একটি গাছ, একটি প্রাণ – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের আলোচনার বিষয় “একটি গাছ, একটি প্রাণ”। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। “একটি গাছ, একটি প্রাণ” বিষয়টি প্রায়শই পরীক্ষায় দেখা যায়। এই রচনাটি একবার মুখস্থ করলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন।

একটি গাছ, একটি প্রাণ - প্রবন্ধ রচনা

একটি গাছ, একটি প্রাণ – প্রবন্ধ রচনা

“অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদি প্রাণ,
ঊর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা
ছন্দহীন পাষাণের বক্ষ পরেচ আনিলে বেদনা
নিঃসার নিষ্ঠুর মরুতলে।”

– বৃক্ষবন্দনা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা –

সৃষ্টির উষালগ্নে এই পৃথিবীতে ছিল একমাত্র গাছ-শুধুই অরণ্য। তারপর একসময় এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়। তখনকার প্রতিকূল পরিবেশে মানুষ প্রাণ ধারণ করেছিল একমাত্র গাছকে আশ্রয় করেই। তারা গাছের ছাল দিয়ে বস্ত্র তৈরি করে, গাছের ফলমূল খেয়ে গাছের কোটরে বসবাস করতে শুরু করে। এভাবেই তারা তখন জীবন কাটাত। বৃক্ষই একদিন মরু পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করে ‘মরুর দারুণ দুর্গ হতে’ মৃত্তিকাকে মুক্তি দিয়েছিল। তাই বৃক্ষই আমাদের আদিপ্রাণ।

বৃক্ষচ্ছেদন ও কারণ –

প্রাচীন কালে মানুষ যে-কোনো পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ করত। পুত্র জন্ম নিলে তার মঙ্গলের কথা ভেবে বৃক্ষরোপণ করা হত। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার অরণ্যবাসী জীবন ছেড়ে হয়েছে সামাজিক। ক্রমে জনসংখ্যা বেড়েছে। মানুষ অরণ্য কেটে তৈরি করেছে শহর, নগর। আধুনিক সভ্যতার প্রয়োজন মেটাতে আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, যানবাহন প্রভৃতি তৈরির উদ্দেশ্যে ক্রমেই অরণ্যের ধ্বংস সাধন করা হয়েছে। এখনকার যান্ত্রিক সভ্যতায় আমরা অতিমাত্রায় যান্ত্রিক হয়ে উঠেছি। মানবজীবনে বৃক্ষের গুরুত্ব বা উপযোগিতা ভুলে গেছি।

মনুষ্যজীবনে বৃক্ষের অবদান –

মনুষ্যজীবনে বৃক্ষের অবদান প্রচুর। বৃক্ষের আশীর্বাদস্বরূপ আমরা বসবাসের গৃহ, আসবাবপত্র, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, ওষুধ প্রভৃতি পাই। সর্বোপরি বৃক্ষ আমাদের পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের জোগান দেয়। দ্বিতীয়ত, গাছ ভূমিক্ষয়ে বাধা দেয়। তৃতীয়ত, গাছই আমাদের এই বিশাল জীবজগতের খাদ্য ও শক্তির প্রধান উৎস। গাছের মধ্যে যে শক্তি নিহিত থাকে, কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতির মাধ্যমে আমরা তা পেয়ে থাকি। চতুর্থত, এই বনজসম্পদ থেকেই বিভিন্নপ্রকার জীবনদায়ী ওষুধ প্রস্তুত হয়, যেমন – কুইনাইন, রেসারপিন, অ্যাট্রোপিন ইত্যাদি। ম্যাপল গাছের পাতার সংস্পর্শে এসে আমাশয়ের রোগজীবাণু বিনষ্ট হয়। অরণ্য সম্পদের ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন (O₃) স্তরের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ওই স্তর ভেদ করে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মি আমাদের গায়ে সরাসরি এসে পড়ছে। এর ফলে নানাবিধ চর্মরোগ, এমনকি ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য রোগও হচ্ছে। এককথায় বায়ুদূষণ প্রতিরোধ, মৃত্তিকাক্ষয় প্রতিরোধ, জলের পূর্ণ ব্যবহার ও পরিবেশের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম।

অরণ্য সংরক্ষণ –

অরণ্য সংরক্ষণের সহজতম অথচ শক্তিশালী উপায় হল বনমহোৎসব। রবীন্দ্রনাথ বনমহোৎসবের আহ্বান করেছিলেন এই বলে – মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে/হে প্রবল প্রাণ/ধূলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে/হে কোমল প্রাণ। আজ এই পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশে প্রধান জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয় কাঠ। কাজেই সভ্যসমাজের ব্যাবহারিক চাহিদা মেটাতে আমাদের গাছ কাটতেই হবে। সেক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে বনভূমি সৃজনের প্রয়োজন। এই কাজের একমাত্র পথ বনমহোৎসব বা বৃক্ষরোপণ উৎসব পালন। ভারতে অরণ্যসৃজনের চেয়ে অরণ্যধ্বংসের হার বেশি। যেখানে বিগত ২০-২১ বছরে ভারতে প্রায় ৩৮-৪০ লক্ষ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে, সেখানে বনসৃজন হয়েছে মাত্র ২৩-২৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে।

বনমহোৎসব –

ভারতের বনাঞ্চলের আয়তন বেশ কম। যেখানে বনের পরিধি হওয়া উচিত মোট ভূভাগের ১/৩ অংশ, সেখানে ভারতের বনাঞ্চলের পরিধি মোট ভূভাগের মাত্র ১/৬ অংশ। এই ১/৩ অংশের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ মনুষ্যসৃষ্ট। ভারতের মোট রাজস্বের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আসে বনজসম্পদ থেকে। যে জ্বালানি সম্পদে ভারত ঐশ্বর্যশালী তার প্রায় ৬০ শতাংশ হল বনজসম্পদের দান।

উপসংহার –

বৃক্ষ আমাদের আদিপ্রাণ, আমাদের রক্ষাকর্তা। তাই তাকে রক্ষার জন্য সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। ধ্বংসপ্রায় অরণ্য যেন মমতাময়ী জননীর ন্যায় আজও আমাদের হাতছানি দেয় –

হানো যদি কঠিন কুঠারে,
তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেব বারে বারে;
ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন।

আজকের আলোচনার বিষয় ছিল “একটি গাছ, একটি প্রাণ”। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। “একটি গাছ, একটি প্রাণ” বিষয়টি প্রায়শই পরীক্ষায় দেখা যায়।

এই প্রবন্ধটি মুখস্থ করলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য প্রয়োজনীয় মূল ধারণাগুলি পাবেন। তবে, কেবল মুখস্থ করার চেয়ে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করা উচিত। গাছের সাথে আমাদের সম্পর্ক, তার গুরুত্ব, এবং আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে নিজের চিন্তাভাবনা যোগ করলে প্রবন্ধটি আরও সমৃদ্ধ হবে।

পরিশেষে, মনে রাখবেন যে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য। গাছ আমাদের জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে,

Please Share This Article

Related Posts

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা।

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় – প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান – প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?