এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগ কাকে বলে? সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সমযোজী যৌগ কাকে বলে?
সমযোজী যৌগ – দুই বা ততোধিক পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড়কে সমভাবে গ্রহণ করে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যে যৌগ গঠন করে, তাকে সমযোজী যৌগ বলে। যেমন – হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl), কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), অ্যামোনিয়া (NH3) ইত্যাদি।
সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য লেখো।
সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য –
- সাধারণ উষ্ণতায় ও চাপে বেশির ভাগ সমযোজী যৌগ তরল বা গ্যাসীয়। কঠিন সমযোজী যৌগগুলি নরম ও উদ্বায়ী হয়।
- সমযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম হয়।
- সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়, কিন্তু জলে বা অজৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় না।
- সমযোজী যৌগগুলি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ। এরা গলিত ও দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না।
- সমযোজী যৌগগুলির স্থায়িত্ব খুব বেশি।
- সমযোজী যৌগগুলি খুব ধীরগতিতে বিক্রিয়া করে।
- সমযোজী যৌগগুলির সমাবয়বতা দেখা যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সমযোজী বন্ধন কী?
যখন দুই বা ততোধিক পরমাণু তাদের মধ্যে ইলেকট্রন জোড় ভাগাভাগি (শেয়ার) করে একটি স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে, তখন তাদের মধ্যে যে আকর্ষণ বলের সৃষ্টি হয় তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।
সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম হয় কেন?
সমযোজী যৌগের অণুগুলির মধ্যে দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস বল কাজ করে। এই দুর্বল আন্তঃআণবিক বল ভাঙার জন্য খুব বেশি শক্তির প্রয়োজন হয় না। তাই এদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম হয়।
সমযোজী যৌগগুলি তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না কেন?
সমযোজী যৌগে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন বা আধানবাহিত আয়ন (ক্যাটায়ন বা অ্যানায়ন) থাকে না। যেহেতু তড়িৎ পরিবহনের জন্য মুক্ত ইলেকট্রন বা আয়নের প্রয়োজন, তাই এরা গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
সমযোজী যৌগ সাধারণত কোন দ্রাবকে দ্রবণীয়?
সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত জৈব দ্রাবকে (যেমন- বেনজিন, কেরোসিন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড) দ্রবণীয় হয়। কিন্তু ধ্রুবীয় দ্রাবক যেমন জলে এরা সাধারণত দ্রবণীয় হয় না।
সমাবয়বতা বলতে কী বোঝায়?
একই আণবিক সংকেতযুক্ত কিন্তু ভিন্ন গঠন ও ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত যৌগগুলির মধ্যে যে ঘটনা দেখা যায় তাকে সমাবয়বতা বলে। এটি সমযোজী যৌগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। যেমন – বিউটেন (C₄H₁₀) যৌগের আইসোমার আছে।
সমযোজী যৌগের বিক্রিয়া ধীরগতিতে হয় কেন?
সমযোজী যৌগের বিক্রিয়ায় শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন ভাঙতে হয়, যা ভাঙতে প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয়। এই বন্ধন ভাঙার প্রক্রিয়া ধীর হওয়ায় সমযোজী যৌগের বিক্রিয়া সাধারণত ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়।
সমযোজী যৌগের স্থায়িত্ব বেশি হওয়ার কারণ কী?
পরমাণুগুলির মধ্যে ইলেকট্রন শেয়ার করার মাধ্যমে গঠিত সমযোজী বন্ধন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। এই শক্তিশালী আন্তঃপরমাণবিক বন্ধনের জন্য সমযোজী যৌগগুলির স্থায়িত্ব অনেক বেশি।
H₂O একটি সমযোজী যৌগ, কিন্তু এর স্ফুটনাঙ্ক বেশি হয় কেন?
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম। H₂O (পানি) অণুগুলির মধ্যে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বন্ধন থাকে। এই শক্তিশালী আন্তঃআণবিক বল ভাঙার জন্য বেশি তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। তাই পানির স্ফুটনাঙ্ক সাধারণ সমযোজী যৌগের তুলনায় অনেক বেশি।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগ কাকে বলে? সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন