈচিত্র্যকে বিপন্ন করছে। ভোগবাদী চাহিদা যে ইঁদুরদৌড়কে আহবান করছে তা শৈশবকে অনাবশ্যক চাপে ফেলে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে মানসিক অবসাদ। আমরা এমন একটা সমাজ তৈরি করছি যেখানে টাকাপয়সাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের প্রধান মাপকাঠি হয়ে উঠেছে। আর নৈতিক মূল্যবোধ, নান্দনিক ধারণা সেখানে ক্রমশ অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষকে যন্ত্রমানবে পরিণত করেছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সহানুভূতির জায়গাগুলো ক্রমশই নষ্ট হচ্ছে। মানুষ ক্রমে ক্রমে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। ফলে সামাজিকতাবোধের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যন্ত্রকে ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কাজকর্ম ঘটছে। সাইবার ক্রাইম তো আধুনিক সমাজের সর্বস্তরে আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠছে। টুইটার, ফেসবুক ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অতিরিক্ত যন্ত্রনির্ভরতা, বিশেষত কম্পিউটারের সর্বাত্মক ব্যবহার মানবসম্পদের বিকাশের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে দিচ্ছে।
উপসংহার – বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারই পারে এই সংকটমুক্তি ঘটাতে। অব্যাহত রাখতে হবে শিল্প-সাহিত্যের চর্চাকে, আর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নগরায়ণকে। মনে রাখতে হবে বিজ্ঞানের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য বিজ্ঞান। তবেই তৈরি হতে পারে শঙ্কামুক্ত এক সুন্দর পৃথিবী।
১১.২ একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
উত্তরঃ
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
ভূমিকা – ভ্রমণ মানে অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানা। আর সেই ভ্রমণ যদি হয় বন্ধুদের সঙ্গে, পাশে থাকে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের নির্দেশনা ও সহচার্য তাহলে তো কথাই নেই। কিছুদিন আগে আমরা এরকমই এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে দিন কয়েকের জন্য মুর্শিদাবাদ ঘুরে এলাম।
যাত্রা শুরু – ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি লালগোলা এক্সপ্রেস ধরব বলে আমরা সকলে শিয়ালদহ স্টেশনে জড়ো হলাম। আমরা মানে ক্লাস নাইনের তেতাল্লিশ জন ছাত্র, তিন জন স্যার আর ট্যুর অপারেটরের লোকজন। আমাদের আনন্দ তখন দেখে কে! পাখি যেন উড়তে শিখেছে। বাবা-মায়ের মুখগুলো দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল যেন ছেলেরা অনেকদিনের জন্য অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। ঠিক ১০.৩০ মিনিটে আমাদের ট্রেন ছাড়ল।
অতঃপর মুর্শিদাবাদ – আমরা নির্ধারিত সময়ে মুর্শিদাবাদ পৌঁছোলাম। হোটেলের ঘরে আমার তিন সঙ্গী হল আকাশ, সৌম্য আর সায়ন। ব্যাগপত্তর রেখে তিনজনে ঘরের মধ্যে খানিক হুটোপাটি করে নেমে এলাম হোটেলের লনে। বাবা-মার শাসনহীন এক মুক্ত জীবনের উল্লাস যেন আমাদের পেয়ে বসেছে। ২৮ জানুয়ারি সকালে আমরা গেলাম হাজারদুয়ারি, মিউজিয়াম প্যালেস। নবাবি আমলের অজস্র জিনিস মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। এরপর গেলাম ইমামবড়া আর ঘড়িঘর দেখতে – ঘড়িটা অবশ্য অচল হয়ে আছে। সিরাজ-উদ্দৌলার নিজের হাতে তৈরি মদিনা এবং কামানও দেখলাম। অদূরে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা, তার তীরে সিরাজের সমাধি। এই গঙ্গা যেন সেই ইতিহাসের একমাত্র সাক্ষী। পরদিন গেলাম কাটরা মসজিদ। এই মসজিদেই রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র সমাধি। সেখান থেকে গেলাম জাহানকোষার তোপখানা দেখতে। সুজিত স্যার আমাদের বললেন, ‘জাহানকোষা’ কথাটির অর্থ বিশ্ববিধ্বংসী। সেখান থেকে মতিঝিল। বিশাল অর্ধচন্দ্রাকৃতি ঝিলের পাশে এক অতি প্রাচীন মসজিদ যেন তার রহস্যময়তা নিয়ে আমাদের আহবান করছিল। শেষদিনে আমরা গিয়েছিলাম কাঠগোলা বাগান দেখতে। এটি একটি জৈন মন্দির। পুকুর-গাছপালা দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরে মাইকেল এঞ্জেলোর একটি মর্মর মূর্তি রয়েছে। এরপর নূরপুরে গেলাম রেশমচাষ দেখতে। মুর্শিদাবাদের স্মারক হিসেবে দু-একটা রেশমগুটিও সংগ্রহ করে নিলাম।
অন্যকথা – দেখলাম অনেক কিছু, জানলাম অনেক না-জানা বিষয়। আর তার সঙ্গেই অনুভব করলাম জীবনের এক অচেনা দিক। এতজন বন্ধু একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, থাকা, ঘুরতে যাওয়া, নতুন কিছু দেখার আনন্দ ভাগ করে নেওয়া-এসব সারা জীবনের সঞ্চয়। স্যারেদের সঙ্গে গুরুগম্ভীর সম্পর্কটা যেন অনেক সহজ মনে হতে লাগল। সুজিত স্যারের মজা করা, প্রদীপ স্যারের আবৃত্তি-স্যারেদের এভাবে ক্লাসরুমে তো পাই না। তাই ফেরার সময় স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ হয়ে গেল। ট্রেনে ওঠার পর থেকে অনেকদিন পর্যন্ত তা ছিল। হয়তো এই মন খারাপই আরণ্ড মধুর করে রেখেছে মুর্শিদাবাদের স্মৃতি।
১১.৩ আমাদের পরিবেশঃ সমস্যা ও প্রতিকার
উত্তরঃ
আমাদের পরিবেশঃ সমস্যা ও প্রতিকার
“এই নদী, এই মাটি বড়ো প্রিয় ছিল/ এই মেঘ, এই রৌদ্র,
এই ইবাতাসের উপভোগ/আমরা অনেক দূরে সরে গেছি,
কে কোথায় আছি?”
– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভূমিকা – একুশ শতকের পৃথিবী যে বিপদকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন সর্বনাশের প্রহর গুনছে তার নাম পরিবেশদূষণ। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে গতিশীল এই সভ্যতা দূষণের আক্রমণে প্রতিমুহূর্তে যেন মৃত্যুর হিমশীতলতাকে অনুভব করছে।
পরিবেশ – যে পরিমন্ডলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীজগৎ বেঁচে থাকে ও বড়ো হয়ে ওঠে তাকেই তার পরিবেশ বলে। প্রাণীজগৎ ও প্রকৃতিজগতের সমন্বয়ে পরিবেশ গঠিত হয়। চারপাশের গাছপালা, নদীনালা, অরণ্য, পাহাড় কিংবা মরু অঞ্চল মিলে তৈরি হয় মানুষের পরিবেশ। অধ্যাপক সি সি পার্ক বলেছেন – “কোনো বিশেষ সময়ে ও বিশেষ স্থানে মানুষের চারপাশে ঘিরে থাকা সামগ্রিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।”
পরিবেশের দূষণ – পরিবেশ যখন নানা নেতিবাচক কারণে প্রভাবিত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাকেই পরিবেশদূষণ বলে। পরিবেশদূষণের ফলে পরিবেশের গুণগত মানের অবনমন ঘটে। প্রাকৃতিক দূষণের ক্ষেত্র অনুসারে পরিবেশদূষণকে বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ, শব্দদূষণ ইত্যাদি নানা ভাগে ভাগ করা যায়।
দূষণের কারণ – কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি ক্রমাগত বায়ুকে দূষিত করে চলেছে। শিল্পজাত ও কৃষিজাত বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ, গৃহস্থালির আবর্জনা ইত্যাদি জলদূষণ ঘটাচ্ছে। বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, শিল্পের বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি মাটিতে মিশে গিয়ে মৃত্তিকাদূষণ ঘটাচ্ছে। যানবাহনের শব্দ, শব্দবাজির ব্যবহার, লাউডস্পিকারের শব্দ ইত্যাদি শব্দদূষণের কারণ।
দূষণের ফলাফল – পরিবেশবিজ্ঞানী সেম্পল মানুষকে বলেছিলেন ‘ভূপৃষ্ঠের ফসল’ এবং ‘প্রকৃতির সন্তান’। স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশের বিপর্যয় মানবজীবনকে দারুণভাবেই প্রভাবিত করে। (i) শারীরিক অসুস্থতা – এই দূষণের কারণেই দেখা দেয় ফুসফুস, হৃদযন্ত্রের নানা অসুখ। জল ও মৃত্তিকাদূষণ কলেরা, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড এরকম নানা অসুখকে নিশ্চিত করে। (ii) বিশ্ব উন্নায়ন – শিল্পসভ্যতার অনিয়ন্ত্রিত উন্নতির ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে, যা কিনা বিশ্ব উন্নায়নের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্রে জলন্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধ্বংসের বার্তা নিয়ে আসছে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ শ্রেণির অরণ্য চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। (iii) বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি – পরিবেশদূষণের অন্যতম ফলস্বরূপ পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, তোসমানিয়ান টাইগার, কোয়ায়া ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির সুখি, টেকোপা পাপ – এর মতো মাছ।
প্রতিকারের পথ – পরিবেশদূষণ প্রতিরোধের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দূষণের কারণগুলিকে খুঁজে নিয়ে সেগুলি রোধে সচেষ্ট হওয়া। যেমন, যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার, দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে বায়ুদূষণ ঠেকানো যায়। জৈব সারের ব্যবহার মৃত্তিকাদূষণ কমায়। তবে দূষণ প্রতিরোধে সবথেকে কার্যকরী হল নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করা এবং সামাজিক বৃক্ষরোপণ। নাগরিক সচেতনতা এবং প্রশাসনিক সক্রিয়তা-এই দুয়ে মিলে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার – একুশ শতকের সভ্যতার কাছে চাঁদে পৌঁছে যাওয়া যতটা গুরুত্বের বিষয় তার থেকেও পৃথিবীকে রক্ষা করা অনেক বেশি প্রয়োজনের। অনেকগুলো শীর্ষসম্মেলন পার করেও পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়কেরা কোনো নিশ্চিত আশার বাণী শোনাতে পারেননি। শঙ্কার এই দিনযাপনই আজকের সভ্যতার নিয়তি।
১১.৪ খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ
উত্তরঃ
খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ
ভূমিকা – স্বামী বিবেকানন্দ দেশের তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে।” শুধু শুষ্ক, তার্কিক আলোচনা কিংবা পাঠাভ্যাস যে একজন ছাত্রকে পরিপূর্ণ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে না, এই বিষয়টি বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন। আমাদের চিন্তা-বুদ্ধি-স্মরণ- মনন সবেরই ধারক এই শরীর। তাই শরীরের অবনতি বা বিলোপ মানেই অস্তিত্বের বিনাশ। ক্ষয়প্রাপ্ত, রোগজীর্ণ কিংবা অপুষ্ট শরীরে মানুষ শারীরিক বা মানসিক কোনো কাজই করতে পারে না। আর তাকে সতেজ রাখতে প্রয়োজন শরীরচর্চা, যার অন্যতম উপায় হচ্ছে নিয়মিত খেলাধুলো করা।
শরীরচর্চা ও খেলাধুলো – খেলাধুলো আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে আধুনিক নগরসভ্যতায় নগরায়ণের কারণে মাঠ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নীরোগ শরীর ও সতেজ মন তৈরিতে খেলাধুলো আজ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। অঙ্গসঞ্চালন, দৌড়ঝাঁপের মাধ্যমে মানুষের শরীরের জড়তা কাটে, সে হয়ে ওঠে তরতাজা ও প্রাণবন্ত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেনে খেলাধুলো করলে অল্প পরিশ্রমে শরীর ক্লান্ত হয় না এবং সেখানে হতাশা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা বাসা বাঁধে না।
খেলাধুলোর প্রকারভেদ – মূলত দুই ধরনের খেলাধুলো দেখা যায়। যথা-ইনডোর গেম এবং আউটডোর গেম। ইনডোর গেম বলতে বোঝায় যে ধরনের খেলাধুলো ঘরে বসে করা সম্ভব-যেমন লুডো, দাবা ইত্যাদি। আর আউটডোর গেম বলতে বোঝায় যে খেলাগুলি বাড়ির বাইরে মাঠেঘাটে করা হয় – যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ইত্যাদি।
চরিত্রবিকাশ ও খেলাধুলো – খেলাধুলো, তা যে ধরনেরই হোক না কেন, সেটি দলগত বিষয়। তাই খেলার প্রথম উপযোগিতাই হল শারীরিক বিকাশসাধনর পাশাপাশি খেলাধুলো আমাদের মানসিক বিকাশেও সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কোনো কাজ করার প্রবণতা, সহমর্মিতা এবং সহানুভূতির বোধের জন্ম দেয়। খেলাধুলোর নিয়মকানুন আমাদের সংযমী হতে শেখায় এবং নিয়মনীতির চেতনায় দীক্ষিত করে। খেলাধুলোর হারজিত যে অবশ্যম্ভাবী, কখনও এক পক্ষ জয়লাভ করে তো, কখনও অন্য পক্ষ-এই ধারণা লাভ করলে আমরা বৃহত্তর জীবনেও উপকৃত হই, জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে সমানভাবে গ্রহণ করতে শিখি।
আধুনিক জীবনে খেলাধুলো – আধুনিক সমাজে ক্রমশ ভাঙনের রোগ প্রবল হচ্ছে। যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে ভেঙে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করছে। একত্রে মিলেমিশে বাঁচার বোধটাই হারিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খেলাধুলোই পারে আমাদের মধ্যে সকলে মিলেমিশে থাকার ইচ্ছেকে ফিরিয়ে আনতে। পাঠক্রমের চাপ, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার ইঁদুরদৌড় বর্তমান সময়ে ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে যে পর্বতপ্রমাণ বোঝা চাপিয়ে দেয়, তা থেকে বাঁচাতে পারে খেলাধুলোই। পরিবেশদূষণের ফলেও আমাদের শরীর দ্রুত ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলো ও স্বাস্থ্যচর্চা এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের পথ দেখাতে পারে।
উপসংহার – শরীর ও মনকে পরিপূর্ণরূপে উজ্জীবিত করতে খেলাধুলো অন্যতম বিষয়। এর মাধ্যমেই স্বাস্থ্য সুগঠিত হয় এবং নৈতিকতা, সহমর্মিতার মতো মানবিক গুণগুলি বিকাশ লাভ করে। আধুনিক সমাজে এর গুরুত্ব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
[কেবল বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য] (Madhyamik Bengali 2020)
১২। কম-বেশি কুড়িটি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও (যে – কোন চারটি) (১×৪=৪)
১২.১ “নদীকে দেখা হয় নাই।” নদের চাঁদ কত দিন নদীকে দেখেনি?
উত্তরঃ নদের চাঁদ পাঁচদিন নদীকে দেখেনি।
১২.২ “এবারের মত মাফ করে দিন ওদের।” এ কথা কে, কাকে বলেছিলেন?
উত্তরঃ ছদ্মবেশী হরিদা লিচু বাগানে চারজন স্কুলছাত্রকে ধরে ছিলো। তাদেরকে বাঁচাতে এই স্কুলের শিক্ষক হরিদা কে এই কথাটি বলেছিল।
১২.৩ “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা।” কোনটা মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে?
উত্তরঃ তপন একটা গল্প লিখেছিল। তার লেখক মেসোমশাই সেই গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপার ব্যবস্থা করে দিলে সেটাই মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে ছোটোমাসি মনে করেন।
১২.৪ “শিঞ্জিনী আকর্ষী রোষে” – ‘শিঞ্জিনী’ শব্দের অর্থ লেখ।
উত্তরঃ ‘শিঞ্জিনী’ শব্দের অর্থ – ধনুকের ছিলা।
১২.৫ “ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে,” – কে কাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল?
উত্তরঃ রুদ্র সমুদ্রের বাহু আফ্রিকা কে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
১৩। কমবেশি সাতটি শব্দের মধ্যে যে – কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৩×২=৬
১৩.১ “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়” – ‘ঢং’ বলতে এখানে কি বোঝানো হয়েছে? কিসে ঢং নষ্ট হয়ে যাবে?
উত্তরঃ ‘ঢং’ অর্থ – ‘ঢং’ বলতে এখানে অভিনয়কে বোঝানো হয়েছে।
‘ঢং’ নষ্টের কারণ – হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিরাগীর বেশ ধরে অর্থ উপার্জনের জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সেই সন্ন্যাসীর চরিত্রে নিজেকে মিশিয়ে দেন। ফলে চাহিদা ও লোভহীন জীবনদর্শনের কথাই তিনি শুধু বলেন না, প্রণামির টাকা উদাসীনভাবে ফেলে রেখে তিনি আচরণেও তার প্রমাণ রাখেন। হরিদা বলেন যে, বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করলে তাঁর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যাবে।
১৩.১ “বিস্মিত হইল বালা।” – ‘বালা’ কে তার বিসয়ের কারণ কি ছিল?
উত্তরঃ
বালার পরিচয় – উল্লিখিত অংশে ‘বালা’ বলতে সমুদ্রকন্যা পদ্মার কথা বলা হয়েছে।
বিস্ময়ের কারণ – পদ্মা তাঁর সখীদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ধুতীরে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। সেইসময় সমুদ্রের ধারে একটি ভেলা পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী পদ্মা সেখানে যান এবং দেখেন যে, চারদিকে চার সখী-সহ এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ওই মেয়েটির সৌন্দর্য স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করে; তা দেখেই পদ্মা বিস্মিত হয়েছিলেন।
১৩.১ “গল্প গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রাম প্রধানের কানে গেল।” – কোন গল্প ‘গ্রাম প্রধানের’ কানে গেল? তিনি কি করলেন?
উত্তরঃ এই জামা অদলবদলের কাহিনি গ্রামপ্রধানের কানে পৌঁছোয় এবং তাঁরও গল্পটা পছন্দ হয়। তখন তিনি ঘোষণা করেন, অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকার কথা। আর এরপর থেকে সারা গ্রামে তাদের এই ‘অদল বদল’ নামটি প্রচলিত হয়ে যায়।
আরও পড়ুন – Madhyamik Geography Question Paper 2018 With Answer