এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অসমযোজী বন্ধন বলতে কী বোঝো? অসমযোজী যৌগ কী? উদাহরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অসমযোজী বন্ধন বলতে কী বোঝো? অসমযোজী যৌগ কী? উদাহরণ দাও।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর মধ্যে একটি পরমাণু দুটি ইলেকট্রন (ইলেকট্রন জোড়) দান করে উভয় পরমাণু ওই ইলেকট্রন জোড়টি সমভাবে ব্যবহার করে তাদের সর্ববহিস্থ কক্ষে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস ঘটিয়ে যে বন্ধন সৃষ্টি করে তাকে অসমযোজী বন্ধন বলে এবং এই বন্ধন গঠনের মাধ্যমে যে যৌগ গঠিত হয় তাকে অসমযোজী যৌগ বলে।
উদাহরণ – অ্যামোনিয়াম আয়ন (NH₄⁺), অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের ডাইমার (Al₂Cl₆), সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO₃) ইত্যাদি।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অসমযোজী বন্ধন ও সমযোজী বন্ধনের প্রধান পার্থক্য কী?
ইলেকট্রন জোড় গঠন ও ভাগাভাগির প্রকৃতিতে পার্থক্য নিহিত।
1. সমযোজী বন্ধনে – বন্ধন গঠনকারী দুটি পরমাণুই প্রত্যেকে একটি করে ইলেকট্রন দান করে ইলেকট্রন জোড় গঠন করে এবং সেই জোড়টি সমভাবে ভাগ করে নেয়। (যেমন – H₂, O₂, CH₄)।
2. অসমযোজী বন্ধনে – ইলেকট্রন জোড়টি গঠিত হয় শুধুমাত্র একটি পরমাণু থেকে দুটি ইলেকট্রন দান করার মাধ্যমে, কিন্তু পরে দুটি পরমাণুই সেই জোড়টি ব্যবহার করে। ইলেকট্রন দানকারী পরমাণুকে দাতা এবং গ্রহণকারী পরমাণুকে গ্রহীতা বলা হয়।
অসমযোজী বন্ধন গঠনের জন্য কী কী শর্ত প্রয়োজন?
অসমযোজী বন্ধন গঠনের জন্য দুটি পরমাণুর মধ্যে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক –
1. দাতা পরমাণু – এর কাছে অবশ্যই একটি একক ইলেকট্রন জোড় (Lone pair) থাকতে হবে। (যেমন – নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফ্লোরিন ইত্যাদি)।
2. গ্রহীতা পরমাণু – এর যোজ্যতা কক্ষে একটি খালি অরবিটাল থাকতে হবে। (যেমন – H⁺ আয়ন, AlCl₃ -এর Al, BF₃ -এর B ইত্যাদি)।
অসমযোজী বন্ধন কী শুধুমাত্র আয়নিক বা জটিল যৌগের মধ্যেই হয়?
না, অসমযোজী বন্ধন বিভিন্ন প্রকারের যৌগে দেখা যায়। এটি অণুর ভিতরে (ইন্ট্রামলিকুলার) বা ভিন্ন অণুর মধ্যে (ইন্টারমলিকুলার) উভয়ভাবেই গঠিত হতে পারে।
1. অণুর ভিতরে – যেমন – HNO₃ (নাইট্রিক অ্যাসিড) বা H₂SO₄ (সালফিউরিক অ্যাসিড)-এ O-H বন্ধন ছাড়াও N = O বা, S = O বন্ধনের পাশাপাশি অসমযোজী বন্ধন থাকে।
2. জটিল আয়ন গঠনে – যেমন – NH₃ এবং H⁺ মিলে অ্যামোনিয়াম আয়ন (NH₄⁺) গঠন করে।
3. অণুর মধ্যে (দ্বিমেরু-দ্বিমেরু আকর্ষণ) – যেমন – একটি অ্যামোনিয়া (NH₃) অণুর নাইট্রোজেনের একক জোড় আরেকটি অ্যামোনিয়া অণুর হাইড্রোজেনের সাথে দুর্বল অসমযোজী বন্ধন (হাইড্রোজেন বন্ধন) তৈরি করতে পারে।
অসমযোজী বন্ধন কি সমযোজী বন্ধনের চেয়ে দুর্বল?
সাধারণভাবে, হ্যাঁ। একটি অসমযোজী বন্ধনের শক্তি একটি সমযোজী বন্ধনের (যেমন C–C বা C–H) চেয়ে কম হয়। তবে এটি আয়ন-দ্বিমেরু আকর্ষণ বা ভ্যান ডার ওয়ালস বলের চেয়ে শক্তিশালী। এর শক্তি দাতা ও গ্রহীতা পরমাণুর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
অসমযোজী বন্ধন এবং সমন্বয় বন্ধন কি একই?
হ্যাঁ, অসমযোজী বন্ধন-ই সমন্বয় বন্ধন নামে বেশি পরিচিত। যখন একটি কেন্দ্রীয় ধাতব আয়ন লিগ্যান্ডের (দাতা অণু বা আয়ন) কাছ থেকে ইলেকট্রন জোড় গ্রহণ করে একটি জটিল আয়ন বা যৌগ গঠন করে, তখন গঠিত বন্ধনগুলোকে সমন্বয় বন্ধন বলা হয়। যেমন – [Cu(NH₃)₄]²⁺ জটিল আয়নে Cu²⁺ আয়ন এবং NH₃ অণুর মধ্যে চারটি সমন্বয় বন্ধন থাকে।
AlCl₃ -এর ডাইমার (Al₂Cl₆) গঠনে অসমযোজী বন্ধনের ভূমিকা কী?
গ্যাসীয় অবস্থায় AlCl₃ একটি ডাইমার Al₂Cl₆ অণু হিসেবে থাকে। এখানে, একটি AlCl₃ অণুর অ্যালুমিনিয়াম পরমাণুর কাছে একটি খালি p-অরবিটাল থাকে। অন্য একটি AlCl₃ অণুর ক্লোরিন পরমাণুর কাছে দুটি একক ইলেকট্রন জোড় থাকে। একটি ক্লোরিন পরমাণু তার একটি একক জোড় Al -এর খালি অরবিটালে দান করে একটি অসমযোজী বন্ধন সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় দু’দিক থেকে দুটি “ক্লোরিন সেতু” (Chlorine bridge) তৈরি হয় এবং Al₂Cl₆ গঠিত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অসমযোজী বন্ধন বলতে কী বোঝো? অসমযোজী যৌগ কী? উদাহরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন