এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের হাইড্রোট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও। অথবা, উদ্ভিদ অঙ্গের অনুকূল জলবৃত্তি ও প্রতিকূল জলবৃত্তির পরীক্ষা বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের হাইড্রোট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও।
অথবা, উদ্ভিদ অঙ্গের অনুকূল জলবৃত্তি ও প্রতিকূল জলবৃত্তির পরীক্ষা বর্ণনা করো।
হাইড্রোট্রপিক আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ জল উদ্দীপকের উৎস বা গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
মূল জলের উৎসের দিকে ধাবিত হয় বলে এই বক্রচলনকে পজিটিভ হাইড্রোট্রপিজম এবং মূলকে পজিটিভলি হাইড্রোট্রপিক বা অনুকুল জলবর্তী বলে।
কাণ্ড জলের উৎসের বিপরীত দিকে ধাবিত হয় বলে এই বক্রচলনকে নেগেটিভ হাইড্রোট্রপিজম এবং কাণ্ডকে নেগেটিভলি হাইড্রোট্রপিক বা প্রতিকুল জলবর্তী বলা হয়।
উদ্ভিদের হাইড্রোট্রপিক চলনের পরীক্ষা –
- পদ্ধতি – একটি চালুনিতে ভেজা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে কতকগুলি ছোলা বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হল এবং চালুনিটিকে উপরের আংটার সঙ্গে আটকে দেওয়া হল। দিনে তিন থেকে চারবার ওই কাঠের গুঁড়োর ওপরে জল ছিটিয়ে দেওয়া হল, যাতে কাঠ-গুঁড়ো সবসময় ভিজে থাকে।
- পর্যবেক্ষণ – কয়েকদিন পর দেখা গেল বীজ থেকে ভ্রূণমূল বেরিয়ে তা চালুনির ছিদ্রপথে কিছুটা নীচে নেমে এসেছে এবং ভ্রূণমুকুলটি উপরের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও কিছুদিন পর দেখা গেল ভ্রূণমূলগুলি দৈর্ঘ্যে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু বেঁকে গিয়ে পুনরায় ভিজে কাঠের গুঁড়োর মধ্যে প্রবেশ করেছে।
- সিদ্ধান্ত – ছোলা বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ভ্রূণমূলটির চালুনির ছিদ্রপথে নীচে নেমে আসার কারণ হল অভিকর্ষ বল। কিন্তু ভ্রূণমূলগুলির বেঁকে গিয়ে পুনরায় ভিজে কাঠের গুঁড়োতে প্রবেশ করার কারণ হল ভ্রূণমূলের জলের উৎসের দিকে বৃদ্ধিজ বক্রচলন ঘটেছে, তাই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, মূল (ভ্রূণমূল) হল পজিটিভলি হাইড্রোট্রপিক এবং কাণ্ড (ভ্রূণমুকুল) হল নেগেটিভলি হাইড্রোট্রপিক।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হাইড্রোট্রপিজম বলতে কী বোঝায়?
হাইড্রোট্রপিজম হলো একটি উদ্দীপক-সাড়া (Stimulus Response) যেখানে উদ্ভিদের অঙ্গ (যেমন – মূল বা কাণ্ড) জলের (জল) উপস্থিতি বা ঘনত্বের তারতম্যের কারণে নির্দিষ্ট দিকে বেঁকে চলে। এটি এক ধরনের বক্রচলন (Tropic movement)।
পজিটিভ হাইড্রোট্রপিজম ও নেগেটিভ হাইড্রোট্রপিজমের মধ্যে পার্থক্য কী?
পজিটিভ হাইড্রোট্রপিজম ও নেগেটিভ হাইড্রোট্রপিজমের মধ্যে পার্থক্য হল –
1. পজিটিভ হাইড্রোট্রপিজম – যখন উদ্ভিদের অঙ্গ (যেমন – মূল) জলের উৎসের দিকে বেঁকে চলে, তাকে পজিটিভ হাইড্রোট্রপিজম বলে। উদাহরণ – মূল।
2. নেগেটিভ হাইড্রোট্রপিজম – যখন উদ্ভিদের অঙ্গ (যেমন – কাণ্ড) জলের উৎসের বিপরীত দিকে বেঁকে চলে, তাকে নেগেটিভ হাইড্রোট্রপিজম বলে। উদাহরণ – কাণ্ড।
ছোলার বীজের পরীক্ষাটিতে ভ্রূণমূল প্রথমে নিচের দিকে ও পরে আবার উপরের দিকে বেঁকে যাওয়ার কারণ কী?
এই পরীক্ষায় দুটি পৃথক উদ্দীপক কাজ করে –
1. প্রথমে নিচের দিকে বৃদ্ধি – এটি অভিকর্ষ বলের প্রতি সাড়া (পজিটিভ জিওট্রপিজম)। মূল সাধারণত অভিকর্ষের টানে নীচের দিকে বৃদ্ধি পায়।
2. পরে উপরের দিকে বেঁকে যাওয়া – এটি জলের প্রতি সাড়া (পজিটিভ হাইড্রোট্রপিজম)। যখন মূলটি শুষ্ক বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি আবার উপরের দিকে (ভেজা কাঠের গুঁড়োর দিকে) বেঁকে যায় জল খুঁজে পেতে। এই ক্ষেত্রে, জল-উদ্দীপকের প্রভাব অভিকর্ষ-উদ্দীপকের চেয়ে শক্তিশালী হয়।
হাইড্রোট্রপিজম ও জিওট্রপিজমের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উভয়ই উদ্ভিদের বক্রচলনের উদাহরণ, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন উদ্দীপকের প্রতি সাড়া।
জিওট্রপিজম হলো অভিকর্ষ বলের প্রতি সাড়া (মূল নিচের দিকে, কাণ্ড উপরের দিকে বৃদ্ধি পায়)।
1. হাইড্রোট্রপিজম হলো জলের প্রতি সাড়া (মূল জলের দিকে, কাণ্ড জলের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়)।
2. প্রায়শই একটি অঙ্গ একইসাথে একাধিক উদ্দীপকের মুখোমুখি হয়। ছোলার পরীক্ষায় দেখা যায়, জলের অভাব হলে মূলের জন্য হাইড্রোট্রপিজমের প্রভাব জিওট্রপিজমের চেয়ে প্রাধান্য পেতে পারে।
হাইড্রোট্রপিজমের মাধ্যমে উদ্ভিদ কীভাবে উপকৃত হয়?
হাইড্রোট্রপিজম উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ –
1. মূলের ক্ষেত্রে – এটি মূলকে মাটির গভীরে থাকা শুষ্ক অঞ্চল থেকে জলসমৃদ্ধ অঞ্চলের দিকে পরিচালিত করে। ফলে উদ্ভিদ সহজে জল শোষণ করতে পারে এবং শুষ্ক অবস্থায়ও টিকে থাকতে পারে।
2. কাণ্ডের ক্ষেত্রে – কাণ্ডের নেগেটিভ হাইড্রোট্রপিজম এটিকে অতিরিক্ত ভেজা বা জলাবদ্ধ অঞ্চল থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে, যা কাণ্ড পচন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাইড্রোট্রপিজম এবং হাইড্রোন্যাস্টি চলনের মধ্যে পার্থক্য কী?
হাইড্রোট্রপিজম এবং হাইড্রোন্যাস্টি চলনের মধ্যে পার্থক্য হল –
1. হাইড্রোট্রপিজম – এই চলনের দিক নির্ধারিত হয় উদ্দীপকের দিক (জলের উৎস) দ্বারা। অর্থাৎ এটি একটি দিক-নির্ভরশীল (directional) চলন।
2. হাইড্রোন্যাস্টি – এই চলনের দিক জলের উৎসের দিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। এটি উদ্ভিদের নিজস্ব গঠনের উপর নির্ভরশীল।
উদাহরণ – কিছু ফুলের পাপড়ি বাতাসের আর্দ্রতা পরিবর্তনের ফলে খোলে ও বন্ধ হয়, তবে এই খোলা-বন্ধের দিক জল কোথায় আছে তার উপর নির্ভর করে না।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের হাইড্রোট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও। অথবা, উদ্ভিদ অঙ্গের অনুকূল জলবৃত্তি ও প্রতিকূল জলবৃত্তির পরীক্ষা বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন