কোনি উপন্যাসের কোনি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

“কোনি উপন্যাসের কোনি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।” এই প্রশ্নটি দশম বাংলা সহায়ক পাঠ কোনি উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। “কোনি উপন্যাসের কোনি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।” এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যান্ত গুরুত্তপূর্ণ। কোনি উপন্যাসের এই রচনাধর্মী প্রশ্নটি তৈরী করে গেলে মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় একটি ৫ নম্বরের পাওয়া যেতে পারে।

মতি নন্দীর বিখ্যাত উপন্যাস “কোনি” শুধুমাত্র একটি খেলাধুলার গল্প নয়, এটি একটি মেয়েটির জীবনযুদ্ধের কাহিনী। শ্যামপুকুর বস্তিতে মা ও সাত ভাই-বোনের সঙ্গে কোনির দিন কাটে। ডানপিটে, চেহারায় পুরুষালি ভাব, ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা চুল, কালো হিলহিলে শরীর – কোনি যেন একজন কেউটে।

গঙ্গাবক্ষে আম সংগ্রহ, ২০ ঘণ্টা হাঁটা প্রতিযোগিতা, বাংলা চ্যাম্পিয়ন অমিয়াকে হারানো এবং সবশেষে মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা – উপন্যাসের সর্বত্র কোনির লড়াকু মনোভাব প্রমাণিত হয়েছে। মাদ্রাজে যখন হিয়া তাকে আনস্পোরটিং বলে, তখন এর উত্তর সে জলেই দেয়।

দারিদ্র্যের সাথেই কোনির লড়াই। সে বিশ্বাস করে বড়লোকরা গরিবদের ঘেন্না করে। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধাকে হারিয়ে সে নিজেকে অনুশীলনে যুক্ত রাখে। লীলাবতীর ‘প্রজাপতি’ দোকানের যাবতীয় ফরমাশ খাটে।

কোনির সমস্ত অভিমান ছিল ক্ষিতীশ সিংহকে ঘিরে। মাদ্রাজ যাওয়ার সময় এবং সেখানে গিয়ে ক্ষিতীশ ছাড়া অসহায় কোনির অভিমান প্রবলভাবে জেগে ওঠে। বাংলাকে না ভালোবাসার অপবাদ যখন তাকে দেওয়া হয় তখন তার শত অপমান, বঞ্চনা অভিমানে পরিণত হয়। তাই হিয়া বা অমিয়াকে হারিয়ে সে তার জবাব দিতে চেয়েছিল এবং বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে, সে সকলকেই জবাবও দিয়েছে।

কোনির নিষ্ঠা, একাগ্রতা, লড়াকু পরিশ্রমী মানসিকতা এই চরিত্রটিকে অনবদ্য করে তুলেছে। “কোনি” শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি একটি অনুপ্রেরণা, একটি জীবন-দর্শন।

কোনি উপন্যাসের কোনি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

কোনি উপন্যাসের কোনি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসটি কোনি নামের মেয়েটির জীবনযুদ্ধেরই কাহিনি। শ্যামপুকুর বস্তিতে মা ও সাত ভাই-বোনের সঙ্গে তার দিন কাটে। সে স্বভাবে ডানপিটে, চেহারায় তার পুরুষালি ভাব। ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা তার চুল। কালো হিলহিলে শরীরটি যেন কেউটের মতো।
  • লড়াকু মানসিকতা – গঙ্গাবক্ষে আম সংগ্রহ, ২০ ঘণ্টা হাঁটা প্রতিযোগিতা, বাংলা চ্যাম্পিয়ন অমিয়াকে হারানো এবং সবশেষে মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা-উপন্যাসের সর্বত্র কোনির লড়াকু মনোভাব প্রমাণিত হয়েছে। মাদ্রাজে যখন হিয়া তাকে বলে কোনি তুমি আনস্পোরটিং, তখন এর উত্তর সে জলেই দেয়।
  • পরিশ্রমী ও কষ্টসহিষ্ণু – দারিদ্র্যের সাথেই কোনিদের বসবাস। সে বিশ্বাস করে বড়লোকরা গরিবদের ঘেন্না করে। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধাকে হারিয়ে সে নিজেকে অনুশীলনে যুক্ত রাখে। লীলাবতীর ‘প্রজাপতি’ দোকানের যাবতীয় ফরমাশ খাটে।
  • অভিমানী – কোনির সমস্ত অভিমান ছিল ক্ষিতীশ সিংহকে ঘিরে। মাদ্রাজ যাওয়ার সময় এবং সেখানে গিয়ে ক্ষিতীশ ছাড়া অসহায় কোনির অভিমান প্রবলভাবে জেগে ওঠে। বাংলাকে না ভালোবাসার অপবাদ যখন তাকে দেওয়া হয় তখন তার শত অপমান, বঞ্চনা অভিমানে পরিণত হয়। তাই হিয়া বা অমিয়াকে হারিয়ে সে তার জবাব দিতে চেয়েছিল এবং বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে, সে সকলকেই জবাবও দিয়েছে।
  • উপসংহার – কোনির নিষ্ঠা, একাগ্রতা, লড়াকু পরিশ্রমী মানসিকতা এই চরিত্রটিকে অনবদ্য করে তুলেছে।

আরও পড়ুন, কোনি উপন্যাসে লেখকের যে সমাজসচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।

মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসটি শুধুমাত্র একটি সাঁতারু মেয়েটির জীবনী নয়, এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী যা আমাদের জীবনের লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে শেখানোর চেষ্টা করে। কোনি, শ্যামপুকুর বস্তির একটি দারিদ্র্যপীড়িত মেয়ে, তার লড়াকু মনোভাব, নিষ্ঠা, এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জাতীয় সাঁতার ক্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে।

কোনির জীবনে অভাব, অপমান, এবং বঞ্চনার কমতি ছিল না। তবুও সে হাল ছাড়েনি। ক্ষিতীশ সিংহের প্রশিক্ষণে সে একজন দক্ষ সাঁতারু হয়ে ওঠে। মাদ্রাজের জাতীয় প্রতিযোগিতায় তার লড়াকু মানসিকতা এবং দেশপ্রেম সকলকে মুগ্ধ করে। হিয়ার অভিযোগ, অমিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এবং সমাজের নীচু চোখ – কোন কিছুই তাকে থামাতে পারেনি।

কোনির চরিত্র আমাদের শেখানোর চেষ্টা করে যে, জীবনে যত বাধাই আসুক না কেন, লড়াই থামানো যাবে না। লড়াকু মানসিকতা, পরিশ্রম, নিষ্ঠা, এবং দেশপ্রেমের মাধ্যমে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। “কোনি” উপন্যাসটি আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে জীবনে লড়াই করার জন্য।

“কোনি” কেবল একটি উপন্যাস নয়, এটি একটি জীবন-দর্শন।

Share via:

মন্তব্য করুন