এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কীসের ভিত্তিতে তড়িদবিশ্লেষ্যগুলিকে তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কীসের ভিত্তিতে তড়িদবিশ্লেষ্যগুলিকে তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে?
তড়িদবিশ্লেষ্যের আয়নিত হওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী তড়িদবিশ্লেষ্যগুলিকে তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। যেসব তড়িদবিশ্লেষ্য গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে বা প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে আয়নে পরিণত হয়, সেই সমস্ত তড়িদবিশ্লেষ্য হল তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য। আবার, যেসব তড়িদবিশ্লেষ্য গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় আংশিকভাবে বিয়োজিত হয়ে আয়নে পরিণত হয় সেই সমস্ত তড়িদবিশ্লেষ্য হল মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের মধ্যে মূল পার্থক্য হল –
1. তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য দ্রবণে প্রায় সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয় (বিয়োজিত হয়), ফলে এদের দ্রবণে আয়নের ঘনত্ব বেশি থাকে।
2. মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য দ্রবণে খুব অল্প পরিমাণে আয়নিত হয় এবং দ্রবণে বেশিরভাগ অণু অআয়নিত অবস্থায় থাকে।
তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্যের কিছু উদাহরণ দাও।
তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্যের কিছু উদাহরণ হল – HCl (হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড), HNO₃ (নাইট্রিক অ্যাসিড), H₂SO₄ (সালফিউরিক অ্যাসিড), NaOH (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড), NaCl (সোডিয়াম ক্লোরাইড) প্রভৃতি।
মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের কিছু উদাহরণ দাও।
মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের কিছু উদাহরণ হল – CH₃COOH (এসিটিক অ্যাসিড), NH₄OH (অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড), H₂CO₃ (কার্বনিক অ্যাসিড), HCN (হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড) প্রভৃতি।
তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য শনাক্ত করার পদ্ধতি কী?
তাদের বিয়োজন ধ্রুবক (Kₐ বা Kᵦ) বা বিয়োজন মাত্রা (α) দেখে শনাক্ত করা যায় –
1. তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্যের জন্য Kₐ/ Kᵦ এর মান অনেক বেশি (>1) এবং α ≈ 1।
2. মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের জন্য Kₐ/ Kᵦ এর মান খুব কম (<10⁻³) এবং α << 1।
বিয়োজন ধ্রুবক বলতে কী বোঝায়?
এটি একটি রাসায়নিক সাম্যাবস্থা ধ্রুবক, যা দ্রবণে তড়িদবিশ্লেষ্যের বিয়োজন মাত্রা নির্দেশ করে। তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্যের বিয়োজন ধ্রুবক উচ্চ, মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের বিয়োজন ধ্রুবক নিম্ন।
তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য কি সব দ্রাবকে একই রকম আচরণ করে?
না, দ্রাবকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। যেমন – HCl পানিতে তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য, কিন্তু অ-পোলার দ্রাবক যেমন – হেক্সেনে এটি তড়িদবিশ্লেষ্য নয়।
মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের দ্রবণে কি বেশি তড়িদবিশ্লেষ্য যোগ করলে আয়ন বাড়বে?
হ্যাঁ, কিন্তু একটি সীমা পর্যন্ত; কারণ মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের বিয়োজন সাম্যাবস্থায় থাকে, তাই সম্পূর্ণ বিয়োজন হয় না।
তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য শ্রেণিবিভাগের ব্যবহারিক গুরুত্ব কী?
তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য শ্রেণিবিভাগের ব্যবহারিক গুরুত্ব হল –
1. ব্যাটারি ও তড়িৎকোষে তড়িদবিশ্লেষ্য নির্বাচন।
2. রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি ও সাম্যাবস্থা বোঝা।
3. অ্যাসিড-ক্ষারক টাইট্রেশন ও pH নিয়ন্ত্রণ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কীসের ভিত্তিতে তড়িদবিশ্লেষ্যগুলিকে তীব্র ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন