এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পর্যায়-সারণিতে শ্রেণিগতভাবে মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে তা উল্লেখ করো। অথবা, পর্যায়-সারণিতে শ্রেণি বরাবর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কীভাবে পরিবর্তিত হয়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পর্যায়-সারণিতে শ্রেণিগতভাবে মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে তা উল্লেখ করো।
অথবা, পর্যায়-সারণিতে শ্রেণি বরাবর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
পর্যায়-সারণির যে-কোনো শ্রেণিতে ওপর থেকে নীচের দিকে নামলে মৌলগুলির পরমাণুর ব্যাসার্ধ ও আকার ক্রমশ বাড়তে থাকে।
ব্যাখ্যা –
কোনো শ্রেণির ওপর থেকে নীচের দিকে নামলে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে নতুন মুখ্য শক্তিস্তরের আবির্ভাব হয়। বর্ধিত ইলেকট্রনসমূহ দ্বারা পূর্ববর্তী মুখ্য শক্তিস্তর পূর্ণ হওয়ার পর নতুন মুখ্য শক্তিস্তরে ইলেকট্রন প্রবেশ করে। নতুন ইলেকট্রন কক্ষের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে সর্ববহিস্থ কক্ষের দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফলে নিউক্লিয়াস এবং বাইরের কক্ষের ইলেকট্রনের মধ্যে আকর্ষণ বল পরমাণু ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উত্তরোত্তর শিথিল হতে থাকে, যার জন্য উপর থেকে নীচে একটি শ্রেণির মৌলসমূহের পরমাণুর আয়তন ও ব্যাসার্ধ বা আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
পর্যায় সারণিতে একটি শ্রেণি (Group/উল্লম্ব কলাম) বরাবর নীচে নামলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কেন বৃদ্ধি পায়?
একটি শ্রেণিতে নীচের দিকে যাওয়ার সাথে সাথে পরমাণুর প্রধান শক্তিস্তরের (Principal Energy Level) সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যেমন – Li (দ্বিতীয় স্তর) → Na (তৃতীয় স্তর) → K (চতুর্থ স্তর)। নতুন শক্তিস্তর যোগ হওয়ায় পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস আরও বাইরের দিকে বিস্তৃত হয়, ফলে পরমাণুর সামগ্রিক আকার বৃদ্ধি পায়।
একটি পর্যায় (Period/আনুভূমিক সারি) বরাবর ডান দিকে গেলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কীভাবে পরিবর্তিত হয় এবং কেন?
একটি পর্যায়ে বাম থেকে ডানে যাওয়ার সাথে সাথে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হ্রাস পায়।
কারণ – ডান দিকে গেলে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধান (প্রোটন সংখ্যা) বৃদ্ধি পায়, কিন্তু নতুন ইলেকট্রনগুলো একই প্রধান শক্তিস্তরে যুক্ত হয়। ফলে নিউক্লিয়াসের কার্যকরী নিউক্লীয় আধান (Effective Nuclear Charge) বৃদ্ধি পায় এবং এটি ইলেকট্রন মেঘকে আরও শক্তভাবে নিজের দিকে টানে, যার ফলে পরমাণুটি সঙ্কুচিত হয়।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বলতে কী বোঝায়?
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হলো একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কেন্দ্র থেকে তার সর্ববহিঃস্থ ইলেকট্রন মেঘের গড় দূরত্ব। যেহেতু ইলেকট্রন মেঘের স্পষ্ট কোনো সীমানা নেই, তাই সাধারণত একই ধরনের দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যকার দূরত্বের অর্ধেককে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ধরা হয়।
সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে বড় পরমাণুগুলি পর্যায় সারণির কোথায় অবস্থিত?
সবচেয়ে ছোট পরমাণু – পর্যায় সারণির ডানদিকে ও উপরের দিকে অবস্থিত মৌলগুলি (যেমন হিলিয়াম – He)।
সবচেয়ে বড় পরমাণু – পর্যায় সারণির বামদিকে ও নীচের দিকে অবস্থিত মৌলগুলি (যেমন ফ্রানসিয়াম – Fr)।
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির (Noble Gases) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ একই পর্যায়ের অন্যান্য মৌলগুলির তুলনায় বেশি হয় কেন?
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির (Noble Gases) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ একই পর্যায়ের অন্যান্য মৌলগুলির তুলনায় বেশি হয় এর প্রধান কারণ হলো আন্তঃআণবিক বল (Intermolecular Forces)। নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির পরমাণুগুলি ভ্যান ডার ওয়ালস বল দ্বারা খুব দুর্বলভাবে আবদ্ধ থাকে, ফলে তাদের মধ্যে দূরত্ব বেশি হয়। যখন তাদের ব্যাসার্ধ মাপা হয়, তখন এই বড় দূরত্বটি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাই তাদের ব্যাসার্ধ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখায়। অন্যদিকে, অন্যান্য মৌল (যেমন – ক্লোরিন) শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে এবং তাদের পরমাণুগুলির মধ্যে দূরত্ব কম হয়, ফলে মাপা ব্যাসার্ধও তুলনামূলকভাবে কম হয়।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধের এই পর্যাবৃত্ত পরিবর্তন অন্যান্য মৌলিক ধর্মকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ একটি মৌলিক ধর্ম, যা অন্যান্য অনেক ধর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে।
1. ধাতব ধর্ম – ব্যাসার্ধ বাড়লে ধাতব ধর্ম বাড়ে (নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ থেকে ইলেকট্রন ত্যাগ করা সহজ হয়)।
2. আয়নীকরণ শক্তি (Ionization Energy) – ব্যাসার্ধ বাড়লে আয়নীকরণ শক্তি কমে (কারণ – বহিঃস্থ ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরে থাকে, তাই ছেড়ে যাওয়া সহজ হয়)।
3. তড়িৎ-ঋণাত্মকতা (Electronegativity) – ব্যাসার্ধ বাড়লে তড়িৎ-ঋণাত্মকতা কমে (কারণ – নিউক্লিয়াস দূরে থাকায় ইলেকট্রন আকর্ষণ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পর্যায়-সারণিতে শ্রেণিগতভাবে মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধের পর্যাবৃত্তি কীভাবে ঘটে তা উল্লেখ করো। অথবা, পর্যায়-সারণিতে শ্রেণি বরাবর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কীভাবে পরিবর্তিত হয়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন