মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ- রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

বংশগতি হলো একটি জীবের শারীরিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলোর পিতামাতা থেকে সন্তানে সঞ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়া। এই অধ্যায়ে আমরা বংশগতির বিভিন্ন নীতি, মটর গাছের উপর মেন্ডেলের পরীক্ষা, জিনগত রোগ এবং তাদের চিকিৎসা সম্পর্কে জানব।

Table of Contents

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান - বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ - কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

থ্যালাসেমিয়া কী? এর প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

থ্যালাসেমিয়া হল একটি রক্তস্তর সমস্যা, যা একটি অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন তৈরি করার কারণে উত্পন্ন হয়।

থ্যালাসেমিয়া

জিনগত ত্রুটির কারণে সৃষ্ট যে বংশগত রোগে হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশে কোনো একটি পেপটাইড শৃঙ্খল সংশ্লেষিত হয় না অথবা স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় কম সংশ্লেষিত হয়, সেই বংশগত রোগকেই থ্যালাসেমিয়া বলে। এই রোগ হলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পায়, লোহিত রক্তকণিকা ক্ষুদ্র হয় এবং স্বল্পদিন বাঁচে। ফলস্বরূপ অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ

থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই প্রকারের হয়। যথা — 1. আলফা (α) থ্যালাসেমিয়া এবং 2. বিটা (β) থ্যালাসেমিয়া।

  • আলফা (α) থ্যালাসেমিয়া হিমোগ্লোবিনের আলফা পেপটাইড শৃঙ্খলের সংশ্লেষণ হ্রাস পেলে বা বন্ধ হলে, তাকে আলফা থ্যালাসেমিয়া বলা হয়। মানুষের 16 নং ক্রোমোজোম জোড়ার প্রতিটিতে দুটি করে মোট চারটি α শৃঙ্খল উৎপাদনকারী অ্যালিল থাকে। এর মধ্যে দুটি অ্যালিলের মিউটেশন হলে α থ্যালাসেমিয়া মাইনর ও চারটিতেই মিউটেশন ঘটলে α থ্যালাসেমিয়া মেজর দেখা যায়।
  • বিটা (β) থ্যালাসেমিয়া হিমোগ্লোবিনের বিটা পেপটাইড শৃঙ্খলের উৎপাদন বন্ধ হলে বা হ্রাস পেলে তাকে বিটা থ্যালাসেমিয়া বলে। বিটা থ্যালাসেমিয়ার আবিষ্কর্তা আমেরিকান চিকিৎসক থমাস বেনটন কুলি (Thomas Benton Cooley)-র নামানুসারে একে কুলির অ্যানিমিয়া (Cooley’s anaemia) বলে। এটিও মেজর এবং মাইনর দুই প্রকার হয়। 11নং ক্রোমোজোম জোড়ায় অবস্থিত β শৃঙ্খল সংশ্লেষণকারী দুটি অ্যালিলের মিউটেশন ঘটলে β থ্যালাসেমিয়া মেজর ও একটিতে মিউটেশন ঘটলে β থ্যালাসেমিয়া মাইনর ঘটে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও কারণ সংক্ষেপে লেখো।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও কারণ নিম্নে আলোচনা করা হল।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ

1. হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে তীব্র অ্যানিমিয়া সৃষ্টি হয়। 2. রোগীর দেহে বারবার রক্ত সঞ্চারণের প্রয়োজন হয় বলে দেহের বিভিন্ন অংশে লৌহ সঞ্চিত হয়, যার ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 3. অস্থিমজ্জা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় বলে হাড়ের গঠন বিকৃতি ঘটে এবং রোগীর মুখ ও মাথার খুলির হাড়ের গঠন অস্বাভাবিক হয়। 4. যকৃৎ ও প্লিহার বৃদ্ধি ঘটে। একে যথাক্রমে হেপাটোমেগালি ও স্প্লিনোমেগালি বলা হয়। 5. এ ছাড়া, এই রোগে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং জনডিস, ক্লান্তি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ অনুসারে মানুষের দেহে রোগের তীব্রতা ও লক্ষণগুলি আলাদা হয়।

থ্যালাসেমিয়ার কারণ

1. গ্লোবিউলার বা গ্লোবিন প্রোটিনের জিনের অস্বাভাবিকতার কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগ সৃষ্টি হয়। হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন পেপটাইড α ও β — দুটি শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত। আলফা শৃঙ্খলের জিন মানুষের 16 নং ক্রোমোজোমে (অটোজোমে) এবং বিটা শৃঙ্খলের জিন মানুষের 11 নং ক্রোমোজোম (অটোজোমে)থাকে। 2. জিনের পরিব্যক্তির (মিউটেশনের) ফলে আলফা ও বিটা গ্লোবিন প্রোটিন সঠিক বা উপযুক্ত অনুপাতে সংশ্লেষিত হয় না। এর ফলে হিমোগ্লোবিন গঠিত হয় না। এই কারণেই থ্যালাসেমিয়া রোগ দেখা দেয়।

থ্যালাসেমিয়া মেজর ও থ্যালাসেমিয়া মাইনর কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে দেখা যায়? মোনোক্রোমাসি ও ডাইক্রোমাসি কাকে বলে?

থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর উভয়ই থাকতে পারে একই রক্তস্তর সমস্যা, কিন্তু মেজর হল একটি গম্ভীর অবস্থা এবং মাইনর হল একটি হালকা অবস্থা।

থ্যালাসেমিয়া মেজর ও থ্যালাসেমিয়া মাইনর

থ্যালাসেমিয়া রোগটি প্রধানত দুই প্রকার- α থ্যালাসেমিয়া ও β থ্যালাসেমিয়া। এই দুটি ক্ষেত্রেই মেজর ও মাইনর অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। গ্লোবিন α শৃঙ্খলটি 16 নং ক্রোমোজোম-জোড়ায় অবস্থিত মোট চারটি অ্যালিল দ্বারা সংশ্লেষিত হয়। এরমধ্যে দুটি অ্যালিলে মিউটেশন ঘটলে তাকে α থ্যালাসেমিয়া মাইনর ও চারটি অ্যালিলের প্রতিটিতেই মিউটেশন ঘটলে তাকে α থ্যালাসেমিয়া মেজর বলে। অন্যদিকে, 11 নং ক্রোমোজোম-জোড়ায় β শৃঙ্খল সংশ্লেষকারী দুটি অ্যালিল অবস্থিত। এরমধ্যে একটি অ্যালিলে মিউটেশন ঘটলে β থ্যালাসেমিয়া মাইনর ও দুটি অ্যালিলেই মিউটেশন ঘটলে β থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগ দেখা যায়।

মোনোক্রোমাসি ও ডাইক্রোমাসি

মানুষের চোখে লাল, সবুজ ও নীল — তিন প্রকার বর্ণ সংবেদী কোন কোশ থাকে। এরমধ্যে দুই প্রকার কোশ নষ্ট হয়ে গিয়ে কেবলমাত্র একপ্রকার বর্ণ-সংবেদন বজায় থাকলে তাকে মোনোক্রোমাসি বলে। তিন প্রকার বর্ণ সংবেদী কোশের মধ্যে কোনো একপ্রকার কোশ নষ্ট হয়ে গেলে এবং অন্য দুটি কার্যকর থাকলে, সেই বর্ণান্ধতাকে ডাইক্রোমাসি বলে। সাধারণত বর্ণান্ধতা বলতে ডাইক্রোমাসিকেই বোঝানো হয়। মোনোক্রোমাসি বা সম্পূর্ণ বর্ণান্ধতা (সাদা-কালো দৃশমানতা) প্রায় দেখাই যায় না।

হিমোফিলিয়া কী? হিমোফিলিয়ার প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

হিমোফিলিয়া হল একটি রক্তস্তর সমস্যা যা হেমোফিলিয়া ফ্যাক্টর নামক একটি প্রোটিন অভাবের কারণে উত্পন্ন হয়।

হিমোফিলিয়া

মানুষের X ক্রোমোজোম সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত যে বংশগত রোগের ফলে দেহের আঘাতপ্রাপ্ত স্থান বা ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে ও তা সহজেই তঞ্চিত হয় না, বরং অবিরাম ক্ষরণ হতে থাকে, সেই রোগকে হিমোফিলিয়া বলে।

হিমোফিলিয়ার প্রকারভেদ

হিমোফিলিয়া প্রধানত দু-প্রকারের। যথা — 1. হিমোফিলিয়া A বা ক্লাসিক হিমোফিলিয়া এবং 2. হিমোফিলিয়া B বা ক্রিস্টমাস রোগ।

  • হিমোফিলিয়া A বা ক্লাসিক হিমোফিলিয়া এইজাতীয় হিমোফিলিয়া রক্তের প্লাজমায় অবস্থিত রক্ততঞ্চনে সাহায্যকারী ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টর-এর অভাবের কারণে ঘটে।এইজাতীয় হিমোফিলিয়া মারাত্মক প্রকৃতির। আমাদের দেশের 80% হিমোফিলিয়াই এই ধরনের।
  • হিমোফিলিয়া B বা ক্রিস্টমাস রোগ এইজাতীয় হিমোফিলিয়া রক্তের প্লাজমায় অবস্থিত প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কমপোনেন্ট (PTC) বা ফ্যাক্টর IX-এর অভাবের কারণে ঘটে। এটি অতটা মারাত্মক নয়। আমাদের দেশে 20% হিমোফিলিয়া এইজাতীয়। এইপ্রকার হিমোফিলিয়া সর্বপ্রথম স্টিফেন ক্রিস্টমাস নামে একজন ব্যক্তির দেহে ধরা পড়ে। তাঁর নাম থেকেই এটি ক্রিস্টমাস রোগ নামে পরিচিত।

হিমোফিলিয়ার লক্ষণ ও কারণ লেখো।

হিমোফিলিয়ার লক্ষণ ও কারণ নিম্নে আলোচনা করা হল —

হিমোফিলিয়ার লক্ষণ

এই রোগের লক্ষণগুলি, রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। তীব্রতা অনুযায়ী রোগটি তিন প্রকার। মৃদু হিমোফিলিয়া, মধ্যম হিমোফিলিয়া ও তীব্র হিমোফিলিয়া। বিভিন্ন তীব্রতায় এর লক্ষণগুলি নিম্নরূপ।

  • মৃদু হিমোফিলিয়ার লক্ষণ মৃদু হিমোফিলিয়ার ক্ষেত্রে বহুদিন পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে এর লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে বয়স বাড়লে রক্ততঞ্চনে সমস্যা দেখা যায়। বিশেষত শল্যচিকিৎসার সময়ে দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা যায়।
  • মধ্যম হিমোফিলিয়ার লক্ষণ এই রোগের ক্ষেত্রে জন্ম থেকে ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া এই রোগে বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ দেখা যায়। এর ফলে অস্থিসন্ধিতে শক্তভাব, ফুলে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়।
  • তীব্র হিমোফিলিয়ার লক্ষণ এই রোগের ক্ষেত্রে দেহ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ, অস্থিসন্ধিতে ঘনঘন রক্তক্ষরণ ও অস্থিসন্ধির বিকৃতি (হিমারথ্রোসিস) লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া এই রোগে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয় ও করোটির মধ্যেও রক্তক্ষরণ হয়, ফলে প্যারালাইসিস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

হিমোফিলিয়ার কারণ

  • ক্লাসিক হিমোফিলিয়া বা হিমোফিলিয়া A-এর কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় তখন ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টরের অনুপস্থিতি বা অভাব।
  • হিমোফিলিয়া B বা ক্রিস্টমাস রোগের কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কমপোনেন্ট (PTC) বা ফ্যাক্টর IX-এর অনুপস্থিতি বা অভাব।

হিমোফিলিয়া রোগ মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের দেহে বেশি ঘটে কেন? হিমোফিলিয়া ও থ্যালাসেমিয়া রোগের দুটি পার্থক্য লেখো।

পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোফিলিয়া বেশি হওয়ার কারণ হল হিমোফিলিয়া ফ্যাক্টর নামক প্রোটিন মহিলাদের সম্পর্কে পুরোপুরি নয়।

পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোফিলিয়া বেশি হওয়ার কারণ

হিমোফিলিয়া হল মানুষের X ক্রোমোজোম সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত একটি বংশগত রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী জিনটি X ক্রোমোজোমে অবস্থিত। পুরুষের দেহকোশে যেহেতু একটিমাত্র ক্রোমোজোম উপস্থিত, তাই প্রচ্ছন্ন হলেও, জিনটির একটিমাত্র ত্রুটিপূর্ণ অ্যালিল উপস্থিত থাকলেই রোগটির প্রকাশ ঘটে। কারণ, এক্ষেত্রে কোনো স্বাভাবিক প্রকট অ্যালিল উপস্থিত থাকে না। অপরপক্ষে, মহিলাদের দেহকোশে দুটি X ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকায় এবং রোগের জন্য দায়ী জিনটি প্রচ্ছন্ন হওয়ায়, একটি ত্রুটিপূর্ণ অ্যালিল উপস্থিত থাকলেও রোগটির প্রকাশ হয় না। রোগের প্রকাশের জন্য দুটি ত্রুটিপূর্ণ অ্যালিলের প্রয়োজন হয়। এই কারণে পুরুষদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ বেশি দেখা যায়। কোনো মহিলার একটি X ক্রোমোজোমে এটি থাকলে ওই মহিলা কেবল রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।

থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়া রোগের পার্থক্য

বিষয়থ্যালাসেমিয়া হিমোফিলিয়া 
1. কারণমানুষের 16 নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত গ্লোবিন প্রোটিনের α শৃঙ্খল এবং 11 নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত প্রোটিনের β শৃঙ্খলের অস্বাভাবিকতার কারণে এই রোগ হয়।রক্তের প্লাজমায় তঞ্চন ফ্যাক্টর VIII বা AHF-এর অভাবে হিমোফিলিয়া A এবং তঞ্চন ফ্যাক্টর IX বা PTC-এর অভাবে হিমোফিলিয়া B রোগ হয়।
2. লক্ষণহিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তীব্র অ্যানিমিয়া সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া যকৃৎ ও প্লিহার বৃদ্ধি ঘটে।রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এ ছাড়া অস্থিসন্ধিতে শক্তভাব, ফুলে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়।

বর্ণান্ধতার লক্ষণ ও কারণ লেখো।

বর্ণান্ধতা হল একটি চক্ষুর রোগ যেখানে ব্যক্তি দেখতে পারেনা বা খুব কম দেখতে পাই। কারণ হল চক্ষুর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস হয়ে যাওয়া।

বর্ণান্ধতার লক্ষণ

বর্ণান্ধতার প্রকারভেদ অনুযায়ী তার লক্ষণ বিভিন্ন রকমের হয়। নীচে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

  • প্রোটানোপিয়া বা লাল বর্ণান্ধতা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি লাল বর্ণ শনাক্ত করতে পারেন না। তাঁরা লাল বর্ণকে কালো বা গাঢ় বাদামি দেখেন, কমলা-হলদে-সবুজকে বিভিন্ন গাঢ়ত্বের হলদে এবং বেগুনি বর্ণকে নীল দেখেন।
  • ডিউটেরানোপিয়া বা সবুজ বর্ণান্ধতা এঁরা সবুজ বর্ণ শনাক্ত করতে পারেন না। তবে এঁরা লাল, কমলা ও হলদে বর্ণকে সঠিকভাবে চিনতে না পারলেও প্রোটানোপদের মতো অস্পষ্ট বা আবছা দেখেন না।
  • ডিউটেরানোপিয়া বা সবুজ বর্ণান্ধতা এঁরা সবুজ বর্ণ শনাক্ত করতে পারেন না। তবে এঁরা লাল, কমলা ও হলদে বর্ণকে সঠিকভাবে চিনতে না পারলেও প্রোটানোপদের মতো অস্পষ্ট বা আবছা দেখেন না।
  • ট্রাইটানোপিয়া বা নীল বর্ণান্ধতা এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি নীল বর্ণ শনাক্ত করতে পারেন না।
বর্ণান্ধতার লক্ষণ ও কারণ লেখো।

বর্ণান্ধতার কারণ

মানুষের চোখে বর্ণ চেনার জন্য দায়ী কোশ হল কোন (cone) কোশ। এগুলি সাধারণত তিন প্রকারের হয়, যথা — লাল সংবেদী কোন কোশ, সবুজ সংবেদী কোন কোশ ও নীল সংবেদী কোন কোশ। এই কোশগুলি যথাক্রমে লাল, সবুজ ও নীল বর্ণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এই কোশগুলিতে লাল, সবুজ ও নীল বর্ণ সংবেদী ফোটোপসিন রাক থাকে। এই রঙ্গকগুলির মধ্যে লাল ও সবুজ বর্ণ সংবেদী ফোটোপসিন সংশ্লেষ X ক্রোমোজোমস্থিত জিন দ্বারা এবং নীল বর্ণ সংবেদী ফোটোপসিন সংশ্লেষ অটোজোমস্থিত জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই জিনগুলিতে মিউটেশন ঘটলে ফোটোপসিন সংশ্লেষিত হয় না, ফলে সংশ্লিষ্ট বর্ণের সাপেক্ষে বর্ণান্ধতা দেখা দেয়।

জেনেটিক কাউন্সেলিং কীভাবে করা হয়? জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো।

জেনেটিক কাউন্সেলিং হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের জেনেটিক সমস্যা বা ঝুঁকি নিশ্চিত করা হয়। এটি পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং পরামর্শ দেওয়া বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে করা হয়।

জেনেটিক কাউন্সেলিং পদ্ধতি

একজন জেনেটিক কাউন্সেলর বা জিনগত পরামদর্শদাতা, জিনগত পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। তবে অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসকেরাও এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেসব পদ্ধতিতে জিনগত পরামর্শদাতার এই পরামর্শ প্রদান করা হয়, তা হল — 1. প্রথমে পরামর্শ গ্রহণকারী ব্যক্তির বিভিন্ন বংশগত রোগের পারিবারিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করা হয়। 2. এরপর ওই ব্যক্তির কলাকোশ বা রক্ত সংগ্রহ করে, জিনগত পরীক্ষা করে সেই ব্যক্তি রোগের বাহক কিনা নির্ণয় করা হয়। 3. ব্যক্তিটি রোগের বাহক হলে পার্টনারের জিনগত অবস্থা নির্ণয় করা হয়। 4. উভয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সন্তানের মধ্যে রোগটির সম্ভাবনা ও তীব্রতা নির্ণয় করা হয়। 5. রোগটির প্রকৃতি ও সন্তান গ্রহণের সমস্যা ও ঝুঁকি সম্পর্কে রোগীর কাছে ব্যাখ্যা করা হয়। 6. ভ্রূণে রোগ দেখা দিলে প্রয়োজনে গর্ভপাত ও পরবর্তী সন্তান গ্রহণে সাহায্য করা হয়।

জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজনীয়তা

প্রধানত থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য কয়েকটি জিনগত রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন। যেমন — 1. বিবাহের পূর্বে উভয় পার্টনার থ্যালাসেমিয়া বা অন্য কোনো জিনগত রোগের বাহক কিনা তা নির্ণয়ের সময়ে, 2. সন্তান ধারণের সময় মাতা ও পিতার বয়স বেশি হলে, (পিতা > 40 বছর, মাতা 35 বছর), 3. পরিবারে থ্যালাসেমিয়া বা অন্য কোনো জিনগত রোগের ইতিহাস থাকলে, 4. ভ্রূণ অবস্থায় বা কোনো অচিহ্নিত কারণে শিশুর মৃত্যু হলে বা রোগগ্রস্ত শিশু জন্মগ্রহণ করলে জিনগত পরামর্শ নেওয়া বা জেনেটিক কাউন্সেলিং প্রয়োজনীয়।

জেনেটিক কাউন্সেলিং কাকে বলে? থ্যালাসেমিয়ার মোকাবিলায় জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর ভূমিকা লেখো।

জেনেটিক কাউন্সেলিং হল মানব জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা সম্ভব উপস্থাপন বা পুনরুদ্ধার করে যায় এবং জেনেটিক সমস্যা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়।

জেনেটিক কাউন্সেলিং

কোনো ব্যক্তির পরিবারের জিনগত রোগের ইতিহাস বিশ্লেষণ ও জেনেটিক পরীক্ষার দ্বারা ভবিষ্যতে সুস্থ অথবা জেনেটিক রোগসম্পন্ন সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা নির্ণয় করা বা জিনগত রোগবিহীন সুস্থ সন্তানলাভে সাহায্য করার প্রক্রিয়াকে জেনেটিক কাউন্সেলিং বলে।

থ্যালাসেমিয়া ও জেনেটিক কাউন্সেলিং

থ্যালাসেমিয়া ও জেনেটিক কাউন্সেলিং

থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ। এই জিনঘটিত রোগটি বংশপরম্পরায় বাহিত হয়। তাই এর মোকাবিলায় জেনেটিক কাউন্সেলিং প্রয়োজনীয়। থ্যালাসেমিয়া রোগে হিমোগ্লোবিন কম তৈরি হওয়ায় রক্তাল্পতা দেখা যায়। ফলে দেহে সঠিকভাবে অক্সিজেনের সরবরাহ হয় না। এই রোগে ঘনঘন রক্ত বদলানোর দরকার হয়। ফলে দেহে লোহার সঞ্চয় হওয়ায় হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ ও অন্তঃক্ষরা তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসব পরিবারে থ্যালাসেমিয়া দেখা যায় সেই সব পরিবারে থ্যালাসেমিয়া রোধে বিবাহের আগে হস্তবিচার বা কুষ্ঠীবিচার না করে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের জিনগত বিশুদ্ধতা বা থ্যালাসেমিয়া জিনের প্রকৃতি দেখে নেওয়া প্রয়োজন এবং জিনগত পরামর্শের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের থ্যালাসেমিয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব। জিনগত পরামর্শের মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা সম্ভব যে, পিতা ও মাতা উভয়েই β থ্যালাসেমিয়া মাইনর-এ আক্রান্ত হলে তাঁদের 25% সন্তান স্বাভাবিক, 50% সন্তান β থ্যালাসেমিয়া মাইনর-এ আক্রান্ত এবং 25% সন্তান β থ্যালাসেমিয়া মেজর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। বিবাহের আগে বা গর্ভসঞ্চারের পূর্বে থ্যালাসেমিয়া রোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং করা উচিৎ।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ অধ্যায় থেকে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরগুলি শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে তাদের বোঝার প্রদর্শন করার জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ। এই প্রশ্নগুলি শিক্ষার্থীদের জিনগত রোগ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ব্যবহার করতে এবং তাদের নিজস্ব শব্দে উত্তর দিতে উত্সাহিত করে। এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে জিনগত রোগের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে একটি দৃঢ় বোঝার প্রয়োজন।

Share via:

মন্তব্য করুন