অ্যামোনিয়ার ক্ষারধর্মের পরিচয় দাও।

অ্যামোনিয়াকে মৃদু ক্ষার বলা হয় কারণ এটি জলে দ্রবীভূত হয়ে সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয় না। এটি জলের অণুর (H₂O) থেকে একটি প্রোটন (H⁺) গ্রহণ করে অ্যামোনিয়াম আয়ন (NH₄⁺) এবং হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH⁻) তৈরি করে, যা দ্রবণকে ক্ষারকীয় করে তোলে। তবে এই বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, তাই এটি শক্তিশালী ক্ষারের মতো সম্পূর্ণরূপে OH⁻ আয়ন সরবরাহ করতে পারে না।
NH₃ + H₂O ⇌ NH₄⁺ + OH⁻

সাদা ধোঁয়াটি আসলে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH₄Cl) লবণের অতি সূক্ষ্ম কঠিন কণা। গ্যাসীয় অ্যামোনিয়া (NH₃) এবং গ্যাসীয় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) বাতাসে মিলিত হলে তারা সরাসরি বিক্রিয়া করে এই কঠিন লবণ তৈরি করে, যা আমাদের কাছে সাদা ধোঁয়া বা ধূসর বাষ্পরূপে দেখা যায়।
NH₃(g) + HCl(g) → NH₄Cl(s)

অ্যামোনিয়া সালফিউরিক অ্যাসিডের (H₂SO₄) সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম সালফেট ((NH₄)₂SO₄) লবণ তৈরি করে। যেহেতু সালফিউরিক অ্যাসিড একটি ডাই-প্রোটিক অ্যাসিড, তাই এটি দুটি অ্যামোনিয়া অণুর সাথে বিক্রিয়া করে।
2NH₃ + H₂SO₄ → (NH₄)₂SO₄

অ্যামোনিয়া নাইট্রিক অ্যাসিডের (HNO₃) সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH₄NO₃) লবণ তৈরি করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক সার।
NH₃ + HNO₃ → NH₄NO₃

হ্যাঁ, অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রবণীয়। অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে দ্রবীভূত হলে যে দ্রবণটি পাওয়া যায় তাকে অ্যামোনিয়া জল বা অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইডের দ্রবণ বলা হয়। এই দ্রবণটিই ক্ষারকীয় ধর্ম প্রদর্শন করে।

অ্যামোনিয়া গ্যাস বা অ্যামোনিয়া জল (NH₄OH) ক্ষারকীয় হওয়ায় এটি লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে। এটি একটি সাধারণ পরীক্ষা দ্বারা অ্যামোনিয়া গ্যাস শনাক্তকরণে ব্যবহার করা যায়।

শুষ্ক অ্যামোনিয়া গ্যাসে আসলে কোনো OH⁻ আয়ন থাকে না। কিন্তু যখন এটি জলের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি জলের অণুর থেকে একটি প্রোটন (H⁺) গ্রহণ করে — ব্রনস্টেড-লাউরি তত্ত্ব অনুসারে — এবং এর ফলে OH⁻ আয়ন সৃষ্টি হয়।
এই OH⁻ আয়নের উপস্থিতির কারণেই অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারকীয় ধর্ম প্রদর্শন করে। যেমন — এটি লাল লিটমাস কাগজকে নীল করে এবং অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে।