এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নদীর সঞ্জয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করো

নদী কেবল ক্ষয় করে না, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পলি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও। নিজের গতিপথে ভাঙা পাথুরে খনিজ ও মাটি কণা বয়ে আনে নদী। গতি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভারী কণিকা আগে এবং সূক্ষ্ম কণিকা পরে সঞ্চিত হয়। এই সঞ্চয়নের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

এই আজকের আর্টিকেলে আমরা নদীর সঞ্চয় কাজ সম্পর্কে জানব এবং দেখব কীভাবে নদী তার বহন ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।

নদীর সঞ্জয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করো।

যখন ভূমির ঢাল কমে যায়, তখন নদীর বহন ক্ষমতাও কমে যায়। এর মানে হল, নদী আর আগের মতো পলি, বালি, নুড়ি, কাদা বহন করতে পারে না। তাই এইসব জিনিস নদীর তলদেশে ও পাড়ে জমা হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকেই নদীর সঞ্চয় কাজ বলে।

নদী পার্বত্য অঞ্চলে প্রধানত ক্ষয়কাজ করে এবং সমভূমি অঞ্চলে সঞ্চয়কাজ করে। নদীর এই সঞ্চয়কাজের ফলে কতকগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপের সৃষ্টি ত্রিকোণ হয়।

পলল ব্যজনী বা ত্রিকোণ পললভূমি – 

পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদী সমভূমিতে এসে পড়লে, ভূমির ঢাল হঠাৎ কমে যায় বলে নদীর গতিবেগ এবং বহনক্ষমতা—উভয়ই হ্রাস পায়। এর ফলে সমভূমিতে অবতরণের স্থানে অর্থাৎ, পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলে নদী উপত্যকায় পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি জমে ত্রিকোণাকার পললভূমির সৃষ্টি হয়। প্রধানত পলি গঠিত এবং ব্যজনী (হাত পাখা)-এর মতো দেখতে হয় বলে একে পলল ব্যজনীও বলে।

উদাহরণ: হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গার বিভিন্ন উপনদীর গতিপথে এই ধরনের ভূমিরূপ প্রায়শই দেখা যায়।

নদীচর – 

সমভূমিতে নদীর গতিবেগ কম থাকার দরুন পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে আনা নুড়ি, পাথর, বালি প্রভৃতি নদীবক্ষে সঞ্চিত হয় এবং জলপ্রবাহকে রুদ্ধ করে। এইভাবে নদীবক্ষে চরের আকারে সঞ্চিত পলিরাশিকে নদীচর বা বালুচর বলে।

উদাহরণ: অসম সমভূমিতে ব্রহ্মপুত্র নদের মাজুলি দ্বীপটি ভারতের বৃহত্তম নদীচর বা নদী-দ্বীপ।

প্লাবনভূমি – 

সমভূমিতে ভূমির ঢাল কম থাকে বলে নদী ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে গতিপথের এই অংশে নদীতে হঠাৎ জল বেড়ে গেলে নদীর দু-কূল ছাপিয়ে উপত্যকায় বন্যা বা প্লাবন হয়। প্লাবিত অঞ্চলে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত কাদা, পলি, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে সমতলভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে বলে প্লাবনভূমি বা প্লাবন সমভূমি।

উদাহরণ: বিহারে গঙ্গানদীর গতিপথের দুই পাশে এই প্রকার ভূমিরূপ লক্ষ করা যায়।

স্বাভাবিক বাঁধ – 

সমভূমিতে নদীর গতিবেগ কম থাকে বলে ঊর্ধ্বপ্রবাহে জলের সঙ্গে যেসব পলি, বালি, কাদা বাহিত হয়ে আসে, নদী আর সেগুলি বহন করতে পারে না। বন্যার সময় সেগুলি নদীর দুই তীরে ক্রমশ সঞ্চিত হয়ে বাঁধের মতো উঁচু হয়ে যায়। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয় বলে এর নাম স্বাভাবিক বাঁধ।

সমভূমিতে গঙ্গার দুই তীরে বা মিশরে নীলনদের দুই তীরে উঁচু স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায়।

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ –

সমভূমি প্রবাহে নদীর গতিবেগ খুব কম থাকে। তাই সামান্য বাধা পেলেই নদী এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। নদী যখন এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয় তখন প্রবাহপথের অন্তঃবাঁকের তুলনায় বহিঃবাঁকে গতিবেগ বেশি থাকে। বহিঃবাঁকে ক্ষয়কার্য চলে এবং অন্তঃবাঁকে পলি, বালি সঞ্চিত হয়।

নদী যদি খুব বেশি এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় তবে দুই বাঁকের মধ্যবর্তী ভূমি একসময় সম্পূর্ণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর ফলে নদীর দুই বাঁকের জলধারার সংযুক্তি ঘটে। নদী তখন বাঁকা পথ ছেড়ে সোজা পথে প্রবাহিত হয় এবং পরিত্যক্ত বাঁকটি হ্রদে পরিণত হয়।

এই প্রকার হ্রদ দেখতে ঘোড়ার ক্ষুরের মতো হয়। তাই একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।

উদাঃ- পশ্চিম টেনিসিতে মিসিসিপি নদী দ্বারা সৃষ্ট রিলফুট হ্রদ হল একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ।

বদ্বীপ – 

নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি, কাদা মোহানার কাছে সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সংস্পর্শে এসে সহজে সংবদ্ধ হয় এবং নদীর মোহানায় বা অগভীর সমুদ্রে জমা হয়। এগুলি ক্রমশ জমে জমে মোহানার কাছে যে নতুন ভূখণ্ডের সৃষ্টি করে, তাকে দ্বীপ বলে। পৃথিবীর অধিকাংশ দ্বীপগুলি দেখতে ঠিক ওলটানো মাত্রাহীন বাংলা অক্ষর ‘ব’-এর মতো অথবা গ্রিক অক্ষর ‘ডেল্টা’ (Δ)-র মতো হওয়ায় এদের বদ্বীপ বলে।

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর মোহানায় গড়ে ওঠা বদ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। আবার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি- মিসৌরি নদীর বদ্বীপের আকৃতি পাখির পায়ের মতো।

নদীর সঞ্চয় কাজের ফলে আমরা পৃথিবীতে নান্দনিক ও কার্যকরী বিভিন্ন ভূমিরূপ দেখতে পাই। পলল ব্যজনী থেকে শুরু করে বদ্বীপ পর্যন্ত, প্রতিটি ভূমিরূপের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। এই ভূমিরূপগুলি কৃষিকাজ, বসতি স্থাপন এবং জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নদীর সঞ্চয় কাজ প্রকৃতির এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত, যা আমাদের পৃথিবীর নিয়ত পরিবर्तনশীল চেহারা বুঝতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন – নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ – ব্যাখ্যা করো।

Share via:

মন্তব্য করুন