দূরদর্শনের ভালোমন্দ – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আধুনিক যুগে, টেলিভিশন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিনোদন, জ্ঞান অর্জন, এবং খবরের মাধ্যম হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে, টেলিভিশনের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা টেলিভিশনের ভালোমন্দ দিকগুলো বিশ্লেষণ করব। আমরা আলোচনা করব যে টেলিভিশন আমাদের জীবনে কিভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এবং এর অতিরিক্ত ব্যবহারের কি কি ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে।

এই আলোচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুলের অন্যান্য পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ টেলিভিশনের ভালোমন্দ বিষয়টি প্রায়ই প্রশ্ন হিসেবে দেখা যায়।

এই ব্লগ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি টেলিভিশনের ভালোমন্দ দিক সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাবেন এবং পরীক্ষায় এই বিষয়ে ভালো উত্তর লিখতে সক্ষম হবেন।

দূরদর্শনের ভালোমন্দ – প্রবন্ধ রচনা

দূরদর্শনের ভালোমন্দ  – প্রবন্ধ রচনা

পৃথিবীটা নাকি ছোটো হতে হতে
স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে
ড্রয়িংঘুমে রাখা বোকাবাক্সতে বন্দী
আহাহাহা ..

– মহীনের ঘোড়াগুলি

ভূমিকা –

দূরদর্শন আধুনিক মানুষের কাছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উপহার। দূরদর্শন অচেনা পৃথিবীকে ঘরের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের জ্ঞানসাম্রাজ্যের পরিধিকে ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। এ ছাড়াও ব্যস্ত মানুষের অবসরজীবনের সঙ্গী হয়ে দূরদর্শন মানবজীবনের নিত্যসঙ্গীতে পরিণত হয়েছে।

দূরদর্শনের ভালো দিক –

ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবন—উভয়ক্ষেত্রেই দূরদর্শনের বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব আছে। গণমাধ্যম বিষয়ে তাত্ত্বিক গবেষক মেয়োবিৎস বলেছেন যে, দূরদর্শনের দৌলতেই মানুষ সেইসব জায়গায় পা ফেলতে পারছে যেগুলি তার একেবারেই আয়ত্তে ছিল না, যেমন গালফ ওয়ার বা আফগানিস্তানের যুদ্ধ ইত্যাদি। মানুষের ক্রমশ আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠা—তা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে দূরদর্শনের সাহায্যে। জাপানে সুনামি কিংবা মার্কিন দেশে উগ্রপন্থীহানা সব কিছুই ঘরে বসেই জীবন্ত হয়ে ওঠে এর কল্যাণে। আন্তর্জাতিক খেলাধুলার সরাসরি সম্প্রচার আমাদের কাছে পৌঁছে দেয় দূরদর্শনই। দূরদর্শন জ্ঞানসাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটায় আবার সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও সাহায্য করে। বিখ্যাত মানুষদের সরাসরি দেখা, নানা আলোচনা-বিতর্ক-জীবনে নিয়ে আসে অনুপ্রেরণা। আবার দূরদর্শনই তৈরি করে দেয় বিনোদনের নতুন সংজ্ঞা। সিরিয়াল-সিনেমা-রিয়েলিটি শো—বিনোদনের হাজারো আয়োজন ক্লান্ত মানুষের কাছে সময় রঙিন করে তোলে। দূরদর্শনই বিজ্ঞাপন প্রচারের সবথেকে কার্যকরী ক্ষেত্র। বিপণনকারী সংস্থার সঙ্গে ক্রেতার সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দূরদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। শিক্ষার্থীদের কাছেও দূরদর্শনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। শিক্ষামূলক নানা অনুষ্ঠান, পরীক্ষাপ্রস্তুতি বিষয়ক আলোচনা থেকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়। এভাবে ‘ইডিয়ট বক্স’ হিসেবে নিন্দিত দূরদর্শন মানবজীবনের সমৃদ্ধির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছে নানাভাবে।

দূরদর্শনের মন্দ দিক –

ভালো দিকের মতোই দূরদর্শনের নেতিবাচক প্রভাবও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সামগ্রিকভাবে সামাজিক বা ব্যক্তিগত অস্থিরতা ও বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে দূরদর্শনের নিবিড় সংযোগ। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড-এর গবেষক জন রবিনসন, স্টিভেন মার্টিন প্রমুখ প্রায় ৩০০০০ মানুষের উপরে দীর্ঘ গবেষণা করে দেখিয়েছেন পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী মানুষরা স্বাভাবিক মানুষদের তুলনায় প্রায় ৩০% বেশি সময় টিভি দেখার জন্য ব্যয় করেন। দূরদর্শনের বেশ কিছু অনুষ্ঠান স্থূল বাণিজ্যিক স্বার্থে অশ্লীলতা, হিংসা ইত্যাদিকে প্রশ্রয় দেয়। দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেখে অপরাধমূলক প্রবণতা বৃদ্ধির কিংবা বিজ্ঞাপন নকল করতে গিয়ে মৃত্যুর নজির যথেষ্টই আছে। তথাকথিত বিতর্কমূলক অনুষ্ঠানগুলি নিরপেক্ষতার অভাবের কারণে অনেকসময়েই দলীয় প্রচারের বাহন হয়ে যায়। স্বাস্থ্যের উপরেও দূরদর্শনের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলে থাকেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস অতিরিক্ত টিভি দেখাকে হার্ট অ্যাটাক, স্নায়বিক দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের গবেষকরা ১২ বছরের নীচের শিশু-কিশোরদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে টিভি সংকট তৈরি করে বলে জানিয়েছেন। আমেরিকায় বিজ্ঞানীরা টিভি দেখার নেশাকে অন্য যে-কোনো নেশার সমগোত্রীয় বলে চিহ্নিত করেছেন।

উপসংহার –

বিতর্ক সত্ত্বেও দূরদর্শনের জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। রাষ্ট্রীয় নজরদারি, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষতা এবং সুস্থ রুচির প্রতি আনুগত্য সম্ভব হলে বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কার এই দূরদর্শন মানবসমাজে বিতর্কহীন এবং বিকল্পহীন এক মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন – সাম্প্রদায়িকতা এবং ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আজকের দিনে, টেলিভিশন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি, বিনোদন প্রদান এবং বিশ্বের সাথে সংযুক্ত থাকার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তবে, টেলিভিশনের অতিরিক্ত ব্যবহার নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা টেলিভিশনের ভালোমন্দ দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে টেলিভিশন শিক্ষাগত এবং বিনোদনমূলক উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, এটি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত ব্যবহার নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

Share via:

মন্তব্য করুন