উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রধান কাজগুলি আলোচনা করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রধান কাজগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রধান কাজগুলি আলোচনা করো।
Contents Show

উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রধান কাজগুলি আলোচনা করো।

উদ্ভিদদেহে হরমোনের কাজ –

  • বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ – অক্সিন ও সাইটোকাইনিন কোশ বিভাজন হার বাড়ায় ও অক্সিন কোশের আয়তন বাড়ায়।
  • অগ্র ও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ – অক্সিনের প্রভাবে উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ঘটে। জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • বীজের অঙ্কুরোদ্গম – জিব্বেরেলিন α-অ্যামাইলেজ উৎসেচকের সক্রিয়তা বাড়িয়ে বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে ও অঙ্কুরোদ্গম ঘটায়।
  • বার্ধক্য বিলম্বিত করা বা রোধ করা – কাইনিন হরমোন অকালে পত্রমোচন বা ফল মোচন রোধ করে।
  • ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ – অক্সিন উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক ও জিয়োট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।
  • পুষ্প প্রস্ফুটন – জিব্বেরেলিন ক্যামেলিয়া, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
  • অ্যাবসিসিক অ্যাসিড – বীজের অঙ্কুরোদগমে বাধাদান করে।
  • ইথিলিন হরমোন – বিভিন্ন ফল পাকাতে সাহায্য করে।
  • ফ্লোরিজেন হরমোন – এই হরমোনের সাহায্যে ফুল ফোটানো হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

উদ্ভিদ হরমোন কী? এটি প্রাণী হরমোন থেকে কীভাবে আলাদা?

উদ্ভিদ হরমোন (ফাইটোহরমোন) হল উদ্ভিদদেহে সংশ্লেষিত জৈব রাসায়নিক যৌগ যা অতি অল্প পরিমাণে উৎপন্ন হয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বিকাশ ও বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাণী হরমোনের মতোই এরা রাসায়নিক বার্তাবাহক, তবে এদের উৎপত্তি, গঠন ও কাজের ধরণ আলাদা। উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত নির্দিষ্ট অঙ্গে সংশ্লেষিত হয় না, বরং বিভিন্ন টিস্যুতে তৈরি হতে পারে।

“অগ্রমুকুলের প্রাধান্য” বলতে কী বোঝায়? কোন হরমোন এজন্য দায়ী?

যখন উদ্ভিদের প্রধান কাণ্ডের ডগার অগ্রমুকুলটি পার্শ্বীয় বা পাশের মুকুলগুলোর চেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং তাদের বৃদ্ধিকে কিছুটা নিরোধ করে, তাকে অগ্রমুকুলের প্রাধান্য বলে। অক্সিন হরমোন এই প্রক্রিয়ার জন্য মুখ্যভাবে দায়ী। এটি অগ্রমুকুল থেকে নিচের দিকে সঞ্চালিত হয়ে পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।

কোন হরমোনকে “তন্বতা হরমোন” বলা হয় এবং কেন?

জিব্বেরেলিন-কে প্রায়ই তন্বতা হরমোন বলা হয়। কারণ এই হরমোনের প্রভাবে কিছু উদ্ভিদের (যেমন মটরগাছের কিছু জাত) কাণ্ড অস্বাভাবিক লম্বা ও পাতলা হয়ে যায়, অর্থাৎ তন্বতা (ইলিওশন) দেখা দেয়।

কোন হরমোনকে “স্ট্রেস হরমোন” বলা হয় এবং কেন?

অ্যাবসিসিক অ্যাসিড (ABA)-কে উদ্ভিদের স্ট্রেস হরমোন বলা হয়। কারণ এটি উদ্ভিদকে নানাবিধ প্রতিকূলতা (যেমন – জলের অভাব/খরা, লবণাক্ততা, ঠান্ডা) মোকাবেলায় সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, খরার সময় এটি পাতার স্টোমাটা বন্ধ করে দিয়ে জল হ্রাস রোধ করে।

ফল পাকানো নিয়ন্ত্রণে কোন হরমোন ভূমিকা রাখে? কৃষিকাজে এর ব্যবহার কী?

ইথিলিন গ্যাসীয় হরমোন ফল পাকানো প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। কৃষিকাজে, কম পাকা ফল সংগ্রহ করে পরিবহনের পর নির্দিষ্ট চেম্বারে ইথিলিন গ্যাস প্রয়োগ করে কৃত্রিমভাবে ফল পাকানো হয় (যেমন – কলা, টমেটো)।

হরমোনের সাহায্যে কীভাবে “অঙ্কুরোদগম বাধাদান” ও “অঙ্কুরোদগম শুরু” হয়?

অঙ্কুরোদগম বাধাদান – অ্যাবসিসিক অ্যাসিড (ABA) বীজের সুপ্তাবস্থা বজায় রাখে ও অঙ্কুরোদগমে বাধা দেয়, যা প্রতিকূল পরিবেশে বীজের টিকে থাকার কৌশল।
অঙ্কুরোদগম শুরু – জিব্বেরেলিন সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে। এটি অ্যালিউরোন কোষে α-অ্যামাইলেজ উৎসেচক সংশ্লেষণ উদ্দীপিত করে, যার ফলে বীজের এন্ডোস্পার্মে সঞ্চিত শ্বেতসার ভেঙে চিনি তৈরি হয় এবং অঙ্কুরের বৃদ্ধির জন্য শক্তি সরবরাহ হয়।

উদ্ভিদের আলোক অনুদৈর্ঘ্য (ফোটোট্রপিজম) চলন নিয়ন্ত্রণে কোন হরমোন কীভাবে কাজ করে?

অক্সিন এই চলন নিয়ন্ত্রণ করে। আলো আসার দিকের বিপরীত পাশের কাণ্ডের কোষে অক্সিন জমা হয়। সেই কোষগুলো দ্রুত বড় হয়ে যায় বলে কাণ্ড আলোর দিকে বেঁকে যায়।

উদ্ভিদ হরমোনের কৃষি ও বাগান পরিচর্যায় ব্যবহারিক গুরুত্ব কী?

উদ্ভিদ হরমোন কৃষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন –
1. অক্সিন – কৃত্রিম অক্সিন (যেমন – 2, 4-D) আগাছানাশক ও কলম তৈরিতে (রুটিং পাউডার) ব্যবহার হয়।
2. সাইটোকাইনিন – টিস্যু কালচারে দ্রুত কোষ বিভাজনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
3. ইথিলিন – ফল পাকানো নিয়ন্ত্রণে।
4. জিব্বেরেলিন – আঙুর ফল বড় ও বীজহীন করতে, মাল্টিং-এ আখের দৈর্ঘ্য বাড়াতে।
5. অ্যাবসিসিক অ্যাসিড – নার্সারিতে চারার স্থানান্তরকালীন স্ট্রেস কমাতে ব্যবহার হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রধান কাজগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

উদ্ভিদ হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উদ্ভিদ হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

চলন ও গমন বলতে কী বোঝো? "চলন হলে গমন নাও হতে পারে, কিন্তু গমন হলে চলন হবেই"-ব্যাখ্যা করো।

“চলন হলে গমন নাও হতে পারে, কিন্তু গমন হলে চলন হবেই” – ব্যাখ্যা করো।

ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রধান কাজগুলি আলোচনা করো।

উদ্ভিদ হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

“চলন হলে গমন নাও হতে পারে, কিন্তু গমন হলে চলন হবেই” – ব্যাখ্যা করো।

ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য

বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলোচনা করো।