এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পারমাণবিক ভর নয়, পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই মৌলসমূহের পর্যাবৃত্তির সঠিকতর নির্ণায়ক – যুক্তিসহ সমর্থন করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পারমাণবিক ভর নয়, পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই মৌলসমূহের পর্যাবৃত্তির সঠিকতর নির্ণায়ক – যুক্তিসহ সমর্থন করো।
সাধারণত মৌলগুলির ভৌত কিংবা রাসায়নিক ধর্ম ওই মৌলের সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রন সজ্জার ওপর নির্ভর করে। আবার কোনো মৌলের সর্ববহিস্থ ইলেকট্রন কাঠামো কেমন হবে তা নির্ভর করে ওই মৌলের ইলেকট্রন সংখ্যার ওপর। অপরদিকে নিস্তড়িৎ পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যা তার প্রোটন সংখ্যা তথা পারমাণবিক ক্রমাঙ্কের সমান। সুতরাং, মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে পর্যাবৃত্ত হওয়া উচিত। আবার কোনো মৌলের একই পরমাণু ক্রমাঙ্ক হওয়া সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন ভরসংখ্যা সম্ভব অর্থাৎ আইসোটোপ সম্ভব। আইসোটোপগুলির রাসায়নিক ধর্ম একই থাকে যদিও তাদের পারমাণবিক ভর আলাদা। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে পারমাণবিক ভর নয়, পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই মৌলসমূহের পর্যায়বৃত্তির সঠিকতর নির্ণায়ক।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
পর্যায় সারণিতে মৌলগুলিকে সাজানোর ক্ষেত্রে পারমাণবিক ভরের পরিবর্তে পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই একটি মৌলের প্রোটন সংখ্যা নির্দেশ করে, যা নিস্তড়িৎ পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যার সমান। যেহেতু কোনো মৌলের রাসায়নিক ধর্ম তার সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রন বিন্যাস দ্বারা নির্ধারিত হয়, এবং ইলেকট্রন বিন্যাস সরাসরি ইলেকট্রন সংখ্যা (অতঃপর পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেহেতু পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই পর্যাবৃত্ত ধর্মের সঠিক নির্ণায়ক। পারমাণবিক ভর এই ইলেকট্রন বিন্যাসকে সরাসরি নির্দেশ করে না।
আইসোটোপ কী? আইসোটোপের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিন যে এটি পারমাণবিক ক্রমাঙ্ককে নির্ণায়ক হিসেবে প্রমাণ করে।
আইসোটোপ হল একই মৌলের ভিন্ন ভরসংখ্যাবিশিষ্ট পরমাণু যাদের পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক একই কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন। যেমন, কার্বনের তিনটি আইসোটোপ – কার্বন-12, কার্বন-13 এবং কার্বন-14। এদের পারমাণবিক ভর আলাদা হলেও এদের পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক (6) একই। যেহেতু এদের ইলেকট্রন সংখ্যা ও বিন্যাস একই, তাই এদের রাসায়নিক ধর্মও অভিন্ন। এটি প্রমাণ করে যে রাসায়নিক ধর্ম পারমাণবিক ভর নয়, বরং পারমাণবিক ক্রমাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল।
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির প্রধান ত্রুটি কী ছিল?
মেন্ডেলিফ মৌলগুলিকে তাদের পারমাণবিক ভরের ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে সাজিয়েছিলেন। কিন্তু এই নীতির কিছু ত্রুটি ছিল; যেমন কিছু ক্ষেত্রে বেশি পারমাণবিক ভর বিশিষ্ট মৌলকে কম পারমাণবিক ভর বিশিষ্ট মৌলের আগে স্থান দিতে হয়েছিল তাদের ধর্মের মিল রাখার জন্য [যেমন – আর্গন (Ar) ও পটাসিয়াম (K) এবং কোবাল্ট (Co) ও নিকেল (Ni)]। আধুনিক পর্যায় সারণিতে পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক অনুসারে সাজানোর ফলে এই অসামঞ্জস্য দূর হয়েছে, কারণ পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক বাড়ার সাথে সাথে ইলেকট্রন বিন্যাসের পরিবর্তনই পর্যাবৃত্ততা তৈরি করে।
সর্ববহিঃস্থ ইলেকট্রন কীভাবে একটি মৌলের ধর্ম নির্ধারণ করে?
কোনো মৌলের রাসায়নিক সক্রিয়তা, যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা, অক্সিডেশন সংখ্যা, আয়নীকরণ শক্তি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগুলো তার সর্ববহিঃস্থ কক্ষে থাকা ইলেকট্রনগুলোর (যোজ্যতা ইলেকট্রন) সংখ্যা এবং বিন্যাসের উপর সরাসরি নির্ভর করে। এই ইলেকট্রনগুলোই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। যেহেতু এই ইলেকট্রন বিন্যাস পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই হলো মৌলিক ধর্মের প্রকৃত নির্ণায়ক।
মৌলগুলির ধর্ম আসলে কীসের ওপর নির্ভর করে?
মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তাদের সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে।
মৌলের ইলেকট্রন সংখ্যা কোন মূল সংখ্যাটির সমান?
একটি নিস্তড়িৎ পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যা তার প্রোটন সংখ্যা বা পারমাণবিক ক্রমাঙ্কের সমান।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পারমাণবিক ভর নয়, পারমাণবিক ক্রমাঙ্কই মৌলসমূহের পর্যাবৃত্তির সঠিকতর নির্ণায়ক – যুক্তিসহ সমর্থন করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন