এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল বলতে কী বোঝো? এদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল বলতে কী বোঝো? এদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
দীর্ঘ পর্যায়-সারণির সপ্তম পর্যায়ে অবস্থিত ইউরেনিয়ামের (পারমাণবিক সংখ্যা = 92) পরবর্তী কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষিত মৌলগুলিকে ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল বলে। যেমন – নেপচুনিয়াম (93Np), প্লুটোনিয়াম (54Pu), অ্যামেরিশিয়াম (95Am), ক্যারিয়াম (96Cm) প্রভৃতি।
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলির দুটি বৈশিষ্ট্য-
- ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। এদেরকে কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে প্রস্তুত করা হয়।
- ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলি তেজস্ক্রিয় প্রকৃতির হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল কী?
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল হলো সেই সকল মৌল যাদের পারমাণবিক সংখ্যা ইউরেনিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা (92) থেকে বেশি। এগুলো সাধারণত কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে তৈরি করা হয় এবং প্রকৃতিতে সাধারণত খুব কমই পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ – নেপচুনিয়াম (93), প্লুটোনিয়াম (94) ইত্যাদি।
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলির দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল –
1. কৃত্রিম উৎপত্তি – এই মৌলগুলি সাধারণত প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে থাকে না; এগুলোকে কণা ত্বরক (Particle Accelerator) বা নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়।
2. তেজস্ক্রিয়তা – এই মৌলগুলি অত্যন্ত রেডিওঅ্যাকটিভ হয়। এগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলফা (α), বিটা (β) ইত্যাদি কণা ও বিকিরণ নির্গত করে অন্য মৌলে পরিণত হয়।
প্রথম ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলটি কোনটি এবং এটি কীভাবে আবিষ্কৃত হয়?
প্রথম ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলটি ছিল নেপচুনিয়াম (Np), যার পারমাণবিক সংখ্যা 93। এটি 1940 সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলেতে এডউইন ম্যাকমিলান ও ফিলিপ অ্যাবেলসন মিলিয়ে ইউরেনিয়াম-238 আইসোটোপে নিউট্রন বোমাবর্ষণের মাধ্যমে তৈরি করেছিলেন।
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলির কোনো ব্যবহার আছে কি?
হ্যাঁ — কিছু ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার আছে। উদাহরণস্বরূপ – প্লুটোনিয়াম-239 (²³⁹Pu) নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরে জ্বালানি এবং (দুর্ভাগ্যবশ) নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যামেরিসিয়াম-241 (²⁴¹Am) ধোঁয়া শনাক্তকরণ ডিটেক্টর (smoke detector) ও বিভিন্ন গেজিং ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলি কেন এত অস্থির এবং তেজস্ক্রিয়?
ইউরেনিয়ামোত্তর মৌলগুলি এত অস্থির এবং তেজস্ক্রিয় এর মূল কারণ হল নিউক্লিয়াসের আকার এবং প্রোটন-নিউট্রনের অনুপাত। ইউরেনিয়ামের পর থেকে নিউক্লিয়াস এত বড় হয় এবং তাতে এত বেশি সংখ্যক প্রোটন (ধনাত্মক আধান) থাকে যে নিউক্লিয়াসের ভেতরের প্রবল বিকর্ষণ শক্তি (প্রোটন-প্রোটনের মধ্যে) দুর্বল নিউক্লিয় বল দ্বারা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এই অস্থিরতা কাটাতে তারা তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে ছোট ও স্থিতিশীল নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল বলতে কী বোঝো? এদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন