Class 10 – Life Science – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – উদ্ভিদের সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – উদ্ভিদ হরমোন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞানের একটি অধ্যায় হলো জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়। এই অধ্যায়ে উদ্ভিদগুলির সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়াও উদ্ভিদ হরমোন নিয়েও আলোচনা করা হয়। এই অধ্যায়ে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর সহ অনেক বিষয় আলোচনা করা হয়।

উদ্ভিদদেহে হরমোনের সাধারণ কাজগুলি সম্পর্কে লেখো।

উদ্ভিদদেহে হরমোনের কাজ

হরমোন উদ্ভিদদেহে শারীরবৃত্তীয় কার্য নিয়ন্ত্রকরূপে বিশেষত বৃদ্ধি সহায়করূপে যেসব ভূমিকা পালন করে তা নীচে আলোচিত হল।

  • অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি – উদ্ভিদের প্রাথমিক বৃদ্ধি বলতে প্রধানত কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগের বৃদ্ধিকেই বোঝানো হয়। অগ্রস্থ ভাজক কলার কোশের বিভাজনের দ্বারাই এই বৃদ্ধি ঘটে থাকে। একে অগ্রস্থ বৃদ্ধিও বলা হয়। এ ছাড়া, পার্শ্বীয় ভাজক কলার বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদ প্রস্থে বৃদ্ধি পায়, যা পার্শ্বীয় বৃদ্ধি নামে পরিচিত। এইভাবে ভাজক কলার বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধি হরমোনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • ফুলের প্রস্ফুটন – উদ্ভিদের জননাঙ্গ হল ফুল। পুষ্পমুকুলের পরিস্ফুটনের মাধ্যমে ফুল ফোটে। উদ্ভিদদেহে পুষ্পমুকুলের সৃষ্টি ও তার থেকে ফুল ফোটার ক্ষেত্রে উদ্ভিদ হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • মুকুলোদ্‌গম – বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমের পর ভ্রূণমুল থেকে মূলতন্ত্র ও ভ্রূণমুকুল থেকে কাণ্ডের বৃদ্ধি হরমোন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম – বীজের সৃষ্টির পর কিছুদিন তা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। উপযুক্ত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ শর্তের উপস্থিতিতে এই সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ হয়। অর্থাৎ, অঙ্কুরোদ্‌গম ঘটে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ শর্তকে প্রভাবিত করে, যেমন — উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে ও খাদ্য সরবরাহ বাড়িয়ে হরমোন এই কাজে সহায়তা করে।
  • ট্রপিক চলন – উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার ট্রপিক চলন, প্রধানত ফোটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে হরমোন প্রধান ভূমিকা পালন করে।

উদ্ভিদ হরমোনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উদ্ভিদ হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি 

উদ্ভিদ হরমোনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ।

  • উৎস – উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রভাগে উপস্থিত ভাজক কলার কোশগুলি উদ্ভিদ হরমোনের অন্যতম প্রধান উৎসস্থল। এ ছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত কচি পাতা, তৃণমূল, জুণমুকুল, বর্ধনশীল পাতার কোশ থেকেও হরমোন ক্ষরিত হয়।
  • পরিবহণের ধরন – উদ্ভিদ হরমোনগুলি উৎপত্তি স্থানের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী স্থান উভয় অঞ্চলেই কার্যকরী হয়। উদ্ভিদ হরমোন উৎসস্থল থেকে প্রধানত ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সংবহন কলার মাধ্যমে কার্যস্থলে পরিবাহিত হয়।
  • কাজ – অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি, ফুলের পরিস্ফুটন, বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম, মুকুলোদ্‌গম, সংবেদনশীলতা, জরারোধ প্রভৃতিতে হরমোন সাহায্য করে।
  • পরিণতি – ক্রিয়ার শেষে উদ্ভিদ হরমোনগুলি বিনষ্ট হয়। বিভিন্ন হরমোন বিভিন্ন উৎসেচক বা অন্য কোনো শর্তের প্রভাবে বিনষ্ট হয়। যেমন, অক্সিন হরমোনটি আলোর প্রভাবে বা ইনডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড অক্সিডেজ নামক উৎসেচকের ক্রিয়ায়, বিনষ্ট হয়। জিব্বেরেলিন, জিব্বেরেলিন অক্সিডেজের ক্রিয়ায় ও সাইটোকাইনিন, সাইটোকাইনিন অক্সিডেজের ক্রিয়ায় বিনষ্ট হয়।

সংশ্লেষিত হরমোন কাকে বলে? সংশ্লেষিত হরমোনের চারটি ভূমিকা উল্লেখ করো।

সংশ্লেষিত হরমোন

গবেষণা দ্বারা আবিষ্কৃত ও রসায়নগারে প্রস্তুত যে রাসায়নিক পদার্থগুলি প্রাকৃতিক হরমোনের সমধর্মী ও একইভাবে কার্যকরী হয়, তাদের কৃত্রিম হরমোন বলে। যেমন — কৃত্রিম অক্সিন, কৃত্রিম জিব্বেরেলিন ইত্যাদি।

কৃত্রিম বা সংশ্লেষিত হরমোনের ভূমিকা

কৃত্রিম উদ্ভিদ হরমোনগুলি কৃষিবিদ্যা, উদ্যানপালনবিদ্যা, ফলচাষ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই হরমোনগুলির কয়েকটি ভূমিকা নীচে আলোচিত হল।

 শাখা থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি বা কলম তৈরি করা
  • শাখা থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি বা কলম তৈরি করা – শাখাকলম পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্ভিদের অম্লজ বংশবিস্তারে কৃত্রিম হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন — গোলাপ, জবা, বেল, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে গাছের শাখা থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির জন্য কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করা হয়। এইসব গাছের শাখা কেটে, কাটা অংশে অক্সিনের দ্রবণ লাগিয়ে মাটিতে রোপণ করা হলে কয়েক দিনের মধ্যে ওই স্থান থেকে অস্থানিক মূল সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন পাছ উৎপন্ন হয়। এই পদ্ধতিটি শাখাকলম নামে পরিচিত।
  • অপরিণত ফলের মোচন রোধ – গাছের থেকে অপরিণত ফলের পতন হলে ফলন কমে যায়। আম, কলা, আঙুর প্রভৃতি ফলচাষের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। পাছে কৃত্রিম অক্সিনের প্রবণ স্প্রে করে বিভিন্ন উদ্ভিদের অপরিণত ফলের মোচন রোধ করা যায়। তা ছাড়া, অক্সিন স্প্রে করলে পাকা ফলের পতনও বিলম্বিত হয়। কৃত্রিম সাইটোকাইনিন ও জিব্বেরেলিনেরও একইরকম কার্যকরিতা লক্ষ করা যায়। এইভাবে কৃত্রিম হরমোনের প্রয়োগ দ্বারা বিভিন্ন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
  • আগাছানাশক হিসেবে কৃত্রিম হরমোন – কৃষিক্ষেত্রে জন্মানো আগাছা বা অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ মাটি থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা হ্রাস করে, অপরদিকে ফসলের মধ্যে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে ফলন কমায়। তাই কৃষিক্ষেত্র থেকে আগাছা নির্মূল করা খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রকে আগাছামুক্ত করা যায়। যেমন —একপ্রকার কৃত্রিম অক্সিন (যেমন — 2, 4-D) নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করলে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ ধ্বংস হয়। তাই ধান, গম, যব ইত্যাদি একবীজপত্রী উদ্ভিদের চাষের সময় দ্বিবীজপত্রী আগাছানাশক হিসেবে কৃত্রিম অক্সিন ব্যবহার করা হয়।
  • পার্থেনোকার্গিক ফল সৃষ্টি – পার্থেনোকার্গিক ফল সৃষ্টি-নিষেক ছাড়াই ফল সৃষ্টি হলে ফলে বীজ সৃষ্টি হয় না এবং ফলের আকারও বৃদ্ধি পায়। নিষেকের পূর্বে ডিম্বাশয়ে কৃত্রিম অক্সিনের দ্রবণ প্রয়োগ করে উন্নত মানের এবং বীজহীন পেয়ারা, খেজুর, আঙুর, কলা, ইত্যাদি ফল উৎপাদন করা হয়। কিছুকিছু ফলের ক্ষেত্রে কৃত্রিম জিব্বেরেলিনের প্রয়োগ দ্বারা বীজহীন ফল উৎপাদন করা হয়। যেমন, টম্যাটোর ক্ষেত্রে কৃত্রিম জিব্বেরেলিন, কৃত্রিম অক্সিনের তুলনায় প্রায় 500 গুণ বেশি কার্যকরী। উক্ত দুটি হরমোনের সাহায্যে বর্তমানে তরমুজ, টম্যাটো প্রভৃতি পার্থেনোকাপিক ফল তৈরি করা হচ্ছে।

এই অধ্যায়টি দেখে বোঝা গেছে যে জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদ্ভিদগুলির সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, উদ্ভিদ হরমোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা উদ্ভিদের বিভিন্ন কাজে সমর্থতা প্রদান করে। এই অধ্যায়ে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর সহ অনেক বিষয় আলোচনা করা হয়। সুতরাং, জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জীবনের সমস্ত উদ্যেশ্য সম্পাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

Share via:

মন্তব্য করুন