গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

আজকের আলোচনার বিষয় হলো গাঙ্গেয় সমভূমি। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ অধ্যায়ের ভারতের ভূপ্রকৃতি বিভাগে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারব।

গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান –

পশ্চিমে যমুনা নদী, দক্ষিণ-পূর্বদিকে গঙ্গার মোহানা, উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমি — –এর মধ্যবর্তী বিশাল সমতল, অঞ্চলটির নাম গাঙ্গেয় সমভূমি। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিস্তৃত এই সমভূমির মোট আয়তন প্রায় 3 লক্ষ 75 হাজার বর্গকিমি।

গাঙ্গেয় সমভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

এই সমভূমি অঞ্চলটিকে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অনুসারে তিনটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা যায়।

উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল –

  • অঞ্চলটি পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে এলাহাবাদ পর্যন্ত প্রসারিত।
  • পশ্চিমে অঞ্চলটির গড় উচ্চতা 220 মি এবং পূর্বে 100 মি।
  • অঞ্চলটি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ঢালু। উত্তরাংশে সংকীর্ণ ভাবর ও তরাইভূমি দেখা যায়।
  • এই অঞ্চলের প্রাচীন পলি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা ভাঙ্গর নামে ও নবীন পলি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা খাদার নামে পরিচিত।

মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল –

অঞ্চলটি এলাহাবাদ থেকে পূর্বদিকে বিহারের পূর্ব সীমা পর্যন্ত প্রসারিত। প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য।

  • পূর্বদিকে এর উচ্চতা ক্রমহ্রাসমান (প্রায় 35 মি)।
  • এই অঞ্চলটির পূর্বাংশ বিহার রাজ্যে এবং পশ্চিমাংশ উত্তরপ্রদেশের মধ্যে অবস্থিত।
  • অঞ্চলটির পশ্চিমদিকে রাজমহল পাহাড় আছে।
  • শিবালিকের পাদদেশে প্রস্তরময়, নুড়ি ও বালিপূর্ণ ভূমিভাগ ভাবর নামে পরিচিত।
  • ভাবরের দক্ষিণে জঙ্গলময়, জলাকীর্ণ, অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে তরাই বলা হয়।

নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল –

  • ভারতে এই অংশটি বিহারের পূর্ব সীমা থেকে হুগলি নদীর মোহানা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • এই অংশটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় — 1. উত্তরবঙ্গের সমভূমি (হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উৎপন্ন গঙ্গা-পদ্মার উপনদীগুলি দ্বারা গঠিত), 2. রাঢ় সমভূমি (ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন গঙ্গার উপনদীগুলি দ্বারা গঠিত) ও 3. বদ্বীপ সমভূমি (গঙ্গা-পদ্মা ও তার শাখাপ্রশাখা নদীগুলি দ্বারা গঠিত)।
  • বদ্বীপ সমভূমির তিনটি অংশ হল — 1. মৃতপ্রায় বদ্বীপ, 2. পরিণত বদ্বীপ ও 3. সক্রিয় বদ্বীপ।
গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান

গাঙ্গেয় সমভূমি হল ভারতের কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্রস্থল। এর অনন্য ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এই অঞ্চলকে জনসংখ্যা ঘনত্বের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রেখেছে।

Share via:

মন্তব্য করুন