আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একটি সেতুর আত্মকাহিনী – প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো। এই ধরণের প্রবন্ধ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। একটি সেতুর আত্মকাহিনী – প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা কারণ এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও ভাবনা প্রকাশের ক্ষমতা পরীক্ষা করে। এই রচনাটি একবার মুখস্ত করে রাখলে শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।
একটি সেতুর আত্মকাহিনি – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
আমি একটি বহু পুরোনো কিন্তু অতি বিখ্যাত সেতু। আমাকে তৈরি করতে তখনকার দিনেই খরচ হয়েছিল আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা। প্রায় ছাব্বিশ হাজার পাঁচশো টন স্টিল ব্যবহৃত হয়েছে আমার নির্মাণকাজে। হাওড়া ব্রিজ কমিশনারের তত্ত্বাবধানে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে আমাকে তৈরির কাজ শুরু হয় এবং তা শেষ হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে। তবে সাধারণের ব্যবহারের জন্য আমায় খুলে দেওয়া হয় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে। আজ এতগুলো বছর পার করে এসে আমি শ্রান্ত, ক্লান্ত বটে, কিন্তু তবে সাধারণের ভালোবাসার ছোঁয়ায় আমি গর্বিত।
নিজের জীবনের নানা কথা –
আমাকে তৈরি করার আগে বিশাল গঙ্গানদী ফেরি নৌকায় পার হতে হত। তাতে বহু বিপদ ঘটত, আর অনেক সময়ও লাগত। তাই এই নদীর ওপর আমাকে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হল। একদিকে হাওড়া শহর ও অন্যদিকে কলকাতা শহর আমার মাধ্যমে যুক্ত হল। আমি হলাম ভারতের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু। সবার সঙ্গে ভাগ করে নিলাম আমার আনন্দ। কত মানুষ গঙ্গার হাওয়া খেতে আমার কোলে ছুটে আসে। কত মানুষ আমার উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আমার ছবি তোলে। তখন আমার খুব মজা লাগে। ‘হাওড়া ব্রিজ’ নামে একটা সিনেমা তৈরি করেছিলেন শক্তি সামন্ত। কিন্তু দুঃখের ঘটনাও থাকে। হয়তো কেউ জীবনের দুঃখ সহ্য করতে না পেরে আমার ওপর থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। কখনও-বা বিকৃতমস্তিষ্ক কোনো অভাগা আমার সবথেকে উঁচু চূড়ায় উঠে বসে। নীচে জনসাধারণ তাকে দেখে অনেক সময় মজাও করে থাকে। কিন্তু আমার তখন বুক ঢিপঢিপ করে-এই বুঝি লোকটা পড়ে গিয়ে বিপদ ঘটায়। তোমরা আমার অনেক খেয়াল রাখ, যত্ন কর, কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে আলোর মালায় আমাকে সাজিয়ে তোলো। কিন্তু যানবাহনের চাপে মাঝে মাঝে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। দিনে দিনে আমারও তো বয়স বাড়ছে। বয়সের ভারে মাঝে মাঝে আমার শরীর জীর্ণ হয়। তখন তোমরা আমায় মেরামত কর। আমি তাই আজও টিকে আছি। আমার উপর তোমরা ভারী ট্রাম চালানো বন্ধ করে দিয়েছ। আমার ভারবহনের ক্ষমতা কমে গেছে বলে তোমরা গঙ্গাবক্ষে তৈরি করেছ দ্বিতীয় হুগলি সেতু। অনেকে বলে এর ফলে আমার আগের গৌরব নাকি অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু আমি তা মনে করি না। স্বাধীনতা, কত রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাক্ষী আমি। এ গৌরব দ্বিতীয় হুগলি সেতু কোনোদিনও পাবে না।
উপসংহার –
আমার জন্য তোমাদের ভালোবাসা কম নয়। ভালোবেসে তোমরা আমার একটা সুন্দর পোশাকি নাম দিয়েছ-‘রবীন্দ্র সেতু’। বাংলার অমর কবির নামে নামাঙ্কিত আমি, আমার শরীর হয়তো কোনোদিন কালের অতলে বিলীন হবে, কিন্তু আমার বিশ্বাস, তোমাদের মনে আমি চিরদিন অমর হয়ে থাকব।
আরও পড়ুন – একটি শহরের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা
আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা একটি সেতুর আত্মকাহিনী – প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় এবং স্কুল পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ধরণের প্রশ্ন বারবার পরীক্ষায় দেখা যায়। তাই, এই রচনাটি একবার মুখস্ত করলে, আপনি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।