আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বাড়ির বর্জ্যের ধারণা দাও।
বাড়িতে নানা ধরনের বর্জ্য উৎপাদিত হয়। বাড়ির এইসকল বর্জ্যকে তিনভাগে ভাগ করা যায় –
- কঠিন বর্জ্য – বাড়িতে অনেক ধরনের কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এগুলির মধ্যে কিছুটা জৈব ভঙ্গুর এবং কিছুটা জৈব অভঙ্গুর।
- জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য – রান্নাঘরে সবজির খোসা, খাবারের অবশিষ্ট অংশ, বাসি ফুল, ছেঁড়া কাপড়, পুরোনো ক্যালেন্ডার, খবরের কাগজ, ব্যবহৃত চা পাতা ইত্যাদি জীব বিশ্লেষ্য বা জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য।
- জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য – সাবানের গুঁড়ো, বাতিল টেলিভিশন, নষ্ট মোবাইল, ক্যামেরা, ভাঙা কাপ-প্লেট, কাচের দ্রব্য, প্লাস্টিকের ব্যাগ ইত্যাদি হল জীব অবিশ্লেষ্য বা জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য।
- তরল বর্জ্য – স্নানঘরের ব্যবহৃত জল, রান্নাঘরের থালাবাসন ধোয়া জল, জামাকাপড় কাচা জল এবং অন্যান্য তরল দ্রব্য হল বাড়ির তরল বর্জ্য।
- গ্যাসীয় বর্জ্য – রান্নাঘরের ধোঁয়া, উনুনের ধোঁয়া, ধূপের ধোঁয়া, সুগন্ধি স্প্রে করলে গ্যাসীয় বর্জ্য সৃষ্টি হয়।

পরিবেশকে সুস্থিত রাখতে বর্জ্যকে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবে?
পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গৃহের বর্জ্যকে নানাভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়। এই প্রসঙ্গে 3R -এর ধারণা উল্লেখযোগ্য –
- পরিমাণ হ্রাস (Reduce) – বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্যই হল কম আবর্জনা উৎপাদন করা। এই লক্ষ্যে জিনিসপত্রের অপচয় বন্ধ করে, জীবনযাত্রার পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কম বর্জ্য সৃষ্টি করতে হবে।
- পুনর্ব্যবহার (Reuse) – নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে পরিত্যক্ত দ্রব্য পুনরায় ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন – বাতিল জলের বোতল থেকে ঘর সাজানোর নানা দ্রব্য প্রস্তুত করা, পুরোনো জলের বোতলের সাহায্যে বাগানে জল দেওয়া প্রভৃতি কাজ করা যায়।
- পুনর্নবীকরণ (Recycle) – এই পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী বস্তুতে পরিণত করা হয়। যেমন – জৈব আবর্জনাকে জৈব সারে পরিণত করে বাড়ির বাগানে ব্যবহার করা যায়, পুরোনো খবরের কাগজ থেকে কাগজের মণ্ড তৈরি হয় বা ঠোঙা তৈরি করা যায়।
- প্রযুক্তি ব্যবহার – এর ফলে একদিকে যেমন অপচয় রোধ করা যায় (যেমন – তরল ডিটারজেন্টের ব্যবহারে জল অপচয় কম হয়)। তেমনই বাতিল জিনিসপত্র পুনরায় ব্যবহার করার জন্য বা সেগুলি থেকে ব্যবহারের উপযোগী নতুন জিনিস তৈরি করার উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন।
আমরা রাস্তাঘাটে কী ধরনের বর্জ্যের সম্মুখীন হই?
রাস্তাঘাটে আমরা সবাই প্রতিদিন বিভিন্ন বর্জ্যের সম্মুখীন হই। যেমন –
- কিছু নাগরিকদের একটি অনাগরিক সুলভ আচরণ হল বারান্দা দিয়ে বাড়ির বর্জ্য নীচের দিকে ছুঁড়ে ফেলা। এতে রাস্তাঘাট, গলিপথ এবং রাজপথে সর্বত্র বর্জ্য পড়ে থাকে। আবার,
- পৌরসভা বা পঞ্চায়েত রাস্তার পাশে নাগরিকদের নিক্ষেপিত কঠিন বর্জ্য জমা করে। ফলে কিছু সময়ের জন্য হলেও তা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
- পার্ক, বাজার সর্বত্র বর্জ্য পদার্থের সঞ্চয় দেখা যায়। সেখানে মশা, মাছি এবং নানাধরনের জীবাণুর প্রাদুর্ভাব ঘটে।
- অনেকসময় রাস্তার পাশের ড্রেনগুলি খোলা অবস্থায় থাকে। নিকাশি অবস্থা অবরুদ্ধ হলে বর্জ্য জল রাস্তাকে ডুবিয়ে দেয়।
- শহরের কারখানাগুলি দিনে-রাতে ধোঁয়া নির্গমন করে। কখনো-কখনো এর ফলে আমাদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এভাবেই রাস্তাঘাটে আমরা বর্জ্যের সম্মুখীন হই।

বিদ্যালয়ে আমরা কী কী ধরনের বর্জ্যের সম্মুখীন হই?
বিদ্যালয়ে আমরা নানা ধরনের বর্জ্যের সম্মুখীন হই। যেমন –
- কঠিন বর্জ্য – বিদ্যালয়ে কঠিন বর্জ্যের মধ্যে জৈব ভঙ্গুর এবং কিছু পরিমাণ জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের সৃষ্টি হয়। যেমন –
- জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য – মূলত খাবারের বাতিল অংশ হল বিদ্যালয়ের জৈব ভঙ্গুর বা জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্য। এ ছাড়া কাগজের টুকরো, ভাঙা চক, চকের গুঁড়ো প্রভৃতি হল অন্যান্য জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য।
- জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য – পেনের রিফিল, পেন, প্লাস্টিক, জলের বোতল এসবই হল বিদ্যালয়ের জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য।
- তরল বর্জ্য – বিদ্যালয়ে শৌচাগারে ব্যবহৃত জল এবং হাত-মুখ ধোয়া জল তরল বর্জ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
বর্জ্যের উৎস সম্পর্কে লেখো।
আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বিভিন্ন স্থান থেকে বর্জ্য পদার্থের উৎপাদন হতে পারে। আপাত বিচারে সাধারণত 4 প্রকার মাধ্যম থেকে বর্জ্য উৎপাদন হতে পারে। যথা –
- গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে সৃষ্ট গৃহস্থালির বর্জ্য।
- শিল্প কারখানা থেকে সৃষ্ট শিল্পজাত বর্জ্য।
- কৃষিকাজের মাধ্যমে সৃষ্ট কৃষিজ বর্জ্য।
- পৌরসভার কার্যকলাপের দ্বারা সৃষ্ট পৌর বর্জ্য।
এগুলি ছাড়াও বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে সৃষ্টি হয় চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য এবং পারমাণবিক শিল্প থেকে সৃষ্টি হয় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য প্রভৃতি। যদিও অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্যকে পৌর বর্জ্য এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্যকে শিল্পজাত বর্জ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য পদার্থ সম্পর্কে কী জান?
হাসপাতাল, নার্সিং হোম বা প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে বিপুল পরিমাণে যে বর্জ্য উৎপাদিত হয়, তাকে চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য বলে। এইসব বর্জ্যগুলি ঠিকমতো বা নিয়মানুযায়ী অপসারিত না হলে এর থেকে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্যকে দুভাগে ভাগ করা যায় –
- সংক্রামক বর্জ্য ও
- অসংক্রামক বর্জ্য।
সংক্রামক বর্জ্য –
মোট চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্যের প্রায় 10-12 শতাংশ বর্জ্য হল সংক্রামক বর্জ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
- ব্যবহৃত সূচ, সিরিঞ্জ, ছুরি, কাঁচি, ব্লেড, ক্যাথিটার প্রভৃতি,
- প্যাথোলজিক্যাল বা অপারেশন-সংক্রান্ত আবর্জনা,
- রং, তুলো, গজ, বিভিন্ন ধরনের কাপড়, ব্যান্ডেজ, মানব অঙ্গের ব্যবচ্ছিন্ন অংশ,
- চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ প্রভৃতি।
অসংক্রামক বর্জ্য –
চিকিৎসা-সংক্রান্ত আবর্জনার প্রায় 90 শতাংশই এই জাতীয় বর্জ্য। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
- প্লাস্টিক, খাবারের প্লাস্টিক থালা, ওষুধের মোড়ক,
- রোগীদের না খাওয়া খাবার,
- অফিসের আবর্জনা, কাগজ, শুকনো ফুল ইত্যাদি।
পরিবেশের কঠিন বর্জ্যের ধারণা দাও।
দৈনন্দিন কাজকর্মের ফলে উৎপন্ন আপাত অপ্রয়োজনীয় ও ব্যবহারের অযোগ্য কঠিন পদার্থসমূহকে বলা হয় কঠিন বর্জ্য। আমাদের বাড়ি, অফিস, কলকারখানা, স্কুল, সর্বত্র থেকে কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়ে চলেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
- গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্য – রান্নাঘরে সবজির খোসা, খাবারের বাতিল অংশ, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বাতিল হওয়া লেপ-কাঁথার অংশ, বাসি ফুল, ছেঁড়া কাপড়, পুরোনো ক্যালেন্ডার, ভাঙা কাপ-প্লেট, কাচের টুকরো, পুরোনো জুতো, খবরের কাগজ, ব্যবহৃত চা পাতা প্রভৃতি গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের অন্তর্গত।
- কলকারখানার কঠিন বর্জ্য – কারখানার বাতিল যন্ত্রপাতি, ধাতুর টুকরো, ব্যবহার করা প্লাস্টিক, শ্রমিকের খাবারের বাতিল অংশ, টায়ার, টিউব, ফ্লাই অ্যাশ, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি কলকারখানার কঠিন বর্জ্যের মধ্যে পড়ে।
- কৃষিক্ষেত্রের কঠিন বর্জ্য – ধানের খোসা, আখের ছিবড়ে, খড়, কাঠের গুঁড়ো, পাটকাঠি, প্রাণীজ বর্জ্য, গোবর ইত্যাদি কৃষিক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত বর্জ্য।
- প্যাথোলজিক্যাল বর্জ্য – সূচ, সিরিঞ্জ, কাঁচি, ছুরি, কাপড়, ব্যান্ডেজ, গজ, তুলো ইত্যাদি এর অন্তর্গত।
পরিবেশে তরল বর্জ্যের উৎসের ধারণা দাও।
দৈনন্দিন কাজকর্মের ফলে উৎপন্ন আপাত অপ্রয়োজনীয় ও ব্যবহারের অযোগ্য তরল পদার্থসমূহকে বলা হয় তরল বর্জ্য। এগুলোর প্রতিটি অংশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয় –
- গৃহস্থালির তরল বর্জ্য – রান্নাঘরে থালা-বাসন ধোয়া জল, ঘর মোছার পর নোংরা জল, শৌচাগারের জল, স্নানের ব্যবহার করা জল এবং জামাকাপড় কাচার পর অবশিষ্ট জল তরল বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত হয়।
- কারখানার তরল বর্জ্য – কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা গরম জল, বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত জল, তৈলাক্ত জল ইত্যাদি হল কারখানার তরল বর্জ্যের উদাহরণ।
- কৃষিক্ষেত্রের তরল বর্জ্য – কৃষিতে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক, বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে এসে নদীতে পড়ে, এগুলিও কৃষিক্ষেত্রের তরল বর্জ্য।
পরিবেশে গ্যাসীয় বর্জ্যের ধারণা দাও।
সাধারণত কলকারখানা, যানবাহন, বিভিন্ন গবেষণাগার ইত্যাদি থেকে নির্গত বিভিন্ন গ্যাস, যা পরিবেশের ক্ষতি করে তাকে গ্যাসীয় বর্জ্য বলে। গ্যাসীয় বর্জ্য বর্তমানে পরিবেশের তথা জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এইসব গ্যাসীয় বর্জ্যের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড, সালফারের বিভিন্ন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলি ছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে উৎপন্ন গ্যাসীয় বর্জ্যে বিভিন্ন ধাতব ও অধাতব পদার্থের সূক্ষ্মকণা (কার্বন কণা, লেড ইত্যাদি) মিশ্রিত থাকে। এইসব গ্যাসীয় বর্জ্যগুলির প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গ্রিনহাউস এফেক্ট নামে পরিচিত।
পরিবেশের বিষাক্ত বর্জ্যগুলির ধারণা দাও।
পরিবেশের বিষাক্ত বর্জ্য মানুষের ও পরিবেশের পক্ষে খুব হানিকর। এগুলি মানুষ এবং প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। এরা তিন ধরনের হয় –
- রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য – ঘর ও মেঝে পরিষ্কার করার তরল পদার্থ, ইঁদুর ও পিঁপড়ে মারার বিষ এবং কীটনাশক এই ধরনের বিষাক্ত বর্জ্যের উদাহরণ।
- তেজস্ক্রিয় বর্জ্য – এইসব বর্জ্য থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রধান উৎস হল নিউক্লীয় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র ও নিউক্লীয় জ্বালানি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। অন্যান্য উৎসগুলি হল শিল্পজাত বর্জ্য ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য। এই বর্জ্যগুলির প্রভাবে ক্যানসার হতে পারে। এমনকি জীবদেহের কোশের জিনগত পরিবর্তনও ঘটতে পারে।
- চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য – ক্যাথিটার, ব্যবহৃত সূঁচ, সিরিঞ্জ, কাঁচি, মানব অঙ্গের ব্যরচ্ছিন্ন অংশ, গজ, তুলো এবং চিকিৎসার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এধরনের বর্জ্যের উদাহরণ।
পৌরসভার বর্জ্য সম্পর্কে ধারণা দাও।
পৃথিবীর প্রতিটি শহরেই বর্জ্য উৎপাদিত হয়ে চলেছে। ছোটো ছোটো শহরগুলির তুলনায় বড়ো বড়ো শহরগুলি বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পরিবেশে নির্গমন করে। এর মধ্যে কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই শহরগুলি গড়ে দৈনিক 3000-5000 মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন করে। এইসকল বর্জ্যের মধ্যে গাছের পাতা, খড়, শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, আধপোড়া কয়লা, ভাঙা মাটির ও কাচের পাত্র, ছেঁড়া কাগজ, ডাবের খোলা, পাথর, চামড়া, ধাতু, প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্র, হাড়জাতীয় পদার্থ, ছাই, থার্মোকলের দ্রব্য, বাল্ব, নানা রকমের ইলেকট্রনিক দ্রব্য প্রভৃতি বর্জ্য হিসেবে জমা হয়। এ ছাড়া গৃহস্থালির তরল বর্জ্য, নর্দমার স্লাজ ইত্যাদিও পৌর বর্জ্যের অন্তর্গত।
জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য বলতে কী বোঝ?
জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য হল এমন এক ধরনের বর্জ্য, যা মূলত অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী প্রাণী দ্বারা বিশ্লেষিত হয় এবং অতি সহজেই সরল উপাদান-রূপে প্রকৃতিতে মিশে যায়। শাকসবজির খোসা, পাতা, শুকনো ফুল, বাড়ির বাগানের লতা-পাতা, ডাল, ডাবের খোলা, পুরোনো কাগজ, বইখাতা প্রভৃতি হল জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যের উদাহরণ।
এইসব বর্জ্যকে অর্থাৎ জটিল জৈব পদার্থকে সরল যৌগে পরিণত করার জন্য হাজার হাজার প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অমেরুদণ্ডী প্রাণী রয়েছে। এই ধরনের বর্জ্যগুলি প্রধানত উদ্ভিদ ও প্রাণীজাত উপাদান হয়।
জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য কী? পরিবেশে এদের প্রভাব কেমন?
যেসব বর্জ্য জীব দ্বারা বা প্রাকৃতিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষিত হয় না, ফলে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায়, সেগুলি জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য নামে পরিচিত।
প্রকারভেদ –
এরা দুই ধরনের-
- বিষাক্ত বর্জ্য – অব্যবহার্য রং, রাসায়নিক পদার্থ, বাল্ব, টিউব, সি এফ এল বাল্ব, কীটনাশক প্রভৃতি এই ধরনের বর্জ্য।
- পুনরাবর্তনশীল বা পুনঃচক্রী বর্জ্য – প্লাস্টিক, শ্যাম্পুর পাতা, নানাধরনের বোতল, বিদ্যুতের তার প্রভৃতি এজাতীয় বর্জ্য।
পরিবেশের ওপর প্রভাব –
এরা জীব অবিশ্লেষ্য বলে বহু দিন প্রকৃতিতে একই অবস্থায় থেকে যায়। তাই এরা পরিবেশে বিপদের কারণ। তবে বর্তমানে এই ধরনের বর্জ্যগুলিকে আলাদাভবে সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন পুনরাবর্তনশীল পদ্ধতিতে ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়, অন্যদিকে সম্পদ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
জীবের স্বাস্থ্যের ওপর বর্জ্য কী প্রভাব ফেলে?
হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও সমস্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে নির্গত বর্জ্য নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে –
- কৃমি,
- ফুসফুসের রোগ,
- টিটেনাস,
- হেপাটাইটিস-বি,
- পেপটিক আলসার,
- নানা ধরনের চামড়ার রোগ,
- নানা ধরনের পেটের রোগ,
- জন্ডিস, চোখের অসুখ,
- টাইফয়েড ও আরও অন্যান্য সংক্রামিত রোগ ছড়াতে পারে।
এ ছাড়া এইসব বর্জ্য স্তূপাকারে রাস্তার ধারে জমে থাকলে তা দৃশ্যদূষণ ঘটায়। উপযুক্ত সময়ে বর্জ্য সরিয়ে না নিলে ইঁদুর, ছুঁচো ও অন্যান্য রোগজীবাণু বাহকদের সংখ্যা বেড়ে যায় ও রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়।
ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ পদ্ধতিতে কী কী সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে?
ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ পদ্ধতিতে সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও রয়েছে।
ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ পদ্ধতিতে সুবিধা –
- মাটির মধ্যে ঢাকা দেওয়া থাকে বলে বর্জ্য থেকে কোনো রোগজীবাণু বায়ুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
- বর্জ্য ঢাকা দেওয়া থাকে বলে বায়ুদূষণ হয় না, তাই পরিবেশ দুর্গন্ধহীন থাকে। বর্জ্যে আগুন লাগার সম্ভাবনাও থাকে না।
- ঢাকা দেওয়া জৈব বর্জ্য পদার্থের পচন ঘটলে নানা ধরনের গ্যাস উৎপন্ন হয়। ওই গ্যাস আলাদা করে সংগ্রহ করা যায়। একে ল্যান্ডফিল গ্যাস বলে। এতে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা যায়। ওই গ্যাস সংগ্রহ করলে বায়ুতে দূষক গ্যাসের সংমিশ্রণ ঘটে না।
ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ পদ্ধতিতে অসুবিধা –
অনেকসময় চাপা দেওয়া বর্জ্য পদার্থের মধ্যে দিয়ে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে মাটির নীচের চলে যায়। ফলে নীচের স্তরের মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলস্তর দূষিত হয়। এই বর্জ্য ধোয়া জলকে লিচেট জল বলে।
উন্মুক্তভাবে বর্জ্য জমা বা ওপেন ডাম্পিং বলতে কী বোঝ?
মূল শহর থেকে দূরে কোনো ফাঁকা নীচু জায়গায় নগরের দৈনিক বর্জ্য পদার্থ জমা করা হয়। এইভাবে উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকা জঞ্জাল বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনকে ওপেন ডাম্পিং বলে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার জন্য কোনো পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না এবং খরচও তেমন নেই। অনেকসময় ওইসব বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই পদ্ধতির অনেকগুলি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন –
- বৃষ্টির জল ওই বর্জ্য ধোয়া জল হিসেবে পরিবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে দূষিত করে।
- উন্মুক্তভাবে পড়ে থাকে বলে অসম্ভব দুর্গন্ধ ছড়ায়।
- মশা, মাছি, ইঁদুর, বর্জ্যভুক পাখির আগমন ঘটে, যা থেকে নানাবিধ রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- ওই বর্জ্য পোড়ালে বায়ু দূষণ ঘটে।
বর্জ্য পদার্থকে ভস্মভূত কীভাবে করা হয়?
কঠিন বর্জ্যকে উচ্চতাপে ভস্মভূত করা হয়। সাধারণত শিল্পাঞ্চলগুলিতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। দাহ্য বস্তু পুড়ে গেলে তা থেকে পোড়া ছাই, ধাতু, কাচ ইত্যাদি নিষ্কাশন করা হয়। যেখানে কোনো জায়গার অভাব রয়েছে সেখানেই ভস্মীভূত পদ্ধতি প্রয়োগ হয়। রাসায়নিক কারখানায় বর্জ্য হিসেবে আলকাতরা, আঠালো পেট্রোলিয়াম জাতীয় বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়। ওইসব বর্জ্য পুড়িয়ে তাপ উৎপাদন করা যেতে পারে বা ওই তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তবে বর্জ্য পদার্থকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেললে পরিবেশে খারাপ প্রভাব পড়ে। বাতাসে প্রচুর ফ্লাই অ্যাশ, কার্বন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড এবং নানা জৈব অ্যাসিড উৎপন্ন হয় যা বায়ুদূষণের পাশাপাশি মানুষের ওপরও খুব খারাপ প্রভাব ফেলে।
বর্জ্য কীভাবে জলদূষণ ঘটাচ্ছে?
বর্জ্য জলদূষণও ঘটায়। পৃথিবীর প্রায় 70 শতাংশ স্থান জলাবৃত থাকলেও মানুষ জলভাগেও প্রচুর বর্জ্য সঞ্চয় করছে। পুকুর ও খাল, বিল, জলাশয় সর্বত্র বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে নর্দমা, পুকুর, খালের জলে পচন ঘটছে। জলের দূষণের জন্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি দেশ সমুদ্রেও বর্জ্য নিক্ষেপ করছে যা জলজ বাস্তুতন্ত্রকে বিঘ্নিত করছে। জলজ প্রাণীদের অপমৃত্যু ঘটছে, তাদের প্রজনন বাধা পাচ্ছে ও জলজ বাস্তুতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখোমুখি পড়ছে।
‘ওশান ডাম্পিং’ -এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি কী কী?
‘ওশান ডাম্পিং’ -এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি হল –
- সমুদ্রের জলে তেল বা তেলজাত পদার্থ নিক্ষেপ করলে সামুদ্রিক জীবদের শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। জলের ওপর তেলের স্তর পড়ে যায় ফলে সূর্যালোক সমুদ্রের জলের ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রবালকীটদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
- সমুদ্রের জলে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করলে সেইসব, বর্জ্য আবর্জনা সামুদ্রিক মাছরা খেয়ে ফেলে ও বিষাক্ত হয়ে যায়। এরপর সেই মাছ মানুষ খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
- নোংরা আবর্জনা সমুদ্রে ফেললে সমুদ্রজলের অক্সিজেন ক্রমে নিঃশেষিত হয়ে যায়। যার ফলে সমুদ্রে বসবাসকারী সিল, ডলফিন, সার্ক প্রভৃতি মাছেদের মৃত্যু ঘটে।
- প্লাস্টিক বোতল বা ব্যাগ সমুদ্রের জলে ফেললে সামুদ্রিক প্রাণীরা ভুল করে তা খেয়ে ফেলে মৃত্যুর কবলে পড়ে।

বর্জ্য পদার্থ কীভাবে মাটিদূষণ ঘটাচ্ছে?
বর্জ্য পদার্থ মাটিদূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় –
- ডিটারজেন্ট পাউডার, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মাটির সাথে মিশে তার স্বাভাবিক চরিত্রকে নষ্ট করে দেয়। মাটির উপকারী প্রাণী, জীবাণু, উদ্ভিদকে ধ্বংস করে।
- কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য যেমন – সিসা, মলিবডেনাম প্রভৃতি মাটিতে ভয়ানক দূষণ ঘটায়।
- জৈব অবিশ্লেষ্য পদার্থ যেমন – পলিথিন, প্লাস্টিক মাটির চরিত্র বদলে দেয়।
- পরমাণু বিস্ফোরণ ও পরমাণু শক্তিকেন্দ্রের বর্জ্য মাটিকে বিষাক্ত ও বন্ধ্যা করে দেয়। মাটির তেজস্ক্রিয় দূষণ মাটিকে কয়েক হাজার বছর ধরে বিষাক্ত করে রাখে।
- কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া থেকে পরে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়, ওই বৃষ্টি মাটিকে দূষিত করে।
কীভাবে বর্জ্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
মূলত তিনটি পদ্ধতিতে বর্জ্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যথা –
- বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস – বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম লক্ষ্যই হল বর্জ্য যাতে বেশি উৎপন্ন না হয় তা নজরে রাখা। গৃহস্থালিতে যাতে বেশি আবর্জনা তৈরি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
- পুনর্ব্যবহার – সব আবর্জনা বর্জ্য হিসেবে পরিত্যাগ না করে, কিছু কিছু দ্রব্য যদি সরাসরি পুনর্ব্যবহার করা যায় তাহলে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস করা সম্ভব হয়।
- পুনর্নবীকরণ – বর্জ্য বস্তুকে পুনঃচক্রীকরণ বা পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন – ভাঙা লোহা থেকে লৌহা-ইস্পাত তৈরি করা যেতে পারে।
ভরাটকরণ কী?
সংগ্রহ করা বর্জ্য পদার্থকে নষ্ট করতে ভরাটকরণ বা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (sanitary landfill) খুব গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনার জৈব অংশকে আলাদা করে একটি স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয় ওই জৈব স্তরের উচ্চতা 2 মিটারের মতো হয়। এর ওপর 20-25 সেমি মাটির স্তর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই ক্রমে বর্জ্য এবং মাটির স্তর নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত বিছিয়ে দেওয়া হয়। একেবারে ওপরের স্তরে 1 মিটার মাটি ছড়িয়ে চাপা দেওয়া হয়। যাতে ইঁদুর জাতীয় প্রাণীরা এর ভিতরে ঢুকতে না পারে। মাটির মধ্যস্থিত জীবাণু বর্জ্যের ভৌত এবং রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। তাই মাটির নীচে মিথেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি গ্যাস উৎপন্ন হয়। 4-6 মাসের মধ্যে বস্তুর পচন সম্পূর্ণ হয় এবং জৈব পদার্থ অক্ষতিকারক পদার্থে পরিণত হয়।
বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থ পোড়ানোর আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে কী জান?
বর্জ্যকে উন্মুক্ত পরিবেশে পোড়ানো খুব ক্ষতিকর। তাই আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে, বিপজ্জনক বর্জ্যকে ভস্মভূত করা যায়। যদিও এই পদ্ধতি খুব ব্যয়বহুল তবুও এটি পরিবেশ হিতকর প্রযুক্তি। আবর্জনা পোড়ানোর সময় যে উচ্চতাপ উৎপন্ন হয় তা কাজে লাগিয়ে অনেকসময় ব্যয়ভার কিছুটা কমানো হয়।
এই পদ্ধতিতে উচ্চতাপেও বর্জ্য পদার্থকে সম্পূর্ণ পোড়ানো যায় না। কছুটা অবশিষ্ট থেকেই যায়। ওইসব বর্জ্য পরে সংগ্রহ করে ভরাটকরণ করায় বা সমুদ্রে ফেলা হয়।
ম্যানিওর পিট কী?
ভারতের গ্রামাঞ্চলে বর্জ্য সংগ্রহ বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তেমন আধুনিক ব্যবস্থা নেই। তাই যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপ করার ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটে পরিবেশ দূষিত করে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ম্যানিওর পিট (manure pit) নামক নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।
এই পদ্ধতিতে বাড়ি-সংলগ্ন জমিতে গর্তের প্রয়োজন। প্রতিদিন গর্তের মধ্যে জৈব জঞ্জাল, গোবর প্রভৃতি ফেলে তাকে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এভাবে গর্তটি ভরাট হয়ে গেলে তাকে স্থায়ীভাবে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে গর্তের বর্জ্য সারে পরিণত হবে। এই বর্জ্য সার কৃষিকাজে বা জমিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কম্পোস্টিং বা জৈব সার পদ্ধতিটি কীভাবে কার্যকরী করা হয়?
এই পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্য পদার্থকে, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে পরিণত করা হয়। এই হিউমাসকেই কম্পোস্ট বা জৈব সার বলে। কম্পোস্ট সার তৈরি করার সময় যে কার্বন ডাইঅক্সাইড, জল ও তাপ উৎপন্ন হয় তার ফলে বর্জ্যের মধ্যে উপস্থিত মাছির ডিম, লার্ভা, ক্ষতিকর জীবাণু ও আগাছার মৃত্যু হয়। এই সার সৃষ্টির পর তাতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন এবং ফসফেট -এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য জরুরি।

শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য জল কীভাবে শোধন করা যায়?
শহর, নগরের কলকারাখানা থেকে নির্গত বর্জ্য জলে নানা ধরনের অ্যাসিড, জৈব এবং অজৈব বর্জ্য পদার্থ থাকে। কারখানা থেকে পরিত্যক্ত ওই অম্ল বা ক্ষারীয় জল ছাড়ার আগে প্রশমিত করা দরকার। কিন্তু রাসায়নিক কারখানার বর্জ্য রাসায়নিকভাবে শোধন করা উচিত। এ ছাড়া শহর, নগরের পয়ঃপ্রণালীর জলকেও শোধনাগারের মাধ্যমে শোধন করে ছাড়া উচিত।
নিরাপদ কীটনাশক কী?
কৃষিকার্যে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তার বেশিরভাগই পরিবেশের ক্ষতি করে। কিন্তু কয়েক ধরনের কীটনাশক রয়েছে যা পরিবেশবান্ধব। এইসব পরিবেশবান্ধব কীটনাশককে নিরাপদ কীটনাশক বলে। নিমতেল এমন একধরনের নিরাপদ কীটনাশক। এটি জৈব তেল এবং পরিবেশরক্ষক। জৈব তেল ব্যবহার করলে মাটি, বায়ু, জল এবং কৃষিজ ফসলের দূষণ ঘটে না।
জলশোধন প্রক্রিয়ায় কীভাবে জলকে জীবাণু মুক্ত করা যায়?
জলের জৈবিক অক্সিজেনের চাহিদা বা BOD (Biological Oxygen Demand) কমাতে পারলে জলকে জীবাণুমুক্ত করা যায়, দূষিত জলে নানারকম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, জীবাণু বসবাস করে। ওইসব জীবাণু জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। সেই কারণে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন হ্রাস করতে পারলেই জলকে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব।
‘আবর্জনাই নগদ অর্থ’ – ব্যাখ্যা করো।
আবর্জনা বা বর্জ্য পদার্থকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে তা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং তা অর্থ উপার্জনের রাস্তা হতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে, নিত্যনতুন পদ্ধতিতে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা হচ্ছে। যেমন ফ্লাই অ্যাশকে কাজে লাগিয়ে ইট তৈরি, রাস্তা নির্মাণ, নীচু জমি ভরাট করা, এবং অন্যান্য বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে সার, বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনের মতো বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। অর্থাৎ আবর্জনাকে কেবল আবর্জনা হিসেবে পরিত্যাগ না করে তাকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করা হচ্ছে। তাই বর্তমানে আবর্জনা নগদ অর্থে পরিণত হয়েছে।
ভাগীরথী-হুগলি কীভাবে দূষিত হচ্ছে?
প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গানদী ভারতের জীবনরেখা। এই নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষিক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদীতে এসে পড়ার ফলে নদী আজ দূষিত, বিশেষ করে মোহানা থেকে 600 কিমি উত্তরে বা ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্যের পরিমাণ সর্বাধিক।
- ভাগীরথী-হুগলি নদীর তীরে অবস্থানরত কলকারখানার কঠিন বর্জ্য, তরল নোংরা পদার্থ, বিষাক্ত বর্জ্য ইত্যাদি সরাসরি গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়।
- ভাগীরথী-হুগলি পার্শ্ববর্তী কৃষিক্ষেত্রের কীটনাশক, জৈব বর্জ্য, ভূমিক্ষয়ের মাটি জলবাহিত হয়ে গঙ্গায় মেশে।
- মানুষ প্রতিদিন শুকনো ফুল, প্লাস্টিক, নদীর জলে মলমূত্র ত্যাগ, মৃত পশু এবং মূর্তি বিসর্জন দিয়ে ভাগীরথী-হুগলিকে দূষিত করছে।
- ভাগীরথী- হুগলির পার্শ্ববর্তী শহরের যাবতীয় নোংরা বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে।
- নদীতে যন্ত্রচালিত জলযান বৃদ্ধি পাওয়ায় পোড়া মোবিল, ডিজেল, পেট্রোল সবকিছুর নদীর জলে সংমিশ্রণ ঘটছে।

গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের কর্মসূচিগুলি কী কী?
গঙ্গা অ্যাকশান প্ল্যানটি 1986 সালে শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় 1995 সালে। এই প্ল্যানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল –
- প্রথম পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির 25টি শহরের পয়ঃপ্রণালীর জল পরিশোধন করে গঙ্গায় ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- দূষিত জল যাতে সরাসরি গঙ্গায় না পড়ে, তার জন্য গভীর নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
- গঙ্গানদীর জলপ্রবাহ যাতে সারাবছর বজায় থাকে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- গঙ্গানদীর তীরে যে-কোনো ইটভাটা জাতীয় কারখানা যাতে গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।
- গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত কারখানাগুলি যাতে নোংরা জল ও বর্জ্য নদীতে না ফেলে তার জন্য সজাগ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভাগীরথী-হুগলি নদীকে কেন আমরা দূষণমুক্ত করব?
ভাগীরথী-হুগলি নদীর জলকে পরিষ্কার দূষণমুক্ত রাখতে পারলে বিভিন্ন উদ্দেশ্য সফল হবে।
- নদীর গভীরতা বাড়ানো – নদীর মধ্যে আবর্জনা পড়ে নদীগর্ভের যে গভীরতা হারিয়ে গেছে দূষণমুক্ত করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
- বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা – ভাগীরথী-হুগলি নদীর জল দূষিত হবার কারণে নানা ধরনের জলজ প্রাণীরা হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইলিশমাছ, শুশুক এবং অন্য প্রাণীদের আনাগোনা কমে গেছে। এতে বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে পুনরায় নদীতে জলজ প্রাণীদের ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।
- পানযোগ্য করে তোলা – ভাগীরথী-হুগলি নদীর জলকেই পার্শ্ববর্তী শহরের বাসিন্দারা পান করেন। জলকে দূষণমুক্ত করতে পারলে অধিবাসীরা নিরাপদ জলপান করতে পারবেন।
- মাটিদূষণ নিয়ন্ত্রণ – নদীর দূষণ বন্ধ করতে পারলে নদী তীরবর্তী অঞ্চলকে মাটিদূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। ফলে কৃষির উন্নতি ঘটবে।
- কৃষি ও জলসেচ করা – গঙ্গার জল দূষণ রদ করা গেলে পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিতে জলসেচ, বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদির সুবিধা হবে, যা কৃষি উন্নতির সহায়ক হতে পারে।
গঙ্গা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবেশগত গুরুত্ব কী?
দেশের প্রায় 40 শতাংশ মানুষ গঙ্গানদীর অববাহিকায় বাস করেন। ভারতের মোট জলসম্পদের প্রায় 32 শতাংশ গঙ্গা এবং তার উপনদী থেকে পাওয়া যায়। কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ, পানীয় জলের সরবরাহ, শিল্পের দরকারে জলের জোগান দেওয়া, জল পরিবহণের ব্যবস্থা করা – ভাগীরথী-হুগলির জলের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা এসবের জন্য গঙ্গা উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। গঙ্গা উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে গঙ্গানদী এবং তার অববাহিকার মানোন্নয়ন ঘটানো যাবে।
ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বাড়লে পরিবেশগত কী কী সমস্যা দেখা দেবে?
ভাগীরথী-হুগলি নদীতে দূষণ বাড়লে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা যাবে। যেমন –
- নদীর জলকে শোধন করে পানযোগ্য করতে আরও ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
- নদীর বিষাক্ত জল কৃষিতে জলসেচে ব্যবহার করলে জমি এবং কৃষিজ ফসলের দূষণ মাত্রা বেড়ে যায়।
- নদীর জল যত দূষিত হবে মাছের দূষণও তত বাড়বে। নদীতে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণীরাও দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হবে।
- বর্জ্য বা আবর্জনা যতই নদীর মধ্যে সঞ্চিত হবে ততই নদীর গভীরতা কমবে। এতে বন্যার প্রকোপ বাড়বে।
- বর্জ্য দূষণে নদীর ভাঙন বাড়বে। ফলে হাজার হাজার হেক্টর জমি কৃষির অযোগ্য হয়ে পড়বে। ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে।
- নদীতে ভাসমান নানা বর্জ্য নদীর জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থাকেও নষ্ট করে দেবে।
বিপজ্জনক বর্জ্যগুলি কী কী?
মানুষ এবং জীবজগতের পক্ষে ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্যকে বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থ বলে। সাধারণত সেইসব বর্জ্যকে বিপজ্জনক বর্জ্য বলা হবে যখন তার প্রজ্জ্বলিত হওয়ার ক্ষমতা থাকবে, সহজে বিক্রিয়া করতে পারবে, তেজস্ক্রিয়তা থাকবে, বিষাক্ত হবে এবং ক্ষয়কারী ক্ষমতা থাকবে। তৈলশোধনাগার, ধাতু নিষ্কাশন প্রক্রিয়া এবং রাসায়নিক দ্রব্য তৈরির কারখানা থেকে এধরনের বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়ে থাকে।
বিপজ্জনক রাসায়নিক বর্জ্যকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায় –
- ভারী ধাতু – সিসা, জিঙ্ক, আর্সেনিক প্রভৃতি।
- পেট্রোলিয়াম শিল্পজাত দ্রব্য – গ্রিজ, গ্যাসোলিন, তেল প্রভৃতি।
- কৃত্রিম জৈব যৌগ – DDT, ডাইঅক্সিন প্রভৃতি।
- অ্যাসিড – হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতি।
- জৈবিক – ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ টক্সিন প্রভৃতি।
- তেজস্ক্রিয় দ্রব্যাদি – রেডিয়াম, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি হল বিপজ্জনক বর্জ্য।
হাসপাতালের সম্ভাব্য বর্জ্য পদার্থের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করো।
হাসপাতালের সম্ভাব্য বর্জ্য পদার্থের তালিকা –
- হাসপাতালের সম্ভাব্য সংক্রামক বর্জ্য পদার্থগুলি হল – রক্ত, অপ্রয়োজনীয় অতিসূক্ষ্ম জীবাণুর কালচার, দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মানুষ ও প্রাণীর দেহের টিস্যু, ব্যবহৃত ব্যান্ডেজ ও ড্রেসিং, বাতিল গ্লাভস, রক্ত নেওয়ার ও ইনজেকশন দেওয়ার সিরিঞ্জ, নিডল, থুতু ইত্যাদি।
- হাসপাতালের সম্ভাব্য বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থগুলি হল – বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সামগ্রী, পুরোনো ওষুধ, কেমোথেরাপি এজেন্টস প্রভৃতি।
- হাসপাতালের সম্ভাব্য তেজঃস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থগুলি হল – তেজঃস্ক্রিয় আইসোটোপ, যা ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- হাসপাতালের সম্ভাব্য সাধারণ বর্জ্য পদার্থগুলি হল – কাগজ, প্লাস্টিক, তরল বা অন্যান্য পদার্থ, যা উপরোক্ত তিনটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নয়।
পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব কতখানি?
পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাবগুলি হল নিম্নরূপ –
- দৃশ্যদূষণ – যেখানে সেখানে বর্জ্য জমে থাকলে সেখানকার পরিবেশ দূষিত হয়। পরিবেশের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয় ও ময়লা ও আবর্জনা দৃশ্যদূষণ ঘটায়।
- বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাব – কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্য জল, মাটি ও বায়ুকে দূষিত করে। ওইসব পদার্থ পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে দেয়। বিভিন্ন শারীরিক রোগের সৃষ্টি হয়, মানুষসহ অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবেশ দূষণের ফলে আক্রান্ত হয়।
- জমির উর্বরতা হ্রাস – কৃষি, গৃহস্থালি, শিল্পকেন্দ্রের আবর্জনা কৃষিজমিতে পড়লে ওই জমি অনুর্বর হয়ে যায়। জমির চারিত্রিক পরিবর্তন হয়।
- জলের ওপর প্রভাব – বর্জ্য পদার্থ নদী, জলাশয়, সাগরে পড়লে ওই জল দূষিত হয়ে যায় এবং জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি হয়। মাছেদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মৃত্যু হয়।
- বায়ুতে প্রভাব – বায়ুতে দূষিত বর্জ্য মিশলে বায়ুর দূষণ ঘটে। এমনকি বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়।
- জীববৈচিত্র্য ধ্বংস – দূষিত, বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাবে জলাভূমি, বনভূমির জীববৈচিত্র্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
- মানুষের ওপর প্রভাব – কঠিন বর্জ্য থেকে টাইফয়েড, জন্ডিস, আন্ত্রিক, চামড়ার রোগ, ফুসফুসের রোগ ও অন্যান্য রোগের আক্রমণ হয়।
কঠিন বর্জ্যের উৎসগুলি কী কী?
কঠিন বর্জ্যের উৎসগুলি হল –
- গৃহস্থালির বর্জ্য – বাড়িতে খাবারের বাতিল অংশ, সংসারে ব্যবহৃত নানা ধরনের মশলার প্যাকেট, শাকসবজির বাতিল অংশ, খোসা, পুরোনো কাগজ, প্লাস্টিক বোতল, কাচের শিশি, বাতিল ছেঁড়া লেপকাঁথা, পুরোনো কাপড়, বাতিল রেডিয়ো, টিভি, ভাঙা কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইত্যাদি হল গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্য।
- কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য – কৃষিজমি থেকে উৎপন্ন ধানের তুষ, আখের ছিবড়ে, পাটকাঠি, গোবর, প্রাণীর বর্জ্য, শুকনো গাছের ডালপালা, ডিডিটি, কীটনাশকের কৌটো প্রভৃতি হল কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য দ্রব্য।
- কলকারখানার বর্জ্য – ভাঙা ও বাতিল ধাতব পদার্থ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই, আকরিক নিষ্কাশনে নির্গত ধাতু, কারখানার কর্মীদের ফেলে দেওয়া নানা দ্রব্য, প্যাকিং বাক্সের আবর্জনা এই সবই কলকারখানার বর্জ্য।
- চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য – ওষুধের ফয়েল, প্লাস্টিক, বাতিল সূচ, সিরিঞ্জ, ছুরি, ব্লেড, কাঁচি, রক্তমাখা তুলো, গজ, ব্যান্ডেজ, চিকিৎসায় ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য।
- নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য – ইট, কাঠ, বালি, সিমেন্ট, লোহার টুকরো, প্লাস্টিক, সিরামিক টালি ইত্যাদি নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য।
বর্জ্য পদার্থ থেকে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে?
বর্জ্য পদার্থ থেকে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যেমন –
- চিকিৎসা-সংক্রান্ত সম্পর্কিত বর্জ্য থেকে সমস্যা – টিটেনাস, কৃমি, আমাশা, হেপাটাইটিস, এডস্, চামড়ার রোগ, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
- কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য থেকে সমস্যা – কৃষিক্ষেত্রের আবর্জনা কৃষিক্ষেত্রের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে দিতে পারে। জমিতে প্লাস্টিক পড়ে থাকলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কৃষিক্ষেত্র থেকে কৃমি, আমাশয়, ফুসফুসের রোগ, পেটের রোগ ও নানা ধরনের রোগব্যাধি ঘটতে পারে।
- কলকারখানার বর্জ্য থেকে সমস্যা – কলকারখানার তরল বর্জ্য নিকটবর্তী নদী, খালে পড়লে ওই জল সম্পূর্ণরূপে দূষিত হয়। কলকারখানার বর্জ্য থেকে নিকটবর্তী অঞ্চলের মাটি দূষিত হয়।
- নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য থেকে সমস্যা – সিমেন্ট, বালি বায়ুদূষণ ঘটায়। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা একেবারে কমিয়ে দেয়। শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ, পেটের রোগ বেড়ে যায়।
- তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের দূষণ – এই বর্জ্য পৃথিবীর সর্বাধিক ক্ষতিকর বর্জ্য। ভৌমজল পানের অযোগ্য হয়, মাটি দূষিত হয়, প্রাণী ও উদ্ভিদের জিনগত পরিবর্তন হয়।
বর্জ্য পদার্থকে কীভাবে সম্পদে পরিণত করা যায়?
মানুষের উন্নত চিন্তা, ভাবনা, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিপত করা যায়, যেমন –
- পুনর্ব্যবহার – বাড়ির পুরোনো কাগজ, ছেঁড়া কাপড়, বাতিল পদার্থ দিয়ে নতুন নতুন ঘর সাজানোর বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা যায়।
- পুনঃচক্রীকরণ – ভাঙা কাচ, পুরোনো কাগজ, টায়ার, প্লাস্টিক প্রভৃতি দ্রব্য থেকে যথাক্রমে নতুন কাচ, নতুন কাগজ, পিচবোর্ড, কাগজের মণ্ড, নতুন টায়ার, প্লাস্টিক প্রভৃতি তৈরি করা যায়।
- সার উৎপাদন – জীব বিশ্লেষক পৌর আবর্জনা থেকে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বা সম্ভাব্য পদ্ধতি প্রয়োগ করে দু-চার মাসের মধ্যে জৈব সার উৎপাদন করা যায়। যা কৃষিক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে।
- নীচু জমি ভরাট করা – কোনো নীচু জলাজমিকে ভরাট করতে বর্জ্যের প্রয়োজন হয়। এতে খরচও কমে আবার বর্জ্যও সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়।
- রাস্তা তৈরি – বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই এবং জীব অবিশ্লেষ্য পদার্থ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এতে বর্জ্যের পরিমাণ যেমন কমছে তেমনি বর্জ্যের ব্যবহার বাড়ছে।
- জ্বালানি – পয়ঃপ্রণালীর মলমূত্র, গোবর, পৌর আবর্জনা, শুকনো পাতা, প্রভৃতি থেকে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গ্যাস উৎপাদন সম্ভব, যা জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বর্জ্য জলকে কীভাবে শোধন করা যায়?
বাড়ির নোংরা জল, কারখানার বর্জ্য জলকে কতকগুলি পদ্ধতির মাধ্যমে শোধন করা যেতে পারে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
- প্রাথমিক শোধন – প্রথমে বর্জ্য জলের ভাসমান আবর্জনাকে ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর ওই বর্জ্য জলকে বড়ো কক্ষে প্রবেশ করিয়ে সেখানে নুড়ি পাথর, বালি প্রভৃতিকে অধঃক্ষিপ্ত করানো হয়।
- দ্বিতীয় পর্যায় বা মাধ্যমিক বা জৈব শোধন – প্রথম স্তরের শোধিত জলকে দ্বিতীয় স্তরে পাঠানো হয়। এই পর্যায়ে জলের BOD কমানো হয়। এইস্তরে জলের ওপরের স্তরে প্রচুর গাদ উৎপাদন হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় জলের ওপর থেকে গাদকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
- তৃতীয় বা অন্তিম পর্যায় – জৈব শোধনের পর জলকে বৃহৎ কোনো জলাশয়ে প্রবেশ করানো হয়। এই জলাধারে জল বেশ কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। কারণ এই সময় জলে দ্রবীভূত নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও বিষাক্ত যৌগগুলি দূরীভূত হয়ে যায়।
কী কী পদ্ধতিতে কঠিন বর্জ্য পদার্থের অপসারণ করা হয়?
বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে কঠিন বর্জ্য পদার্থের অপসারণ করা হয়, যেমন –
- খোলাস্থানে স্তূপীকরণ – শহর, নগরের কঠিন বর্জ্যগুলিকে শহরের বাইরে কোনোস্থানে স্তূপীকরণ করা হয়। এটি প্রাচীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এতে পরিবেশ খুব দূষিত হয়।
- স্যানিটারি ল্যান্ডফিল – এই পদ্ধতিতে মাটিতে প্রায় 2 মিটার নীচু গর্ত করে তার মধ্যে আবর্জনা বিছিয়ে দেওয়া হয়। এর ওপর মাটির আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। মাটির মধ্যে উপস্থিত জীবাণু বর্জ্যগুলির পরিবর্তন ঘটায়।
- সার উৎপাদন – মানুষের মল এবং গবাদিপশুর গোবর, জৈব বর্জ্য প্রভৃতি কম্পোস্ট বা হিউমাসে পরিণত করা যায়।
- পুড়িয়ে ফেলা – সংগ্রহ করা বর্জ্যকে পুড়িয়ে ফেলা উচিত। যদিও প্লাস্টিক, পলিথিন প্রভৃতি দ্রব্য পোড়ালে ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণের সম্ভাবনা থাকে।
- ম্যানিওর পিট – বাড়ির আবর্জনা একটি গর্তের মধ্যে জমা করা হয়। সেটি আবর্জনাপূর্ণ হলে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পাঁচ-ছয় মাস পরে ওই আবর্জনা সারে পরিণত হয় যা কৃষি উপযোগী হয়ে ওঠে।
কঠিন বর্জ্য পদার্থের পুনঃচক্রীকরণ পদ্ধতিগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
কঠিন বর্জ্যকে ঠিকমতো পুনঃচক্রীকরণ করতে পারলে বর্জ্যর পরিমাণ যেমন কমানো যায়, তেমনি পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখাও সম্ভব হয়, যেমন –
- ফ্লাই অ্যাশ – এসব ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্টের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বাঁধ নির্মাণে নীচু জমি ভরাট করতে, রাস্তা নির্মাণে, ইট তৈরিতে বহুল ব্যবহার করা হচ্ছে।
- আখের ছিবড়ে বা ব্যাগাসে – চিনিকলগুলিতে প্রচুর পরিমাণ আখের ছিবড়ে বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ওই আখের ছিবড়ে থেকে কাগজের মণ্ড বানানো যায় যা দিয়ে কাগজ তৈরি হয়।
- কাচ – ভাঙা কাচ বর্জ্য থেকে আলাদা করা যায়। ওইসব টুকরো কাচ থেকে অন্য ধরনের কাচের সামগ্রি প্রস্তুত করা হয়।
- কাগজ – বাড়ির পুরোনো কাগজ, খবরের কাগজ থেকে অবাঞ্ছিত দ্রব্য সরিয়ে ফেলে আলাদা কাগজের মণ্ড প্রস্তুত করা যায়। যা দিয়ে কাগজের মণ্ড, কাগজের বোর্ড, কাগজের ব্যাগ ও অন্যান্য অসংখ্য দ্রব্য সামগ্রি প্রস্তুত করা যায়।
- প্লাস্টিক – প্লাস্টিক দূষণ বর্তমানে বড়ো পরিবেশগত সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে বর্জ্য প্লাস্টিক থেকে নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করা হচ্ছে।
- ধাতু – ধাতব বর্জ্য বলতে ভাঙা লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা ও অন্যান্য ধাতুকে বোঝায়। চৌম্বক পদ্ধতিতে ফেরাস ধাতুকে একত্র করে এবং নন-ফেরাস ধাতুকে পৃথক করে গলিয়ে পুনর্ব্যবহার করা হয়।
বর্জ্য পদার্থ থেকে কীভাবে শক্তি উৎপাদন করা যায়?
পৃথিবীর নানা দেশে বর্জ্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে যেমন শক্তির সংরক্ষণ হয় তেমনি বর্জ্যের কারণে পরিবেশের দূষণ কম হয় –
জৈব পদার্থের দহনে উৎপন্ন শক্তি –
- ধানের ছিবড়ে, গমের মণ্ড, আখের ছিবড়ে, জঙ্গলের কাঠকুটো এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য জ্বালিয়ে দিলে তাপ উৎপাদন করা যায়। ওই তাপ থেকে উন্নত চুল্লির সাহায্যে শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব।
- কঠিন বর্জ্য পদার্থকে সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে ভস্মভূত করে শক্তি সংগ্রহ করা হয়।
পাইরোলিসিস প্রক্রিয়ায় জ্বালানি উৎপাদন –
অক্সিজেন বিহীন দহনকে পাইরোলিসিস প্রক্রিয়া বলে। এই পদ্ধতিতে কঠিন বর্জ্য পদার্থের অক্সিজেনবিহীন দহনের ফলে তাপীয় বিয়োজন ঘটে। এতে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ, জলে অদ্রাব্য তেল, মিথানল এবং অন্যান্য পদার্থ উৎপন্ন হয় এবং বর্জ্যের কঠিন অবশেষ পড়ে থাকে। এইসব কঠিন অবশেষকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জৈব বর্জ্য থেকে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন –
- জৈব বর্জ্য থেকে গ্যাসিফায়ার যন্ত্রের মাধ্যমে পৌর বর্জ্য, কৃষিজ বর্জ্য, গাছের ডাল-পাতা পোড়ানো হয়। ওইসব পদার্থ পোড়ানোর জন্য যে গ্যাস উৎপন্ন হয় তা দিয়ে দাহ্য গ্যাস পাওয়া যায়।
- জৈব রাসায়নিক পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্য থেকে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন – ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে জৈব-রাসায়নিক পদ্ধতিতে কঠিন জৈব বর্জ্য পদার্থ থেকে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে জৈব বর্জ্য পদার্থের প্রক্রিয়ায় পচন ঘটিয়ে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করা হয়। বর্তমানে ল্যান্ডফিল এবং বায়োগ্যাস প্রকল্পের মাধ্যমেও দাহ্য গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে।
‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ সম্পর্কে কী জান?
ধারণা – ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ বা ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ হচ্ছে ভারত সরকার দ্বারা প্রবর্তিত একটি জাতীয় উদ্যোগ যার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দেশের প্রায় 4041টি শহর। এই পরিকল্পনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, শহরের রাস্তাঘাট, কলকারখানা ইত্যাদি পরিষ্কার করা হবে।
শুভারম্ভ – 2 অক্টোবর, 2014 সালে সরকারিভাবে সর্বপ্রথম এই উদ্যোগ শুরু করেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এটি ভারতের সর্ববৃহৎ পরিষ্কারকরণ প্রকল্প যাতে প্রায় 3 মিলিয়ন সরকারি কর্মচারী এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
উদ্দেশ্য –
2 অক্টোবর, 2019 সালের মধ্যে অর্থাৎ গান্ধিজীর 150তম জন্মদিনে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ভারতের রূপরেখা তৈরি করা। এই অভিযানের গৃহীত পদক্ষেপগুলি হল –
- উন্মুক্ত জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ বর্জন করা।
- অস্বাস্থ্যকর শৌচাগারকে স্বাস্থ্যকর শৌচাগারে রূপান্তরিত করা।
- মানুষের দ্বারা আবর্জনা পরিষ্কার পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা।
- পুরসভার দ্বারা কঠিন বর্জ্য পদার্থ 100% সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ করা এবং তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা।
- স্বাস্থ্যকর ও আবর্জনামুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে জনসাধারণকে সচেতন করা।
- পরিকল্পিতভাবে আবর্জনা নিষ্কাশন করতে শহরের স্থানীয় সংস্থাকে সাহায্য করা।
ব্যয় বরাদ্দ – এই অভিযানটি সফল করার জন্য 2019 সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় 12 কোটি শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এই প্রকল্পকে বাস্তবায়নের জন্য 1.94 লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা কতখানি?
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা যথেষ্ট, যেমন –
- কম বর্জ্য উৎপাদন – শিক্ষার্থীরা শিখবে কীভাবে কম পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন করতে হয়।
- শ্রেণিকক্ষ ও গৃহকে বর্জ্যমুক্ত করা – শিক্ষার্থীরা যে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করে তা যেন পরিচ্ছন্ন থাকে এবং বাড়িঘরও বর্জ্যমুক্ত রাখতে চেষ্টা করে।
- বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করা – জমে থাকা বর্জ্যের যথাযথ অপসারণ এবং পুনর্ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেকে এবং অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
- আলোচনা, বিতর্ক – বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক সভার আয়োজন, পোষ্টার, দেয়ালপত্রিকা প্রভৃতি তৈরিতে জোর দিতে হবে যাতে সমাজ বর্জ্য নিয়ন্ত্রন করতে শেখে।
- সৃষ্টিশীলতায় উৎসাহ – বর্জ্য যাতে সম্পদ হয়ে ওঠে সে বিষয়ে আলোচনা, কর্মশালা, সৃষ্টিশীলতায় উৎসাহ দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কী কী?
গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায় –
গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হল স্ক্রাবার। এই স্ক্রাবার যন্ত্রে সাধারণত দু-ভাবে গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ বা নিষ্কাশন করা হয়। যথা –
- আর্দ্র স্ক্রাবিং – এক্ষেত্রে কলকারাখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধূলিকণা প্রভৃতি বায়ুদূষককে কোনো জলীয় দ্রবণের মধ্যে চালনা করে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করা হয়।
- শুষ্ক স্ক্রাবিং – এই পদ্ধতিতে জলীয় দ্রবণ ছাড়াই বস্তুকণা ও দূষিত বাতাস স্ক্রাবারের মাধ্যমে পরিস্রুত হয়ে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করে। সাধারণত শুষ্ক স্ক্রাবিং পদ্ধতিতে অম্লধর্মী গ্যাস অপসারণ করা হয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিষ্কাশন কী?
কলকারখানা, শিল্পকেন্দ্র, বাড়িঘর, হোটেল, পৌরপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের তরল বর্জ্য ড্রেন বা পাইপ লাইনের সাহায্যে দূরবর্তী স্থানে ফেলা হয়। এইসব বর্জ্য তরল তিনটি পদ্ধতিতে শোধন করা হয় –
- প্রাথমিক শোধন – প্রথমে বড়ো জলাধারে জমা করে তা থেকে কঠিন ও ভারী বর্জ্যকে থিতিয়ে পড়তে সাহায্য করা হয়।
- গৌণ পরিশোধন পদ্ধতি – এই পদ্ধতিতে জলের ভাসমান ও দ্রবীভূত পদার্থকে পৃথক করা হয়।
- প্রগৌণ পরিশোধন – এই পদ্ধতিতে জলকে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ও পড়ে নদীতে বা সাগরে ফেলা হয়।
ভাগীরথী-হুগলি নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব লেখো।
ভাগীরথী-হুগলি নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব –
গঙ্গার অপ্রধান শাখা ভাগীরথী-হুগলি। গঙ্গা সহ ভাগীরথী-হুগলি নদীর দুই তীরের অসংখ্য কলকারখানা এবং নানা ধরনের বসতি ও পৌর এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণে ময়লা জল, রাসায়ানিক পদার্থ প্রভৃতি প্রতিদিন নদীতে এসে মিশছে। এ ছাড়াও নদীতে মানুষ ও জীবজন্তুর মৃতদেহ নিক্ষেপ, প্রতিমা নিরঞ্জন, পশুস্নান, ফুল-বেলপাতা-সহ নানা ধরনের আবর্জনা নিক্ষেপ, কৃষিক্ষেত থেকে বিভিন্ন প্রকার সার ও কীটনাশক বৃষ্টির জলের মাধ্যমে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে এসে পড়ছে। এর ফলে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। যেমন –
- নদীর জলের দূষণ – নানা প্রকার বর্জ্য পদার্থ মেশার ফলে নদীর জলের ভৌত, রাসায়নিক, জৈবিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে জল সাংঘাতিক ভাবে দূষিত হচ্ছে।
- নদীর নাব্যতা হ্রাস – নদীগর্ভে বর্জ্য পদার্থগুলি জমা হবার ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পেয়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
- জলবাহিত রোগের সংক্রমণ – ভাগীরথী-হুগলির জল পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে তার মাধ্যমে নানা প্রকার জলবাহিত রোগের সংক্রমণ ঘটছে।
- জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি – বর্জ্যের মাধ্যমে নানা প্রকার বিষাক্ত পদার্থ নদীর জলে মিশে যাওয়ার ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ও জীবজগৎ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
- কৃষিকাজে ক্ষতি – নদীর দূষিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করার ফলে উৎপাদিত ফসলের গুণগত মানের অবনতি ঘটছে।
- নদী ভাঙন এবং বন্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি – বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় দুই তীরে ভাঙন এবং বিভিন্ন স্থানে বন্যার আশঙ্কা অনেক বেড়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা –
বিভিন্ন কারণে বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা খুবই প্রয়োজনীয়। যেমন –
- পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা – জল, বায়ু, মাটি প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে দূষণমুক্ত রেখে পরিবেশকে নির্মল ও স্বচ্ছ করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয়।
- বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা – বনভূমি, তৃণভূমি, জলাভূমি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি।
- জৈববৈচিত্র্যকে বাঁচানো – বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা না করলে পৃথিবীর তাবৎ জীবজগৎ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
- রোগব্যাধি প্রতিরোধ – বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
- বিদ্যুৎ শক্তি ও সার উৎপাদন – বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যবান বিদ্যুৎ শক্তি ও জৈব সার উৎপাদন করা যায়।
- প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে – বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অধীনে পুনর্ব্যবহার ও পুনরাবর্তনের মাধ্যমে লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করা যায়।
তরল বর্জ্য ও কঠিন বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
তরল বর্জ্য ও কঠিন বর্জ্যের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | তরল বর্জ্য | কঠিন বর্জ্য |
প্রকৃতি | এই ধরনের বর্জ্য তরল প্রকৃতির হয়। | এটি কঠিন প্রকৃতির বর্জ্য। |
বর্জ্যের উৎস | তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গরম জল, কলকারখানা, বাড়ির পয়ঃপ্রণালীর জল ইত্যাদি। | রান্নাঘরের আবর্জনা, কলকারখানার বাতিল আবর্জনা ইত্যাদি। |
বিষাক্ত বর্জ্য ও বিষহীন বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষাক্ত বর্জ্য ও বিষহীন বর্জ্যের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | বিষাক্ত বর্জ্য | বিষহীন বর্জ্য |
ধারণা | যেসব বর্জ্য থেকে জীবের মৃত্যু ঘটে তাকে বিষাক্ত বর্জ্য বলে। | যেসব বর্জ্য মানুষের তেমন ক্ষতি করে না, বরং পরিবেশমিত্র বর্জ্য হিসেবে কাজ করে, তাদের বিষহীন বর্জ্য বলে। |
প্রকৃতি | এগুলি জীব দ্বারা বিশ্লেষিত হয় না বলে এগুলি জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য। | এগুলি জীব দ্বারা বিশ্লেষিত হয় বলে এগুলি জীব বিশ্লেষ্য পদার্থ। |
উদাহরণ | কৃত্রিম পলিমার, পলিথিন প্রভৃতি। | তরকারি, সবজির খোসা, চামড়া, কাঠ ইত্যাদি। |
জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য এবং জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য এবং জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য | জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য |
ধারণা | বিভিন্ন জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বর্জ্যকে সহজে বিয়োজন ঘটাতে পারে, এদের বলে জৈব ভঙ্গুর। | যে ধরনের বর্জ্য সহজে বিয়োজিত হয় না, তাদের বলে জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য। |
স্থিতিশীল | জৈব ভঙ্গুর খুব সহজে প্রকৃতিতে মিশে যায়। | এই ধরনের বর্জ্য প্রকৃতিতে সহজে মিশতে পারে না। |
শ্রেণিবিভাগ | জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য একপ্রকারই হয়। | এটি তিন ধরনের যথা – বিষাক্ত বর্জ্য, পুনচক্রী বর্জ্য এবং কঠিন বর্জ্য। |
উদাহরণ | শুকনো ফুল, বাড়ির বাগানের লতাপাতা, শাকসবজির খোসা প্রভৃতি। | স্প্রে ক্যান, পুরোনো ওষুধ, হাসপাতালের আবর্জনা এ ধরনের বর্জ্যের উদাহরণ। |
জৈব বর্জ্য এবং অজৈব বর্জ্যের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
জৈব বর্জ্য এবং অজৈব বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | জৈব বর্জ্য | অজৈব বর্জ্য |
উৎস | বিভিন্ন প্রকার প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহ, ফল, ফুল প্রভৃতি থেকে জৈব বর্জ্য সৃষ্টি হয়। | ধাতব টুকরো, প্লাস্টিক, পলিথিন, ইমারতি দ্রব্য, কাচ, বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য, গ্যাসীয় পদার্থ প্রভৃতি থেকে অজৈব বর্জ্য সৃষ্টি হয়। |
প্রকৃতি | এগুলি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি দ্বারা বিশ্লেষিত হয়। অর্থাৎ জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য। | এগুলি কোনোরূপ অণুজীব দ্বারা বিশ্লেষিত হয় না অর্থাৎ এগুলি জৈব অভঙ্গুর। |
স্থিতিশীলতা | এগুলি পচে দ্রুত মাটিতে মিশে যায়। | কঠিন বর্জ্যগুলি দীর্ঘকাল অক্ষত থাকে আর তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্যগুলি মাটি, জল ও বায়ুতে মিশে যায়। |
পরিবর্তন | এগুলি জৈব সারে পরিবর্তিত হয়। | পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক নানা প্রকার কঠিন, তরল ও গ্যাসে পরিবর্তিত হয়। |
ক্ষতির মাত্রা | খুব কমই ক্ষতিসাধন করে। | খুব বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর। |
প্রভাবক | জৈব বর্জ্যের হ্রাস-বৃদ্ধিতে মানুষ ও প্রকৃতি উভয়েরই ভূমিকা থাকে। | অজৈব বর্জ্যের হ্রাস-বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কারিগরী জ্ঞান। |
আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন