অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – গাছের কথা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের সপ্তদশ অধ্যায়গাছের কথা’ নিয়ে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় আসে।

গাছের কথা – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

পৃথিবী মাতার ন্যায় তাহাকে কোলে লইলেন। – বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে লেখকের গভীর উপলব্ধি উদ্ধৃতিটিতে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, তা আলোচনা করো।

জগদীশচন্দ্র বসু একাধারে ছিলেন বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক। তাঁর বহু রচনাতেই বিশ্বপ্রকৃতিতে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গভীর দার্শনিক উপলব্ধিও প্রতিফলিত হয়েছে। ‘গাছের কথা’ প্রবন্ধেও তিনি একটি প্রাকৃতিক ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যা এইরূপ-আশ্বিন মাসে পেকে ওঠা কোনো একটি বীজ আশ্বিনের ঝড়ের সময় উড়ে সারাদিন মাটিতে লুটোতে লুটোতে হয়তো একটা ভাঙা ইট বা মাটির ডেলার নীচে আশ্রয় নিল এবং ক্রমশ ধুলোবালিতে ঢাকা পড়ল। লোকচক্ষুর আড়ালে গেলেও তা বিধাতার দৃষ্টির বাইরে যায়নি। মানবশিশু যেমন মায়ের কোলে নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকে, বীজের মধ্যেকার বৃক্ষশিশুটিও যেন তেমনি মাটিতে ঢাকা পড়ে বাইরের শীত ও ঝড়ের থেকে রক্ষা পেয়ে পৃথিবীমাতার কোলে নিরাপদে ঘুমিয়ে রইল। ভারতীয় দর্শনে জড়প্রকৃতির মধ্যেও যে প্রাণসত্তার প্রকাশ দেখা যায়, এখানে লেখক সেই প্রাণসত্তাকেই অনুভব এবং উপলব্ধি করেছেন।

প্রত্যেক বীজ হইতে গাছ জন্মে কিনা, কেহ বলিতে পারে না। – বীজ থেকে গাছের জন্মের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শর্তগুলি আলোচনা করো।

গাছের কথা প্রবন্ধে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন – ‘প্রত্যেক বীজ হইতে গাছ জন্মে কিনা, কেহ বলিতে পারে না।’ কারণ, ‘অঙ্কুর বাহির হইবার জন্য উত্তাপ, জল ও মাটি চাই।’ অর্থাৎ বীজ থেকে গাছের জন্মের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শর্তগুলি হল –

  • উপযুক্ত উত্তাপ – অতিরিক্ত শীতল বা উষ্ণ পরিবেশে বীজ অঙ্কুরিত হতে পারে না। এর জন্য যথোপযুক্ত উত্তাপ প্রয়োজন।
  • জল – বীজ শুষ্ক অবস্থায় অঙ্কুরিত হয় না। জল শোষণ করে ফুলে উঠলে তবেই বীজের অঙ্কুরোদম হয়।
  • মাটি – কঠিন পাথুরে জমিতে গাছ জন্মায় না। কারণ, অঙ্কুর পাথরকে ভেদ করতে পারে না। নরম মাটিতে শিকড় চালাতে পারলে তবেই অঙ্কুরিত বীজ থেকে গাছ জন্মায়।

তখন সব খালি-খালি লাগিত। – কখনকার অনুভূতির কথা বলা হল? কেন তখন সব খালি-খালি লাগত? ক্রমশ তা কীভাবে অন্য চেহারা পেল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে বুঝিয়ে দাও।

গাছের কথা প্রবন্ধের লেখক জগদীশচন্দ্র বসু প্রথম জীবনে যখন একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াতে যেতেন, তখনকার অনুভূতির কথা বলা হয়েছে।

সেই সময় তিনি গাছ, পাখি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদিকে ভালোবাসতে শেখেননি। অর্থাৎ প্রকৃতিপ্রেমিক না হলে তিনি প্রকৃতির বিপুল সৌন্দর্যের মাধুর্য গ্রহণ করতে পারতেন না। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ সঙ্গীর অভাবে তাঁর খালি খালি লাগত।

যখন থেকে তিনি এদের ভালোবাসতে শিখলেন, এদের বিষয়ে অনেক কথা বুঝতে পারলেন, তখন এই বিপুল বিশ্ব নতুনরূপে ধরা দিল তার কাছে। তিনি বুঝলেন গাছ, পাখি, কীটপতঙ্গের মর্যাদা, এ বিশ্বপ্রবাহে তাদের ভূমিকা। বর্তমান পাঠ্যাংশে তিনি বিশেষ করে গাছের কথাই বলেছেন। নির্বাক গাছদেরও যে মানুষের মতোই জীবন আছে, আহার ও বৃদ্ধি আছে, অভাব-দুঃখ-কষ্ট আছে, জীবনধারণের জন্য ব্যস্ততা আছে, মানুষের মতোই পারস্পরিক সহযোগিতা, বন্ধুত্ব, স্বার্থত্যাগ প্রভৃতি সদ্‌গুণ আছে; তা বুঝতে পারার পর থেকেই তাঁর সেই খালি খালি লাগার বোধ ক্রমশ অন্য চেহারা পেল এবং এরাই তাঁর একাকিত্বের সঙ্গী হয়ে উঠল।

বীজগুলি যেন গাছের ডিম – লেখক এই উক্তি কোন্ প্রসঙ্গে করেছেন? বীজ ও ডিমের এই তুলনা তিনি কেন করেছেন?

গাছের কথা প্রবন্ধে জগদীশচন্দ্র বসু জীবিতের লক্ষণ সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, জীবিতের লক্ষণ হল এই যে, তার গতি এবং বৃদ্ধি আছে। জীবিত উদ্ভিদ অথবা প্রাণী, উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তারা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং নড়াচড়া করে। উদ্ভিদের গতি হঠাৎ বোঝা না গেলেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে তা বুঝতে পারা যায়। কিন্তু ডিমের মধ্যে জীবনের এই লক্ষণগুলি দেখা যায় না, কারণ ডিমে জীবন ‘ঘুমিয়ে থাকে’।

লেখক বলেছেন ডিমে জীবন ঘুমিয়ে থাকে। উত্তাপ পেলে ডিম থেকে পাখির ছানা জন্মায়। তেমনি বীজগুলি যেন গাছের ডিম। কারণ, বীজের মধ্যেও গাছ যেন ঘুমিয়ে থাকে। মাটি, জল ও উত্তাপ পেলে বীজ থেকে বৃক্ষশিশু জন্মায়। এই সাদৃশ্যের জন্যই লেখক ডিমের সঙ্গে বীজের তুলনা করেছেন।

নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো –

আগে যখন একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে যাইতাম, তখন সব খালি-খালি লাগিত। (সরল বাক্যে)

আগে একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে গেলে সব খালি-খালি লাগিত।

তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা পারিতাম না। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)

আগে না-বোঝা তাদের অনেক কথা এখন বুঝিতে পারি।

ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখ-কষ্ট দেখিতে পাই। (জটিল বাক্যে)

আমাদের মধ্যে যেমন অভাব, দুঃখকষ্ট আছে, ইহাদের মধ্যেও তেমন দেখিতে পাই।

তোমরা শুষ্ক গাছের ডাল সকলেই দেখিয়াছ। (না-সূচক বাক্যে)

শুষ্ক গাছের ডাল তোমরা কেউ দেখ নাই তা নয়।

প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কে বলিতে পারে? (প্রশ্ন পরিহার করো)

প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কেহই বলিতে পারে না।

নীচের শব্দগুলির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো –

কীটপতঙ্গ, স্বার্থত্যাগ, বৃক্ষশিশু, বনজঙ্গল, জনমানবশূন্য, দিনরাত্রি, দেশান্তরে, নিরাপদ।

শব্দব্যাসবাক্যসমাস
কীটপতঙ্গকীট ও পতঙ্গদ্বন্দ্ব
স্বার্থত্যাগস্বার্থকে ত্যাগকর্মতৎপুরুষ
বৃক্ষশিশুবৃক্ষের শিশুসম্বন্ধ তৎপুরুষ
বনজঙ্গলবন ও জঙ্গলদ্বন্দ্ব
জনমানবশূন্যজনমানব দ্বারা শূন্যকরণ তৎপুরুষ
দিনরাত্রিদিন ও রাত্রিদ্বন্দ্ব
দেশান্তরেঅন্য দেশেনিত্য
নিরাপদনেই আপদনঞ্তৎপুরুষ

নিম্নরেখাঙ্কিত অংশের কারক-বিভক্তি নির্দেশ করো –

  • ইহাদের মধ্যে একের সহিত অপরের বন্ধুত্ব হয়।
  • আর কিছুকাল পরে ইহার চিহ্নও থাকিবে না।
  • বীজ দেখিয়া গাছ কত বড়ো হইবে বলা যায় না।
  • মানুষের সর্বোচ্চ গুণ যে স্বার্থত্যাগ, গাছে তাহাও দেখা যায়।
শব্দকারক-বিভক্তি
বন্ধুত্বকর্মকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
ইহারসম্বন্ধপদে ‘র’ বিভক্তি।
বীজকর্মকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
গাছেঅধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।

সন্ধিবদ্ধ পদগুলি খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করো –

  • তাহার মধ্যে বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।
  • অতি প্রকাণ্ড বটগাছ, সরিষা অপেক্ষা ছোটো বীজ হইতে জন্মে।
  • এই প্রকারে দিনরাত্রি দেশদেশান্তরে বীজ ছড়াইয়া পড়িতেছে।
সন্ধিবদ্ধ পদসন্ধিবিচ্ছেদ
নিরাপদেনিঃ + আপদে
অপেক্ষাঅপ + ঈক্ষা
দেশান্তরেদেশ + অন্তরে

আজকের এই নিবন্ধে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের সপ্তদশ অধ্যায়গাছের কথা’ এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Sourav Das

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ

তেভাগা আন্দোলন কাকে বলে এবং এর মূল দাবি কী ছিল? তেভাগা আন্দোলনের নাম ‘তেভাগা’ কেন হয়েছিল?

‘একা’ আন্দোলন শুরু হয় কেন? ‘একা’ আন্দালনে আন্দোলনকারীদের শপথ কী ছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় কেন? বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারী সমাজ কীভাবে যোগদান করেছিল?

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছিল?