অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – চিঠি – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের চিঠি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে চিঠি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় চিঠি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই চিঠি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

Table of Contents

১৮৬৪ সালের ৩ নভেম্বর, ফ্রান্সের ভার্সাই থেকে লেখা মাইকেল মধুসূদন দত্তের চিঠিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার এক অমূল্য নিদর্শন। প্রবাসে থাকাকালীন মধুসূদন যে বিপদ ও দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই সময় বিদ্যাসাগর যেভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তা এই চিঠিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

মধুসূদন চিঠিতে লিখেছেন যে, তাঁর অনুপস্থিতিতে সমস্ত বিষয়-আশয় বিদ্যাসাগর যত্ন সহকারে দেখাশোনা করবেন, এই বিশ্বাস তাঁর মনে ছিল। তিনি স্মরণ করেছেন, পূর্বেও বিদ্যাসাগর তাঁকে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলেন।

মধুসূদন জানতেন, বিদ্যাসাগর শুধুমাত্র একজন বন্ধুই নন, তিনি একজন নিঃস্বার্থ মানুষ ও পথপ্রদর্শক। তাই তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সাথে বিদ্যাসাগরকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। ফ্রান্সের ঠান্ডার কথা বর্ণনা করে তিনি বিদ্যাসাগরের কাছে সান্ত্বনা খুঁজেছিলেন। এটি ছিল তাদের নিবিড় বন্ধুত্বেরই প্রমাণ।

এই চিঠিতে মধুসূদন আরও উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ফরাসি ও ইতালীয় ভাষা রপ্ত করেছেন এবং জার্মান ভাষা শিখছেন। একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ হিসেবে বিদ্যাসাগরকে এই খবরটি অবশ্যই আনন্দিত করেছিল।

পরিশেষে বলা যায়, ১৮৬৪ সালের এই চিঠি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মধ্যেকার অসাধারণ বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধের এক সুন্দর নিদর্শন।

চিঠি – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু’ গৌরদাস বসাককে কোথা থেকে পাঠ্য চিঠিটি লিখেছিলেন? তাঁর যাত্রাপথের বিবরণ পত্রটিতে কীভাবে ধরা পড়েছে আলোচনা করো।

লন্ডন যাত্রাকালে সাগরপথে ‘সীলোন’ নামক জাহাজ থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু’ গৌরদাস বসাককে এই পাঠ্য চিঠিটি লিখেছিলেন।

এই চিঠিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন যে তিনি ‘সীলোন’ নামক একটি রাজকীয় জাঁকজমকপূর্ণ জাহাজে চড়ে সেই সময় ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে ভেসে চলেছেন লন্ডন অভিমুখে। জাহাজ থেকে তিনি উত্তর আফ্রিকার পর্বতাকীর্ণ উপকূল দেখতে পাচ্ছেন। আগের দিন তাঁদের জাহাজ ছিল মলটায় এবং আগের রবিবারে ছিল আলেকজান্দ্রিয়ায়।

এই চিঠির পরবর্তী অংশটি দুই দিন পরে রবিবারে লেখা হয়েছে এবং তখন কবি স্পেনের উপকূল পার হয়ে গেছেন। কবি আশা করছেন পরদিন তিনি জিব্রলটারে পৌঁছোবেন এবং তখনই চিঠিটা তাকে দিতে পারবেন। ওই অঞ্চলের আবহাওয়া ‘নাতিশীতোষ্ণ’ বলে কবি উল্লেখ করেছেন।

মধুসূদনের জীবনের উচ্চাশার স্বপ্ন কীভাবে পত্রটিতে প্রতিভাসিত হয়ে উঠেছে?

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বন্ধু গৌরদাস বসাককে লেখা পাঠ্য চিঠিতে নিজমনের উচ্চাশা এবং উন্নত প্রতিষ্ঠালাভের স্বপ্নকে জোরালোভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁর এই ভ্রমণবৃত্তান্ত তিনি সুদীর্ঘ ও বিস্তারিতভাবে ‘ইন্ডিয়ান ফিল্ড’ পত্রিকায় প্রকাশ করতে ইচ্ছুক এবং পত্রিকার সম্পাদককে বলে তিনি একটি কপি গৌরদাস বসাককে পাঠাতে চান।

লেখক আরও বলেছেন যে, ইংল্যান্ডে পৌঁছে হয়তো তিনি বন্ধুদের জন্য চিঠিপত্র লেখার ব্যাপারে বেশি সময় দিতে পারবেন না। কেন-না জীবিকানির্বাহের জন্য যে পেশা তিনি বিদেশে শিখতে চলেছেন, সেই বিষয়েই মনোনিবেশ করে সসম্মানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি দৃঢ়সংকল্প। মাইকেলের এই আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব থেকেই বোঝা যায় তিনি উচ্চাশার স্বপ্নকে কেবল মনের মধ্যেই লালন করতে চান না, তাকে প্রমাণ করতেও তিনি বদ্ধপরিকর।

বিদেশে পাড়ি জমানোর সময়েও তাঁর নিজের দেশের কথা কীভাবে পত্রলেখকের মনে এসেছে?

ইংল্যান্ড যাওয়ার পথে ‘সীলোন’ নামক জাহাজ থেকে বন্ধু গৌরদাস বসাককে মাইকেল মধুসূদন দত্ত যে চিঠিটি লিখেছেন, তাতে দেখা যায় তিনি তাঁর জন্মভূমি অর্থাৎ ভারতবর্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। পত্রের প্রথম অংশে তিনি স্মরণ করেছেন যে, ঠিক বাইশ দিন পূর্বে তিনি কলকাতায় ছিলেন। আবার দ্বিতীয় অংশে কবি যাত্রাপথে ভূমধ্যসাগরের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন এই সমুদ্র ভীষণ শান্ত এবং সেই শান্ত ভাবটি লেখক ভারতবর্ষের, বিশেষত বাংলার হুগলি নদীর শান্ত ভাবের সঙ্গেই তুলনীয় বলে মন্তব্য করেছেন। ওই অঞ্চলের আবহাওয়াকেও লেখক বাংলার না গরম না ঠান্ডা এইরকম আবহাওয়ার মতো বলেই বর্ণনা করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, লেখক তাঁর নিজের দেশ সম্পর্কে যথেষ্ট স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন।

একথা যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। – কোন্ কথা? সে-কথাকে বক্তার অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে কেন?

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় ‘সীলোন’ জাহাজ থেকে বন্ধু গৌরদাস বসাককে লেখা চিঠিতে ইংল্যান্ড সম্পর্কে শৈশব থেকেই তাঁর মনে যে গভীর আবেগ ও দুর্বলতা ছিল সেই কথাই উল্লেখ করেছেন। যে ইংল্যান্ড সম্পর্কে তিনি শিশুকাল থেকেই এত বেশি আকৃষ্ট ছিলেন, প্রতি মিনিটে তিনি জাহাজে চড়ে ক্রমশ সেই দেশের নিকটবর্তী হচ্ছেন। এ কথা ভেবে তিনি যেন ধারণাতীত বলে মনে করছিলেন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন শৈশব থেকেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ইংরেজি ভাষায় কাব্য লিখে তিনি খ্যাতিমান হবেন এবং ইউরোপে অন্যান্য বিদেশি কবিদের মতো সমাদৃত হবেন, এটাই ছিল তাঁর আকাঙ্ক্ষা। এই কারণে তিনি হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন ও স্বদেশ ত্যাগ করে, এমনকি পিতা-মাতার সঙ্গে বিচ্ছেদকেও স্বীকার করে তিনি ইংল্যান্ডযাত্রা করেন। যে দেশের পরিবেশ, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর টান তিনি শৈশব থেকেই অনুভব করছেন, আজ সেই ইংল্যান্ড ক্রমশ তাঁর নিকটবর্তী হচ্ছে, তিনি তাঁর স্বপ্নকে ছুঁতে চলেছেন, এই কথাটি কবির মনে যেন ‘অবিশ্বাস্য’ বলে মনে হচ্ছিল অর্থাৎ তিনি গভীর আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন।

প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে হৃদ্যতার ছবি পত্রটিতে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতিসহ আলোচনা করো।

সীলোন জাহাজে চেপে সাগরপথে ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর হিন্দু কলেজের সহপাঠী এবং অভিন্নহৃদয় বন্ধু গৌরদাস বসাককে পাঠ্য চিঠিটি লিখেছিলেন। চিঠিটি পড়লেই তাঁদের বন্ধুত্বের গভীরতা ও হৃদ্যতার আঁচটি স্পষ্টই অনুভব করা যায়।

চিঠির প্রথমেই তিনি গৌরদাস বসাককে ‘প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁকে লেখার জন্যই তিনি কলম ধরেছেন তাও জানিয়েছেন। পত্রে তিনি যতখানি পেরেছেন যাত্রাপথের বিবরণ দিয়েছেন এবং ইংল্যান্ড সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতার কথাও অকপটে ব্যক্ত করেছেন। ইংল্যান্ডে পৌঁছে তিনি গৌরদাস বসাককে আবার চিঠি দেবেন জানিয়ে গৌরদাসকেও বলেছেন, ‘তখন তুমি তোমার প্রাণ উজাড় করে আমাকে অনবরত পত্রাঘাত করতে পারবে’-এ থেকে বোঝা যায় এই বন্ধুটির সঙ্গে কবির হৃদ্যতা কত গভীর ছিল। চিঠিটি কবি শেষ করেছেন নিজেকে গৌরদাস বসাকের ‘অকৃত্রিম ও আন্তরিক ও চির স্নেহমুগ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করে, যা থেকে তাঁদের মধ্যেকার নিবিড় বন্ধুত্বের পরিচয়টি গভীরভাবে ধরা পড়ে।

রাজনারায়ণ বসুকে লেখা পত্রে লেখক তাঁর এই প্রিয় বন্ধুটির কাছে কোন্ আবেদন জানিয়েছেন?

রাজনারায়ণ বসু ছিলেন হিন্দু কলেজে মাইকেল মধুসূদনের সহপাঠী এবং আন্তরিক বন্ধু। কবি মাইকেল তাঁকে লেখা চিঠিতে এই অনুরোধ করেছেন যে রাজনারায়ণ যেন ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ পাঠ করে তাঁর এ বিষয়ে খোলামেলা অভিমত লেখককে জানান। কেন-না, লেখক তাঁর এই বন্ধুটির মতামত শোনার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন। মধুকবির বিশ্বাস যে তাঁর রচিত ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ সম্পর্কে হাজার হাজার মানুষের প্রশংসাবাক্যের চেয়েও রাজনারায়ণের সুচিন্তিত অভিমত অনেক বেশি মূল্যবান। কেবল তাই নয়, কবি শুনেছেন অনেক হিন্দু মহিলা এই কাব্যটি পড়ে অশ্রুপাত করছেন, অতএব রাজনারায়ণের স্ত্রীও যাতে কাব্যটি পড়ে, এই অনুরোধও তিনি করেছেন।

রাজনারায়ণের উদ্দেশে লেখা এই চিঠিতে বোঝা যায় মাইকেল ও তাঁর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কত প্রগাঢ় ছিল এবং লেখক তাঁর বন্ধুর চিন্তাভাবনা ও মতামতকে কতখানি গুরুত্ব দিতেন।

এই কাব্য অদ্ভুতরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। – কোন্ কাব্যের কথা বলা হয়েছে? সে কাব্যের জনপ্রিয়তার কথা বলতে গিয়ে লেখক কোন্ কোন্ প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন?

প্রিয় বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে লেখা পাঠ্য পত্রটিতে মাইকেল মধুসুদন দত্ত তাঁর সৃষ্ট অন্যতম বিখ্যাত কাব্য ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ (১৮৬১)-র কথা বলেছেন।

মেঘনাদবধ কাব্য-এর জনপ্রিয়তার কথা বলতে গিয়ে কবি বলেছেন যে, এই কাব্যের প্রধান চরিত্র মেঘনাদকে তিনি মৃত্যুর পরিণতিতে নিয়ে যাবেন না কি মেঘনাদই তাঁকে মেরে ফেলবে এরকম একটা কঠিন সংকটে তিনি পড়েছিলেন এবং শেষপর্যন্ত ৭৫০ চরণে ষষ্ঠ সর্গ শেষ করে মেঘনাদকেই তিনি মৃত্যুর পরিণতিতে পৌঁছে দিয়েছেন।

মাইকেল বলেছেন যে, এই কাব্য প্রভৃত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং কেউ কেউ এ কাব্যকে মহাকবি মিলটনের চেয়েও উত্তম রচনাপ্রতিভার নিদর্শন বললেও লেখক মনে করেন মিলটন ‘স্বর্গীয়’। তাই কেউ যদি এ কাব্যকে মহাকবি কালিদাসের কাছাকাছি বা ভার্জিল কিংবা তাসোর সমগোত্রীয় বলেন লেখক তা মেনে নিলেও মিলটনকে স্পর্শ করা বা অতিক্রম করার কথা মানতে পারেন না। মাইকেল এ কথাও শুনেছেন যে বহু হিন্দু মহিলা ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ পাঠ করে কান্নাকাটি করছেন-অতএব কাব্যটি যে কতখানি জনপ্রিয় হয়েছে, লেখক তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রিয় বন্ধুর প্রতি, সর্বোপরি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগের যে পরিচয় রাজনারায়ণ বসুকে লেখা পত্রটিতে পাওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করো।

প্রিয় বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে লেখা মাইকেল মধুসূদন দত্তের পাঠ্য পত্রটিতে পত্রলেখকের সুগভীর সাহিত্যানুরাগের স্পষ্ট পরিচয় ফুটে উঠেছে। কাব্যরচনাকালে কাব্যের প্রধান চরিত্র মেঘনাদকে লেখক মৃত্যুর পরিণতিতে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি নিজেও ঘোরতর অসুস্থ ছিলেন বলে লেখক জানিয়েছেন, যা তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে একাত্মতার পরিচায়ক। ৭৫০ চরণে ষষ্ঠ সর্গ শেষ করে এবং মেঘনাদকে নিহত করে লেখক যথেষ্ট কাতর হয়ে পড়েছিলেন বলে তিনি এই পত্রে উল্লেখ করেছেন।

এই কাব্যটির অনুরাগী পাঠকেরা যদি লেখকের প্রতিভাকে মিলটনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলেন, লেখক তা মানতে রাজি নয়। বরং মহাকবি কালিদাস, ভার্জিল বা তাসোর সমকক্ষ বলে যদি কেউ তাঁকে মেনে নেয় তাতে তাঁর আপত্তি নেই। চিঠিতে এই কথার পাশাপাশি লেখক এটাও বলেছেন যে, ‘মিলটন স্বর্গীয়’। এইভাবে এই পত্রের প্রায় প্রত্যেক বাক্যেই মাইকেল মধুসূদনের সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগের পরিচয় ফুটে উঠেছে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ৩ নভেম্বর ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে লেখা মধুসূদনের চিঠিটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ফ্রান্সের ভার্সাই থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে মাইকেল মধুসুদন যে পত্রখানি লেখেন, তাতে ঈশ্বরচন্দ্রের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও নির্ভরশীলতার পরিচয় ধরা পড়ে। এই চিঠিতে তিনি এই প্রার্থনা ঈশ্বরচন্দ্রের কাছে করেছেন যে, ঈশ্বরচন্দ্র যেন তাঁর হয়ে বিষয়-আশয় তত্ত্বাবধান করেন। ঈশ্বরচন্দ্র যে ইতিপূর্বে তাঁকে বড়ো বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন, সে-কথাও মাইকেল স্মরণ করেছেন।

ইউরোপের ভয়াবহ শীতের কথা কবি উল্লেখ করেছেন এবং সেখানকার শরৎকালের ঠান্ডা যে ভারতবর্ষের শীতকালের শীতলতম দিনের চেয়ে ছয় গুণ বেশি, তা তিনি জানিয়েছেন। মাইকেল যে ইতিমধ্যে ফরাসি ও ইটালিয়ান ভাষা প্রায় আয়ত্ত করে বর্তমানে জার্মান ভাষাচর্চায় রত এবং তা কোনো শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই-এ প্রসঙ্গও তিনি ঈশ্বরচন্দ্রকে এই চিঠিতে জানিয়েছেন।

বিদ্যাসাগরকে লেখা পত্রটিতে মধুসূদনের জীবনে তাঁর ভূমিকার যে আভাস মেলে, তা বিশদভাবে আলোচনা করো।

১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৩ নভেম্বর ফ্রান্সের ভার্সাই নগর থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্ত যে চিঠিখানি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে লেখেন, তা পড়লেই বোঝা যায় যে, তাঁর জীবনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কত গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মাইকেলের প্রবাসে থাকাকালীন তাঁর অনুপস্থিতিতে সমস্ত বিষয়-আশয় যে বিদ্যাসাগর দায়িত্ব নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন, সে ভরসার কথা তিনি তাঁর চিঠিতে প্রকাশ করেছেন। ইতিপূর্বেও যে বিদ্যাসাগর তাঁকে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন সে-কথাও তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন।

বিদ্যাসাগরকে তিনি জীবনে কতখানি গভীরে স্থান দিয়েছেন, তা আরও বোঝা যায়, যখন মধুসুদন ফ্রান্সের ভয়াবহ্ ঠান্ডার কথা বর্ণনা করেছেন। কেন-না নিবিড় আন্তরিকতার বন্ধন না থাকলে এই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করা যায় না।

বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন প্রকৃত শিক্ষানুরাগী মানুষ। তাই মাইকেল তাঁর কাছে নিজের ফরাসি ও ইটালিয়ান ভাষা রপ্ত করা ও জার্মান ভাষা শিক্ষা করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। বিদ্যাসাগরকে তিনি যেন তাঁর জীবনস্রোতের প্রতিটি মুহূতের সঙ্গেই জড়িত করেছেন। এই চিঠি থেকে অবশ্যই মাইকেলের জীবনে বিদ্যাসাগরের গভীর ভূমিকার প্রভাব ধরা পড়ে।

১৮৬৪ সালের ৩ নভেম্বর মাইকেল মধুসূদন দত্ত যে চিঠি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে লিখেছিলেন, তা তাদের অসাধারণ বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধের সাক্ষ্য বহন করে। প্রবাসে থাকাকালীন মধুসূদন যে বিপদ ও দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই সময় বিদ্যাসাগর যেভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তা এই চিঠিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

মধুসূদন জানতেন, বিদ্যাসাগর শুধুমাত্র একজন বন্ধুই নন, তিনি একজন নিঃস্বার্থ মানুষ ও পথপ্রদর্শক। তাই তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সাথে বিদ্যাসাগরকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। ফ্রান্সের ঠান্ডার কথা বর্ণনা করে তিনি বিদ্যাসাগরের কাছে সান্ত্বনা খুঁজেছিলেন। এটি ছিল তাদের নিবিড় বন্ধুত্বেরই প্রমাণ।

এই চিঠিতে মধুসূদন আরও উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ফরাসি ও ইতালীয় ভাষা রপ্ত করেছেন এবং জার্মান ভাষা শিখছেন। একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ হিসেবে বিদ্যাসাগরকে এই খবরটি অবশ্যই আনন্দিত করেছিল।

পরিশেষে বলা যায়, ১৮৬৪ সালের এই চিঠি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মধ্যেকার অসাধারণ বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধের এক সুন্দর নিদর্শন।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না –  ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer