কোনি উপন্যাসে লেখকের যে সমাজসচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।

“কোনি উপন্যাসে লেখকের যে সমাজসচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।” এই প্রশ্নটি দশম বাংলা সহায়ক পাঠ কোনি উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। “কোনি উপন্যাসে লেখকের যে সমাজসচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।” এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যান্ত গুরুত্তপূর্ণ। কোনি উপন্যাসের এই রচনাধর্মী প্রশ্নটি তৈরী করে গেলে মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় একটি ৫ নম্বরের পাওয়া যেতে পারে।


মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসটিতে সাঁতার কেবল একটি খেলা হিসেবে চিত্রিত হয়নি, বরং সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহ নামক একজন প্রতিভাবান সাঁতার প্রশিক্ষক ক্লাবের গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার হন। হতাশ হয়ে তিনি শ্যামপুকুরের বস্তিতে কোনি নামক এক অসহায়, হতদরিদ্র মেয়েকে আবিষ্কার করেন এবং তাকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। কোনির মধ্যে ক্ষিতীশ তার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন পূরণের সুযোগ খুঁজে পান।

কিন্তু কোনির লড়াই শুধু ক্ষিতীশের স্বপ্ন পূরণের জন্য নয়, বরং অভাব ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেও। কোনি তার পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে প্রায়ই খিদেয় ভুগতে থাকে এবং তার দাদা কমলের মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিও অভাবের কারণে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে মারা যায়। কোনির মুখ দিয়ে লেখক সমাজের অর্থনৈতিক বিভাজন এবং বড়োলোকদের গরিবদের প্রতি ঘৃণার কথা তুলে ধরেছেন।

মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনি যখন বাংলার সম্মান বহন করে, তখন তার মুখ দিয়ে সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়। কোনির সাফল্য কেবল তার ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং সমাজের অবহেলিত ও প্রান্তিক মানুষদের এক ঐতিহাসিক বিজয়।

এইভাবে মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাস সাঁতারকে কেন্দ্র করে সমাজের বিভিন্ন দিক, যেমন – দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বিভাজন, প্রতিভা অপচয় ইত্যাদি তুলে ধরে একটি বৃহত্তর সমাজের ছবি ফুটিয়ে তুলেছে।

কোনি উপন্যাসে লেখকের যে সমাজসচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।

কোনি উপন্যাসে লেখকের যে সমাজসচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।

  • শুরুর কথা – মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসটিতে সাঁতার ও সাঁতারকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর সমাজের ছবি ফুটে উঠেছে।
  • গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার – উপন্যাসটিতে দেখা যায় ক্লাবের গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার হন সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।
  • লড়াই ও সংগ্রাম – একইসাথে শুরু হয় ক্ষিতীশের অন্য এক লড়াই। শ্যামপুকুরের বস্তিতে থাকা হতদরিদ্র, প্রায় অশিক্ষিত, কালো, শীর্ণকায় কোনির মধ্যেই তিনি সমস্ত লড়াই ও সংগ্রামের অস্ত্র খুঁজে পান।
  • অভাব ও প্রতিকূলতা – এই লড়াই শুধু ক্ষিতীশের স্বপ্ন পূরণের নয়, এই লড়াই অভাব ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেও। ডিম-কলা খাওয়ার পরিবর্তে ক্ষিতীশ সিংহের থেকে পয়সা নিয়ে যখন কোনি সেটা দিয়ে তার পরিবারকে সাহায্য করতে চায় তখন তার মাধ্যমে অভাবের তীব্রতম রূপই প্রকাশিত হয়। অভাবের কারণেই কোনির দাদা কমলের মতো প্রতিভার মৃত্যু ঘটে যায়।
  • অর্থনৈতিক বিভাজন – কোনির মুখ দিয়ে যখন লেখক বলেন – বড়োলোকরা গরিবদের ঘেন্না করে, তখন সমাজের অর্থনৈতিক বিভাজনটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অবহেলিত কোনির ওপরেই যখন সমগ্র বাংলার সম্মান নির্ভর করে, তখন কোনি বলে – আমি গরীব, আমাকে দেখতে খারাপ, লেখাপড়া জানি না, কত কথা শুনলাম। এখন ঠেকায় পড়ে এসেছ আমার কাছে।
  • শেষের কথা – সমগ্র সমাজের বিরুদ্ধে এ হল কোনির প্রতিবাদ। তার সাফল্য যেন সমস্ত অন্যায় বৈষম্যের উপযুক্ত জবাব হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন, লড়াকু এবং অনুপ্রেরণামূলক উপন্যাস হিসেবে কোনি তোমার মনকে কতটা স্পর্শ করেছে লেখো।

মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসটি কেবল একটি সাঁতারুকে কেন্দ্র করে লেখা গল্প নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার একটি মাধ্যম। উপন্যাসটিতে সাঁতারকে একটি রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যা দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বিভাজন, প্রতিভা অপচয়, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো বিষয়গুলিকে তুলে ধরে।

কোনির চরিত্রটি সমাজের প্রান্তিক মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করে। তার দারিদ্র্য, বর্ণ, এবং শিক্ষার অভাব তাকে সমাজের অনেকের কাছে অবহেলিত করে তোলে। কিন্তু তার অদম্য সাহস এবং প্রতিভা তাকে সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে সাহায্য করে। কোনির সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং সমাজের অবহেলিত ও প্রান্তিক মানুষদের এক ঐতিহাসিক বিজয়।

এই উপন্যাস আমাদেরকে শেখানোর চেষ্টা করে যে, প্রতিভা ও সাহসের কোন জাত, ধর্ম, বর্ণ, বা অর্থনৈতিক অবস্থানের বাধা থাকে না। যার মধ্যে স্বপ্ন দেখার সাহস এবং লড়াই করার জেদ আছে, সে অবশ্যই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

“কোনি” উপন্যাসটি একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প যা আমাদেরকে সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং সকলের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত ও সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য কাজ করার জন্য উৎসাহিত করে।

Rate this post


Join WhatsApp Channel For Free Study Meterial Join Now
Join Telegram Channel Free Study Meterial Join Now

মন্তব্য করুন