অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পরবাসী – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পরবাসী অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে পরবাসী অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় পরবাসী অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই পরবাসী অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

Table of Contents

এই কবিতায় কবি এক সুন্দর ও স্বাভাবিক দিনের বর্ণনা দিয়েছেন যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গাছপালা, বন, প্রাণী, নদী – সবকিছুই ধ্বংসের মুখে। মানুষ প্রকৃতির সাথে তার সুন্দর সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছে এবং আজ তারা পরবাসী।

কবি এই ধ্বংসলীলার জন্য মানুষকে দায়ী করেছেন। লোভ ও স্বার্থের জন্য তারা প্রকৃতিকে নির্যাতন করেছে এবং এখন তারা এর পরিণতি ভোগ করছে।

কবিতার শেষে কবি একটি হতাশাজনক প্রশ্ন তুলেছেন – পরবাসী কবে তার স্বভূমি গড়ে তুলতে পারবে? এই প্রশ্নটি আমাদের সকলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের কি আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা উচিত? নাকি আমরা কি এই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবো?

এই কবিতা আমাদের প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আমাদের সকলেরই প্রকৃতির যত্ন নেওয়া উচিত এবং এটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা উচিত।

পরবাসী – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

বিরামচিহ্ন ব্যবহারের দিক থেকে ‘পরবাসী’ কবিতাটির শেষ স্তবকের বিশিষ্টতা কোথায়? এর থেকে কবিমানসিকতার কী পরিচয় পাওয়া যায়?

বিরামচিহ্ন ব্যবহারের দিক থেকে কবিতাটির শেষ স্তবকে এসে দেখতে পাই প্রথম চারটি স্তবক যেখানে মূলত কমা (,) এবং দাঁড়ি (।)-র মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে পঞ্চম স্তবকটা একেবারেই অন্যরকম। অর্থাৎ পঞ্চম স্তবকের চারটি চরণই কিন্তু জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) দিয়ে শেষ করেছেন কবি। প্রথম চরণে তিনি বলেছেন – কেন এই দেশে মানুষ মৌন আর অসহায়? দ্বিতীয় চরণে দেখি – আমাদের দেশের নদী, গাছ, পাহাড় অর্থাৎ পুরো প্রকৃতি জগৎকে এত গৌণ (ছোটো) করে দেখা হচ্ছে কেন? তৃতীয় চরণে প্রকাশ পেয়েছে কবির সারাদেশে তাঁবু বয়ে বয়ে কেবল ঘোরার ক্লান্তির কথা। আর চতুর্থ এবং সর্বশেষ চরণে কবি নিজেকেই পরবাসীরূপে চিহ্নিত করে বলেছেন – তিনি কবে নিজের বাসযোগ্য একটা ভূমি পাবেন?

শেষ স্তবকে কবি একটি সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছোলেন এবং সেই সিদ্ধান্তকে সর্বজনীন করার জন্য এবং কিছুটা সমভাবাপন্নদের কাছ থেকে সমমর্মিতা আকর্ষণের জন্যও কবি এই প্রশ্নগুলো হাজির করেছেন। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কবি জানেন এবং এর মধ্য দিয়ে কবির একটি প্রতিবাদী মনের প্রকাশ ঘটেছে।

কবি নিজেকে পরবাসী বলেছেন কেন?

পরবাসী কবিতাটির প্রথমেই কবি বিষ্ণু দে প্রকৃতির বৈচিত্র্যের কথা বলেছেন। সেখানে প্রকৃতির খেয়ালে চলা আঁকাবাঁকা পথ, পলাশের ঝোপ, তাঁবুর ছায়া, ময়ূরের নৃত্য হরিণের সাবধানে জল খাওয়া, কিংবা চিতার হিংস্র ছন্দ-সমস্ত ছবিই নিপুণ হাতে কবি এঁকেছেন। কিন্তু চতুর্থ স্তবক থেকে কবি আশাহীন। তিনি সেখানে দেখিয়েছেন বসতিহীন খাঁ খাঁ প্রান্তর শুকনো হাওয়ার হাহাকার, গ্রামের অপমৃত্যু, ময়ূরের পণ্যে পরিণত হওয়ার কথা।

যেন এক নিরাশার অতলে ডুব দিয়েছেন কবি এবং সেখানে মানুষ ও প্রকৃতি সব গৌণ-সব উদবাস্তু। প্রকৃতি এবং প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ভিটেছাড়া হয়ে আজীবন যাযাবর বৃত্তির ভয়ংকর জীবনের কথাই কবি বলেছেন। সেখানে তিনি নিজেকেই সর্বশেষে তুলে ধরেছেন পরবাসী হিসেবে।

আসলে সব কবিরাই পরবাসী। কেন-না কবিরা বোধ, আবেগ এবং ভালোবাসা নিয়ে বাঁচে। এ সমস্ত কিছুই কিন্তু পণ্যবাদী দুনিয়ার কাছে ছিন্নমূল হয়ে যাচ্ছে। তাই কবি এবং সমস্ত মানবতাবাদী মানুষই পরবাসী।

জঙ্গল সাফ, গ্রাম মরে গেছে, শহরের/পত্তন নেই – প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এই পঙ্ক্তির প্রাসঙ্গিকতা বিচার করো।

প্রকৃতি এবং মানুষের সম্পর্ক এক এবং অবিচ্ছেদ্য। প্রকৃতি ছাড়া মানুষ অসহায়। মানুষ ছাড়া প্রকৃতি প্রাণহীন। উভয়ে উভয়ের পরিপূরক। প্রকৃতি মানুষকে লালন করে। সেই প্রকৃতিকে শহর বানানোর অর্থই হল গ্রামের মৃত্যু। আবার শহরও কিন্তু জঙ্গলের আবহাওয়াকেই বয়ে বেড়ায়। জঙ্গলের একটা নিয়মকানুন আছে, কিন্তু শহরে সেই নিয়ম সম্ভব নয়। তাই প্রতিনিয়ত প্রকৃতিকে পীড়ন করে, গ্রাম-সভ্যতাকে বিনষ্ট করে শহর গড়ে উঠছে-যে শহরের সঠিক পত্তন হচ্ছে না। প্রকৃতি ছাড়া শহরের অস্তিত্ব বিপন্ন।

সুতরাং মানুষ ও প্রকৃতির এক সুগভীর সম্পর্কের নিরিখে উপরোক্ত চরণটি আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। আজও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ-প্রকৃতি নষ্ট করে উন্নয়ন হচ্ছে। ফলত পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের টানাপোড়েনে গ্রাম এবং শহর দুই-ই বিনষ্ট হচ্ছে। মানুষ হচ্ছে যাযাবর। তাই এই পিছিয়ে যাওয়া বৃহৎ প্রকৃতি কোনোদিনই আর নিজ জমিতে পা রাখতে পারবে না।

পরবাসী কবিতার প্রথম তিনটি স্তবক ও শেষ দুটি স্তবকের মধ্যে বক্তব্য বিষয়ের কোনো পার্থক্য থাকলে তা নিজের ভাষায় লেখো।

কবি বিষ্ণু দে-র ‘পরবাসী’ কবিতার প্রথম তিনটি স্তবক এবং শেষ দুটি স্তবকের মধ্যে একটা অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক তো রয়েছেই; কিন্তু প্রথমে কবি যা বলেছেন, অর্থাৎ প্রথম তিনটিতে যা ছিল, তা পরের স্তবক দুটিতে আর নেই। যেমন কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন ‘দুই দিকে বন’। তার মানে তখন বনের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু তৃতীয় স্তবকের শুরুতেই তিনি বলেছেন – ‘কোথায় সে বন’ অর্থাৎ যে বন একদিন ছিল তা আজ হারিয়ে গেছে।

দ্বিতীয় স্তবকে দেখি নিটোল টিলার অপরূপ পলাশ ফুলের আধিক্য দেখে হঠাৎই পুলকে আপ্লুত বনময়ূর। তাই সে যেন কথক নাচের মতোই পা তুলে এবং পেখম বিস্তার করে নাচতে থাকে। কিন্তু এই কবিই আবার তৃতীয় স্তবকের শেষে এসে বললেন – ‘ময়ূর মরেছে পণ্যে’ – অর্থাৎ স্বার্থপর, আগ্রাসী ও ভোগবাদী দুনিয়ার কাছে নান্দনিকতার সেরা ময়ূরও আজ পণ্যে পরিণত। শুধু ময়ূর নয়, বনবনানী, জঙ্গল ও গ্রাম সবই পণ্যসামগ্রী।

দ্বিতীয় স্তবকে আরও দেখি, সেখানে নদীর সুমধুর শব্দতরঙ্গের সঙ্গে কবি সোনালি সেতারের সুষমাকে মিলিয়েছেন। সেখানে আবার শেষ স্তবকে এসে দেখি এর ঠিক উলটো। অর্থাৎ সেখানে কবি বলেন – ‘কেন নদী গাছ পাহাড় এমন গৌণ?’

অতএব দেখা যাচ্ছে গ্রাম গ্রাম্যতা, সাধারণ সুন্দর জীবনযাত্রার উচ্ছেদ; পরিবর্তে বনানী কাঠে, বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল শুকনো প্রান্তরে, বণ্যপ্রাণী তথা খরগোশ ময়ূর সবই ভোজ্য কিংবা পণ্যে রূপায়িত। সুতরাং উদবাস্তু প্রকৃতি মানুষ আজ এখানে, কাল ওখানে-যেন তাঁবুর বাসিন্দা।

পরবাসী কবিতাতে কবির ভাবনা কেমন করে এগিয়েছে তা কবিতার গঠন আলোচনা করে বোঝাও।

পরবাসী কবিতাটিতে অন্ত্যমিল নেই, অথচ একটা অসাধারণ ছন্দের মিল লক্ষ করা যায়। মোট পাঁচটি স্তবকে কবিতাটি লিপিবদ্ধ। প্রথম তিনটি স্তবকে কবিতার যে সুর ছিল, তৃতীয় স্তবকে এসেই তা যেন হোঁচট খেয়ে যায়।

কবিতাটিতে বিশেষ্য-বিশেষণের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কবির ভাবনা প্রকাশের পথ পেয়েছে। যেমন – ‘ঝিকিমিকি পথ’, ‘নিটোল টিলা’, ‘বন্যপ্রাণ’ কিংবা ‘কথাকলি বেগ’ ইত্যাদি। কবিতাটিতে দ্বৈত শব্দ প্রয়োগে একটা তৃতীয় অর্থ তৈরি হয়েছে, যা’ কবিতাটিকে একটি বিশেষ মাত্রা দিয়ে কবিতার গঠনশৈলী নির্মাণে সহায়তা করেছে। যেমন – ‘কচি কচি’ বহুবচন বোঝাতে ‘থেকে থেকে’ মানে মাঝে মাঝেই, ‘তালে তালে’ প্রকৃতির খেয়ালে ইত্যাদি। কানে আরাম লাগে এমন অনুপ্রাস অলংকারের মাধ্যমে কবি শব্দচয়ন করেছেন। যেমন – ‘নিটোল টিলা’ ‘সোনালি সেতার’ প্রভৃতি।

তৃতীয় স্তবকের পর কবির ভাবনা মোড় নিয়েছে। চলতে চলতে হঠাৎ এই বাঁক নেওয়া কবিতার গঠনের দিক থেকে সুস্থতা এনেছে এবং কবিতাটিকে এক ধ্রুপদি আঙ্গিকে ভূষিত করে বিশেষ মাত্রা জুগিয়েছে।

কবিতাটির নাম ‘পরবাসী’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কবির কী কী চিন্তা কাজ করেছে বলে তোমার মনে হয়? তুমি কবিতাটির বিকল্প নাম দাও এবং সে নামকরণের ক্ষেত্রে তোমার যুক্তি সাজাও।

পরবাসী শব্দটি তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ প্রবাসী নয়, এর প্রকৃত অর্থ নিজের বাস থেকে বাসহীন হওয়া। এবং সেই অর্থে সব কবিরাই পরবাসী। কেন-না কবিরা বোধ, আবেগ, ভালোবাসা নিয়ে বাঁচে; আর এ সমস্ত কিছুই পণ্যবাদী দুনিয়ার কাছে ছিন্নমূল হয়ে যাচ্ছে। তাই কবি এবং সমস্ত মানবতাবাদী মানুষ মাত্রই পরবাসী।

কবিতাতে কবি প্রথম ছত্র থেকে শেষ ছত্র পর্যন্ত প্রকৃতি ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ভিটেছাড়া হওয়ার উদবাস্তু জীবনে আজীবন যাযাবর বৃত্তির ভয়ংকর পাঁকের কথা বলেছেন। এই কারণেই ‘পরবাসী’ এই নামের বেদনাময় সৌন্দর্যের অবতারণা করেছেন কবি। লোভের কাছে ও পণ্যের কাছে পরাহত মানবতা-নিজভূমে পরবাসী। সুতরাং কবির চিন্তাভাবনা রূপ পেয়েছে ‘পরবাসী’ কবিতায়।

কবিতাটির বিকল্প নাম হতেই পারে। যেমন – ‘ছিন্নমূল’, ‘প্রশ্ন’, কিংবা ‘প্রকৃতি বনাম’। প্রকৃতি, মানুষ, গ্রাম সবই বর্তমানে ছিন্নমূল উদবাস্তু। এ কারণেই ‘ছিন্নমূল’ নামটির প্রাসঙ্গিকতা। কবিতার শেষ স্তবকে কবি সমভাবাপন্নদের কাছ থেকে সহমর্মিতা আকর্ষণের জন্য কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত করেছেন। এ কারণে ‘প্রশ্ন’ নামটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। একদিকে প্রকৃতির শ্যামলিমা এবং অপরদিকে ভোগবাদী দুনিয়ার তীব্র লোভের আকর্ষণ-তাই ‘প্রকৃতি বনাম’ নামটিও সুপ্রযুক্ত হতে পারে।

পরবাসী’ কবিতায় ‘সিন্ধুমুনির হরিণ’ আহ্বানের মধ্যে একটি পৌরাণিক গল্প নিহিত রয়েছে – গল্পটি বিবৃত করো।

হরিণ যে একটা প্রচ্ছন্ন আমন্ত্রণ তথা উসকানি দেয় শিকারিকে তার জল খাওয়ার মধ্যে, তারই রূপক এই ‘হরিণ আহ্বান’।

পৌরাণিক কাহিনিটি হল, রাজা দশরথ মৃগয়া করতে বেরিয়েছেন। ওদিকে অন্ধমুনির পুত্র সিন্ধুমুনি অন্ধ মা-বাবার জন্য কলশি করে জল আনতে গেছে নদীতে, যেটি ওই জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। হরিণের জলপানের শব্দ এবং কলশিতে জল ভরার শব্দ সমান। সিন্ধুমুনির সেই জল ভরার শব্দ শুনে শিকার খুঁজে বেড়ানো দশরথ দূর থেকে ভাবলেন, হরিণই জল খাচ্ছে। দূর থেকে তিনি তৎক্ষণাৎ এক শব্দভেদী বাণ ছুঁড়লেন হরিণটির উদ্দেশে-যা না দেখে কেবল শব্দ শুনেই ছোঁড়া যায়। ফলে অব্যর্থ লক্ষ হয়ে সেই বাণ সিন্ধুমুনির বুকে বেঁধে। আর্তকণ্ঠ শুনে দশরথ দৌড়ে এসে দেখেন এক কিশোর তারই বাণে মৃত্যুশয্যায়। সিন্ধুমুনি কোনোরকমে তার বাবা-মায়ের কাছে দশরথকে নিয়ে যেতে বলে। দশরথ সেই কথামতো কাজ করলেন। সিন্ধুমুনি মারা যায়।

একমাত্র পুত্রের শোকে অধীর অন্ধমুনি দশরথকে এই বলে অভিশাপ দেন যে, তিনিও পুত্রশোকে মারা যাবেন। অপুত্রক দশরথ দুঃখ পেলেও খুশি হন পুত্রসন্তান সম্ভাবনায়।

টীকা লেখো – কথক, সেতার, কথাকলি, সিন্ধুমুনি, পণ্য।

কথক – ভারতীয় ধ্রুপদি নৃত্য আট ধরনের। তার মধ্যে অন্যতম একটি হল কথক। প্রাচীনকালে যাযাবর জাতিকে বলা হত কথাকার। তারা মুখে মুখে গল্প বলে বেড়াত। এই ‘কথাকার’ থেকেই কথকের উৎপত্তি। আর এই কথক নাচের মধ্য দিয়েও একটা ঘটনা বা কোনো গল্প বলা হয়। নৃত্যের আরম্ভে ঈশ্বরকে বন্দনা করে ধীরে ধীরে নাচ শুরু হয়। এর পর উঠতে উঠতে ক্রমশ নাটকীয় চরম মুহূর্তে চলে যায়। ছোটো নাচকে বলে ‘টুকরা’, বড়ো নাচকে বলে ‘টোডা’। এর মধ্যে বোল থাকে যা তবলা থেকে আসে, যাকে বলে তবলার বোল।

কখক ভারতীয় উচ্চাঙ্গ নৃত্যপদ্ধতি; বিশেষত জয়পুর, লখনউ এবং বেনারস ঘরানার নৃত্যশৈলী।

সেতার – ‘সে’ কথাটির অর্থ ‘তিন’ অর্থাৎ তিনটি তারের সাহায্যে যে যন্ত্র বাজানো হয়, তাকে বলে সেতার। এটি একটি পারস্যদেশীয় বাদ্যযন্ত্র। ডানহাতের তর্জনীর দ্বারা সেতার বাজানো হয়। প্রায় আড়াইশো বছর আগে সেতারে চতুর্থ তার যোগ করা হয়েছিল। বিখ্যাত দু-একজন সেতারবাদক হলেন – মীর্জা আবদুল্লা (Mirza Abdollah), হামিদ মোতেবাসেম (Ha-mid Motebassem), রবিশঙ্কর প্রমুখ।

কথাকলি – ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য হল কথাকলি। আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীতে কথাকলি নৃত্যের উদ্ভব হয়। কেরালার যুদ্ধবিদ্যার অনুসরণেই এই ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ‘কথা’ শব্দের মানে ‘কাহিনি’ এবং কলি শব্দের অর্থ ‘যুদ্ধ’।

মহাভারতের নল চরিত্রের চিত্রায়ণ দুর্যোধন বধের কাহিনি। অর্জুন এবং ভগবান শিবের যুদ্ধের কাহিনি মঞ্চস্থ করা হয়। আগে সারারাতব্যাপী হত। এখন সংক্ষিপ্তরূপ দেওয়া হয়েছে।

এই নৃত্যে ৮ থেকে ১০ বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২৪টি মুদ্রায় ন-রকম অভিব্যক্তি উপস্থাপিত করা হয়। তবে কথাকলি নৃত্যে সাজসজ্জার প্রাধান্য মুখ্য। মুখের মেকআপে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার করা হয়।

সিন্ধুমুনি – অন্ধমুনির পুত্র সিন্ধুমুনি রাজা দশরথের শব্দভেদী বাণে অকালে প্রাণ হারায়। হরিণের জলপানের শব্দ আর কলশি করে বাবা-মায়ের জন্য নদী থেকে সিন্ধুমুনির জল ভরার শব্দ এক হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি ঘটে। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ‘কালমৃগয়া’-তে সিন্ধুমুনির কথা রয়েছে।

পণ্য – যা বিক্রয় হওয়ার যোগ্য। মানুষ আজ মানবিকতার জায়গায় নেই। পণ্যের মতো হয়ে গেছে। মানুষের সব বিক্রি হয়-মর্যাদা বিক্রি হয়, শ্রম বিক্রি হয়, মন বিক্রি হয়। সর্বোপরি মানুষ তার মনুষ্যত্ব বিক্রি করে পশু হয়ে যায়। শুধু ময়ূরকেই পণ্যে পরিণত করে না, নিজেও পণ্যে পরিণত হয়।

নিম্নরেখ শব্দগুলির বদলে অন্য শব্দ বসিয়ে অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরি করো।

দুই দিকে বন, মাঝে ঝিকিমিকি পথ।

দুই দিকে বন, মাঝে আলোছায়া পথ।

এঁকে বেঁকে চলে প্রকৃতির তালে তালে

এঁকে বেঁকে চলে প্রকৃতির সুরে-লয়ে

তাঁবুর ছায়ায় নদীর সোনালি সেতারে

তাঁবুর ছায়ায় নদীর রঙিন বীণায়

হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের কথক

হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের কথাকলি

বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জাগিয়ে।

বন্য প্রাণের চিরসুখী বেগ জাগিয়ে।

নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো –

জ্বলে, পরবাসী, চলে, তাঁবু।

জ্বলেজ্বলিয়া > জইল্যা > জ্বলেঅভিশ্রুতি
পরবাসীপ্রবাসী > পরবাসীস্বরভক্তি
চলেচলিয়া > চইল্যা > চলেঅভিশ্রুতি
তাঁবুতাম্বু > তাঁবুনাসিক্যীভবন

ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় করো –

নিটোল, বনময়ূর, সিন্ধুমুনি, নিজবাসভূমি, সেতার।

সমাসব্যাসবাক্যসমাসের শ্রেণি
নিটোলনেই টোল যারনঞবহুব্রীহি
বনময়ুরবনে বসবাসকারী ময়ূরমধ্যপদলোপী কর্মধারয়
সিন্ধুমুনিসিন্ধু নামক মুনিমধ্যপদলোপী কর্মধারয়
নিজবাসভূমিনিজের বাসভূমিসম্বন্ধ তৎপুরুষ
সেতারসে (তিন) তারের সমাহারদ্বিগু

নীচের শব্দগুলি কীভাবে গঠিত হয়েছে দেখাও –

সোনালি, আহ্বান, বন্য, বসতি, পরবাসী।

সোনালিসোনা + আলি
আহ্বানআহ্বে + অন্
বন্যবন্ + য
বসতিবস্ + তি
পরবাসীপরবাস + ঈ

নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো –

চুপি চুপি আসে নদীর কিনারে, জল খায়। (সরল বাক্যে)

চুপি চুপি নদীর কিনারে এসে জল খায়।

নিটোল টিলার পলাশের ঝোপে দেখেছি। (জটিল বাক্যে)

নিটোল টিলার পাশে পলাশের যে ঝোপ সেখানে দেখেছি।

চিতা চলে গেল লুব্ধ হিংস্র ছন্দে বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জাগিয়ে। (যৌগিক বাক্যে)

লুব্ধ হিংস্র ছন্দে চিতা চলে গেল এবং বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জেগে উঠল সেই ছন্দে।

কেন এই দেশে মানুষ মৌন অসহায়? (না-সূচক বাক্যে)

কেন এই দেশে মানুষ সহায়-সরব নয়?

যে-কোনো দুটি স্তবকের মধ্যে বিশেষ্য ও বিশেষণের ব্যবহার কবি কীভাবে করেছেন, দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।

ঝিকিমিকি পথ, কচি কচি খরগোশ, নিটোল টিলা, সোনালি সেতার।

ঝিকিমিকি পথএখানে পথ বিশেষ্য, ঝিকিমিকি বিশেষণ। পথ আসলে ঝিকিমিকি হয় না। দু-দিকে বনের মাঝে যে আঁকাবাঁকা পথ, তা সারি সারি গাছের ফাঁকফোকর থেকে আসা সূর্যের আলোয় ঝকমক করছে। তাই সে ঝিকিমিকি।
কচিকচি খরগোশএখানে খরগোশবিশেষ্য এবং কচিকচি বিশেষণ। ‘কচিকচি’ এই দ্বৈত শব্দ দিয়ে এখানে একাধিক খরগোশের কথা বলা হয়েছে।
নিটোল টিলাটিলা বিশেষ্য, নিটোল বিশেষণ। টিলা কাঁকুড়ে মাটির হওয়া সত্ত্বেও তা একেবারে নিটোল অর্থাৎ সুডৌল বা যাতে একটুও টোল পড়েনি।
সোনালি সেতারেসেতার বিশেষ্য, সোনালি বিশেষণ। এখানে সোনালি সেতারের অনুপ্রাসে ধ্বনিত হয়েছে নদীর শব্দতরঙ্গের সুরমূর্ছনা।

কবি প্রশ্নের মাধ্যমে চেতনাসম্পন্ন মানুষের কাছে আক্ষেপ জানান। তিনি চান মানুষ প্রকৃতির ধ্বংসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক। গাছপালা, নদী, পাহাড় তাদের হারানো মর্যাদা ফিরে পাক। প্রকৃতি হীন ধূসর পৃথিবী আবার মানুষের বাসের উপযোগী হোক। কবির এই আকুতি আসলে আমাদের সকলের জন্য একটি জরুরি বার্তা। প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক অটুট, এবং এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে।

এই কবিতায় কবি এক সুন্দর ও স্বাভাবিক দিনের বর্ণনা দিয়েছেন যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গাছপালা, বন, প্রাণী, নদী – সবকিছুই ধ্বংসের মুখে। মানুষ প্রকৃতির সাথে তার সুন্দর সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছে এবং আজ তারা পরবাসী।

কবি এই ধ্বংসলীলার জন্য মানুষকে দায়ী করেছেন। লোভ ও স্বার্থের জন্য তারা প্রকৃতিকে নির্যাতন করেছে এবং এখন তারা এর পরিণতি ভোগ করছে।

কবিতার শেষে কবি একটি হতাশাজনক প্রশ্ন তুলেছেন – পরবাসী কবে তার স্বভূমি গড়ে তুলতে পারবে? এই প্রশ্নটি আমাদের সকলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের কি আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা উচিত? নাকি আমরা কি এই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবো?

এই কবিতা আমাদের প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আমাদের সকলেরই প্রকৃতির যত্ন নেওয়া উচিত এবং এটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা উচিত।

Share via:

মন্তব্য করুন