অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – হাওয়ার গান – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের হাওয়ার গান অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে হাওয়ার গান অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় হাওয়ার গান অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই হাওয়ার গান অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

বুদ্ধদেব বসুর বিখ্যাত কবিতা “হাওয়ার গান” কেবল প্রকৃতির বর্ণনা নয়, বরং মানবজীবনের এক অদ্ভুত রূপক। কবিতার শুরুতেই কবি হাওয়ার অবস্থানহীনতা ও অনন্ত অনুসন্ধানের কথা তুলে ধরেছেন। তারা ঘরহীন, দেশহীন, কেবল অবিরাম ছুটে চলাই তাদের জীবন।

কবিতাটি হাওয়ার জবানিতে লেখা। তারা যেন নিজেরাই বলছে, কীভাবে তারা সারা বিশ্ব জুড়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সমুদ্র, পাহাড়, বন্দর, নগর, অরণ্য – সবখানেই তারা ঘুরেছে, কিন্তু তাকে পায়নি। পার্কের বেঞ্চ, ঘুমন্ত শিশু, তন্দ্রাচ্ছন্ন কুকুর, স্বপ্নময় ঘর – সবখানেই তার সন্ধান পেয়েছে, কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি।

অন্ধকার রাতের সমুদ্রেও হাওয়া থেমে থাকে না। জাহাজের যাত্রীদের আনন্দে ভেসে যাওয়ার সময়ও তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজে। কিন্তু রাত গভীর হতেই আনন্দ থেমে যায়, কেবল সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়। তবুও হাওয়া থামে না, তারা চিরকাল উত্তাল হয়ে তাদের সেই অজানা গন্তব্যের সন্ধানে ছুটে চলে।

এই অবিরাম অনুসন্ধানই মানবজীবনের প্রতীক। আমরাও জানি না আমাদের আসল লক্ষ্য কোথায়, তবুও চিরকাল খুঁজে ফিরি। কখনো সুখ, কখনো ভালোবাসা, কখনো আত্মার সান্ত্বনা – আমরাও হাওয়ার মতোই অবিরাম ছুটে চলি।

কবি এই কবিতায় প্রকৃতির মাধ্যমে মানবজীবনের এক গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। ‘হাওয়ার গান’ কেবল একটি সুন্দর কবিতা নয়, বরং জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করার জন্য একটি চমৎকার উপায়।

হাওয়ার গান – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

হাওয়ার চোখে ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, তা কবিতা অনুসরণে লেখো।

বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়ার চোখে রাত্রিবেলায় একটি ঘরের ছবি ফুটে উঠেছে। সেই ঘরে দোলনায় একটি মিষ্টি ছেলে ঘুমিয়ে আছে। আবছা ঘরের মেঝেতে কার্পেটের উপর পোষা কুকুরটি তন্দ্রাচ্ছন্ন। ঘরে জ্বলা মোমবাতির মৃদু আলোয় এক স্বপ্নময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু হাওয়া যাকে খুঁজে বেড়ায়, সে বুঝি সেই ঘর থেকেও বিদায় নিয়ে চলে গেছে।

সমুদ্রে জাহাজের চলার বর্ণনা দাও।

অন্ধকার সমুদ্রের বুকে জাহাজ যখন চলে, তখন তার মাস্তুলে আলো জ্বলে। জাহাজের যাত্রীরা কেউ সিনেমা দেখে, কেউ নাচে বা গান গায়। একসময় সেই সব থেমে গিয়ে ডেক জনশূন্য হয়ে পড়ে, চাঁদ অস্তগামী হয়; অকূল অন্ধকারে শুধু দুলে ওঠা সমুদ্রের একটানা গর্জন শোনা যায়।

হাওয়াদের কী নেই? হাওয়ারা কোথায় কীভাবে তার খোঁজ করে?

কবি বুদ্ধদেব বসু বলেছেন হাওয়াদের কোনো বাড়ি নেই।

হাওয়া তার খোঁজে সারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়। পৃথিবীর সব জল ও তীর ছুঁয়ে, পাহাড়, বন্দর, নগর, অরণ্য, প্রান্তর ছুঁয়ে, পার্কের উপর দিয়ে, ঘুম ঘুম ঘরের পাশ দিয়ে, সমুদ্রের ঢেউয়ের মাথায় মাথায়, সমুদ্রে চলা জাহাজের ডেকের উপর দিয়ে হাওয়া অবিরাম ঘুরে বেড়ায়।

হাওয়ার ‘অফুরান সন্ধান’-এর মধ্যে অন্য কোনো অর্থ কি তুমি খুঁজে পাও?

কবিতার বাচ্যার্থের আড়ালে অনেক সময়ই কোনো গভীর ব্যঞ্জনা লুকিয়ে থাকে। হাওয়ার এই ‘সে কোথায়, সে কোথায় হায় রে’ বলে যে ‘অফুরান সন্ধান’, তার মধ্য দিয়ে কবি হয়তো মননশীল মানুষের চিরব্যাকুল হৃদয়ের কথাই বলতে চেয়েছেন; যে হৃদয় কোনো অসীম, অচেনা কাউকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ছুটে চলে সারা জীবন ধরে। কাকে সে খোঁজে তাও হয়তো সে ঠিক জানে না। তবু সারাজীবন ধরে চলে তার এই ‘অফুরান সন্ধান’।

চিরকাল উত্তাল তাই রে – কে চিরকাল উত্তাল? কেন সে চিরকাল উত্তাল হয়ে রইল?

হাওয়া চিরকাল উত্তাল।

কবি বলেছেন হাওয়াদের কোনো বাড়ি নেই। তাই তারা চিরকাল বাইরে কেঁদে মরে। পৃথিবীর সব জায়গাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে হাওয়া উত্তাল হয়। বয়ে যায় হয়তো সেই ঘরের খোঁজে, যে ঘর তার কোথাও নেই। নাকি কোনো অচেনা-অদেখা প্রিয়জন, যার খোঁজে সে উত্তাল, অস্থির হয়ে ছুটে বেড়ায়; তাকে সে কোথাও পায় না। পৃথিবীর সব জল, তীর, পাহাড়, বন্দর, নগর, অরণ্য-প্রান্তর ছুঁয়ে সে বৃথাই বয়ে যায়। ঝরাপাতা ঢাকা পার্কের বেঞ্চিকে, পাঁজর বেরোনো দেয়ালের গায়ের শার্সিকে, চিমনির শব্দ ও কাননের কান্নাকে সে প্রশ্ন করে। ঘুমন্ত ঘরের পাশ দিয়ে, সমুদ্রে ভেসে চলা জাহাজের উপর দিয়ে সে বয়ে চলে। কোথাও তাকে পায় না। হাওয়ার কোনো বিশ্রাম নেই। অন্তহীন সময় ধরে সারা বিশ্ব জুড়ে চলে তার এই অফুরান সন্ধান। তাই সে চিরকাল উত্তাল হয়ে থাকে।

সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নামকরণ। নাম শুধুমাত্র চিহ্নিতকরণের জন্য নয়, বরং পাঠককে রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্যও ব্যবহৃত হয়। কবিতার ক্ষেত্রে, শিরোনাম কবিতার মূল ভাব বা বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে।

উদাহরণস্বরূপ, “হাওয়ার গান” শিরোনামটি কবিতার মূল বিষয়বস্তু – হাওয়ার সাথে সম্পর্কিত। কবিতায়, কবি হাওয়ার মাধ্যমে তাদের গৃহহীনতার বেদনা এবং অবিরাম অনুসন্ধানের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। হাওয়ার শব্দে বেদনার করুণ সুর ফুটে ওঠে। তাই “হাওয়ার গান” নামকরণটি অত্যন্ত উপযুক্ত।

এভাবে, সাহিত্যকর্মের নামকরণ পাঠককে রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি, রচনার মূল ভাব বা বার্তাটি আরও তীব্র করে তুলতে সাহায্য করে।

Share via:

মন্তব্য করুন