থার্মিট পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন নীতি লেখো। থার্মিট পদ্ধতির ব্যবহার লেখো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “থার্মিট পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন নীতি লেখো। থার্মিট পদ্ধতির ব্যবহার লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

থার্মিট পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন নীতি লেখো। থার্মিট পদ্ধতির ব্যবহার লেখো।

থার্মিট পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন নীতি লেখো। থার্মিট পদ্ধতির ব্যবহার লেখো।

অথবা, থার্মিট পদ্ধতির নীতিটি সমীকরণসহ লেখো।
অথবা, থার্মিট পদ্ধতিতে ফেরিক অক্সাইড থেকে ধাতব আয়রন উৎপন্ন বিক্রিয়াটির সমিত রাসায়নিক সমীকরণ লেখো। এই পদ্ধতির একটি প্রয়োগ উল্লেখ করো।

থার্মিট পদ্ধতি (Thermit process) – কয়েকটি ক্ষেত্রে ধাতব অক্সাইডকে অপেক্ষাকৃত সক্রিয় ধাতু দ্বারা বিজারিত করে ধাতব মৌলে পরিণত করা যায়। অ্যালুমিনিয়ামকে বিজারক হিসেবে ব্যবহার করে অক্সাইড থেকে লোহা, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি নিষ্কাশন করা হয়, একে থার্মিট পদ্ধতি বলে।

যেমন – উচ্চ উষ্ণতায় ফেরিক অক্সাইডকে অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা বিজারিত করে আয়রন উৎপন্ন করা হয়। এটি একটি তাপদায়ী বিক্রিয়া।

Fe₂O₃ + 2Al → 2Fe + Al₂O₃ + 199 kcal

থার্মিট পদ্ধতির ব্যবহার – রেললাইন, ট্রামলাইন, বড়ো বড়ো মেশিন বা জাহাজের ভগ্ন অংশ মেরামতি করতে থার্মিট পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, একে থার্মিট ওয়েলডিং বলে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

থার্মিট পদ্ধতি কী?

থার্মিট পদ্ধতি হল একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া যেখানে ধাতুর অক্সাইডকে (যেমন- আয়রন অক্সাইড) অ্যালুমিনিয়ামের মতো অধিক সক্রিয় ধাতু দ্বারা বিজারিত করে বিশুদ্ধ ধাতু নিষ্কাশন করা হয়। এটি একটি অত্যন্ত তাপদায়ী (এক্সোথার্মিক) বিক্রিয়া।

থার্মিট পদ্ধতির বিক্রিয়াটি কেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে শুরু হয় না?

থার্মিট পদ্ধতির বিক্রিয়াটি শুরু করার জন্য একটি উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন (প্রায় 1300°C – 1350°C)। অ্যালুমিনিয়াম এবং আয়রন অক্সাইডের মধ্যে একটি শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধন থাকে, যা ভাঙার জন্য প্রচুর শক্তির (সক্রিয়ণ শক্তি) দরকার হয়। একবার এই শক্তি (একটি জ্বলন্ত ম্যাগনেসিয়াম ফিতার সাহায্যে) সরবরাহ করলে বিক্রিয়াটি স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে ও প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

থার্মিট পদ্ধতির প্রধান ব্যবহার বা প্রয়োগগুলি কী কী?

থার্মিট পদ্ধতির প্রধান ব্যবহারগুলি হলো –
1. রেলওয়ে ট্র্যাক সংযোগ (থার্মিট ওয়েল্ডিং) – রেললাইনের দুটি অংশকে ঝালাই করতে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
2. বড় মেশিনারি মেরামতি – জাহাজের প্রোপেলার, বড় ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্ট ইত্যাদির ভগ্নাংশ মেরামত করতে।
3. ধাতব নিষ্কাশন – ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো ধাতু তাদের অক্সাইড থেকে নিষ্কাশনে।
4. সশস্ত্র বাহিনীতে – কিছু ধরনের গ্রেনেড বা অগ্নিসংযোগকারী যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

থার্মিট পদ্ধতিতে ‘থার্মিট মিশ্রণ’ বলতে কী বোঝায়?

থার্মিট মিশ্রণ হলো সেই বিশেষ রাসায়নিক মিশ্রণ যা থার্মিট বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত ধাতব অক্সাইড (যেমন – আয়রন অক্সাইডের গুঁড়ো) এবং বিজারক ধাতু (অ্যালুমিনিয়ামের গুঁড়ো)-এর একটি নির্দিষ্ট অনুপাতের সংমিশ্রণ। কখনও কখনও বিক্রিয়ার গতি ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য অল্প পরিমাণে অন্যান্য উপাদানও যোগ করা হয়।

থার্মিট বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ধাতু তরল অবস্থায় থাকে কেন?

থার্মিট বিক্রিয়া অত্যন্ত তাপদায়ী হওয়ায় এটি প্রায় 2000°C থেকে 2500°C পর্যন্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। এই তাপমাত্রা লোহার গলনাঙ্ক (1538°C) -এর চেয়ে অনেক বেশি। ফলে উৎপন্ন লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (স্ল্যাগ) উভয়ই গলিত বা তরল অবস্থায় থাকে।

থার্মিট পদ্ধতির একটি সুবিধা ও একটি অসুবিধা উল্লেখ করো।

থার্মিট পদ্ধতির একটি সুবিধা ও একটি অসুবিধা –
1. সুবিধা – এই পদ্ধতিতে বাহ্যিক কোনো বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োজন হয় না, তাই দূরবর্তী বা মাঠের কাজেও সহজে প্রয়োগ করা যায়।
2. অসুবিধা – বিক্রিয়াটি একবার শুরু হলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এবং বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়াও, এটি কেবল সেইসব ধাতুর জন্য কার্যকর যাদের অক্সাইডের তুলনায় অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বেশি স্থিতিশীল।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “থার্মিট পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন নীতি লেখো। থার্মিট পদ্ধতির ব্যবহার লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থল উল্লেখ করে এর প্রধান কাজগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? উদাহরণসহ হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।