এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎ পরিবাহিতার কীরূপ পরিবর্তন ঘটে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎ পরিবাহিতার কীরূপ পরিবর্তন ঘটে?
গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ চালনা করলে তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থটি বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উৎপন্ন করে। এখন দ্রবণের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে আয়নগুলির গতিশক্তি তথা গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ তড়িৎবিশ্লেষণের ফলে তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি দ্রুত যথাক্রমে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে আকৃষ্ট হয়। ফলে আয়নগুলির গতিবেগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তড়িৎবিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবাহিতাও বেশি হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎবিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবাহিতা বাড়ে কেন?
উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে দুটি প্রধান কারণে পরিবাহিতা বাড়ে—
1. আয়নের গতিশক্তি বৃদ্ধি – উষ্ণতা বাড়লে দ্রবণে উপস্থিত ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির গতিশক্তি বাড়ে। ফলে তারা দ্রুত ইলেক্ট্রোডের (ক্যাথোড ও অ্যানোড) দিকে অগ্রসর হতে পারে, এতে তড়িৎ পরিবাহনের হার বৃদ্ধি পায়।
2. সান্দ্রতা হ্রাস – উষ্ণতা বাড়লে দ্রাবকের সান্দ্রতা (ঘনত্ব/প্রতিরোধ) কমে যায়। এতে আয়নগুলি সহজে ও দ্রুত চলাচল করতে পারে, যা পরিবাহিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
উষ্ণতা বৃদ্ধির এই প্রভাব কি সকল প্রকার তড়িৎবিশ্লেষ্যের (যেমন– শক্ত ও দুর্বল) ক্ষেত্রে একই রকম?
হ্যাঁ, মূলত উষ্ণতা বৃদ্ধি সকল তড়িৎবিশ্লেষ্যেরই পরিবাহিতা বাড়ায়, কারণ এতে আয়নের গতিবেগ বাড়ে। তবে দুর্বল তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে আরও একটি সুবিধা হয় — এদের আয়নিক বিভাজন মাত্রা (Degree of Ionization) বেড়ে যায়। ফলে দ্রবণে মোট আয়নের সংখ্যা বেড়ে যায়, যা পরিবাহিতা বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত ভূমিকা রাখে।
ধাতব পরিবাহীর (যেমন– তামার তার) ক্ষেত্রে উষ্ণতা বাড়লে পরিবাহিতার কী পরিবর্তন ঘটে? তড়িৎবিশ্লেষ্যের সাথে এর পার্থক্য কোথায়?
তড়িৎবিশ্লেষ্যে – উষ্ণতা বাড়লে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় (আয়নের গতি ও সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য)।
ধাতব পরিবাহীতে – উষ্ণতা বাড়লে পরিবাহিতা হ্রাস পায় (বা রোধ বৃদ্ধি পায়)। কারণ, উষ্ণতা বাড়লে ধাতব জালের পরমাণুগুলির কম্পন বেড়ে যায়, যা মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎবিশ্লেষ্যের মোলার পরিবাহিতার (Molar Conductivity) কী পরিবর্তন হয়?
উষ্ণতা বাড়লে তড়িৎবিশ্লেষ্যের মোলার পরিবাহিতাও বৃদ্ধি পায়। মোলার পরিবাহিতা নির্ভর করে আয়নের গতিশীলতার উপর। যেহেতু উষ্ণতা বাড়লে আয়নের গতি বেড়ে যায়, তাই মোলার পরিবাহিতার মানও বড় হয়।
বাস্তব জীবনে তড়িৎবিশ্লেষ্যের এই ধর্মটি কীভাবে কাজে লাগে?
এই নীতিটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন–
1. গাড়ির ব্যাটারি – ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ রোধ বেড়ে যায় বলে কার্যক্ষমতা কমে যায়। গরমে ব্যাটারির তড়িৎবিশ্লেষ্য (অ্যাসিড)-এর পরিবাহিতা বেশি হয়।
2. ইলেক্ট্রোপ্লেটিং – নির্দিষ্ট গতি ও সমতা বজায় রাখতে দ্রবণের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে আয়নের গতি ও পরিবাহিতা উপযুক্ত থাকে।
3. রাসায়নিক উৎপাদন – অনেক শিল্পে তড়িৎবিশ্লেষণের হার বাড়ানোর জন্য দ্রবণকে হালকা গরম করা হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎ পরিবাহিতার কীরূপ পরিবর্তন ঘটে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন