একটি মাত্র পরীক্ষার সাহায্যে মিথেনে কার্বন এবং হাইড্রোজেন আছে তা প্রমাণ করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “একটি মাত্র পরীক্ষার সাহায্যে মিথেনে কার্বন এবং হাইড্রোজেন আছে তা প্রমাণ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

একটি মাত্র পরীক্ষার সাহায্যে মিথেনে কার্বন এবং হাইড্রোজেন আছে তা প্রমাণ করো।

একটি মাত্র পরীক্ষার সাহায্যে মিথেনে কার্বন এবং হাইড্রোজেন আছে তা প্রমাণ করো।

একটি শুষ্ক ইউডিওমিটার টিউবের মধ্যে 1 আয়তন শুষ্ক মিথেন এবং 2 আয়তন শুষ্ক অক্সিজেন গ্যাস ভরতি করে মিশ্রণের মধ্যে তড়িৎস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি করলে মিথেন এবং অক্সিজেনের মধ্যে বিক্রিয়া হয়।

বিক্রিয়াশেষে টিউবটিকে ঠান্ডা করলে দেখা যায় যে, বর্ণহীন তরল উৎপন্ন হয়েছে, যা সাদা অনার্দ্র কপার সালফেটকে নীলবর্ণে পরিণত করে। অতএব তরল পদার্থটি জল। এই জল মিথেন এবং অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন। আবার জলে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন আছে। সুতরাং, এই হাইড্রোজেন মিথেন থেকেই এসেছে অতএব মিথেনে হাইড্রোজেন আছে।

ইউডিওমিটার টিউবের অবশিষ্ট গ্যাসের মধ্যে স্বচ্ছ চুন জল ঢাললে, চুন জল ঘোলা হয়। এর থেকে প্রমাণিত হয় গ্যাসটি কার্বন ডাইঅক্সাইড। CO₂ -তে কার্বন থাকে এবং এই CO₂ উৎপন্ন হয়েছে মিথেন থেকে। CO₂ -তে কার্বন আছে বলেই মিথেনে কার্বন আছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সাদা অনার্দ্র কপার সালফেট (CuSO₄) কেন নীল হয়?

সাদা অনার্দ্র কপার সালফেট (CuSO₄) একটি সংবেদনশীল পরীক্ষক (test) যা জলের অস্তিত্ব শনাক্ত করে। এটি জলের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রেটেড কপার সালফেট (CuSO₄.5H₂O) গঠন করে, যার রং নীল। এই নীল বর্ণের সৃষ্টিই প্রমাণ করে যে বিক্রিয়ায় জল উৎপন্ন হয়েছে।

চুনের জল ঘোলা হয়ে যাওয়া থেকে কী বোঝায়?

চুনের জলের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Ca(OH)₂]। এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে সাদা রঙের ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO₃) এর অধঃক্ষেপ তৈরি করে। এই সাদা অধঃক্ষেপের জন্যই চুনের জল ঘোলা দেখায়। এটি CO₂ গ্যাসের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য শনাক্তকারী পরীক্ষা।

মিথেন ও অক্সিজেনের মিশ্রণের অনুপাত 1:2 কেন নেওয়া হয়?

মিথেনের (CH₄) সম্পূর্ণ দহনের জন্য রাসায়নিক সমীকরণটি হল –
CH₄ + 2O₂ → CO₂ + 2H₂O
সমীকরণ অনুযায়ী, 1 অণু মিথেন পুড়তে 2 অণু অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। গ্যাসের আয়তন অনুপাতও অণুর অনুপাতের সমানুপাতিক (অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুসারে)। তাই, বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ঘটানোর জন্য এবং কোনো অতিরিক্ত অক্সিজেন বা মিথেন অবশিষ্ট না রাখার জন্য 1 আয়তন মিথেনের সাথে 2 আয়তন অক্সিজেন নেওয়া হয়।

মিথেনে নাইট্রোজেন বা সালফারের মতো অন্যান্য মৌল আছে কিনা কীভাবে পরীক্ষা করব?

এই পরীক্ষা দিয়ে শুধু কার্বন ও হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়। নাইট্রোজেন বা সালফার শনাক্ত করতে ভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি যৌগটিতে নাইট্রোজেন থাকে, তাহলে সোডিয়াম ফিউজন পরীক্ষার মাধ্যমে সায়ানাইড যৌগ তৈরি করে তা শনাক্ত করা যায়। একইভাবে, সালফার থাকলে তা লেড অ্যাসিটেট দিয়ে শনাক্ত করা যায়।

কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উৎপন্ন জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড মিথেন থেকেই এসেছে?

পরীক্ষার শুরুর মিশ্রণে শুধু মিথেন (CH₄) এবং অক্সিজেন (O₂) ছিল। বিক্রিয়ার পরে শুধুমাত্র জল (H₂O) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) পাওয়া গেছে। যেহেতু অক্সিজেনে শুধু অক্সিজেন পরমাণু থাকে, তাই জলের হাইড্রোজেন এবং CO₂ -এর কার্বন অবশ্যই মিথেন গ্যাস থেকেই এসেছে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “একটি মাত্র পরীক্ষার সাহায্যে মিথেনে কার্বন এবং হাইড্রোজেন আছে তা প্রমাণ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

জৈবভঙ্গুর পলিমার ও জৈব অভঙ্গুর পলিমার কাকে বলে? উদাহরণ দাও। জৈবভঙ্গুর পলিমার ও জৈব অভঙ্গুর পলিমারের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

জৈব ভঙ্গুর পলিমার ও জৈব অভঙ্গুর পলিমার কাকে বলে? জৈব ভঙ্গুর পলিমার ও অভঙ্গুর পলিমারের মধ্যে পার্থক্য

পলিমারের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতিকার কী?

পলিমারের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতিকার কী?

পলিমার ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব আলোচনা করো। অথবা, পলিথিন ব্যাগের যথেচ্ছ ব্যবহারের দুটি বিপদ উল্লেখ করো।

পলিমার ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব আলোচনা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জৈব ভঙ্গুর পলিমার ও জৈব অভঙ্গুর পলিমার কাকে বলে? জৈব ভঙ্গুর পলিমার ও অভঙ্গুর পলিমারের মধ্যে পার্থক্য

পলিমারের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতিকার কী?

পলিমার ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব আলোচনা করো।

মিথেনের চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু সমতুল্য প্রমাণ করো।

একটি মাত্র পরীক্ষার সাহায্যে মিথেনে কার্বন এবং হাইড্রোজেন আছে তা প্রমাণ করো।