এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বায়ু থেকে প্রাপ্ত N₂ পরীক্ষাগারে উৎপন্ন N₂ অপেক্ষা সামান্য ভারী কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ু থেকে প্রাপ্ত N₂ পরীক্ষাগারে উৎপন্ন N₂ অপেক্ষা সামান্য ভারী কেন?
বায়ু থেকে প্রাপ্ত N₂ পরীক্ষাগারে উৎপন্ন N₂ অপেক্ষা সামান্য ভারী হয়। কারণ বায়ুতে নাইট্রোজেনের সঙ্গে কার্বন ডাইঅক্সাইড, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প ছাড়াও হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় গ্যাস অতিঅল্প পরিমাণে মিশে থাকে। হিলিয়াম ছাড়া অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস নাইট্রোজেন অপেক্ষা ভারী। বায়ু থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন থেকে সহজে অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প পৃথক করা গেলেও নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলিকে পৃথক করা সম্ভব হয় না। কিন্তু পরীক্ষাগারে প্রস্তুত N₂ গ্যাসের মধ্যে অশুদ্ধিরূপে কোনো নিষ্ক্রিয় গ্যাস উপস্থিত থাকে না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বায়ু থেকে নাইট্রোজেন গ্যাস পৃথক করার পরও কি তাতে অন্যান্য গ্যাস থেকে যায়?
হ্যাঁ, থাকে। বায়ু থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করার সময় অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প সহজে সরানো গেলেও নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো (যেমন- আর্গন, নিয়ন) পৃথক করা খুবই কঠিন ও ব্যয়সাপেক্ষ। তাই বায়ু থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেনে এই ভারী নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো অতি অল্প পরিমাণে মিশেই থাকে।
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো নাইট্রোজেন থেকে ভারী কীভাবে?
নাইট্রোজেন গ্যাসের (N₂) আণবিক ভর 28 gm/mol। কিন্তু বায়ুতে থাকা নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর আণবিক/পরমাণবিক ভর এরচেয়ে বেশি। যেমন, আর্গন (Ar) গ্যাসের পরমাণবিক ভর 40 gm/mol, যা নাইট্রোজেনের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই ভারী গ্যাসগুলোর উপস্থিতিই বায়ু থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেনের গড় আণবিক ভর সামান্য বাড়িয়ে দেয়, ফলে এটি ভারী হয়।
পরীক্ষাগারে প্রস্তুত নাইট্রোজেনে নিষ্ক্রিয় গ্যাস থাকে না কেন?
পরীক্ষাগারে নাইট্রোজেন সাধারণত যৌগিক পদার্থ (যেমন – অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ও সোডিয়াম নাইট্রাইট) বা ধাতব নাইট্রাইড (যেমন – Ba₃N₂ -এর সাথে পানি) থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। যেহেতু এই বিক্রিয়াগুলোর কাঁচামালে নিষ্ক্রিয় গ্যাস থাকে না, তাই উৎপন্ন নাইট্রোজেন গ্যাসেও এগুলো থাকে না, ফলে এটি অনেক বেশি বিশুদ্ধ ও হালকা হয়।
হিলিয়ামও তো একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস, সেটি কি বায়ুর নাইট্রোজেনকে ভারী করে?
না, বরং হিলিয়াম নাইট্রোজেনের চেয়ে হালকা (He -এর পারমাণবিক ভর মাত্র 4 gm/mol)। কিন্তু বায়ুতে অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের (বিশেষ করে আর্গনের) পরিমাণ হিলিয়ামের তুলনায় অনেক বেশি। তাই হিলিয়ামের হালকা প্রভাব অন্যান্য ভারী নিষ্ক্রিয় গ্যাসের প্রভাব দ্বারা ঢেকে যায়, এবং সামগ্রিকভাবে বায়ু থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন ভারী হয়।
বায়ু থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন ও পরীক্ষাগারে উৎপন্ন নাইট্রোজেনের ভরের মধ্যে পার্থক্য কেন হয়?
বায়ু থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেনে নিষ্ক্রিয় গ্যাস (যেমন- আর্গন, নিয়ন) মিশ্রিত থাকে, যা নাইট্রোজেনের চেয়ে ভারী। এই গ্যাসগুলো সহজে পৃথক করা যায় না বলে বায়ুর নাইট্রোজেন সামান্য ভারী হয়।
বায়ু থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড কেন আলাদা করা যায়, কিন্তু নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো আলাদা করা যায় না?
অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড রাসায়নিকভাবে সক্রিয়, তাই নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো সহজেই সরানো যায়। কিন্তু নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় একই পদ্ধতিতে আলাদা করা সম্ভব হয় না।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বায়ু থেকে প্রাপ্ত N₂ পরীক্ষাগারে উৎপন্ন N₂ অপেক্ষা সামান্য ভারী কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন