অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ভয় কি মরণে – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের অষ্টাবিংশ অধ্যায়, ‘ভয় কি মরণে’ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অধ্যায়ের উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ভয় কি মরণে – বিষয়সংক্ষেপ
অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ভয় কি মরণে – বিষয়সংক্ষেপ

ভয় কি মরণে অধ্যায়ের কবি পরিচিতি

মুকুন্দদাসের পরিচয় – তিনি একজন চারণকবি। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার বানারি গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা গুরুদয়াল দে। মুকুন্দদাস নামটির আড়ালে তাঁর পিতৃদত্ত নামটি ছিল – যজ্ঞেশ্বর দে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে দীক্ষান্তে তাঁর নাম পরিবর্তন হয়। শৈশবে তিনি খুব দুরন্ত ছিলেন। বিদ্যাশিক্ষার জগৎও তাঁর খুব প্রসারিত ছিল না। তবে আশৈশব তিনি ছিলেন সংগীতের প্রতি অনুরক্ত। পিতৃসূত্রে বরিশালে থাকাকালে ১৯ বছর বয়সে তিনি একটি কীর্তনের দলে যোগ দেন, পরে তিনি নিজেই একটি কীর্তন দল গড়ে তোলেন। আরও পরে তিনি স্বদেশমন্ত্রে উদবুদ্ধ হন এবং চারণকবিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর স্বভাবকবিত্ব ছিল। গীত রচনা, সুরদান এবং সুরেলা কণ্ঠে বিশেষ গায়নে তিনি সংগীত পরিবেশন করে মানুষের হৃদয় জয় করতেন। দেশাত্মবোধ ছিল তাঁর গীতরচনার বীজমন্ত্র। বৈষ্ণবধর্মে তাঁর অনুরাগ থাকলেও তিনি ধর্মচেতনায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। যাত্রা ও পালাগান রচনায় তাঁর প্রভৃত দক্ষতা ছিল। তাঁর দেশপ্রেমমূলক গান ও স্বদেশি পালাগান তৎকালের পরাধীন দেশবাসীর মনে প্রবল উদ্দীপনা সঞ্চার করেছিল। এজন্য তাঁকে ব্রিটিশ শাসককুলের রোষের মুখে পড়তে হয়। তৎকালের ‘মাতৃপূজা’ নামের একটি গীত সংকলন গ্রন্থে তাঁর একটি গানের বিশেষ পঙ্ক্তি ছিল এরকম – ছিল ধান গোলা ভরা, শ্বেত ইঁদুরে করল সারা। বিশেষত এ গানটির জন্যই তাঁর তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়। ‘সাধনসংগীত’, ‘ব্রহ্মচারিণী’, ‘পল্লীসমাজ’, ‘পথ’, ‘সাথী’, ‘সমাজ’, ‘কর্মক্ষেত্র’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনারাজি। সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে তিনি যদিও কিছু কিছু পুরস্কার লাভ করেন, তবে-স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয়জয়ই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মে তিনি লোকান্তরিত হন।

ভয় কি মরণে অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

দীর্ঘদিন পরজাতিশাসিত থাকতে থাকতে, ভারতের জনগণের চিত্ত এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, এককথায় তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। এতেই বোধহয় ইংরেজ শাসন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে পড়েছিল। দেশের মানুষ ছিল পরস্পর বিচ্ছিন্ন এবং শারীরিক-মানসিক দিক থেকে প্রবলভাবে দুর্বল। এই দেশীয় পটভূমিকায় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকার-গীতিকার-চিত্রকর সকল দেশপ্রেমিক মানুষই নিজেদের শিল্পসত্তাকে ব্যবহার করেছিলেন ইংরেজ অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে। গীতিকার-সুরকার ও সুগায়ক চারণকবি মুকুন্দদাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি তাঁর এই ছোট্ট রচনাটিতে দেশপ্রেমের প্রবল পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। সন্তানদের চিরদুঃখে মা স্বয়ং যে কুপিতা, দশমহাবিদ্যার অন্যতম এক ভয়ংকরী মূর্তিতে আবির্ভূতা হয়ে তিনি অর্থাৎ দেশমাতা বুঝি দানবদলনে আবির্ভূতা, এই কল্পনা করেছেন গীতিকার। সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব সন্তানদের তিনি অসমসাহসিক এক জীবনযুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছেন। তবেই ইংরেজ অর্থাৎ শ্বেত দানবদের বিতাড়ন সম্ভব বলে তাঁর বিশ্বাস।

ভয় কি মরণে অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

সংগীত মানবমনে অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে দ্রুত। প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গীতিকারের প্রাথমিক ঘোষণাই হল – ‘ভয় কি মরণে’। মাতৃমুক্তির মহাযুদ্ধে প্রাণদান যেন মাতৃপূজার প্রধান উপাচার। মা যেন স্বয়ং মাতঙ্গী, অর্থাৎ দশমহাবিদ্যার অন্যতম মূর্তি ধারণ করে পাগলিনীর মতো সমররঙ্গে মেতে উঠেছেন। দেবী দুর্গার চৌষট্টি সহচরীর মতো হয়ে ভূতপিশাচও যেন সেই সমররঙ্গে সংযুক্তা। এখানে দৃঢ়চেতা দেশনেতৃত্বের সঙ্গে সাধারণ জনশক্তির আত্মদানকে বড়ো করে দেখাতে চেয়েছেন। দানবদলনী-উন্মাদিনী যদি প্রবলা হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন, তাহলে দানবরূপ ব্রিটিশ শক্তির বঙ্গ থেকে বিদায় অনিবার্য। গীতিকারের বক্তব্য প্রবলপ্রতাপ নেতৃত্ব ও জনযোদ্ধাদের আত্মিক সংযোগই দেশ থেকে ব্রিটিশ শ্বেত দানবদের বিতাড়িত করতে পারে। সুতরাং হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দেশমাতার সব সন্তানদের একাত্ম হয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণই উচিত কর্ম। এদের প্রাণ থাকল কি গেল, সেটা গৌণ প্রশ্ন; হাতে হাতে উঠে আসুক তরবারি বা খড়্গ।


আজকের এই নিবন্ধে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের অষ্টাবিংশ অধ্যায়ভয় কি মরণে’ -এর বিষয়সংক্ষেপ বিশদভাবে আলোচনা করেছি। এটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার পড়াশোনায় সহায়ক হবে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সাহায্য প্রয়োজন হয়, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।