রক্তদান জীবনদান – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আলোচনার বিষয়: চরিত্র গঠনে রক্তদান জীবনদান – প্রবন্ধ রচনা, মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষা-য় প্রায়ই চরিত্র গঠনে রক্তদান জীবনদান-এর উপর প্রবন্ধ রচনা দেখা যায়। এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়শই পরীক্ষায় আসে। তাই, এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করে রাখলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন।

রক্তদান জীবনদান - প্রবন্ধ রচনা

রক্তদান জীবনদান – প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা –

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া তাই মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের অবশ্য কর্তব্য। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো কাউকে যদি জীবনের কূলে ফিরিয়ে আনতে পারি তবেই তো আমরা প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠব। রক্তদান এরকমই এক মানবিক কর্তব্য।

রক্তের অভাবের কারণ –

দেহে কতটা রক্ত থাকবে তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির দৈহিক ওজনের ওপর। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুসারে প্রত্যেক নীরোগ পুরুষ দেহে রক্ত থাকে প্রতি কেজি ওজনে ৭০ থেকে ৭৬ মিলিলিটার পর্যন্ত। মহিলাদের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণটি হল ৬৬ থেকে ৭০ মিলিলিটার। অথচ ভীষণ পরিশ্রমের কাজ করতে হলেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতি কেজিতে ৫০ মিলিলিটার রক্তই যথেষ্ট। তাই বলা যায়, আমাদের দেহে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত রক্ত মজুত থাকে। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার কিংবা ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি বা Ray দেওয়ার ফলে বেশি পরিমাণে রক্তকোশ নষ্ট হয়ে গেলে একজন মানুষের দেহে বাইরে থেকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর রক্ত তৈরির একমাত্র কারখানা হচ্ছে মানুষের শরীর। তাই রক্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে একজন মানুষকে এগিয়ে এসে তার দেহের অতিরিক্ত রক্ত থেকে কিছুটা দান করতে হয়। তাতে করে মুমূর্ষু রোগী প্রাণ ফিরে পায়।

রক্তদানের ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব –

রক্তদানে রক্তদাতার কোনো ক্ষতি হয় না। দেয় রক্তের ঘাটতি পূরণের জন্য ভালো খাবারেরও প্রয়োজন নেই। সাধারণ ভাত-রুটি-সবজিই যথেষ্ট। মানবদেহের স্বাভাবিক নিয়মেই পুনরায় রক্ত তৈরি হয়, আবার প্রতি কেজিতে ৭৬ মিলিলিটারের চেয়ে বেশি রক্ত জমাও থাকে না। তাই এবিষয়ে রক্তের আধিক্য ও ঘাটতি নিয়ে সাধারণের মধ্যে যে ধারণা দেখা যায়, তা একেবারে ভ্রান্ত।

রক্তদানের ইতিবাচকতা –

রক্তদানে শুধু গ্রহীতাই উপকৃত হন না, দাতা নিজেও লাভবান হন। জন্ডিস, এইচআইভি প্রভৃতি মারাত্মক রোগজীবাণু দেহে বাসা বেঁধেছে কি না, রক্তদানের সময় এসব নিখরচায় পরীক্ষা করা সম্ভব। পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত গোপনীয় রাখা হয় এবং কোনো রোগ ধরা পড়লে সেক্ষেত্রে উদ্দিষ্ট দাতাকেই তা জানানো হয়। রক্তদানের পর রক্তদাতাকে রক্তের গ্রুপ সংবলিত একটি কার্ডও দেওয়া হয়, যা রক্তের গ্রুপের নিশ্চিত প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করে। রক্তদানের ফলে দাতার দেহে উৎপন্ন নতুন রক্তকণিকা তার শরীরকে সতেজ ও চনমনে করে রাখে।

রক্তদানের যোগ্যতা –

রক্তদানের যোগ্যতা নির্ধারণের তিনটি প্রাথমিক শর্ত রয়েছে – 

  • রক্তদাতার বয়স ১৮-৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • তার দেহের ওজন হতে হবে ৪৫ কেজি বা তার বেশি।
  • ইচ্ছুক দাতার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমপক্ষে ১২.৫ শতাংশ হতে হবে।

উপসংহার –

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এমনকি স্কুলকলেজেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। সমস্ত কুসংস্কার ও ভুলবোঝা থেকে মানুষকে বিরত করে সেই সমস্ত শিবিরে সর্বস্তরের জনসাধারণকে যোগদানে উদবুদ্ধ করাই আমাদের, অর্থাৎ ছাত্রসমাজের দায়িত্ব হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন – রক্তদান জীবনদান – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আলোচনার মাধ্যমে আমরা “রক্তদান জীবনদান” প্রবন্ধ রচনার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই ধরণের প্রবন্ধ রচনা দেখা যায়। চরিত্র গঠনের জন্য এই রচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই রচনার বিষয়বস্তু মুখস্থ করে রাখলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় “রক্তদান জীবনদান” বিষয়ক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।

Share via:

মন্তব্য করুন