কোন্ গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয় এবং কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কোন্ গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থি’ বলা হয় এবং কেন? কোন্ গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয় এবং কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কোন্ গ্রন্থিকে 'প্রভুগ্রন্থি' বলা হয় এবং কেন? কোন্ গ্রন্থিকে 'প্রভুগ্রন্থির প্রভু' বা 'সুপ্রিম কমান্ডার' বলা হয় এবং কেন?
Contents Show

কোন্ গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থি’ বলা হয় এবং কেন?

পিটুইটারি গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থি’ বলা হয়।

পিটুইটারি গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থি’ বলা হয় কারণ – পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলি (যেমন – STH, ACTH, TSH, GTH) দেহের অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ এবং কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পিটুইটারি হরমোন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ছাড়াও অন্যান্য লক্ষ্য বা টার্গেট কলার ওপর সরাসরি ক্রিয়া করে। এই কারণে পিটুইটারি গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থি’ বা ‘মাস্টার গ্ল্যান্ড’ বলা হয়।

কোন্ গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয় এবং কেন?

হাইপোথ্যালামাসকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয়।

হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয় কারণ – হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্রন্থির সাথে হাইপোথ্যালামো-হাইপোফাইসিয়াল পোর্টাল তন্ত্রের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন পেপটাইডধর্মী নিউরোহরমোন এবং অন্যান্য হরমোনগুলি অগ্র পিটুইটারির পার্স ডিস্টালিস থেকে নিঃসৃত হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু পিটুইটারি গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থি’ বলা হয় এবং হাইপোথ্যালামাস পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই হাইপোথ্যালামাসকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বলে।

সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে হাইপোথ্যালামাস

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

পিটুইটারি গ্রন্থির প্রধান দুইটি অংশ কী কী এবং তাদের কাজের মধ্যে পার্থক্য কী?

পিটুইটারি গ্রন্থির প্রধান দুইটি অংশ হল –
1. অগ্রপিটুইটারি (এডেনোহাইপোফাইসিস) – এটি হাইপোথ্যালামাস থেকে প্রাপ্ত রাসায়নিক সংকেত দ্বারা হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি TSH, ACTH, FSH, LH, প্রোল্যাকটিন, বৃদ্ধি হরমোন (GH) ইত্যাদি হরমোন নিঃসরণ করে।
2. পশ্চাৎ পিটুইটারি (নিউরোহাইপোফাইসিস) – এটি মূলত হাইপোথ্যালামাসে তৈরি হওয়া দুটি হরমোন (অক্সিটোসিন ও অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন/ADH) জমা করে এবং প্রয়োজনে রক্তে নিঃসরণ করে।

পিটুইটারি গ্রন্থি “মাস্টার গ্ল্যান্ড” হলেও এর কার্যক্রম কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?

পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যক্রম মূলত হাইপোথ্যালামাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত রিলিজিং হরমোন (যেমন – GHRH, TRH) ও ইনহিবিটরি হরমোন (যেমন – সোমাটোস্টেটিন) একটি বিশেষ রক্তনালী জালিকা (পোর্টাল সিস্টেম) এর মাধ্যমে পিটুইটারিতে গিয়ে পৌঁছায় এবং সেখানকার হরমোন নিঃসরণকে উদ্দীপিত বা নিবৃত্ত করে।

হাইপোথ্যালামাসকে কেন শুধু গ্রন্থি নয়, “নিউরোএন্ডোক্রাইন” অঙ্গ বলা হয়?

হাইপোথ্যালামাস মস্তিষ্কের একটি অংশ হওয়ায় এটি স্নায়ুতন্ত্রের (নিউরো) কাজ করে, আবার একইসাথে এটি হরমোনও নিঃসরণ করে (এন্ডোক্রাইন)। এই দুটি পদ্ধতির সমন্বয় ঘটিয়ে এটি দেহের সাম্যাবস্থা (হোমিওস্ট্যাসিস) বজায় রাখে। তাই একে নিউরোএন্ডোক্রাইন অঙ্গ বলা হয়।

পিটুইটারি গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা (অতিসক্রিয়া বা অল্পসক্রিয়া) হলে কী সমস্যা হতে পারে?

পিটুইটারি গ্রন্থির কাজের তারতম্যের ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন –
1. বৃদ্ধি হরমোন (GH) অতিসক্রিয়া – শিশুদের মধ্যে দৈত্যত্ব (জায়গান্টিজম), প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অ্যাক্রোমেগালি।
2. বৃদ্ধি হরমোন অল্পসক্রিয়া – শিশুদের বামনত্ব (ডোয়ারফিজম)।
3. TSH -এর তারতম্য – থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ কম বা বেশি হওয়া।
4. ACTH -এর তারতম্য – অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কাজ কম বা বেশি হওয়া (যেমন – কুশিং সিন্ড্রোম)।
5. ADH -এর অল্পসক্রিয়া – ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (অতিরিক্ত প্রস্রাব ও তৃষ্ণা)।

“হাইপোথ্যালামো-হাইপোফাইসিয়াল পোর্টাল সিস্টেম” কী এবং এর গুরুত্ব কী?

এটি হাইপোথ্যালামাস থেকে অগ্র পিটুইটারি পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিশেষ রক্তনালী জালিকা। এর মাধ্যমেই হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত ক্ষুদ্র পরিমাণের নিয়ন্ত্রক হরমোনগুলি সরাসরি এবং দ্রুত পিটুইটারিতে পৌঁছাতে পারে, সাধারণ সঞ্চালন তন্ত্রে মিশে যাওয়া ছাড়াই। এটি পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোন গ্রন্থিকে কখনও কখনও “জরুরি গ্রন্থি” বলা হয় এবং কেন?

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডুলা অংশকে কখনও কখনও “জরুরি গ্রন্থি” বলা হয়। কারণ এটি অ্যাড্রিনালিন (এপিনেফ্রিন) হরমোন নিঃসরণ করে যা যেকোনো চাপ, ভয় বা জরুরি পরিস্থিতিতে দেহকে “লড়াই-বা-পলায়ন” (Fight-or-Flight) অবস্থার জন্য প্রস্তুত করে। এর ক্রিয়া দ্রুত ও তাৎক্ষণিক হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কোন্ গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থি’ বলা হয় এবং কেন? কোন্ গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয় এবং কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

প্রতিবর্ত চাপের চিত্রসহ বর্ণনা দাও।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

পনস, লঘুমস্তিষ্ক ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো।

সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন ও কাজ উল্লেখ করো।