আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – প্রবন্ধ রচনা

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – প্রবন্ধ রচনা বিষয়ে আলোচনা করবো। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই বিষয়টি দেখা যায়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা, এবং এই রচনাটি মুখস্ত করে রাখলে আপনি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – প্রবন্ধ রচনা

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?

– আবদুল গফফর চৌধুরী

ভূমিকা –

বাংলা ভাষা আন্দোলন হচ্ছে বাংলা ভাষার অধিকাররক্ষাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)-এ সংঘটিত হওয়া একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ২১ ফেব্রুয়ারিতে এটি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও অনেক আগে থেকেই এর বীজ বপন শুরু হয়েছিল।

পটভূমি –

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৫ আগস্ট ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’-এর ভিত্তিতে অখণ্ড ভারতবর্ষ ভেঙে পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। আবার পাকিস্তানও ছিল ভৌগোলিকভাবে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিভক্ত। সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ছিল বিস্তর ব্যবধান। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষাসম্মেলনের ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি মুদ্রা ‘ও ডাকটিকিট থেকেও বাংলা অক্ষর লোপ করা হয়।

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া –

এর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে ছাত্রছাত্রীদের তরফ থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদাদানের দাবি তোলা হয়।

আন্দোলনের বিস্তার –

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বয়কট শুরু করে। ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবস ও ধর্মঘট পালন করা হয়। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ ঘটে। ১১ মার্চ থেকে ছাত্রছাত্রী ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চরম আকার নেয়। এই আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবর রহমান, আলি আহাদ, শওকত আলির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বেরা। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্না এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় এসে ২৬ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনকে মুসলিম সমাজের মধ্যে বিভেদ তৈরির ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন। তিনি উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। এর ফলে মানুষের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ঢাকার পল্টন ময়দানে উচ্চকিত কণ্ঠে উর্দুর সপক্ষে সওয়াল করেন। ক্রুদ্ধ ছাত্রছাত্রীরা চরম আন্দোলনের শপথ নেয়। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ১৪৪ ধারা জারি হয়। নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান আবদুল সালাম, আবদুল বরকত-সহ আরও কয়েকজন। অহিউল্লাহ নামের ৮/৯ বছরের এক শিশুও নিহত হয়। এরপর আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। ২২ ফেব্রুয়ারিতে সরকারের দমননীতির শিকার হয় আরও অনেক সাধারণ মানুষ।

সাফল্য –

আন্দোলন চরম সাফল্য পায় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে, যেদিন মুসলিম লিগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

উপসংহার –

পৃথিবীর তাবৎ বাঙালির কাছেই ২১ ফেব্রুয়ারি একটি অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। একে নিয়ে অনেক দেশাত্মবোধক গান, কবিতা, নাটক লেখা হয়েছে। মুনীর চৌধুরির লেখা নাটক ‘কবর’, শামসুর রহমান লিখিত কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ এই সময়ের সাহিত্যিক দলিল হয়ে উঠেছে। এই ভাষা আন্দোলনই ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন – বাংলার উৎসব – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আর্টিকেলে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই বিষয়ে প্রশ্ন আসে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা, এবং এই রচনাটি মুখস্ত করে রাখলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় আপনি সহজেই উত্তর লিখতে পারবেন।

Share via:

মন্তব্য করুন