অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ভয় কি মরণে – মুকুন্দদাস

Gopi

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের ভয় কি মরণে অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে ভয় কি মরণে অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় ভয় কি মরণে অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই ভয় কি মরণে অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

মুকুন্দদাস (১৮৭৮-১৯৩৪) ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি, যাকে চারণকবি বলেও অভিহিত করা হয়। ঢাকার বানারী গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মুকুন্দদাস শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি একটি কীর্তন দলে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে নিজেই একটি কীর্তন দল গড়ে তোলেন।

দেশাত্মবোধ ছিল মুকুন্দদাসের গীতরচনার মূল ভাবধারা। তিনি স্বদেশমন্ত্রে উদবুদ্ধ হয়ে চারণকবিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তার দেশপ্রেমমূলক গান ও স্বদেশী পালাগান তৎকালীন পরাধীন দেশবাসীর মনে প্রবল উদ্দীপনা সঞ্চার করে। ‘মাতৃপূজা’ নামক গীত সংকলনের একটি গানের জন্য তিনি তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার সম্মুখীন হন। ‘সাধনসংগীত’, ‘ব্রহ্মচারিণী’, ‘পল্লীসমাজ’, ‘পথ’, ‘সাথী’, ‘সমাজ’, ‘কর্মক্ষেত্র’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য রচনা।

দীর্ঘদিন পরাধীনতার কবলে জর্জরিত ভারতের জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করতে মুকুন্দদাস তার গান ও নাটকের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন এবং তার রচনাগুলি আজও বাঙালির মনে দেশপ্রেমের জ্বলন্ত আলো জ্বালিয়ে রাখে।

দীর্ঘদিন পরাধীনতায় ভুগতে ভুগতে, ভারতের মানুষ এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে তারা কি করবে তা বুঝতে পারছিল না। এর ফলেই ব্রিটিশ শাসন দীর্ঘায়িত হতে থাকে। দেশের মানুষ ছিল বিভক্ত এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল। এই পরিস্থিতিতে, দেশপ্রেমিক কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, গীতিকার এবং চিত্রশিল্পীরা তাদের শিল্পকে ইংরেজ অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। গীতিকার, সুরকার ও গায়ক চারণকবি মুকুন্দদাসও ছিলেন এর ব্যতিক্রম নন।

এই ছোট্ট রচনায় তিনি দেশপ্রেমের চরম প্রকাশ করেছেন। কবি কল্পনা করেছেন যে, সন্তানদের দীর্ঘদিনের দুঃখে মা রুষ্ট হয়ে, দশমহাবিদ্যার ভয়ঙ্কর রূপে, অর্থাৎ দেশমাতা রণক্ষেত্রে আবির্ভূত হয়েছেন। একই সাথে, তিনি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল সন্তানকে এক অসম প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কবি বিশ্বাস করতেন, শুধুমাত্র তখনই ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি সম্ভব।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ভয় কি মরণে

ভয় কি মরণে অধ্যায়ের কবি পরিচিতি

মুকুন্দদাসের পরিচয় – তিনি একজন চারণকবি। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার বানারি গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা গুরুদয়াল দে। মুকুন্দদাস নামটির আড়ালে তাঁর পিতৃদত্ত নামটি ছিল – যজ্ঞেশ্বর দে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে দীক্ষান্তে তাঁর নাম পরিবর্তন হয়। শৈশবে তিনি খুব দুরন্ত ছিলেন। বিদ্যাশিক্ষার জগৎও তাঁর খুব প্রসারিত ছিল না। তবে আশৈশব তিনি ছিলেন সংগীতের প্রতি অনুরক্ত। পিতৃসূত্রে বরিশালে থাকাকালে ১৯ বছর বয়সে তিনি একটি কীর্তনের দলে যোগ দেন, পরে তিনি নিজেই একটি কীর্তন দল গড়ে তোলেন। আরও পরে তিনি স্বদেশমন্ত্রে উদবুদ্ধ হন এবং চারণকবিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর স্বভাবকবিত্ব ছিল। গীত রচনা, সুরদান এবং সুরেলা কণ্ঠে বিশেষ গায়নে তিনি সংগীত পরিবেশন করে মানুষের হৃদয় জয় করতেন। দেশাত্মবোধ ছিল তাঁর গীতরচনার বীজমন্ত্র। বৈষ্ণবধর্মে তাঁর অনুরাগ থাকলেও তিনি ধর্মচেতনায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। যাত্রা ও পালাগান রচনায় তাঁর প্রভৃত দক্ষতা ছিল। তাঁর দেশপ্রেমমূলক গান ও স্বদেশি পালাগান তৎকালের পরাধীন দেশবাসীর মনে প্রবল উদ্দীপনা সঞ্চার করেছিল। এজন্য তাঁকে ব্রিটিশ শাসককুলের রোষের মুখে পড়তে হয়। তৎকালের ‘মাতৃপূজা’ নামের একটি গীত সংকলন গ্রন্থে তাঁর একটি গানের বিশেষ পঙ্ক্তি ছিল এরকম – ছিল ধান গোলা ভরা, শ্বেত ইঁদুরে করল সারা। বিশেষত এ গানটির জন্যই তাঁর তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়। ‘সাধনসংগীত’, ‘ব্রহ্মচারিণী’, ‘পল্লীসমাজ’, ‘পথ’, ‘সাথী’, ‘সমাজ’, ‘কর্মক্ষেত্র’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনারাজি। সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে তিনি যদিও কিছু কিছু পুরস্কার লাভ করেন, তবে-স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয়জয়ই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মে তিনি লোকান্তরিত হন।

ভয় কি মরণে অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

দীর্ঘদিন পরজাতিশাসিত থাকতে থাকতে, ভারতের জনগণের চিত্ত এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, এককথায় তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। এতেই বোধহয় ইংরেজ শাসন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে পড়েছিল। দেশের মানুষ ছিল পরস্পর বিচ্ছিন্ন এবং শারীরিক-মানসিক দিক থেকে প্রবলভাবে দুর্বল। এই দেশীয় পটভূমিকায় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকার-গীতিকার চিত্রকর সকল দেশপ্রেমিক মানুষই নিজেদের শিল্পসত্তাকে ব্যবহার করেছিলেন ইংরেজ অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে। গীতিকার-সুরকার ও সুগায়ক চারণকবি মুকুন্দদাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি তাঁর এই ছোট্ট রচনাটিতে দেশপ্রেমের প্রবল পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। সন্তানদের চিরদুঃখে মা স্বয়ং যে কুপিতা, দশমহাবিদ্যার অন্যতম এক ভয়ংকরী মূর্তিতে আবির্ভূতা হয়ে তিনি অর্থাৎ দেশমাতা বুঝি দানবদলনে আবির্ভূতা, এই কল্পনা করেছেন গীতিকার। সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব সন্তানদের তিনি অসমসাহসিক এক জীবনযুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছেন। তবেই ইংরেজ অর্থাৎ শ্বেত দানবদের বিতাড়ন সম্ভব বলে তাঁর বিশ্বাস।

ভয় কি মরণে অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

সংগীত মানবমনে অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে দ্রুত। প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গীতিকারের প্রাথমিক ঘোষণাই হল – ‘ভয় কি মরণে’। মাতৃমুক্তির মহাযুদ্ধে প্রাণদান যেন মাতৃপূজার প্রধান উপাচার। মা যেন স্বয়ং মাতঙ্গী, অর্থাৎ দশমহাবিদ্যার অন্যতম মূর্তি ধারণ করে পাগলিনীর মতো সমররঙ্গে মেতে উঠেছেন। দেবী দুর্গার চৌষট্টি সহচরীর মতো হয়ে ভূতপিশাচও যেন সেই সমররঙ্গে সংযুক্তা। এখানে দৃঢ়চেতা দেশনেতৃত্বের সঙ্গে সাধারণ জনশক্তির আত্মদানকে বড়ো করে দেখাতে চেয়েছেন। দানবদলনী-উন্মাদিনী যদি প্রবলা হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন, তাহলে দানবরূপ ব্রিটিশ শক্তির বঙ্গ থেকে বিদায় অনিবার্য। গীতিকারের বক্তব্য প্রবলপ্রতাপ নেতৃত্ব ও জনযোদ্ধাদের আত্মিক সংযোগই দেশ থেকে ব্রিটিশ শ্বেত দানবদের বিতাড়িত করতে পারে। সুতরাং হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দেশমাতার সব সন্তানদের একাত্ম হয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণই উচিত কর্ম। এদের প্রাণ থাকল কি গেল, সেটা গৌণ প্রশ্ন; হাতে হাতে উঠে আসুক তরবারি বা খড়্গ।

মুকুন্দদাস ছিলেন একজন বিখ্যাত চারণকবি, যিনি ১৮৭৮ সালে ঢাকার বানারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবেই সংগীতের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এবং বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি একটি কীর্তন দলে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে নিজেই একটি কীর্তন দল গঠন করেন।

মুকুন্দদাসের গান ছিল স্বভাবকবিত্বে পরিপূর্ণ। তিনি গীত রচনা, সুর প্রদান এবং সুন্দর কণ্ঠে গান গাওয়ার মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করতেন। দেশাত্মবোধ ছিল তাঁর গানের মূল ভাবধারা। তিনি যাত্রা ও পালাগান রচনায়ও দক্ষ ছিলেন। তাঁর দেশপ্রেমমূলক গান ও স্বদেশি পালাগান তৎকালীন পরাধীন দেশবাসীর মনে প্রবল উদ্দীপনা সঞ্চার করেছিল।

মুকুন্দদাস ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য তাঁর শিল্পকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গান “মাতৃপূজা” তে তিনি দেশমাতার রূপ ধারণ করে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেতে সকলকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই গানের জন্য তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়।

মুকুন্দদাস ১৯৩৪ সালে লোকান্তরিত হন। তিনি একজন সাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কার লাভ করলেও, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ছিল স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয় জয় করা।

উপসংহারে, মুকুন্দদাস ছিলেন একজন দক্ষ গীতিকার, সুরকার ও সুগায়ক যিনি তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে দেশপ্রেমের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না –  ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer