ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কী? ভরা কোটাল ও মরা কোটাল সৃষ্টির কারণ

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কী? ভরা কোটাল ও মরা কোটাল সৃষ্টির কারণ এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় বারিমণ্ডলের প্রশ্ন। ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কী? ভরা কোটাল ও মরা কোটাল সৃষ্টির কারণ – আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।

ভরা কোটাল – 

অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মধ্যবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে বলে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের সম্মিলিত প্রভাবে পৃথিবীর মহাসাগরের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে। একে তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল বলা হয়।

ভরা কোটাল সৃষ্টির কারণ –

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করতে যে সময় নেয় তাকে এক চান্দ্রমাস বলে। এই চান্দ্রমাসের প্রতিটি দিনকে এক একটি তিথি বলা হয়। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা হল এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি, যে সময় পৃথিবী এবং চাঁদ এমন অবস্থানে আসে যাতে পৃথিবীর উপর চাঁদের আকর্ষণ সর্বাধিক হয়। কখনো কখনো সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সরল রেখায় এসে যায়। এমন অবস্থায় সূর্য এবং চাঁদ একইসঙ্গে পৃথিবীর জলরাশিকে আকর্ষণ করে। সূর্য এবং চাঁদের এই মিলিত আকর্ষণের ফলে জোয়ারের জল সর্বাধিক ফুলে-ফেঁপে ওঠে। এ অবস্থাকেই আমরা ভরা কোটাল বলে থাকি। মোটকথা, যখন চাঁদ এবং সূর্য একই দিক থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, তখন জোয়ারের জল সর্বাধিক ফুলে ওঠে, আর এই ঘটনাকেই ভরা কোটাল বলে। এটি সাধারণত পূর্ণিমা এবং অমাবস্যায় ঘটে।

পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কোটাল সৃষ্টির কারণ

পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ এবং সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে। এই অবস্থানের ফলে পৃথিবীর একদিকে চাঁদের প্রবল আকর্ষণ এবং বিপরীত দিকে সূর্যের আকর্ষণ জোয়ারের উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। এই সর্বোচ্চ জোয়ারকেই পূর্ণিমার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলা হয়।

মূলত চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণের ফলেই ভরা কোটাল সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর একদিকে চাঁদ ও বিপরীত দিকে সূর্যের অবস্থানের কারণে জোয়ারের জল সবচেয়ে বেশি ফুলে ওঠে।

ভরা কোটাল প্রতিদিন ঘটে না। এটি কেবল পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় ঘটে থাকে। ভরা কোটালের সময় জোয়ারের জল সবচেয়ে বেশি উঁচু হয়। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে এ সময় বন্যা, ঝড়ের ঢেউ এবং জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

অমাবস্যা তিথিতে ভরা কোটাল সৃষ্টির কারণ –

অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ, পৃথিবী এবং সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে। একে “সহযোগ অবস্থান” বলা হয়। এই অবস্থানে পৃথিবীর একই দিকে চাঁদ ও সূর্য থাকায় উভয়ের মিলিত মহাকর্ষ শক্তি একই জায়গায় কাজ করে। ফলে জোয়ারের জল সবচেয়ে বেশি উঁচু হয়। এই জোয়ারকেই অমাবস্যার ভরা জোয়ার বা তেজ কোটাল বলে। আবার, একই কারণে অমাবস্যায় ভাটার জলতলও সবচেয়ে বেশি নেমে যায়। উল্লেখ্য্য যে, ভরা কোটালের মতো এটিও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বন্যা, জোয়ারের ঢেউ এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে।

মরা কোটাল – 

শুরু ও কৃয়পক্ষের সপ্তমী/অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পরস্পর সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে অর্থাৎ চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরের আকর্ষণের বিরোধিতা করে। তাই এই দু-দিন মহাসাগরের জলস্ফীতি কিছুটা কম হয়। এই দু-দিনের জোয়ারকে বলা হয় মরা কোটাল।

মরা কোটাল সৃষ্টি হওয়ার কারণ –

কৃষ্ণপক্ষ পূর্ণিমা তিথির পর থেকে আর শুক্লপক্ষ অমাবস্যা তিথির পর থেকে শুরু হয়। উভয় পক্ষেরই অষ্টমী তিথিতে চাঁদ এবং সূর্য পরস্পরের সমকোণ অবস্থানে থাকে, ফলে তারা পৃথিবীকে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করে। এই সমকোণ আকর্ষণের ফলে চাঁদের মুখ্য জোয়ার এবং পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের গৌণ জোয়ারের প্রাবল্য কমে যায়। ফলে জোয়ারের জল সবচেয়ে কম ফোলে এবং ভাটার প্রাবল্যও হ্রাস পায়। এই দুর্বল জোয়ারকেই মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলা হয়। সাধারণ জোয়ারের তুলনায় মরা কোটালের প্রাবল্য ২০% কম থাকে।

মূল কারণ হল চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণের দিক পরস্পরের সমকোণে অবস্থান। এ অবস্থায় তাদের আকর্ষণের প্রভাব একে অপরকে কাটিয়ে ওঠে, ফলে জোয়ারের জলতল স্বাভাবিকের চেয়ে কম উচ্চতায় পৌঁছায়। মরা কোটাল প্রতি মাসে দুবার, অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ঘটে। এ সময় জোয়ার ও ভাটা উভয়েরই প্রাবল্য কম থাকে।

ভরা কোটাল ও মরা কোটাল হল চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষীয় বলের ফলে সমুদ্রের জলের স্তরের নিয়মিত ওঠানামা। এই নিবন্ধটি আপনাকে জোয়ার-ভাটার বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে, যা বিশেষ করে দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য উপযোগী।

Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর