ট্রপিক চলন কাকে বলে? উদাহরণসহ ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ট্রপিক চলন কাকে বলে? উদাহরণসহ ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রপিক চলন কাকে বলে-ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ উদাহরণসহ উল্লেখ করো

ট্রপিক চলন কাকে বলে? উদাহরণসহ ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ উল্লেখ করো।

ট্রপিক চলনের সংজ্ঞা – যে প্রকার আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ বহিস্থ উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে ট্রপিক চলন বা দিঙ্নির্ণীত চলন বলা হয়।

ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ –

ট্রপিক চলনকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা –

  1. ফোটোট্রপিক চলন বা আলোকনির্ণীত বজ্রচলন – যে প্রকার আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ আলোক উদ্দীপকের উৎস বা গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে ফোটোট্রপিক বা আলোকবৃত্তি চলন বলা হয়। যেমন – উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর দিকে এবং মূল আলোর বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। পাতা আলোর সঙ্গে সমকোণে বর্ধিত হয়।
  2. হাইড্রোট্রপিক চলন বা জলনির্ণীত বক্রচলন – যে প্রকার আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ জল উদ্দীপকের উৎস বা গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে হাইড্রোট্রপিক বা জলবৃত্তি চলন বলা হয়। যেমন – উদ্ভিদের মূল মাটির নীচে জলের অভিমুখে চলন দেখায়।
  3. জিয়োট্রপিক চলন বা অভিকর্ষবৃত্তি চলন – যে প্রকার আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ অভিকর্ষ উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে জিয়োট্রপিক বা অভিকর্ষবৃত্তি চলন বলা হয়। যেমন – সাধারণ উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষ বলের অভিমুখে অগ্রসর হয়। তাই মূলকে অনুকুল অভিকর্ষবৃত্তি চলনের উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল অভিকর্ষের বিপরীত দিকে মাটির উপরে বৃদ্ধি পায়। এটি প্রতিকূল অভিকর্ষবৃত্তি চলনের উদাহরণ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?

ট্রপিক ও ন্যাস্টিক চলনের প্রধান পার্থক্য হলো উদ্দীপকের দিকের উপর তাদের নির্ভরতা।
1. ট্রপিক চলন – এই চলন উদ্দীপকের দিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। চলনের গতিপথ উদ্দীপকের দিকের উপর নির্ভরশীল (যেমন – আলোর দিকে, অভিকর্ষের দিকে)।
2. ন্যাস্টিক চলন – এই চলন উদ্দীপকের দিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, বরং উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন – লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ পেলে যেদিক থেকেই স্পর্শ করা হোক না কেন, বন্ধ হয়ে যায়।

ফোটোট্রপিজমের দুটি উদাহরণ দাও।

ফোটোট্রপিজমের দুটি উদাহরণ –
1. অনুকূল ফোটোট্রপিজম – গাছের কাণ্ড জানালার পাশে রাখলে বা ঘরের ভিতরে রাখলে তা আলোর উৎসের দিকে বেঁকে বৃদ্ধি পায়।
2. প্রতিকূল ফোটোট্রপিজম – গাছের মূল সাধারণত আলোর বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়।

হাইড্রোট্রপিজম উদ্ভিদের জন্য কীভাবে উপকারী?

হাইড্রোট্রপিজম উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মূলকে মাটির নিচে জলের উৎসের দিকে বেঁকে যেতে বা বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। এই ক্ষমতার কারণে মূল শুষ্ক মাটির মধ্য দিয়েও জলের সন্ধান পেয়ে যায়, যা উদ্ভিদকে জল শোষণ করে বেঁচে থাকতে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে সাহায্য করে।

ট্রপিক চলন কি কেবল উদ্ভিদের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত?

হ্যাঁ, সাধারণভাবে ট্রপিক চলন বৃদ্ধিজনিত চলন (Growth Movement)। এই ধরনের চলনে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধির হার বিভিন্ন পাশে অসমান হওয়ার কারণে স্থায়ীভাবে বক্রতা সৃষ্টি হয়। এটি উদ্ভিদের একটি অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে স্থান পরিবর্তন নয়, বরং একটি অঙ্গের নির্দিষ্ট দিকে বৃদ্ধি পাওয়া।

কেমোট্রপিজম কী? এর একটি উদাহরণ দাও।

কেমোট্রপিজম হল এক ধরনের ট্রপিক চলন যেখানে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ রাসায়নিক উদ্দীপকের (যেমন – সার, লবণ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
উদাহরণ – পরাগরেণু থেকে নির্গত রাসায়নিকের প্রতি পরাগনালীর চলন। পরাগনালীটি ডিম্বকের দিকে রাসায়নিকের টানে (বা কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে দূরে) বেঁকে বৃদ্ধি পায়।

থিগমোট্রপিজম বলতে কী বোঝায়?

থিগমোট্রপিজম হল এক ধরনের ট্রপিক চলন যেখানে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ স্পর্শ বা যান্ত্রিক উদ্দীপক (যেমন – কোনো খুঁটি, দড়ি বা অন্য কোনো গাছ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
উদাহরণ – সকাল-গাছ বা লতানো গাছের কাণ্ড যখন কোনো খুঁটির সংস্পর্শে আসে, তখন তার কাণ্ডটি খুঁটিটিকে জড়িয়ে ধরে উপরের দিকে বৃদ্ধি পায়। এটি একটি অনুকূল থিগমোট্রপিক চলনের উদাহরণ।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ট্রপিক চলন কাকে বলে? উদাহরণসহ ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

উদ্ভিদ অঙ্গের অনুকূল আলোকবর্তী ও প্রতিকূল আলোকবর্তী চলনের পরীক্ষা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও।

উদ্ভিদদেহে চলনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উদ্ভিদদেহে চলনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উদ্ভিদের বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া-প্রদানের বিষয়টি উদাহরণসহ সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উদাহরণসহ উদ্ভিদের বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া-প্রদানের বিষয়টি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও।

ট্রপিক চলন কাকে বলে? উদাহরণসহ ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ

উদ্ভিদদেহে চলনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উদাহরণসহ উদ্ভিদের বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া-প্রদানের বিষয়টি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সাড়া প্রদানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ভূমিকা