এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক কম হয় কেন? কীভাবে সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি হয়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সমযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক কম হয় কেন?
সমযোজী যৌগের অণুগুলির মধ্যে যে আকর্ষণ বল কাজ করে তাকে ভ্যান ডার ওয়ালস্ বল বলে। এই আকর্ষণ বল তড়িৎযোজী যৌগের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়নগুলির মধ্যে স্থির তড়িদাকর্ষণ বল অপেক্ষা অনেক দুর্বল হয়। এইজন্য সমযোজী যৌগের অণুগুলিকে পৃথক করতে অপেক্ষাকৃত কম তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। এই কারণে সমযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক কম হয়।
কীভাবে সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি হয়?
একই বা ভিন্ন মৌলের দুই বা ততোধিক পরমাণু নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের জন্য পরস্পরের মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় সমভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য হয় কেন?
সমযোজী যৌগগুলি অণু দ্বারা গঠিত হয় এবং তাদের গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় মুক্ত আয়ন (ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কণা) থাকে না। তড়িৎ পরিবহনের জন্য মুক্ত আয়নের প্রয়োজন হয়। যেহেতু এখানে মুক্ত আয়ন নেই, তাই সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না, অর্থাৎ তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য হয়।
আয়নিক যৌগ ও সমযোজী যৌগের গলনাঙ্কের মধ্যে পার্থক্যের মূল কারণ কী?
আয়নিক যৌগ ও সমযোজী যৌগের গলনাঙ্কের মধ্যে পার্থক্যের মূল কারণ হল তাদের অণু বা কণাগুলির মধ্যকার আকর্ষণ বলের প্রকৃতি।
1. আয়নিক যৌগে – শক্তিশালী ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক আকর্ষণ বল (স্থির তড়িদাকর্ষণ) ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নগুলিকে একটি শক্ত জালক কাঠামোর মধ্যে ধরে রাখে। এই বন্ধন ভাঙতে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই গলনাঙ্ক উচ্চ হয়।
2. সমযোজী যৌগে – অণুগুলির মধ্যে দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস্ বল কাজ করে। এই দুর্বল বল ভাঙতে কম শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই গলনাঙ্ক কম হয়।
সকল সমযোজী যৌগেরই কি গলনাঙ্ক কম হয়?
না, সকল সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক কম হয় না। এই সাধারণ নিয়মটি প্রযোজ্য হয় সেইসব সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে যেগুলো পৃথক অণু দ্বারা গঠিত (যেমন – H₂O, CO₂, CH₄)। তবে কিছু সমযোজী যৌগ রয়েছে যেগুলো বিশাল আকারের সমযোজী নেটওয়ার্ক কাঠামো (covalent network structure) নিয়ে গঠিত (যেমন – হীরা, গ্রাফাইট, সিলিকা বা বালি)। এইসব যৌগে পরমাণুগুলো শক্তিশালী সমযোজী বন্ধনের একটি বিশাল ত্রিমাত্রিক জালক গঠন করে, যা ভাঙা অত্যন্ত কঠিন। তাই এদের গলনাঙ্ক অত্যন্ত উচ্চ হয়।
ভ্যান ডার ওয়ালস্ বল আসলে কী?
ভ্যান ডার ওয়ালস্ বল হল অণুগুলির মধ্যে বিদ্যমান এক ধরনের অস্থায়ী ও দুর্বল আকর্ষণ বল। এটি প্রধানত দুইভাবে সৃষ্টি হয় –
1. অস্থায়ী দ্বি-মেরু বল – একটি অণুতে ইলেকট্রনগুলির চলাচলের কারণে ক্ষণিকের জন্য একটি ছোট ধনাত্মক ও একটি ছোট ঋণাত্মক মেরুর সৃষ্টি হয়। এই অস্থায়ী মেরু পাশের অণুতে অনুরূপ মেরু সৃষ্টি করে এবং তাদের মধ্যে আকর্ষণ কাজ করে।
2. বিক্ষিপ্ত বল – অ-মেরুযুক্ত অণুগুলির মধ্যেও ইলেকট্রনের অস্থায়ী অসম বণ্টনের কারণে এই বলের সৃষ্টি হয়।
যেহেতু এই আকর্ষণ খুবই দুর্বল, তাই এটিকে ভাঙতে কম তাপশক্তির প্রয়োজন হয়।
সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত নরম ও ভঙ্গুর হয় কেন?
যেসব সমযোজী যৌগ অণু দ্বারা গঠিত (যেমন – মোম, আয়োডিন), সেগুলো নরম হয় কারণ তাদের কঠিন অবস্থায় অণুগুলি দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস্ বল দ্বারা স্তর বা স্ফটিক আকারে সজ্জিত থাকে। এই স্তরগুলিকে একে অপরের উপর দিয়ে সহজেই পিছলে নেওয়া যায়। তারা ভঙ্গুর হয় কারণ এই দুর্বল আন্তঃআণবিক বলের কারণে প্রয়োগকৃত সামান্য বলেই স্ফটিক গঠন ভেঙে যায়।
আয়নিক যৌগ ভেঙে গলে, কিন্তু সমযোজী যৌগ সাধারণত গলিত অবস্থায় অক্ষত অণু হিসেবে থাকে কেন?
গলনের সময় শুধুমাত্র আন্তঃআণবিক বল ভাঙে।
1. আয়নিক যৌগে – কঠিন অবস্থায় আয়নগুলি শক্ত জালক কাঠামোর মধ্যে থাকে। গলনের সময় এই শক্তিশালী আয়নিক বন্ধন (ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক আকর্ষণ) ভেঙে যায় এবং মুক্ত আয়ন সৃষ্টি হয়।
2. সমযোজী যৌগে – কঠিন অবস্থায় অণুগুলি দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস্ বল দ্বারা আবদ্ধ থাকে। গলনের সময় কেবল এই দুর্বল আন্তঃআণবিক বল ভাঙে, কিন্তু অণুর ভিতরের শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন অক্ষত থাকে। তাই গলিত অবস্থায়ও অণুগুলি অক্ষতভাবে থাকে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক কম হয় কেন? কীভাবে সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি হয়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন