এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কাকে বলে? অক্সিন ও জিব্বেরেলিনের একটি করে উৎসগত এবং দুটি করে কার্যগত পার্থক্য নির্দেশ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কাকে বলে?
অক্সিন – উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গের অগ্রভাগের ভাজক কলায় স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন বা কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত যে জৈব-রাসায়নিক(ইনডোল বর্গযুক্ত পদার্থ অত্যন্ত অল্প মাত্রায় উপস্থিত থেকে উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, তাকে অক্সিন বলে।
জিব্বেরেলিন – উদ্ভিদের পরিণত বীজপত্রে উৎপন্ন যে জৈব অ্যাসিড গুচ্ছ উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বীজের অঙ্কুরোদগম সাহায্য করে তাকে জিব্বেরেলিন বলে।
অক্সিন ও জিব্বেরেলিনের একটি করে উৎসগত এবং দুটি করে কার্যগত পার্থক্য নির্দেশ করো।
অথবা, অক্সিন এবং জিব্বেরেলিনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
অক্সিন এবং জিব্বেরেলিনের মধ্যে পার্থক্য –
| অক্সিন | জিব্বেরেলিন |
| অগ্রস্থ ভাজক কলা, মূল, কাণ্ড ও পাতার অগ্রভাগ থেকে ক্ষরিত হয়। | বীজপত্র, পাকা ফল, অঙ্কুরিত চারাগাছ ইত্যাদি থেকে ক্ষরিত হয়। |
| এটি নাইট্রোজেনযুক্ত জৈব আম্লিক উদ্ভিদ হরমোন। | এটি নাইট্রোজেনবিহীন জৈব আম্লিক উদ্ভিদ হরমোন। |
| অক্সিনের প্রবাহ মেরুবর্তী। | জিব্বেরেলিনের প্রবাহ উভমুখী। |
| উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুরণ ঘটায়। | উদ্ভিদের কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুরণ ঘটায়। |
| এটি স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। | এটি পুরুষ ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। |
| বীজ এবং মুকুলের সুপ্তদশা দূরীকরণে অক্সিনের কোনো ভূমিকা নেই। | বীজ, মুকুলের বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুরণে জিব্বেরেলিন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। |
| অক্সিন হরমোন উদ্ভিদেহে অগ্রস্থ প্রকটতা, ট্রপিক চলন, উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। | জিব্বেরেলিন হরমোন বীজের অঙ্কুরোদ্গম, পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ইত্যাদিতে সাহায্য করে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কী?
অক্সিন – উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গের (মূল, কাণ্ড, পাতা) অগ্রভাগের ভাজক কলায় উৎপন্ন একপ্রকার জৈব-রাসায়নিক পদার্থ (ইনডোল বর্গযুক্ত), যা অতি অল্প পরিমাণে উদ্ভিদের বৃদ্ধি, কোষ দীর্ঘীকরণ ও বিভিন্ন বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
জিব্বেরেলিন – উদ্ভিদের পরিণত বীজপত্র, অঙ্কুরিত চারাগাছ, কচি পাতায় উৎপন্ন একদল জৈব অ্যাসিড হরমোন, যা উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, বীজের অঙ্কুরোদগম ও ফুল ফোটানো ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অক্সিন ও জিব্বেরেলিনকে উদ্ভিদ হরমোন বা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক বলা হয় কেন?
অক্সিন ও জিব্বেরেলিনকে উদ্ভিদ হরমোন বা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক বলা হয় কারণ এরা উদ্ভিদদেহে স্বাভাবিকভাবে অতি অল্প পরিমাণে উৎপন্ন হয়ে বৃদ্ধি, বিকাশ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। কৃত্রিমভাবেও এগুলো তৈরি করা যায়।
অক্সিনের প্রধান কাজ বা ভূমিকা কী?
অক্সিনের প্রধান কাজ বা ভূমিকা –
1. অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ।
2. মেরুবর্তী প্রবাহের মাধ্যমে অগ্রস্থ প্রকটতা বজায় রাখা।
3. মূল, কাণ্ড ও ফলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।
4. আলো, অভিকর্ষের প্রতি ট্রপিক চলন (ফটোট্রপিজম, জিওট্রপিজম) নিয়ন্ত্রণ।
জিব্বেরেলিনের প্রধান কাজ বা ভূমিকা কী?
জিব্বেরেলিনের প্রধান কাজ বা ভূমিকা –
1. পর্বমধ্যের (internode) দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে উদ্ভিদ লম্বা করতে সাহায্য করে।
2. বীজের সুপ্তাবস্থা দূর করে অঙ্কুরোদগম ত্বরান্বিত করে।
3. মুকুলের সুপ্ততা ভঙ্গ করা।
4. ফুল ফোটানো ও ফল গঠনে সহায়তা করা।
5. পুরুষ ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
অক্সিনের “মেরুবর্তী প্রবাহ” বলতে কী বোঝায়?
অক্সিন একটি মাত্রিক প্রবাহ অনুসরণ করে। এটি সাধারণত কাণ্ডের অগ্রভাগ থেকে নিচের দিকে (অ্যাক্রোপেটাল → ব্যাসিপেটাল) এবং মূলের অগ্রভাগ থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হয়। জিব্বেরেলিনের প্রবাহ সাধারণত দ্বিমুখী বা পরিবহন তন্ত্রের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়ায়।
অক্সিন ও জিব্বেরেলিনের প্রভাব “উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে” কীভাবে ভিন্ন হয়?
অক্সিন মূলের চেয়ে কাণ্ডের বৃদ্ধির জন্য বেশি কার্যকর (উচ্চ মাত্রায় অক্সিন মূলের বৃদ্ধি বাধা দেয়, কিন্তু কাণ্ডের বৃদ্ধি বাড়ায়)।
জিব্বেরেলিন সাধারণত কাণ্ডের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে, এবং এর প্রভাব মূলের চেয়ে কাণ্ডে বেশি স্পষ্ট।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কাকে বলে? অক্সিন ও জিব্বেরেলিনের একটি করে উৎসগত এবং দুটি করে কার্যগত পার্থক্য নির্দেশ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন