নবম শ্রেণি – বাংলা – আবহমান – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর


নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতাটি নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এই কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রাম বাংলার চিরন্তন সৌন্দর্য ও প্রকৃতির অপার ঐশ্বর্য্যকে মূর্ত করেছেন।

কবিতার প্রথম স্তবকে কবি গ্রাম বাংলার উঠোন, গাছ, ধানক্ষেত, মাঠ, নদী, ঝর্ণা, পাখি, প্রজাপতি প্রভৃতি প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দিয়েছেন। কবি মনে করেন, এই সবকিছুই গ্রাম বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

দ্বিতীয় স্তবকে কবি গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনযাত্রার কথা বলেছেন। কবি মনে করেন, গ্রাম বাংলার মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছে। তারা প্রকৃতির কাছ থেকে শক্তি ও আনন্দ পায়।

তৃতীয় স্তবকে কবি গ্রাম বাংলার অপার ঐশ্বর্য্যকে তুলে ধরেছেন। কবি মনে করেন, গ্রাম বাংলার মাটি, জল, বাতাস, আলো-ছায়া সবকিছুই সুন্দর ও পবিত্র।

কবিতার শেষ স্তবকে কবি গ্রাম বাংলার চিরন্তন সৌন্দর্য্যকে প্রকাশ করেছেন। কবি মনে করেন, গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য্য চিরকাল অম্লান থাকবে।

নবম শ্রেণি – বাংলা – আবহমান

কে এইখানে ঘর বেঁধেছে – ঘর বেঁধেছে কথাটির তাৎপর্য কী?

তাৎপর্য – আশ্রয়ের প্রয়োজনে মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করে। কিন্তু নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় উল্লিখিত ঘর বাঁধা কথাটি ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ, শুধু ইট-কাঠ-পাথর দিয়ে বাসস্থান তৈরি হয় না। এর ভিত তৈরি হয় স্নেহ-মমতামাখা সম্পর্কের উষ্ণতা দিয়ে এবং আপন করে নেওয়ার চেষ্টা থেকেই। বাংলায় আসা মানুষজনও সেভাবেই এদেশকে ভালোবেসে এখানে ঘর বেঁধেছে।

নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না! — পক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

অথবা, নটেগাছটা বুড়িয়ে উঠেও মুড়োয় না কেন?

পঙ্ক্তির ব্যাখ্যা – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর আবহমান কবিতায় দেখিয়েছেন যে, একসময় মানুষ নিবিড় ভালোবাসায় ঘর পা বেঁধেছিল গ্রামবাংলায়। পরবর্তীকালে গ্রামসভ্যতার সমৃদ্ধি নষ্ট হয়ে যায় নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনে। কিন্তু প্রকৃতি সেখানে নিজের হাতে একইভাবে সাজিয়ে রাখে, জীবন বয়ে চলে স্বচ্ছন্দ সহজ গতিতে। আর শহরের ক্লান্ত মানুষেরা শান্তির খোঁজে বারবার ফিরে আসে গ্রামবাংলার বুকে। নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে; কিন্তু মুড়য় না অর্থাৎ তার গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয় না।

কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে — কার কথা বলা হয়েছে? পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

তাৎপর্য – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর আবহমান কবিতায় বলেছেন, মানুষ একদিন গভীর অনুরাগ দিয়ে গ্রামসভ্যতা গড়ে তুলেছিল। পরে সেই মানুষই নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য আর সমৃদ্ধির টানে গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে বাসা বেঁধেছে। কিন্তু শহরজীবন ঐশ্বর্য আর সমৃদ্ধি দিলেও মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। তাই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষ আবার শান্তির খোঁজে বার বার গ্রামেই ফিরে আসে 

ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা – এ কথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কবির বক্তব্য – নগরসভ্যতার সৃষ্টির সঙ্গেই মানুষের গ্রাম থেকে শহরের উদ্দেশ্যে চলা এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সুখস্বাচ্ছ্যন্দের খোঁজে মানুষের এই চলা অবিরাম। কিন্তু ফিরে আসার প্রক্রিয়াও এর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে থাকে। যন্ত্রসভ্যতার চাপে ক্লান্ত, অবসন্ন মানুষ চায় অবসর। তখনই সে ফিরে আসে গ্রামে। প্রকৃতির সহজ কোলে লালিত জীবনধারার সংস্পর্শে এসেই নাগরিক মানুষ পেতে চায় মুক্তির নিশ্বাস। এভাবেই অবিরাম যাওয়া-আসা চলতেই থাকে।

সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে – কে, কেন ঘাসের গন্ধ মাখে?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় যে মানুষ শহরজীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর তার সমৃদ্ধি আর স্বচ্ছলতার আড়ালে থাকে গ্রামজীবনে ফিরে আসার প্রবল ইচ্ছা—এখানে তার কথাই বলা হয়েছে।
ঘাসের গন্ধ মাখা – নাগরিক মানুষের মনের মধ্যে গ্রামে ফিরে আসার আকুলতা এই আকুলতাকেই কবি বলেছেন একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা। এই পিপাসাতেই সে সারাদিন প্রকৃতি আর গ্রামের সান্নিধ্য পাওয়ার আশাকে বাঁচিয়ে রাখে। আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে — এই কথাটির মধ্য দিয়ে মানুষের প্রকৃতির প্রতি চিরকালের আকর্ষণকেই বোঝানো হয়েছে।

হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি – পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কোন্ জীবনসত্যকে তুলে ধরেছেন?

কবির উল্লিখিত জীবনসত্য – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় কবি গ্রামবাংলার সহজসরল জীবনধারার কথা তুলে ধরেছেন। প্রকৃতিলালিত এই জীবনধারা গ্রামের মধ্যে চিরকাল ধরে বজায় রয়েছে। সেখানে দুঃখযন্ত্রণা থাকলেও প্রকৃতির স্নিগ্ধতা কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয় না। জীবনের সহজ প্রবাহ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের এই চিরকালীনতাকে বোঝাতে হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

এখনও সেই ফুল দুলছে – পঙ্ক্তিটিতে ব্যবহৃত এখনও শব্দটির তাৎপর্য কী?

তাৎপর্য – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় গ্রামবাংলার প্রকৃতি এবং জীবনের চিরকালীনতাকে বোঝানো হয়েছে। একসময় গভীর অনুরাগে মানুষ সেখানে বসতি তৈরি করেছিল। যে মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে গড়ে উঠেছিল গ্রামসভ্যতা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার গৌরব নষ্ট হয়ে গেলেও প্রকৃতির সৌন্দর্যের গরিমা একইরকম রয়ে গেছে। এখনও সেই ফুল দুলছে কথাটির মধ্য দিয়ে গ্রামজীবন ও গ্রাম্যপ্রকৃতির সেই চিরকালীনতাকেই বোঝানো হয়েছে।

এই কবিতাটি নবম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এই কবিতাটি পড়ে তারা গ্রাম বাংলার চিরন্তন সৌন্দর্য্য ও প্রকৃতির অপার ঐশ্বর্য্য সম্পর্কে জানতে পারবে। এই কবিতা তাদের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করবে।

Share via:

মন্তব্য করুন