রসে মতানে ও ড্রামলিন কি? রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্য

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে রসে মতানে ও ড্রামলিন কি? রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্য লিখ। এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, রসে মতানে ও ড্রামলিন কি? রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্য লিখ। প্রশ্নটি আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।

রসে মতানে

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে তৈরি বিভিন্ন ভূমিরূপের মধ্যে রসে মতানে একটি উল্লেখযোগ্য। যখন হিমবাহ উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন কঠিন শিলাখণ্ডের ওপর দিয়ে গড়িয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায়, হিমবাহের অবঘর্ষণ শিলাখণ্ডের প্রতিবাত ঢালকে মসৃণ ও চকচকে করে তোলে। অন্যদিকে, অনুবাত ঢালে উৎপাটন প্রক্রিয়ার ফলে শিলাখণ্ডটি অমসৃণ ও খাঁজকাটা হয়ে যায়।

এইভাবে, পার্বত্য হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে তৈরি একদিকে মসৃণ এবং অন্যদিকে এবড়োখেবড়ো শিলাখণ্ড বা ঢিবিকে রসে মতানে বলা হয়। এটি পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের একটি স্পষ্ট নিদর্শন।

রসে মতানের বৈশিষ্ট্য:

  • একদিকে মসৃণ ও চকচকে: হিমবাহের অবঘর্ষণের ফলে প্রতিবাত ঢাল মসৃণ ও চকচকে হয়ে যায়।
  • অন্যদিকে এবড়োখেবড়ো: উৎপাটন প্রক্রিয়ার ফলে অনুবাত ঢাল অমসৃণ ও খাঁজকাটা হয়ে যায়।
  • শক্ত শিলাখণ্ড দ্বারা গঠিত: রসে মতানে সাধারণত শক্ত শিলাখণ্ড, যেমন গ্রানাইট, দ্বারা গঠিত হয়।
  • পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত: রসে মতানে পার্বত্য অঞ্চলে, যেখানে হিমবাহ প্রবাহিত হয়, সেখানে পাওয়া যায়।

রসে মতানের উদাহরণ:

  • কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার রকি পর্বতমালা
  • নরওয়ের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পর্বতমালা
  • নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপ

ড্রামলিন

ড্রামলিন হিমবাহ এবং হিমবাহগলিত জলধারার সৃষ্টি করা এক ধরণের ভূমিরূপ। হিমবাহ গলে যাওয়ার পর, বরফের সাথে বহন করা বালি, কাদা এবং বিভিন্ন আকারের নুড়ি-পাথর একসাথে জমা হয়। এই স্তুপগুলো অনেক সময় সারিবদ্ধ টিলা বা ছোটো ছোটো স্তুপের আকার ধারণ করে। ভূ-পৃষ্ঠের উপর দেখতে এগুলো উলটানো নৌকা বা উলটানো চামচের মতো দেখায়। এই চামচের মতো আকৃতির ভূমিরূপকেই ড্রামলিন বলা হয়।

বিজ্ঞানী ফ্লিন্ট-এর মতে, একটি আদর্শ ড্রামলিন গড়ে ১৫-৩০ মিটার উঁচু, ১-২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪০০-৬০০ মিটার প্রশস্ত হয়ে থাকে। যেখানে একসাথে অসংখ্য ড্রামলিন একত্রে অবস্থান করে, সেই জায়গাগুলো দূর থেকে দেখতে ডিম ভর্তি ঝুড়ির মতো দেখায়। এজন্য ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে ডিমের ঝুড়ি ভূমিরূপ (Basket of Egg Topography) বলা হয়।

ড্রামলিনের বৈশিষ্ট্য:

  • উল্টানো নৌকা বা উলটানো চামচের মতো আকৃতি
  • গড়ে ১৫-৩০ মিটার উঁচু, ১-২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪০০-৬০০ মিটার প্রশস্ত
  • স্তুপগুলো অনেক সময় সারিবদ্ধভাবে অবস্থিত
  • দূর থেকে দেখতে ডিম ভর্তি ঝুড়ির মতো দেখায়

ড্রামলিন গঠনের প্রক্রিয়া:

  • হিমবাহ বরফের সাথে বালি, কাদা এবং নুড়ি-পাথর বহন করে।
  • হিমবাহ গলে যাওয়ার পর, এই বহনকৃত উপাদানগুলো হিমবাহের পাদদেশে জমা হয়।
  • বরফ গলার ফলে সৃষ্ট জলধারা এই উপাদানগুলোকে আরও সাজিয়ে তোলে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং ড্রামলিন তৈরি হয়।

রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্য

রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —

বিষয়রসে মতানেড্রামলিন
ভূমিরূপের প্রকৃতিহিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে রসে মতানে গঠিত হয়।হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়ের ফলে ড্রামলিন তৈরি হয়।
আকৃতিএর একদিকে মসৃণ এবং একদিক অমসৃণ হয়।ড্রামলিন দেখতে ওলটানো চামচের মতো হয়।
অবস্থানউচ্চ পার্বত্য অংশে দেখা যায়।পর্বতের পাদদেশে দেখা যায়।
প্রকৃতি ও গঠনএটি কঠিন শিলাখণ্ডের ওপর গড়ে ওঠে।হিমবাহ বয়ে আনা কাদা, নুড়ি পাথর সঞ্চিত হয়ে গড়ে ওঠে।

আরও পড়ুন – গিরিখাত ও ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য কী?

এই আর্টিকেলে আমরা হিমবাহী ভূ-প্রক্রিয়া দ্বারা গঠিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিরূপ – রসে মতানে ও ড্রামলিন – এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছি। দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তাই এখানে আমরা রসে মতানে ও ড্রামলিনের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছি।

রসে মতানে ও ড্রামলিন হিমবাহী ভূ-প্রক্রিয়া দ্বারা গঠিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিরূপ। তাদের উৎপত্তি, আকৃতি, প্রবাহের দিক, অবস্থান এবং উদাহরণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভূগোলের পাঠ্যক্রমে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ভূ-প্রকৃতির বিভিন্নতা বুঝতে সাহায্য করে।

Share via:

মন্তব্য করুন