আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবহণের গুরুত্ব কতখানি?
পরিবহণের গুরুত্বসমূহ –
পরিবহণ বাণিজ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বর্তমানে পরিবহণের গুরুত্ব অসীম –
অর্থনৈতিক গুরুত্ব –
- পণ্য আদানপ্রদান – একদেশের পণ্য অন্যদেশে পৌঁছে দেওয়ায় পরিবহণের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন – ভারতের চা, পাট উন্নত পরিবহণের মাধ্যমে বিশ্বের বাজারে পৌঁছে দেওয়া যায় আবার বিদেশ থেকেও নানা পণ্য আমদানি করা যায়।
- শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ – শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির কারণেই সম্ভব হয়েছে। উন্নত পরিবহণের কারণেই কাঁচামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে শিল্পস্থাপন করা গেছে।
- বিপর্যয় মোকাবিলা – বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সেখানে দ্রুত উদ্ধার কার্যের জন্য পরিবহণের ভূমিকা খুব বেশি।
- কৃষির উন্নতি – পরিবহণের মাধ্যমে গ্রামের কৃষিজমি থেকে শহরের বাজারে দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় বা কৃষির প্রয়োজনীয় সার, রাসায়নিক বীজ শহর থেকে পাঠানো যায়।
- প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ – বনজ, প্রাণীজ, খনিজ দ্রব্য সংগ্রহ করার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি বাঞ্ছনীয়। আমাজন অববাহিকায় অথবা কানাডার উত্তরে পরিবহণ ব্যবস্থা খুব ভালো না হওয়ার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংগ্রহ পিছিয়ে রয়েছে।
- পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা – সুপরিবহণ থাকার জন্যই বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রীর দামের মধ্যে স্থিতিশীলতা দেখা যায়। এমনকি দ্রুত পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সারাদেশে পণ্য সামগ্রীর মূল্য একই থাকে।
সামাজিক গুরুত্ব –
- শহর ও নগরের সৃষ্টি – পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। এতে মূল শহর থেকে দূরে ছোটো বড়ো শহর ও নগরের সৃষ্টি হয়।
- শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নতি – পরিবহণের মাধ্যমেই মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে। এতে পারস্পরিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি ঘটে।
রাজনৈতিক গুরুত্ব –
- প্রতিরক্ষা – দুর্গম অঞ্চলে সেনা, তাদের রসদ, অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোতে পরিবহণের ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থাৎ, দেশরক্ষার কাজে বা প্রতিরক্ষার কাজে পরিবহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- জাতীয় ঐক্য স্থাপন – পরিবহণ সারাদেশের নানা সংস্কৃতি, ভাষাভাষি, ধর্মের লোকেদের একসূত্রে বেঁধে দেয়। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণের মাধ্যমে, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াতের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথের গুরুত্ব লেখো বা ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহণ ব্যবস্থায় রেলপথের অবদান কতখানি?
রেলপথ ভারতের শ্রেষ্ঠ পরিবহণ মাধ্যম। ভারতের মতো দেশে আর্থসামাজিক পরিবর্তনে এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
- যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ – প্রচুর যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণে রেলের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অতিদ্রুত এবং খুব কম খরচে এই পরিবহণ করা সম্ভব। রেলই সর্বাধিক মাত্রায় দেশের অভ্যন্তরে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করে।
- কৃষির উন্নতি – ভারতে কৃষির উন্নতির জন্য রেলপথের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রেলপথে কৃষিতে প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, বীজ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি খুব কম খরচে দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়। আবার রেলপথের মাধ্যমেই উদ্ভুত ফসল খাদ্য ঘাটতি অঞ্চলে দ্রুত পাঠানো যায়।
- শিল্পের উন্নতি – ভারতে শিল্পের উন্নতিতে রেলের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। রেল শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি যেমন কারখানাগুলিতে পাঠায় তেমনি রেলপথের মাধ্যমেই উৎপাদিত পণ্য সারাদেশের বিভিন্ন বাজারগুলিতে পাঠানো হয়। রেলপথের মাধ্যমেই শিল্প আরও উন্নত হয়ে ওঠে।
- তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন – কয়লা খনি থেকে কয়লা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে রেলপথের মাধ্যমে সরবরাহ হয়। সুতরাং, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে রেলপথের ভূমিকা কম নয়।
- বহির্বাণিজ্যে উন্নতি – রেলপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্বৃত্ত পণ্য বন্দরগুলিতে পাঠানো হয়। রেলপথ ছাড়া এটা সম্ভব হত না। ভারতের পাশ্ববর্তী দেশগুলির কয়েকটিতে ভারতীয় রেল সরাসরি পণ্য রপ্তানি করে। এভাবেই রেল বহির্বাণিজ্যে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে।
- দেশরক্ষা – দেশরক্ষায় যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য, যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম, রসদ দ্রুত পৌঁছে দিতে রেলের ভূমিকা সদর্থক। সেদিক থেকে ভারতীয় রেল দেশরক্ষার কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
- অন্যান্য – ভারতীয় রেল অতিদ্রুত মানুষ এবং পণ্যকে এক শহর থেকে অন্য শহরে পৌঁছে দেয়। বন্যা এবং খরায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দিতে রেলের ভূমিকা খুব বেশি। গ্রাম থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক রেলপথে শহর ও নগরে কাজ করে দিনের শেষে রেলে করে বাড়ি ফিরে যায়। তাই রেল ভারতের ধমনিস্বরূপ।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ? আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ধারণা দাও।
যোগাযোগ ব্যবস্থা –
সংবাদ বা তথ্য এবং ভাবের আদানপ্রদানকে এককথায় যোগাযোগ বলে। যোগাযোগ হল একটি প্রণালী বা সিস্টেম। এর তিনটি অংশ রয়েছে –
- কাজ বা কাজের শুরুতে একাধিক জোগান বা ইনপুট,
- কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্ভরযোগ্য মাধ্যম বা থ্রুপুট এবং
- কাজের শেষে ফলপ্রাপ্তি বা আউটপুট।
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্তর্গত মাধ্যমগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল –
- ডাকব্যবস্থা – এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি। চিনে খ্রিস্টপূর্ব 900 সালে এই ব্যবস্থা প্রথম চালু হয়। ভারতে 1766 সালে ডাক ব্যবস্থার শুরু হয়। বর্তমানে স্পিড পোস্ট, স্যাটেলাইট পোস্ট, এক্সপ্রেস পোস্ট, বিজনেজ ও মিডিয়া পোস্ট ডাকব্যবস্থা চালু হয়েছে।
- টেলিফোন – তারের সাহায্যে সংযুক্ত এই ব্যবস্থায় পৃথিবীর দুই প্রান্তের মানুষ কথপোকথনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। 1875 সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এই যন্ত্র আবিষ্কার করলেও ভারতের প্রথম টেলিফোন পরিসেবা কলকাতায় চালু হয় 1881-1882 সালে।
- মোবাইল ফোন – উপগ্রহ ব্যবস্থার মাধ্যমে মোবাইল ফোন বা সেল ফোনের সাহায্যে পৃথিবীর যে-কোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায়। মোবাইল ফোন থেকে SMS, MMS করা যায়। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মোবাইল ফোনের সাহায্যে যোগাযোগ করে।
- ইনটারনেট – পৃথিবীর সকল কম্পিউটারকে সংযুক্ত করার ব্যবস্থাকে ইনটারনেট বা অন্তর্জাল বলে। এই ব্যবস্থায় পৃথিবীর যে-কোনো বার্তা, চিঠিপত্র, তথ্য, সংবাদ খুব তাড়াতাড়ি পাঠানো যায় বা সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে ইনটারনেটকে ‘সব তথ্যের আধার’ বলে।
- ই-মেল – বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে পাঠানো চিঠিকে ই-মেল বলে। ইনটারনেটের মাধ্যমে নামমাত্র খরচে যে-কোনো চিঠিপত্র একলহমায় ‘পৃথিবীর যে-কোনো জায়গায় পাঠানো যায়।
- অন্যান্য – এ ছাড়া, টেলেক্স, টেলিফ্যাক্স, ভিডিয়ো কনফারেন্সিং, বেতার, সংবাদপত্র এবং আরও অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্যে মানুষ মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। মূলত মহাকাশে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থার তুলনা করো।
বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা –
সারণির আকারে বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
তুলনার বিষয় | সড়ক পরিবহণ | রেল পরিবহণ | জল পরিবহণ | আকাশ পরিবহণ |
মাধ্যম | লরি, বাস, মোটরগাড়ি, দ্বিচক্রযান, ত্রিচক্রযান প্রভৃতি। | রেলগাড়ি, যাত্রী পরিবহণ ও পণ্য পরিবহণ। | যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার প্রভৃতি। | এরোপ্লেন, হেলিকপ্টার, প্রভৃতি। |
দূরত্ব | কম এবং মাঝারি দূরত্বে সড়ক পরিবহণ বেশি কার্যকরী। | মাঝারি এবং বেশি দূরত্বে রেল পরিবহণ বেশি কার্যকরী। | অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহণের সাথে সাথে পণ্য পরিবহণও করা হয়। | সবচেয়ে বেশি দূরত্বে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণ করা হয়। |
গতিবেগ | দ্রুত গতির পরিবহণ। | অতি দ্রুত গতির পরিবহণ। | ধীর গতিসম্পন্ন পরিবহণ। | সর্বাধিক গতিসম্পন্ন পরিবহণ। |
নির্মাণ ব্যয় | রেলপথ অপেক্ষা প্রাথমিক ব্যয় কম। | সড়কপথের থেকে প্রাথমিক ব্যয় বেশি। | পথ তৈরিতে খরচ নেই, কিন্তু বন্দর নির্মাণ ব্যয়বহুল। | পথনির্মাণে খরচ নেই, কিন্তু বিমানবন্দর নির্মাণ ব্যয়বহুল। |
পরিবাহিত দ্রব্যের প্রকৃতি | হালকা থেকে মাঝারি ওজনের দ্রব্য পরিবাহিত হয়। | মাঝারি ও ভারী ওজনের দ্রব্য পরিবাহিত হয়। | সবথেকে বেশি ভারী দ্রব্য জলপথে পরিবাহিত হয়। | সবথেকে হালকা পণ্য পরিবাহিত হয়। |
বাণিজ্য | অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের উপযোগী। অনেকসময় বহির্বাণিজ্যও হয়। | অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উপযোগী। | বৈদেশিক বাণিজ্যের উপযোগী। | অন্তর্দেশীয় এবং বহির্বাণিজ্যের উপযোগী। |
যাত্রী ওঠানামা | যে-কোনো জায়গা থেকে যাত্রী ও পণ্য ওঠানামা করতে পারে। | নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মেই যাত্রী ও পণ্য ওঠানো নামানো যায়। | নির্দিষ্ট বন্দরেই কেবল যাত্রী ও পণ্য ওঠানামা করতে পারে। | নির্দিষ্ট বিমানবন্দরেই কেবল যাত্রী ও পণ্য ওঠানামা করতে পারে। |
প্রসার | সর্বত্র সড়কপথ প্রসারিত। এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। | মূলত সমভূমি এবং মালভূমি অঞ্চলে রেল পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। | নির্দিষ্ট বন্দর এলাকাগুলি পরিবহণের উপযোগী। | দুর্গম অঞ্চলে বিস্তৃত হলেও যেখানে বিমানবন্দর আছে সেখানেই এই পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। |
সবুজ বিপ্লব কাকে বলে?
1960 -এর দশকে ভারতে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কতকগুলি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির অধীনে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমভাগে কৃষিকাজে উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি জলসেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, ভূমিসংস্কার, কৃষিজোতের একত্রীকরণ প্রভৃতি সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর ফলে 1960 -এর দশকের শেষভাগ থেকে ওইসব এলাকায় কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। ভারতীয় কৃষির এই পরিবর্তনকেই সবুজ বিপ্লব বলা হয়।
খরিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
খরিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ –
বিষয় | খরিফ শস্য | রবি শস্য |
সংজ্ঞা | বর্ষাকাল বা দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকালের ওপর ভিত্তি করে ভারতে যেসব শস্য চাষ করা হয়, সেগুলিকে খরিফ শস্য বলে। | শীতকালে বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকালে ভারতে যেসব শস্য চাষ করা হয়, তাদের রবি শস্য বলে। |
চাষের সময় | বর্ষার প্রারম্ভে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে এগুলির চাষ শুরু হয়। | শীতের প্রারম্ভে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর এগুলি চাষ করা শুরু হয়। |
ফসল কাটা বা তোলার সময় | শীতের শুরুতে অর্থাৎ নভেম্বর মাসে এইসব ফসল কাটা বা তোলা হয়। | শীতের শেষে বসন্তকালে বা গ্রীষ্মের প্রারম্ভে (মার্চ-এপ্রিল) এইসব ফসল কাটা বা তোলা হয়। |
আবহাওয়া | চাষের সময় উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার প্রয়োজন। | চাষের সময় শীতল ও শুষ্ক আবওহাওয়া প্রয়োজন। |
নির্ভরতা | এইসব ফসলের চাষ পরিমিত বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। | এইসব ফসলের চাষ প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভরশীল। |
অনিশ্চয়তা | বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল বলে। | জলসেচের ওপর নির্ভরশীল বলে উৎপাদনে অনিশ্চয়তা কম। |
চাষের পদ্ধতি | চাষের কাজে পশু ও পেশি শক্তির ব্যবহার বেশি অর্থাৎ প্রধানত প্রাচীন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। | চাষের কাজে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি অর্থাৎ আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। |
গম চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ আলোচনা করো।
গম চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ –
গম উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের ফসল। গম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ হল –
- জলবায়ু – গম চাষের জন্য শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন।
- উষ্ণতা – গম চাষের সময় গড় উষ্ণতা 15°C-20°C এবং গম পাকার সময় গড়ে 25°C উষ্ণতা থাকলে ভালো হয়।
- বৃষ্টিপাত – গড়ে 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত গম চাষের উপযোগী। তবে গম পাকার সময় বৃষ্টিপাত না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর 50 সেমির কম বৃষ্টিপাত হলে জলসেচের প্রয়োজন অন্যদিকে বৃষ্টিপাত 100 সেমির বেশি হলে তা গম চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।
- আর্দ্রতা – চাষের শুরুতে অর্থাৎ অঙ্কুরোদ্গমের সময় আর্দ্র শীতল আবহাওয়া, গাছ বাড়ার সময় কিছুটা শুষ্ক আবহাওয়া, গমের পুষ্টির সময় আর্দ্র আবহাওয়া এবং ফসল পাকা ও কাটার সময় কিছুটা উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন।
- তুহিন – তুষারপাতে গমের উৎপাদন হ্রাস পায়। তাই চাষের সময় কমপক্ষে 110টি তুহিনমুক্ত দিন প্রয়োজন।
- মৃত্তিকা – মৃদু অম্লধর্মী ভারী দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ও এঁটেল দোআঁশ মাটি এবং হালকা কাদামাটিতে গমের চাষ ভালো হয়।
- ভূমির অবস্থা – গম গাছের গোড়ায় জল জমে থাকা ক্ষতিকর। তাই উত্তম জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত সমতল জমি বা সামান্য ঢালু জমি গম চাষের জন্য প্রয়োজন।
পূর্ব ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতির কারণ লেখো।
পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি বৃহদায়তন লৌহ ইস্পাত কারখানা খুব কাছাকাছি গড়ে উঠেছে। এগুলি হল – পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর ও কুলটি-বার্নপুর, ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর ও বোকারো, ওডিশার রৌরকেলা প্রভৃতি। এই অঞ্চলে এইভাবে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতির কারণ হল –
- খনিজ কাঁচামালের প্রাচুর্য – লোহা ও ইস্পাত শিল্পের প্রধান দুটি অবিশুদ্ধ খনিজ কাঁচামাল কয়লা ও আকরিক লোহা এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আহরিত হয়। যেমন এখানকার ঝরিয়া, বোকারো, গিরিডি, করণপুরা, রানিগঞ্জ, তালচের প্রভৃতি খনি এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে কয়লা এবং গুরুমহিষানি, বাদামপাহাড়, সুলাইপাত, কিরিবুরু, বোনাই, নোয়ামুন্ডি, গুয়া, চিরিয়া প্রভৃতি খনি কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণে আকরিক লোহা পাওয়ার সুবিধা আছে।
- ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর প্রভৃতি পাওয়ার সুবিধা – এই অঞ্চলেরই গাংপুর ও বোনাই থেকে ম্যাঙ্গানিজ এবং বীরমিত্রপুর, ভবনাথপুর, ডালটনগঞ্জ প্রভৃতি স্থান থেকে চুনাপাথর সহজেই পাওয়া যায়।
- পর্যাপ্ত বিদ্যুৎশক্তি – ডি ভি সি -র উৎপাদিত তাপবিদ্যুৎ এবং হীরাকুঁদ প্রকল্পের জলবিদ্যুৎ পাওয়ার সুবিধা আছে।
- জলের সহজলভ্যতা – এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত দামোদর, বরাকর, শঙ্খ, ব্রাহ্মণী প্রভৃতি নদনদী থেকে প্রয়োজনীয় জল পেতে কোনো অসুবিধা হয় না।
- অন্যান্য সুবিধা – পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং অনেকগুলি জাতীয় রাজপথ এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। এ ছাড়া
- কলকাতা ও পারাদীপ বন্দরের নৈকট্য,
- ঝাড়খণ্ড, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে সুলভ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা প্রভৃতিও পূর্ব ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের উন্নতিতে অনুকূল প্রভাব ফেলেছে।
পশ্চিম ভারতে অধিক সংখ্যায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠা কারণগুলি লেখো।
পশ্চিম ভারতে অধিক সংখ্যায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠা কারণ –
পশ্চিম ভারতে বিশেষত গুজরাত ও মহারাষ্ট্রে পেট্রোরসায়ন শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। গুজরাটের ভাদোদরা, গান্ধার (দহেজ), জামনগর (ভারতের বৃহত্তম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র), মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, নাগোথেন, পটলগঙ্গা প্রভৃতি স্থানে বড় বড় পেট্রোরসায়ন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে এই শিল্পটির বিশেষ উন্নতির কারণ হল –
- কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা – মহারাষ্ট্রের মুম্বাই দরিয়া ও গুজরাটের কাম্বে-আমেদাবাদ অঞ্চল থেকে উত্তোলিক খনিজ তেল ট্রম্বে, কয়ালি, জামনগর প্রভৃতি শোধনাগারে শোধন করার পর যেসব প্রাথমিক ও মধ্যবর্তী দ্রব্য উৎপাদিত হয়, সেগুলি এখানকার পেট্রোরসায়ন শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- বন্দরের সান্নিধ্য – মুম্বাই, কান্ডলা, জওহরলাল নেহেরু বন্দরের মতো বড় বড় ও অত্যাধুনিক বন্দর এই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি এবং উৎপাদিত পণ্য ও সহজেই বিদেশে রপ্তানি করার সুবিধা পাওয়া যায়।
- বিপুল চাহিদা – শিল্পোন্নত মুম্বাই, আমেদাবাদ, ভাদোদরায় অসংখ্য অনুসারী শিল্প গড়ে ওঠায় উৎপাদিত দ্রব্যের বিপুল চাহিদা বা বাজার এই অঞ্চলেই সৃষ্টি হয়েছে।
- পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ – পশ্চিমাঞ্চলে টাটা, কয়না, উকাই প্রভৃতি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ট্রম্বে, আমেদাবাদ প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তারাপুর, কাকরাপাড়, কোটা প্রভৃতি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পেতে অসুবিধা হয় না।
- উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা – মুম্বাই, আমেদাবাদ, ভাদোদরা প্রভৃতি স্থান উন্নত রেলপথ, সড়কপথ ও আকাশ পথে দেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য সহজেই যে কোনো জায়গায় প্রেরণ করা যায়।
- জল – এখানকার বিভিন্ন নদী, জলাধার ও ভূগর্ভ থেকে শিল্পের প্রয়োজনমতো জল পাওয়া যায়।
- অন্যান্য কারণ – পশ্চিম ভারত বিশেষত গুজরাত ও মহারাষ্ট্র অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট উন্নত ও সমৃদ্ধ অঞ্চল এবং শিল্পেও উন্নত। এর ফলে এই অঞ্চলে শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন, দক্ষ কারিগর, পেশাদার পরিচালক ইত্যাদিও সহজেই পাওয়া যায়।
ভারতের নগরায়ণের সমস্যাগুলি লেখো।
ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি হল –
- অপরিকল্পিত নগরায়ণ – চণ্ডীগড়ের মত দু-একটি শহর বাদ দিয়ে ভারতের অধিকাংশ শহরই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তাই শহরগুলির যত্রতত্র বাসস্থান, সড়কপথ, অফিস, আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র, ধর্মস্থান প্রভৃতি লক্ষ করা যায়। এর ফলে বেশিরভাগ শহরেরই পরিবেশ ঘিঞ্জি প্রকৃতির যা শহরগুলির সামগ্রিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে।
- মানুষের শহরমুখী প্রবণতা – গ্রামের তুলনায় শহরে বা নগরে উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা, কর্মসংস্থান, উন্নত পরিষেবার সুযোগ প্রভৃতি থাকার কারণে মফস্সলের বহু মানুষই এখন শহরমুখী। এর ফলে শহরগুলিতে বাসস্থানের সমস্যা, বস্তির উদ্ভব, রোগের প্রকোপ প্রভৃতি সমস্যা খুবই প্রকট।
- পরিকাঠামোর অভাব – জনসংখ্যার চাপ ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার কারণে শহরের পরিবহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ জলনিকাশি ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার নিদারুণ অভাব সৃষ্টি হয়।
জলপথ অর্থনৈতিক উন্নতির জীবনরেখা বলতে কী বোঝো?
বর্তমানে যত ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা (সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ, আকাশপথ বা বিমানপথ, নলপথ ও রজ্জুপথ) প্রচলিত আছে, সেগুলির মধ্যে জলপথের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ –
- সুলভ এবং অবাধ – জলপথ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ব্যয় হয় না। তা ছাড়া একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহণ করা যায়। এসব কারণে জলপথ অত্যন্ত সুলভ। আবার, জলপথে কোনো অবরোধ ও যানজট থাকে না বলে যাতায়াতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না। তাই জলপথে অবাধে চলাচল করা যায়।
- যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ – জলপথে একাধারে যাত্রী ও পণ্য পরিবাহিত হয় বলে বন্দরকে কেন্দ্র করে একইসঙ্গে শিল্প ও শহর গড়ে উঠতে দেখা যায়।
- বৃহদায়তন ও ভারী পণ্য পরিবহণ – বিপুল পরিমাণে খনিজ তেল, আকরিক লোহা, কয়লা, ইস্পাত, রেলইঞ্জিন, ট্রাক, মোটরগাড়ি প্রভৃতি নিয়ে বিশালাকৃতি জাহাজগুলি জলপথে চলাচল করে। এজন্য যে-কোনো অঞ্চল বা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জলপথের গুরুত্ব সর্বাধিক।
- বাণিজ্যের বিকাশ – প্রধানত জলপথেই সুলভে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্য দ্রব্য আমদানি-রপ্তানি তথা বাণিজ্যিক আদানপ্রদান হয়।
- অভ্যন্তরীণ পরিবহণ – ভারতের মতো নদীমাতৃক দেশে অভ্যন্তরীণ পরিবহণ ব্যবস্থায় জলপথের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলপথের এরূপ গুরুত্বের জন্যই একে ‘অর্থনৈতিক উন্নতির জীবনরেখা’ বলা হয়।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন