উত্তরের সমভূমি অঞ্চল সম্পৰ্কে যা জানো লেখো

দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষায় “উত্তরের সমভূমি অঞ্চল সম্পৰ্কে যা জানো লেখো” প্রশ্নটি বারবার দেখা যায়। এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ভারতের ভূপ্রকৃতি বিভাগের একটি মৌলিক ধারণা।

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা উত্তরের সমভূমি অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব যা আপনাকে পরীক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল সম্পৰ্কে যা জানো লেখো

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল সম্পৰ্কে যা জানো লেখো

হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণ ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যে অবস্থিত বিশাল সমতল ভূমি অঞ্চলকে উত্তরের সমভূমি অঞ্চল বলা হয়। সিন্ধু, গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র নদী এবং তাদের অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী দীর্ঘকাল ধরে পলি জমা করে এই সমতল ভূমি গঠন করেছে। এই অঞ্চলটি ভারত তথা বিশ্বের বৃহত্তম নদী-নির্মিত সমভূমি অঞ্চল।

এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি সমতল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুযায়ী, এই বিশাল সমভূমি অঞ্চলকে এক সময় চার ভাগে ভাগ করা হত:

ভাবর অঞ্চল

  • হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত।
  • নদীবাহিত নুড়ি, পাথর প্রভৃতি সঞ্চিত ঈষৎ ঢেউখেলানো ভূমি।
  • পাহাড়ি নদী থেকে আসা পলি ও প্রস্তরকণা পলিবাহিত জলের সাথে প্রবাহিত হয়ে ভাবর অঞ্চল তৈরি করে।
  • বনভূমি ও ঝোপঝাড়ে আচ্ছাদিত।

তরাই অঞ্চল

  • ভাবর অঞ্চলের দক্ষিণে অবস্থিত।
  • নবীন পলিগঠিত অপেক্ষাকৃত নিম্নভূমি অঞ্চল।
  • হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলি প্রচুর পলি বহন করে তরাই অঞ্চল তৈরি করে।
  • ঘন জঙ্গল ও উর্বর কৃষিভূমি সমৃদ্ধ।

ভাঙ্গর অঞ্চল

  • গঙ্গা সমভূমির প্লাবন অববাহিকায় অবস্থিত।
  • প্রাচীন পলি সঞ্চিত হয়ে যে ধাপযুক্ত ভূমি গঠিত হয়েছে, তাকে ভাঙ্গর অঞ্চল বলা হয়।
  • প্লাবনের সময় নদীর পানি পলি সঞ্চয় করে ভাঙ্গর তৈরি করে।
  • উঁচু-নিচু ভূমি, কৃষি উপযোগী।

খাদার অঞ্চল

  • ভাঙ্গর অঞ্চলের পরে অবস্থিত নিম্নভূমি এলাকা।
  • একেবারে নতুন পলিগঠিত ভূমি।
  • উত্তরপ্রদেশে খাদার ও পাঞ্জাবে বেট নামে পরিচিত।
  • প্রতি বছর প্লাবনের সময় নদী নতুন পলি সঞ্চয় করে খাদার তৈরি করে।
  • অত্যন্ত উর্বর কৃষিভূমি।

উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব

কৃষিক্ষেত্রে

  • সমভূমি অঞ্চলের মাটি নদী-বাহিত পলি দ্বারা পুষ্ট, যা কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উর্বর করে তোলে।
  • প্রচুর সূর্যালোক এবং মৌসুমী বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলকে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদনের জন্য আদর্শ করে তোলে।
  • ধান, গম, পাট, তুলা, আখ, সয়াবিন – সমভূমি অঞ্চলে উৎপাদিত প্রধান ফসল।

পরিবহন ব্যবস্থায়

  • সমতল ভূ-প্রকৃতির কারণে সমভূমি অঞ্চলে সড়ক, রেলপথ, বিমানবন্দর নির্মাণ করা সহজ ও সহজলভ্য।
  • জলপথ পরিবহন ব্যবস্থাও এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা মানুষ ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করে।

শিল্পায়নে

  • উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা এবং কাঁচামাল সংগ্রহের সুবিধার কারণে সমভূমি অঞ্চলে শিল্প স্থাপন করা হয়।
  • লৌহ-ইস্পাত, তৈরি পোশাক, রাসায়নিক, ইলেকট্রনিক – এই অঞ্চলের প্রধান শিল্প।
  • শিল্পের বিকাশ সুযোগ সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে।

জনসংখ্যায়

  • জীবিকা অর্জনের সুযোগ বেশি থাকায় সমভূমি অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘন।
  • কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, পরিষেবা – এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা।
  • উন্নত জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এই অঞ্চলকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

সাংস্কৃতিক উন্নয়নে

  • জীবিকা অনায়াসসাধ্য বলে সমভূমি অঞ্চলের মানুষ সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্পচর্চায় বেশি মনোযোগ দিতে পারে।
  • সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য।
  • শিল্পকলা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নাট্য – এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সম্পদ।

আরও পড়ুন – চিত্রসহ হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির কারণ আলোচনা করো।

আজকের আর্টিকেলে আমরা হিমালয়ের সর্বদক্ষিণের পর্বতশ্রেণী সম্পর্কে জেনেছি। এই তথ্য দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ”-এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগের একটি অংশ।

Share via:

মন্তব্য করুন