আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” এর থেকে “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

বিশ শতকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী প্রধান জাতীয় আন্দোলনগুলির নাম উল্লেখ করো।
বিশ শতকে ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের মনে যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত ছিল একাধিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলির মধ্য দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসমূহ –
বিশ শতকে ভারতবর্ষে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় আন্দোলনগুলি হল – স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন, অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রভৃতি।
1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর দিনটি ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
1905 খ্রিস্টাব্দের 5 জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, আসাম, ঢাকা, চট্টগ্রাম, পার্বত্য ত্রিপুরা, রাজশাহী-কে একত্র করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম এবং বিহার ও উড়িষ্যাকে একত্র করে পশ্চিমবঙ্গ নামে নতুন প্রদেশ গঠিত হবে। সেইমতো ওই বছরের 16 অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের দিন ধার্য করা হয়।
1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর দিনটি ভারতের ইতিহাসে গুরুত্ব কারণ –
16 অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে বাংলায় যে প্রবল বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, তা বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন নামে পরিচিত। এই দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে রাখিবন্ধন উৎসব এবং রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর উদ্যোগে অরন্ধন দিবস পালিত হয়। এই কারণেই ভারতের ইতিহাসে 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
রাখিবন্ধন সম্পর্কে কী জানো?
রাখিবন্ধন হল হিন্দুধর্মের একটি উৎসব। এই উৎসবে সম্প্রীতি ও মঙ্গলের প্রতীকরূপে ‘রাখি’ ব্যবহৃত হয়। বঙ্গভঙ্গ কার্যকরের দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে রাখিবন্ধন উৎসব পালিত হয়।
রাখিবন্ধনের গুরুত্ব –
1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর বড়োলাট লর্ড কার্জন পূর্ব বাংলার মুসলমান ও পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের বিভক্ত করার জন্য বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। এর প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে হিন্দু-মুসলমান একে অপরকে রাখি পরিয়ে দেয়। হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনই ছিল রাখিবন্ধন উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।
অরন্ধন দিবস কে, কবে প্রবর্তন করেন? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের সূচনা হয়। বাংলার নারীসমাজ এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
অরন্ধন দিবস প্রবর্তন –
রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর অরন্ধন দিবস পালনের আবেদন জানান।
অরন্ধন দিবসের উদ্দেশ্য –
- বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদস্বরূপ বাংলার নারীসমাজ ঘরে ঘরে অরন্ধন পালন করে।
- রন্ধনের কাজ থেকে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে তারা প্রধানত বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গভঙ্গ ছিল তাদের কাছে একপ্রকার জাতীয় শোকের সমতুল্য।
কে, কবে ও কোথায় মিলন মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন? মিলন মন্দির স্থাপনের উদ্দেশ্য কী ছিল?
বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ সক্রিয়ভাবে যোগদান করে। বিখ্যাত নেতা আনন্দমোহন বসু 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিনে কলকাতার আপার সার্কুলার রোডে মিলন মন্দির বা ফেডারেশন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মিলন মন্দির স্থাপনের উদ্দেশ্য –
বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদস্বরূপ মিলন মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে মিলন মন্দির বা ফেডারেশন হল প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিংশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
বিংশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- মধ্যবিত্ত হিন্দু নারীদের অংশগ্রহণ – বিংশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনে মধ্যবিত্ত হিন্দু নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
- সহযোগীর ভূমিকায় নারীদের অংশগ্রহণ – নারীরা অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লবীদের আশ্রয় দেওয়া, তাদের আত্মগোপন করতে সাহায্য করা, অস্ত্র সরবরাহ করা, গোপন সংবাদ আদানপ্রদান করার কাজে সহায়তা করেন।
স্বদেশি আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন ছিল?
স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলার নারীসমাজ বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করে।
স্বদেশি আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ –
- নারীদের নেতৃত্ব – এই আন্দোলনে শহর ও গ্রামের নারীরা নেতৃত্ব দেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- সরলাদেবী চৌধুরাণী, গিরিজাসুন্দরী দেবী, কুমুদিনী বসু, লীলাবতী মিত্র, হেমাঙ্গিনী দাস, নির্মলা সরকার ও সুবালা আচার্য।
- নারীদের কার্যকলাপ – নারীসমাজ স্বদেশি ও বয়কট কর্মসূচিকে সফল করে এবং বিপ্লববাদে সাহায্য করে।
স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?
স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের পদক্ষেপ –
- স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ ছিল স্বদেশি দ্রব্যের ব্যবহার।
- বিদেশি জিনিস বর্জন।
- অরন্ধন দিবস পালন করা এবং আন্দোলনকারী ও বিপ্লবীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করা ইত্যাদি।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন নারীর নাম লেখো।
1905 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন বাংলা প্রদেশকে দু-ভাগে বিভক্ত করলে বাংলার জনগণ এর তীব্র বিরোধিতা করে। বাংলার নারীসমাজ স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব-প্রদানকারী কয়েকজন বিশিষ্ট নারীরা হলেন – সরলাদেবী চৌধুরাণী, কুমুদিনী বসু, লীলাবতী মিত্র, নির্মলা সরকার, হেমাঙ্গিনী দাস প্রমুখ।
সরলাদেবী চৌধুরাণী বিখ্যাত কেন?
সরলাদেবী চৌধুরাণী ছিলেন বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের একজন নেত্রী।
সরলাদেবী চৌধুরাণীর অবদান –
তিনি ভারতী পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করে নারীশক্তিকে উজ্জীবিত করেন।
সরলাদেবী চৌধুরাণীর বিভিন্ন উৎসবের আয়োজক –
সরলাদেবী 1902-1904 খ্রিস্টাব্দে প্রতাপাদিত্য উৎসব, বীরাষ্টমী ব্রত ইত্যাদির আয়োজন করে নারীদের শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত করার চেষ্টা করেন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য সরলাদেবী স্মরণীয় হয়ে আছেন।
কী উদ্দেশ্যে প্রতাপাদিত্য উৎসব ও বীরাষ্টমী ব্রত পালিত হয়?
বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলন পরিচালনায় সরলাদেবী চৌধুরাণীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কয়েকটি উৎসবের আয়োজন করেন, যথা – বীরাষ্টমী ব্রত, প্রতাপাদিত্য উৎসব প্রভৃতি।
বীরাষ্টমী ব্রত ও প্রতাপাদিত্য উৎসব পালনের উদ্দেশ্য –
- বাঙালি যুবকদের হীনম্মন্যতা দূর করে আত্মশক্তিতে উদ্দীপিত করা ছিল বীরাষ্টমী ব্রতের মূল উদ্দেশ্য। এর প্রধান কর্মসূচি ছিল যুবকদের শরীরচর্চা।
- জাতীয় বীরদের সম্বন্ধে প্রবন্ধ পাঠ, বক্তৃতার মাধ্যমে বীরপুজার আদর্শ তুলে ধরাই ছিল প্রতাপাদিত্য উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য।
কে প্রথম গান গেয়ে ভারতীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন?
রবীন্দ্রনাথের ভাগিনেয়ী সরলাদেবী চৌধুরাণী 1901 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে গান গেয়ে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কেন গঠিত হয়?
বাংলাদেশে স্বদেশি আন্দোলনের সময় সরলাদেবী চৌধুরাণী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেন।
- অর্থসংগ্রহ – স্বদেশি আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। হেমাঙ্গিনী দাস, লীলাবতী মিত্র, কুমুদিনী মিত্র প্রমুখ নেত্রীরা চাঁদা সংগ্রহ করে এখানে জমা রাখতেন।
- বিপণন কেন্দ্র – বয়কট কর্মসূচি সফল করার জন্য স্বদেশি পণ্যের জোগান ও বিপণন প্রয়োজন ছিল।
বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথায় কী বলা হয়?
1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথার গুরুত্ব ছিল উল্লেখযোগ্য।
বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা –
- মুরশিদাবাদের কান্দিতে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর বাড়িতে সমবেত হয়ে প্রায় ৫০০ জন মহিলা বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা শুনেছিলেন।
- এই ব্রতকথায় বঙ্গভঙ্গবিরোধী নারী আন্দোলনে দেবী লক্ষ্মীকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- এখানে বলা হয় বঙ্গভঙ্গের জন্য মা লক্ষ্মী দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য সকল নারীকে চেষ্টা করতে হবে।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে গিরিজাসুন্দরী দেবীর অবদান কী ছিল?
বিশ শতকের শুরুতে 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় যে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল তাতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনে যুক্ত নারীরা সামাজিক পীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
গিরিজাসুন্দরী দেবীর ভূমিকা –
- কবি রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর কন্যা ছিলেন গিরিজাসুন্দরী দেবী। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
- গিরিজাসুন্দরী দেবী নারীদের সমবেত করে বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা শোনাতেন এবং বিদেশি পণ্য বয়কটে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতেন।
বাংলার সংগ্রামী ইতিহাসে মনোরমা বসু কী কারণে স্মরণীয়?
বিংশ শতকের সূচনায় বড়োলাট লর্ড কার্জন বাংলাদেশকে বিভক্ত করলে তার প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গবিরোধী বা স্বদেশি আন্দোলনের সূচনা হয়। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে বরিশালনিবাসী মনোরমা বসুর ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
বাংলার সংগ্রামী ইতিহাসে মনোরমা বসুর ভূমিকা –
বাঙালি হিন্দু পরিবারের গৃহবধূ হয়েও বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে তিনি যোগ দেন এবং নারীবাহিনী গঠনের মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। একারণে বাংলার জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে মনোরমা বসু স্মরণীয় হয়ে আছেন।
স্বদেশি আন্দোলনে মুকুন্দদাসের অবদান লেখো।
স্বদেশি আন্দোলনের সময় স্বদেশি ও বয়কট কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে চারণকবি মুকুন্দদাস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
স্বদেশি আন্দোলনে মুকুন্দদাসের অবদান –
মুকুন্দদাস স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলার নারীদের বিলাতি কাচের চুড়ি ব্যবহার করতে নিষেধ করে গান বাঁধেন – ‘পরো না রেশমি চুড়ি, বঙ্গনারী, কভু আর পরো না’।
তাঁর গানের আবেদন ছিল মর্মস্পর্শী। বাংলার হিন্দু নারীরা তারপর থেকে বিলাতি কাচের চুড়ি পরা ছেড়ে দেয়।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি কী ছিল?
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি –
অসহযোগ আন্দোলনে দু-ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল –
- নেতিবাচক বা ধ্বংসাত্মক ও
- ইতিবাচক বা গঠনমূলক।

- নেতিবাচক কর্মসূচি – নেতিবাচক কর্মসূচির মধ্যে ছিল বিদেশি দ্রব্যের ব্যবহার না করা, সরকারি অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ বর্জন করা ইত্যাদি।
- ইতিবাচক কর্মসূচি – ইতিবাচক কর্মসূচি ছিল স্বদেশি দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার, স্বদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠা, চরকার ব্যবহার প্রভৃতি।
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কীরকম ছিল?
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ –
অসহযোগ আন্দোলনে নারীরা বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেন।
- মিটিং, মিছিলে যোগদান – অসহযোগ আন্দোলনে নারীরা মিটিং, মিছিল ও পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ করেন।
- বিক্ষোভ প্রদর্শন – 1921 খ্রিস্টাব্দের 17 নভেম্বর ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারতে এলে হাজার হাজার নারী বোম্বাই শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
বাসন্তী দেবী কীভাবে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন?
অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সভাসমিতি, মিছিল, বক্তৃতা প্রদানের মাধ্যমে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নিতে থাকেন। অসহযোগ আন্দোলনে চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে স্মরণীয়।
অসহযোগ আন্দোলনে বাসন্তী দেবীর ভূমিকা –
1921 খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারত সফরে এলে বোম্বাই-এ প্রায় 1000 জন মহিলা সমবেত হয়ে প্রতিবাদ জানান। এই সময় কলকাতার রাস্তায় প্রকাশ্য বিক্ষোভ ও সরকারবিরোধী প্রচার চালিয়ে কারাবরণ করেন বাসন্তী দেবী।
উর্মিলা দেবী কে ছিলেন?
1920 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে নারীরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঊর্মিলা দেবী।
উর্মিলা দেবীর ভূমিকা –
- 1921 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে নারীরা প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে। এই বিক্ষোভেই অংশগ্রহণ করেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের বোন ঊর্মিলা দেবী।
- এসময় তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘নারী কর্মমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। মহিলাদের মধ্যে চরকার প্রচলন করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
অসহযোগ আন্দোলনে বাঈ আম্মান -এর ভূমিকা কীরূপ ছিল?
মহাত্মা গান্ধি পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
অসহযোগ আন্দোলনে বাঈ আম্মান -এর ভূমিকা –
অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনায় যে কয়েকজন নারী স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাঈ আম্মান। মৌলানা শওকত আলির মা বাঈ আম্মান আহমেদাবাদ ও লাহোরে মহিলা সম্মেলনে বক্তৃতা দেন ও নারীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
অসহযোগ আন্দোলনপর্বে আশালতা সেনের পরিচয় দাও।
অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনায় যে কয়েকজন নারী স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকার আশালতা সেন।
অসহযোগ আন্দোলনপর্বে আশালতা সেনের ভূমিকা –
- আশালতা সেনের উদ্যোগে গাণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় মহিলাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ও গান্ধিজির আদর্শ প্রচারই ছিল এই সমিতির প্রধান লক্ষ্য।
- এই সমিতির মেয়েরা খদ্দরের কাপড় বিক্রি করতেন ও স্বদেশি দ্রব্যাদি বিক্রির জন্য প্রতি বছর শিল্পমেলা সংগঠিত করতেন।
অসহযোগ আন্দোলনে দেবদাসীদের ভূমিকা সম্পর্কে লেখো।
অসহযোগ আন্দোলনে দেবদাসীদের ভূমিকা –
দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে দেবদাসীরা থাকতেন। ধর্মচর্চা ও নৃত্যকলায় এদের অবদান থাকলেও সমাজে এদের কোনো সম্মান ছিল না।
- সাক্ষাৎ – গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনের সময় দেবদাসীরা গান্ধিজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
- সাহায্যদান – আন্দোলনের স্বার্থে দেবদাসীরা প্রচুর অর্থ ও অলংকার গান্ধিজিকে দান করেছিলেন।
চৌরিচৌরা ঘটনা বলতে কী বোঝায়?
চৌরিচৌরা ঘটনা –
1922 খ্রিস্টাব্দের 5 ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলায় চৌরিচৌরা নামক স্থানে ভগবান আহির নামে এক কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকের উপর পুলিশ অকথ্য অত্যাচার করে। পাশাপাশি বিনা প্ররোচনায় জনতার উপর গুলি চালালে জনতা উত্তেজিত হয়ে চৌরিচৌরা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়, এতে 22 জন পুলিশকর্মী মারা যায়। এই ঘটনা চৌরিচৌরা ঘটনা নামে পরিচিত। এই ঘটনার জন্য গান্ধিজি ও জাতীয় কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
ডান্ডি অভিযান বলতে কী বোঝায়?
ডান্ডি অভিযান –
1930 খ্রিস্টাব্দের 12 মার্চ গান্ধিজি 78 জন অনুগামী নিয়ে সবরমতী আশ্রম থেকে 24 দিনে 241 মাইল পথ অতিক্রম করে ডান্ডির সমুদ্রতীরে 5 এপ্রিল লবণ আইন ভঙ্গ করেন। এর ফলে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়। গুজরাটের সবরমতী থেকে ডান্ডি পর্যন্ত গান্ধিজির এই পদযাত্রা ডান্ডি অভিযান নামে খ্যাত।
আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করতে গান্ধিজি কেন লবণকে বেছে নিয়েছিলেন?
আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করতে গান্ধিজি লবণকে বেছে নিয়েছিলেন কারণ –
গান্ধিজি উপলব্ধি করেছিলেন যে, লবণ একটি সাধারণ বস্তু হলেও এটি ধনী-গরিবসহ প্রত্যেকের কাছেই এক অত্যাবশ্যক সামগ্রী। তাই ব্রিটিশদের লবণ আইন ভঙ্গ করলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ উৎসাহিত হবে।
গান্ধিজির অনুপ্রেরণায় এরপরে ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় মানুষ লবণ তৈরি করে আইন ভঙ্গ করেছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা কী ধরনের কর্মসূচি নেয়?
গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত দ্বিতীয় সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন ছিল আইন অমান্য আন্দোলন। বাংলার নারীসমাজ এই আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের কর্মসূচি –
- গান্ধিজি 1930 খ্রিস্টাব্দে ডান্ডিতে লবণ আইন ভঙ্গ করলে হাজার হাজার নারী নিজের হাতে লবণ তৈরি করে আইন অমান্য করেন।
- বাংলার নারীসমাজ এসময় পথসভা ও বিদেশি পণ্য বয়কট আন্দোলনের কর্মসূচিও গ্রহণ করে।
- দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক সভাসমাবেশ ও মিছিলে তারা অংশগ্রহণ করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কীরকম ছিল?
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা –
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ করার জন্য মহাত্মা গান্ধি 1930 খ্রিস্টাব্দের 10 এপ্রিল ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ (Young India) পত্রিকায় আহ্বান জানান।
- লবণ আইন ভঙ্গ – আইন অমান্য আন্দোলনে হাজার হাজার নারী নিজের হাতে লবণ তৈরি করে আইন অমান্য করেন।
- সরোজিনী নাইডুর ভূমিকা – মহাত্মা গান্ধির গ্রেফতারের পর সরোজিনী নাইডু 2500 জন সত্যাগ্রহীকে সঙ্গে নিয়ে ধরসানা লবণগোলা অভিযান করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের দিক থেকে বোম্বাই, মাদ্রাজ ও বাংলার নারীদের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
নারীদের অংশগ্রহণের দিক থেকে বোম্বাই -এর আন্দোলন ছিল সবচেয়ে সংগঠিত, বাংলার আন্দোলন ছিল সবচেয়ে উগ্র এবং মাদ্রাজের আন্দোলন ছিল সীমিত প্রকৃতির।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ –
- সত্যাগ্রহ – বোম্বাই -এর নারীরা ধরসানা লবণগোলা দখলের জন্য সংগঠিতভাবে আন্দোলন করেন। বাংলার নারীরা বিক্ষোভ দেখান ও কারাবরণ করেন। মাদ্রাজের নারীদের ভূমিকা সেইরকম উল্লেখযোগ্য ছিল না।
- বিস্তার – বোম্বাই -এর নারীদের অংশগ্রহণ ছিল শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু বাংলায় শহর ও গ্রামে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কীরকম ছিল?
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ –
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
- অরুণা আসফ আলি ও সুচেতা কৃপালিনির নেতৃত্বে নারীরা বৈপ্লবিক এবং অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেন।
- বাংলার মেদিনীপুরে তমলুক থানা আক্রমণের অভিযানে মাতঙ্গিনী হাজরা নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান।
মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?
অথবা, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা কী ছিল?
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার নাম স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
গান্ধিবুড়ি –
মেদিনীপুর জেলার তমলুকের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা গান্ধিবাদী নেত্রী ছিলেন। তাই তাকে ‘গান্ধিবুড়ি’ বলা হত।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা –
তিনি 73 বছর বয়সে 1942 খ্রিস্টাব্দের 29 সেপ্টেম্বর তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দেন এবং পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন।
ভগিনী সেনা কী?
1942 খ্রিস্টাব্দের 14 জুলাই ওয়ার্ধায় কংগ্রেস কার্যনির্বাহক কমিটি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব অর্পিত হয় গান্ধিজির উপর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা প্রবল উৎসাহের সঙ্গে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
ভগিনী সেনা –
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মহিলাদের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মহিলা স্বেচ্ছাসেবিকাদের নিয়ে ভগিনী সেনা গঠন করা হয়।
উষা মেহতা কী কারণে বিখ্যাত?
1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা প্রবল উৎসাহের সঙ্গে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
ঊষা মেহতার ভূমিকা –
- ঊষা মেহতা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
- তিনি বোম্বাইতে একটি গোপন বেতারকেন্দ্র গঠন করে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আদর্শ প্রচার করেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ননীবালা দেবী কেন স্মরণীয়?
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ননীবালা দেবীর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়।
ননীবালা দেবী স্মরণীয় হওয়ার কারণ –
- প্রথম নারী বিপ্লবী – ননীবালা দেবী ছিলেন বাংলাদেশ তথা ভারতের প্রথম নারী বিপ্লবী। বঙ্গভঙ্গের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে বিপ্লবী আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন।
- স্বাধীনতা সংগ্রামী – এরপর গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযোগ, আইন অমান্য ও ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে তিনি অংশগ্রহণ করে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
বাংলায় বিপ্লববাদ প্রসারে ভগিনী নিবেদিতার ভূমিকা লেখো।
ভগিনী নিবেদিতার ভূমিকা –
- বিপ্লবী গ্রন্থ প্রদান – ভগিনী নিবেদিতা অনুশীলন সমিতিকে ম্যাৎসিনির জীবনীগ্রন্থ উপহার দেন। এই গ্রন্থ থেকে বিপ্লবীরা গেরিলা যুদ্ধপদ্ধতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে। এ ছাড়া তিনি ক্রপটকিনের লেখা ‘রুশ ও ফরাসি কারাগার’ গ্রন্থটি যুগান্তর গোষ্ঠীর ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে উপহার দেন।
- যুগান্তর দল গঠন – 1906 খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী যুগান্তর দল প্রতিষ্ঠার সময় অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র ঘোষ ও ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে নানাভাবে সাহায্য করেন নিবেদিতা।
মাদাম কামা স্মরণীয় কেন?
ভারতে বিপ্লবী আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে নারীদের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। প্রবাসে বিপ্লববাদের আদর্শ প্রচারে ভিখাজি রুস্তমজি কামা-র ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মাদাম কামার ভূমিকা –
- ভারতের বিপ্লববাদের জননী নামে পরিচিত মাদাম কামা প্রথমে লন্ডন ও পরে প্যারিসে বিপ্লববাদের আদর্শ প্রচার করেন।
- 1907 খ্রিস্টাব্দে মাদাম কামা জার্মানির স্টুটগার্ট সম্মেলনে যোগ দেন। এই সম্মেলনে তিনি ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি কে?
বিশ শতকে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী ছিলেন মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি।
মুথুলক্ষ্মী রেড্ডির ভূমিকা –
- মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি ছিলেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির চিকিৎসক এবং ভারতের প্রথম মহিলা আইনসভার সদস্য।
- সরোজিনী নাইডুর সঙ্গে মিলিতভাবে তিনি ভারতীয় মহিলা সমিতি স্থাপন করেন।
- তিনি মহিলাদের ভোটদানের অধিকারের জন্য সরব হন ও দেবদাসী প্রথার বিলোপসাধনের জন্য বিল উত্থাপন করেন।
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা কেন অংশগ্রহণ করেন?
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীসমাজের অংশগ্রহণের কারণ –
- রাজনৈতিক প্রভাব – এই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, নারীরাও সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন।
- প্রচার – বিভিন্ন সংগঠনের পত্রপত্রিকা প্রচার করে যে, নারীদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন।
- সরকারি নীতির প্রতিক্রিয়া – ইংরেজ সরকারের দমনমূলক নীতির প্রতিক্রিয়া নারীসমাজেও আলোড়ন ঘটায়।
এসবের ফলশ্রুতিতে নারীরাও গুপ্ত বিপ্লবী আন্দোলনে পুরুষদের সহযোগিনী হয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতায় এগিয়ে আসেন।
দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
অথবা, দীপালি সংঘের উদ্দেশ্য কী ছিল?
1923 খ্রিস্টাব্দে লীলা নাগ (রায়) ঢাকায় দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
দীপালি সংঘের উদ্দেশ্য –
- সশস্ত্র আন্দোলনের উপযুক্ত করে নারীদের গড়ে তোলা।
- নারীদের মধ্যে আত্মচেতনা ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা।
- উচ্চশিক্ষায় নারীদের উৎসাহদান করা ইত্যাদি।
দীপালি সংঘের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্যোগ উল্লেখ করো।
1923 খ্রিস্টাব্দে লীলা রায় (নাগ) ঢাকায় দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিসংগ্রামের জন্য নারীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
দীপালি সংঘের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ –
দীপালি সংঘের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হল –
- এই সংঘের উদ্যোগে ঢাকায় একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
- দীপালি শিল্প প্রদর্শনী চালু করার মধ্য দিয়ে নারীসমাজের সৃজনশীল চেতনা জাগরণে দীপালি সংঘের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
দীপালি সংঘের কার্যাবলি উল্লেখ করো।
1923 খ্রিস্টাব্দে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী লীলা রায় (নাগ) -এর উদ্যোগে দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
দীপালি সংঘের কার্যাবলি –
- দীপালি সংঘের কর্মকর্তারা এই সংঘের কার্যক্রম বিস্তারের জন্য পাড়ায় পাড়ায় স্টাডি সার্কেল গড়ে তোলেন। এর ফলে অনেক স্কুল, শিল্পশিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষার কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
- দীপালি সংঘের উদ্যোগে 1924 খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় দীপালি শিল্প প্রদর্শনী, যা বাংলার নারীসমাজের সামনে নারী মুক্তিসংগ্রামের নব দিগন্ত উন্মোচন করে।
শিক্ষার প্রসারে দীপালি সংঘের অবদান কী ছিল?
লীলা রায় (নাগ) বাংলার নারীসমাজের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ও বিপ্লবী আদর্শ জাগরণের উদ্দেশ্যে 1923 খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
শিক্ষার প্রসারে দীপালি সংঘের অবদান –
- দীপালি সংঘের উদ্যোগে ঢাকায় একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর একাধিক শাখাপ্রশাখা গড়ে তোলা হয়।
- নারীদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে এই সংঘ বিশেষ উৎসাহ প্রদান করেছিল। সংঘের উদ্যোগে দীপালি স্কুল, নারী শিক্ষামন্দির প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
কে, কবে দীপালি শিল্প প্রদর্শনী চালু করেন? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
1924 খ্রিস্টাব্দে লীলা রায় (নাগ) দীপালি শিল্প প্রদর্শনী চালু করেন। দেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে নারীদের উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে এর ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
দীপালি শিল্প প্রদর্শনী -এর উদ্দেশ্য –
- নারীদের মধ্যে আত্মচেতনা ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা।
- নারীদের বিভিন্ন হাতের কাজ, শিল্প প্রভৃতি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে তাদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহ প্রদানও ছিল দীপালি শিল্প প্রদর্শনীর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
ছাত্রীসংঘ কেন গড়ে ওঠে?
ছাত্রীসংঘ প্রতিষ্ঠার কারণ –
- বিপ্লববাদ – স্বদেশি আন্দোলন ও বিপ্লববাদ প্রচার করা – ছাত্রীসংঘ প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম কারণ ছিল।
- ছাত্রীদের যোগদান – ছাত্রীসংঘ সশস্ত্র বিপ্লববাদে বাংলার ছাত্রীদের যুক্ত করতে চেয়েছিল। এইভাবে বিপ্লববাদ নারীসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বীণা দাস-সহ বিভিন্ন বিখ্যাত নারী বিপ্লবী এই সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন?
অথবা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন বিখ্যাত?
অথবা, চট্টগ্রাম অভ্যুত্থানে নারী নেতৃত্বের একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করো।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার -এর নেতৃত্ব –
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অভিযানের অন্যতম নেত্রী ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
- অস্ত্রাগার লুণ্ঠন – ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সহযোদ্ধা হিসেবে প্রীতিলতা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন 1930 খ্রিস্টাব্দের 18 এপ্রিল।
- ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ – তাঁর নেতৃত্বে বিপ্লবীরা চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে। বিভিন্ন বাধা উপেক্ষা করে প্রীতিলতা এই দুঃসাহসিক কাজে অংশ নেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে বিপ্লবী আন্দোলনকে সফল করার জন্য প্রীতিলতার এই প্রচেষ্টা তাঁকে অমর করে রেখেছে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন আত্মহত্যা করেন?
বাংলা তথা ভারতের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামে সূর্য সেনের বিপ্লবী দল ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি গঠিত হলে তিনি এই সংগঠনে যোগদান করেন। 1930 খ্রিস্টাব্দের 18 এপ্রিল বিপ্লবী সূর্য সেনের দলের সঙ্গে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে অংশগ্রহণ করেন। প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ না করার জন্য প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
চট্টগ্রাম অভ্যুত্থানে কল্পনা দত্তের ভূমিকা কী ছিল?
করে বাংলাদেশে 1930 খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অভ্যুত্থানের সময় যেসব নারী বিপ্লবী ছিলেন, কল্পনা দত্ত ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতময়
চট্টগ্রাম অভ্যুত্থানে কল্পনা দত্তের ভূমিকা –
অস্ত্রাগার লুণ্ঠন – সূর্য সেনের দলের সঙ্গে তিনিও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে যোগ দেন। ইংরেজ সৈন্যদের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন। কিন্তু ধরা গড়ে গিয়ে বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
লক্ষ্মী স্বামীনাথন কেন বিখ্যাত?
ঝাঁসির রানি ব্রিগেড –
নেতাজি আজাদ হিন্দ ফৌজের মধ্যে ঝাঁসির রানি ব্রিগেড’ নামে একটি নারীবাহিনী গড়ে তোলেন।
লক্ষ্মী স্বামীনাথন –
এই ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের নেত্রী ছিলেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন। লক্ষ্মী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে ঝাঁসির রানি ব্রিগেড ভারত অভিযানে অংশগ্রহণ করে। 1945 খ্রিস্টাব্দে এই নারীবাহিনীকে ইম্ফল অভিযানে প্রকৃত যুদ্ধে নামানো হয়।
লক্ষ্মী স্বামীনাথন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয় কর্মী হিসেবে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা কীভাবে অংশগ্রহণ করে?
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা –
- ছাত্ররা বিদেশি দ্রব্য বয়কট করার জন্য প্রচার চালায়, পিকেটিং করে। তারা স্কুল, কলেজ ছেড়ে আন্দোলনে শামিল হয়।
- ছাত্ররা স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহারের জন্য প্রচার চালায়। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাই ছিল মূল চালিকাশক্তি, সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকালে ছাত্ররা কীভাবে বয়কট আদর্শকে কাজে পরিণত করে?
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকালে ছাত্রদের বয়কট আদর্শের প্রয়োগ –
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকালে ‘স্বদেশি’ ও ‘বয়কট’ কর্মসূচিতে বাংলার ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে যোগদান করে। ছাত্ররা এই আন্দোলনে বয়কট আদর্শকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগায়। যেমন –
- ছাত্রসমাজ দল বেঁধে দোকানে দোকানে পিকেটিং করে। তারা দোকানদারদের বিদেশি পণ্যদ্রব্য বিক্রি না করার অনুরোধ করে। স্বদেশি পণ্যদ্রব্য কেনার জন্য জনগণের কাছে তারা আবেদন জানায়।
- সরকারি স্কুল-কলেজ বয়কট করে ছাত্ররা পথে পথে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে ও পথসভা করে।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে?
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকারের পদক্ষেপ –
- ব্রিটিশ সরকার এসময় কার্লাইল সার্কুলার, লিয়ন সার্কুলার, পেডলার সার্কুলার জারি করে আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
- ছাত্রদের স্বদেশি সভাসমিতিতে যোগদান, ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দেওয়া প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়া, ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অনুমোদন বাতিল করে সেখানকার ছাত্রদের বহিষ্কার করে।
স্বদেশি আন্দোলনের সময় সরকার কেন বিভিন্ন সার্কুলার জারি করেন?
সার্কুলার জারির কারণ –
স্বদেশি আন্দোলনের সময় কার্লাইল, লিয়ন ও পেডলার সার্কুলার জারি করা হয়।
- আন্দোলনকে দূর্বল করা – স্বদেশি আন্দোলনের প্রাণশক্তি ছিল ছাত্রসমাজ। এই আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য তাই বিভিন্ন সার্কুলার জারি করে ছাত্রসমাজকে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হয়।
- দমনপীড়ন – সরকার ছাত্রদের উপর দমনপীড়নের জন্য এই সকল সার্কুলার জারি করে।
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্ররা কীভাবে অংশগ্রহণ করে?
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ –
অসহযোগ আন্দোলনে দু-ধরনের কর্মসূচি ছিল – ইতিবাচক ও নেতিবাচক। ইতিবাচক কর্মসূচিতে ছাত্ররা দেশীয় বস্ত্রের ব্যবহার, চরকার ব্যবহার, অর্থসংগ্রহ প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করে। আবার নেতিবাচক কর্মসূচিতে বিদেশি দ্রব্য বর্জন, বিদেশি কাপড়, মদ ইত্যাদির দোকানের সামনে পিকেটিং করে। তা ছাড়া ছাত্ররা মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় গড়ে ওঠা কয়েকটি স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।
1920 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রসমাজ গান্ধিজি নির্দেশিত অহিংস পথে আন্দোলন শামিল হয়েছিল।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান –
অসহযোগ আন্দোলনের সময় বেশ কিছু স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এগুলি হল – জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, কাশী বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ প্রভৃতি।
আইন অমান্য আন্দোলনে ছাত্ররা কীভাবে অংশগ্রহণ করে?
আইন অমান্য আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান –
ছাত্ররা বিভিন্নভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হয়।
- তারা স্কুল-কলেজ বয়কট করে এবং অনেক জায়গায় স্কুল-কলেজ অচল করে দেয়।
- ছাত্ররা ব্রিটিশ পতাকা (ইউনিয়ন জ্যাক) নামিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করে। কলকাতা, মধ্যপ্রদেশ, যুক্তপ্রদেশ, আসামের বিভিন্ন স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আইন অমান্য আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনের সময় যে-কোনো একটি ছাত্র সংগঠনের উল্লেখ করো।
আইন অমান্য আন্দোলনের ছাত্র সংগঠন –
1928 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ ছাত্র সমিতি (All Bengal Students Association) এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
সভা-সমাবেশ – জে এম সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে 1930 খ্রিস্টাব্দের 6 এপ্রিল ছাত্রদল একটি সভা করে। তারপর আইন অমান্যের জন্য কলেজ স্কোয়ারে ছাত্ররা সমাবেশ করে। এখানে পুলিশ তাদের উপর লাঠি চালায়।
আইন অমান্য আন্দোলনের দুটি গুরুত্ব লেখো।
গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত দ্বিতীয় সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন ছিল আইন অমান্য আন্দোলন। এই আন্দোলন ‘লবণ সত্যাগ্রহ’ নামেও পরিচিত।
আইন অমান্য আন্দোলনের দুটি গুরুত্ব –
- আইন অমান্য আন্দোলনে নারীসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। বিশেষত বলা যায়, এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ আগের আন্দোলনগুলির তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
- এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভারতের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের পথে নানাবিধ সমস্যাগুলি আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কীভাবে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে?
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ –
ছাত্ররা এই আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল বলে অনেকে এই আন্দোলনকে ছাত্র-যুব আন্দোলন বলে অভিহিত করেন।
- ছাত্ররা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মঘট পালন করে।
- অনেক জায়গায় তারা রেললাইন ও সেতু উড়িয়ে, টেলিফোনের তার ছিঁড়ে বিক্ষোভ দেখায়। কলকাতা, পাটনা, বেনারস, আহমেদাবাদ, উড়িষ্যায় ছাত্রদের বিক্ষোভে আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল।
কার্লাইল সার্কুলার কী?
1905 খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড কার্জন বাংলা বিভক্ত করেন, এর প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন হয়, যা স্বদেশি আন্দোলন নামেও পরিচিত। বাংলার ছাত্রসমাজ ছিল এই আন্দোলনের প্রাণশক্তি।
কার্লাইল সার্কুলার –
- স্বদেশি আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল বাংলার ছাত্রসমাজ, তাই তাদের এই আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে উদ্দেশ্যে 1905 খ্রিস্টাব্দের 10 অক্টোবর কার্লাইল সার্কুলার জারি করা হয়।
- কার্লাইল সার্কুলার দ্বারা ছাত্রদের স্বদেশি সভাসমিতিতে যোগদান, ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দেওয়া ইত্যাদি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়।
অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি কী?
অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি –
1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ছাত্ররা ব্যাপকভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ব্রিটিশ সরকার ছাত্রদের আন্দোলন থেকে দূরে রাখার জন্য ছাত্রবিরোধী ‘কার্লাইল সার্কুলার’, ‘লিয়ন সার্কুলার’, ‘পেডলার সার্কুলার’ জারি করে এবং আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রদের স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কার করে। সরকারের বিভিন্ন সার্কুলারের প্রতিবাদে 1905 খ্রিস্টাব্দের 4 নভেম্বর ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
অথবা, অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা –
1905 খ্রিস্টাব্দের 4 নভেম্বর ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির উদ্দেশ্য –
- বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
- স্বদেশি আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার ঘটানো এবং বিদেশি দ্রব্য বয়কট করা।
শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু কে ছিলেন?
শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু –
1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের ছাত্রবিরোধী বিভিন্ন সার্কুলার প্রয়োগ করে আন্দোলনে যোগদানকারী অনেক ছাত্রকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ 1905 খ্রিস্টাব্দের 4 নভেম্বর যে অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু।
সশস্ত্র বিপ্লববাদ কী? ভারতে বিপ্লববাদ উদ্ভবের কারণ কী ছিল?
সশস্ত্র বিপ্লববাদ –
উনিশ ও বিশ শতকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার উচ্ছেদ ও ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন গুপ্তসমিতি ও বিপ্লবী দলগুলি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। এটি সশস্ত্র বিপ্লববাদ নামে পরিচিত। সশস্ত্র বিপ্লববাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসকদের মনে ভীতির সৃষ্টি করে তাদের শাসনযন্ত্র দুর্বল করে দেওয়া।
ভারতে বিপ্লববাদের উদ্ভবের কারণ –
- ভারতের মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনায় জাতীয় কংগ্রেসের আশানুরূপ সাফল্যের অভাব ভারতে বিপ্লববাদের উদ্ভবের পথ প্রশস্ত করেছিল।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিবেকানন্দের স্বদেশি আদর্শ প্রচার, দেশাত্মবোধক সাহিত্য ভারতবাসীকে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে যোগদানে উৎসাহিত করেছিল ইত্যাদি। এসকল নানাবিধ কারণে ভারতে বিপ্লববাদের উদ্ভব হয়।
কারা, কোথায় মুক্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন?
মুক্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা –
- প্রতিষ্ঠাতা – 1905 খ্রিস্টাব্দে মুক্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন হেমচন্দ্র ঘোষ। সত্যরঞ্জন বক্সী এক্ষেত্রে তাঁকে সহযোগিতা করেন।
- প্রতিষ্ঠাস্থল – ঢাকা শহরে এই মুক্তিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ব বাংলায় বিপ্লববাদ প্রসারে এই সমিতি উদ্যোগী হয়।
কোমাগাতামারুর ঘটনা কী?
বিংশ শতকে ভারতে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল কোমাগাতামারুর ঘটনা।
কোমাগাতামায়ুর ঘটনা –
- ভারত থেকে বেশ কিছু শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ কোমাগাতামারু নামক একটি জাহাজে করে কানাডা যাত্রা করলে কানাডা কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের প্রবেশের ছাড়পত্র অস্বীকার করায় তাদের ফিরে যেতে হয়।
- এরপর জাহাজটি যাত্রী-সহ কলকাতার বজবজে এসে পৌঁছোয়। জাহাজের যাত্রীদের এক বিশেষ ট্রেনে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে তারা অসম্মত হয়।
- এইরূপ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সঙ্গে সরকারি সৈন্যবাহিনীর সংঘর্ষে বেশ কিছু শিখ নিহত হন। কোমাগাতামারুর এই ঘটনাটি ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে ভারতবাসীর মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
আলিপুর বোমা মামলা কী?
ভারতে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ধারায় আলিপুর বোমা মামলার বিষয়টি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আলিপুর বোমা মামলা –
1908 খ্রিস্টাব্দে বাংলা প্রেসিডেন্সির অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি ভুলবশত অন্য এক ইংরেজ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। এই ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ কলকাতার মুরারিপুকুর বাগান থেকে বহু বোমা ও বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধার করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ-সহ অনেককে গ্রেফতার করে শুরু হয় আলিপুর বোমা মামলা।
মাস্টারদা সূর্য সেন কেন বিখ্যাত?
বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন সূর্য সেন। তিনি পেশায় স্কুলশিক্ষক ছিলেন বলে ‘মাস্টারদা’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেনের অবদান –
তিনি ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নামে একটি বাহিনী গঠন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী কার্যাবলি হল 1930 খ্রিস্টাব্দের 18 এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় বিপ্লবীদের কী সাজা হয়?
মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা 1930 খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ইংরেজ সৈন্যরা পাহাড় ঘিরে ফেললে দু-পক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের মামলায় বিপ্লবীদের পরিণতি –
- চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর সূর্য সেন-সহ কয়েকজন বিপ্লবী পালিয়ে গেলেও পরে ধরা পড়েন। বিচারে 1934 খ্রিস্টাব্দের 12 জানুয়ারি মাস্টারদার ফাঁসি হয়।
- সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অভিযানের অন্যান্য সহযোদ্ধাদের মধ্যে তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি ও কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
জালালাবাদের যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়?
জালালাবাদের যুদ্ধ –
সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠ করে ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করে। এরপর বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। জালালাবাদে 1930 খ্রিস্টাব্দের 22 এপ্রিল ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে বিপ্লবীদের তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে 11 জন বিপ্লবী ও 64 জন সৈন্য মারা যায়। এই ঘটনা জালালাবাদের যুদ্ধ নামে বিখ্যাত।
কারা, কবে অপারেশন ফ্রিডম পরিকল্পনা করেন?
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে বন্দি বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে 1930 খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল অপারেশন ফ্রিডম শুরু করার পরিকল্পনা করে।
অপারেশন ফ্রিডম –
- উদ্যোক্তা – বাংলাদেশের অন্যতম বিপ্লবী সংগঠন ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ এই পরিকল্পনা করে।
- অভিযানকাল – 1930 খ্রিস্টাব্দে এই অভিযানের ফলে পুলিশের আই জি লোম্যান এবং মহাকরণে সিম্পসন ও ক্রেগ নিহত হন।
অলিন্দ যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়?
অলিন্দ যুদ্ধ –
- মহাকরণ অভিযান – 1930 খ্রিস্টাব্দের 8 ডিসেম্বর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের তিন বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত মহাকরণ অভিযান করেন। তাঁরা সিম্পসন ও ক্রেগকে গুলি করে হত্যা করেন।
- প্রতিরোধ – টেগার্টের পুলিশবাহিনী মহাকরণ ঘিরে ফেললে দুই পক্ষে গুলিবিনিময় হয়। এই গুলিবিনিময়ের ঘটনা অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।
বীণা দাস স্মরণীয় কেন?
অথবা, বীণা দাস বিখ্যাত কেন?
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সময় নারী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বীণা দাস।
বীণা দাসের অবদান –
তিনি ‘ছাত্রীসংঘ’ -এর সদস্যা ছিলেন এবং প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 1932 খ্রিস্টাব্দের 6 ফেব্রুয়ারি বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে গুলি করেন। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন কীভাবে গঠিত হয়?
স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গ হিসেবেই ভারতে ছাত্র আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিংশ শতকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে ছাত্রদের অংশগ্রহণ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন –
1936 খ্রিস্টাব্দে লখনউতে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সারা ভারত থেকে প্রায় 986 জন প্রতিনিধি সমবেত হন। এই সম্মেলনেই নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের জন্ম হয়। জহওরলাল নেহরু এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে কীরূপ প্রতিবাদ দেখা দেয়?
আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের দিল্লির লালকেল্লায় বিচার শুরু হলে ভারতীয় জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষত আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হয়।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ –
- আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বাংলার ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। কমিউনিস্ট দলের ছাত্র সংগঠন, মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন এবং জাতীয় কংগ্রেস একজোট হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল।
- আন্দোলনকারীরা মিটিং, মিছিল, ধর্মঘট প্রভৃতির মধ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিল।
রশিদ আলি কে ছিলেন?
রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন। ব্রিটিশ সরকারের সামরিক আদালতে তাঁকে 7 বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই বিচারের প্রতিবাদে 1946 খ্রিস্টাব্দের 11 থেকে 13 ফেব্রুয়ারি কলকাতায় গণ আন্দোলন হয় এবং 12 ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘রশিদ আলি দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি, কংগ্রেস দলের ছাত্রশাখাগুলি মিলিতভাবে এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটে যোগদান করে।
রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল?
রশিদ আলি দিবস পালনের কারণ –
- সহানুভূতি – আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দি সৈন্য ও সেনাপতিদের লালকেল্লায় বিচার শুরু হয়। দেশবাসীর মনে তাদের প্রতি সহানুভূতির সৃষ্টি হয়। বিচারে ক্যাপটেন রশিদ আলির 7 বছর সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষিত হয়।
- যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটে উদ্বিগ্ন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ্রা রশিদ আলির শাস্তি ঘোষিত হলে রশিদ আলি দিবস পালনের ডাক দেন 1946 খ্রিস্টাব্দের 12 ফেব্রুয়ারি। মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি, কংগ্রেস দলের ছাত্রশাখা কলকাতায় ধর্মঘটের ডাক দেয়।
রশিদ আলি দিবসের গুরুত্ব কী?
আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপটেন রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্তভাবে সারা ভারতে আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
রশিদ আলি দিবসের গুরত্ব –
- সর্বদলের সমর্থন – বিচারে ক্যাপটেন রশিদ আলির 7 বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এর প্রতিবাদে মুসলিম লিগের ছাত্রশাখা ধর্মঘট ডাকে। এই ধর্মঘটে কমিউনিস্ট পার্টি ও কংগ্রেস-সহ সব রাজনৈতিক দল যোগদান করে।
- সর্বাত্মক ধর্মঘট – ছাত্র ধর্মঘট ও ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরতলিতে ধর্মঘট হয়।
দলিত কাদের বলা হয়?
দলিত কথার অর্থ –
দলিত কথাটি এসেছে ‘দলন’ শব্দ থেকে, যার অর্থ হল দমিয়ে রাখা।
দলিত –
সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষ নিম্নবর্ণের যে মানুষদের দমিয়ে বা পদদলিত করে রাখে, তাদের দলিত বলা হয়। ডঃ বি আর আম্বেদকর ছিলেন দলিতদের নেতা। মহাত্মা গান্ধি দলিতদের ‘হরিজন’ বলতেন।
বর্তমানে প্রশাসনিক পরিভাষায় দলিত বলতে সাধারণভাবে তফশিলভুক্ত জাতি (Scheduled Caste) – কে বোঝায়।
‘পঞ্চম জাতি’ কাদের বলা হয়?
ভারতীয় সমাজে প্রথমে দেহের রঙের ভিত্তিতে আর্য-অনার্যের ভেদাভেদ করা হত। পরে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র – এই চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা চালু হয়।
পঞ্চম জাতি –
ভারতীয় সমাজে চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার পরে পঞ্চম জাতি নামে অপর একটি শ্রেণিকে চিহ্নিত করা হয়। ক্রমশ এই অনার্য, শূদ্র ও পঞ্চম জাতির মানুষেরা বাকি তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষদের কাছে অদ্ভুত, অস্পৃশ্য ও অন্ত্যজ বলে পরিচিত হয়।
কে, কবে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন?
সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা –
মহারাষ্ট্রে সমাজসংস্কারের জন্য সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
- প্রতিষ্ঠাতা – মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।
- প্রতিষ্ঠাকাল – 1873 খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরাও ফুলে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সত্যশোধক সমাজের সাহায্যে জাতিবৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি কাজ করেন।
কে, কবে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন? সত্যশোধক সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কী ছিল?
ভারতীয় হিন্দুসমাজের নিম্নবর্গের মানুষরা তাদের উপর বহুকাল ধরে চলে আসা শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিশ শতকে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। এই প্রতিবাদী আন্দোলনগুলিতে নেতৃত্ব প্রদানকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জ্যোতিরাও ফুলে। তিনি 1873 খ্রিস্টাব্দে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
সত্যশোধক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্য –
জাতপাত-বর্ণভেদে জর্জরিত মানুষদের দুর্দশা থেকে উদ্ধার ও সমাজসংস্কারের উদ্দেশ্যে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
জ্যোতিরাও ফুলে কীভাবে অনুন্নত শ্রেণির উন্নতিসাধনে সচেষ্ট হন?
মহারাষ্ট্রের জ্যোতিরাও ফুলে অনুন্নত শ্রেণির মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন।
অনুন্নত শ্রেণির উন্নতিসাধনে জ্যোতিরাও ফুলের ভূমিকা –
- জ্যোতিরাও ফুলে মহারাষ্ট্রের কুনবি, মালি, মাহার প্রভৃতি শ্রেণির মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। সমাজসংস্কারের জন্য 1873 খ্রিস্টাব্দে তিনি সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
- পুনাতে অস্পৃশ্যদের জন্য দুটি ও বালিকাদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন জ্যোতিরাও ফুলে।
মাদ্রাজে কেন জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়?
মাদ্রাজ অঞ্চলের দলিত শ্রেণির মানুষেরা 1916 খ্রিস্টাব্দে জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
মাদ্রাজে জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণ –
- তামিল ভাষা ও সংস্কৃতি – মাদ্রাজ অঞ্চলে সংস্কৃত ভাষার চাপে তামিল ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই এই ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
- ব্রাহ্মণ্য বিরোধিতা – ভেলাল উপজাতির মানুষেরা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা করেন।
কারা, কবে জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠা করে?
ভারতে সামাজিক ন্যায়প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব আন্দোলন ও দল গড়ে ওঠে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল মাদ্রাজের জাস্টিস পার্টি।
জাস্টিস পার্টির প্রতিষ্ঠা –
- প্রতিষ্ঠাতা – মাদ্রাজের ‘ভেলাল’ নামে দলিত শ্রেণির মানুষেরা ‘জাস্টিস পার্টি’-র প্রতিষ্ঠা করে।
- প্রতিষ্ঠাকাল – ‘জাস্টিস পার্টি’-র প্রতিষ্ঠাকাল ছিল 1916 খ্রিস্টাব্দ।
কে, কেন হরিজন সেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন?
হরিজন সেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা –
- প্রতিষ্ঠাতা – মহাত্মা গান্ধি এই সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
- প্রতিষ্ঠার কারণ – অবর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষেরা সমাজে অস্পৃশ্য ছিল। গান্ধিজি তাদের ‘হরিজন’ (হরির জন) নাম দেন। অস্পৃশ্যতা দূর করা, তাদের সামাজিক অবস্থার উন্নতি, গণ আন্দোলনে সমর্থন লাভ করা প্রভৃতি ছিল এই সংঘ প্রতিষ্ঠার কারণ।

শ্রী নারায়ণ গুরু কে ছিলেন?
শ্রী নারায়ণ গুরু –
দক্ষিণ ভারতে দলিত আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন শ্রী নারায়ণ গুরু।
- এজহাবা, নাদার ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের মানুষদের দুরবস্থা ও অমর্যাদা দূর করতে তিনি ধর্মসংস্কারের কাজ শুরু করেন।
- শ্রী নারায়ণ গুরু শিক্ষাপ্রসারে বিশেষভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
ভাইকম সত্যাগ্রহ কী?
ভাইকম সত্যাগ্রহ –
দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাজ্জুরের ভাইকমে একটি হিন্দু মন্দিরমুখী রাস্তা নিম্নবর্ণের মানুষের ব্যবহারের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। এই রাস্তা ব্যবহারের দাবিতে শ্রী নারায়ণ গুরু যে আন্দোলন শুরু করেন (1924 খ্রিস্টাব্দ), তা ‘ভাইকম সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগ্ধ গান্ধিজি দক্ষিণ ভারতে এসে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।
সেলফ-রেসপেক্ট আন্দোলন বলতে কী বোঝো?
1925 খ্রিস্টাব্দে ‘পেরিয়ার’ নামে পরিচিত ই ভি রামস্বামী নাইকার মাদ্রাজের দলিতদের নিয়ে সেলফ-রেসপেক্ট আন্দোলন শুরু করেন।
সেলফ-রেসপেক্ট আন্দোলন –
নাইকার -এর বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস দলিতদের প্রকৃত নাগরিকত্ব দিতে সক্ষম ও ইচ্ছুক নয়। দলিতদের সমনাগরিকত্ব এবং অব্রাহ্মণ দ্রাবিড়ভূমি প্রতিষ্ঠা এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল। এই আন্দোলনের ফলে দলিতদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার অর্জিত হয়।
‘সেলফ-রেসপেক্ট আন্দোলন’ তামিলদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের সৃষ্টি করে। তাদের সামনে এক সুখী সমাজের আশা জাগিয়ে তোলে – যেখানে অস্পৃশ্যতা, বর্ণবৈষম্য ও আধিপত্য থাকবে না।
ডঃ আম্বেদকর বিখ্যাত কেন?
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতির জন্য ডঃ বি আর আম্বেদকর বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করার পর তিনি দলিতদের অধিকারের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন শুরু করেন।
ডঃ বি আর আম্বেদকরের ভূমিকা –
- 1927 খ্রিস্টাব্দে ডঃ আম্বেদকর অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি এসময় প্রচার করেন যে, হিন্দুধর্ম হল নিম্নবর্ণের মানুষদের উপর আধিপত্য স্থাপনকারী ধর্ম। তাঁর মতে, অস্পৃশ্যতার মূল হল মনুস্মৃতি। এজন্য তিনি মনুস্মৃতি গ্রন্থটি পুড়িয়ে দেন।
- ডঃ আম্বেদকর লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিম্নবর্ণের মানুষদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এভাবে দলিতদের অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রামের মাধ্যমে আম্বেদকর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
কবে, কার নেতৃত্বে All India Depressed Class Association এবং AIDCC প্রতিষ্ঠিত হয়?
AIDCA এবং AIDCC প্রতিষ্ঠা –
- প্রতিষ্ঠাকাল – 1926 খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির সমিতি বা All India Depressed Class Association এবং 1930 খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস বা All India Depressed Classes Congress (AIDCC) প্রতিষ্ঠিত হয়।
- প্রতিষ্ঠাতা – AIDCA-র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এম সি রাজা এবং AIDCC-র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভীমরাও রামজি আম্বেদকর।
মাহাদ মার্চ কী?
ডঃ বি আর আম্বেদকর ভারতবর্ষে দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
মাহাদ মার্চ –
- 1927 খ্রিস্টাব্দে বি আর আম্বেদকর অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
- তিনি মহারাষ্ট্রের কোলাবা জেলায় অস্পৃশ্যরা যাতে পানীয় জল ব্যবহার করতে পারে তার জন্য 1928 খ্রিস্টাব্দে সে প্রতিবাদ আন্দোলন করেন তা মাহাদ মার্চ নামে পরিচিত।
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কাকে বলে?
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি –
অনুন্নত হিন্দু বা দলিতদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে 1932 খ্রিস্টাব্দের 16 আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড বর্ণহিন্দু, অনুন্নত হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের নীতি ঘোষণা করেন। একে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি বলা হয়। দলিত নেতা ডঃ বি আর আম্বেদকর ছিলেন সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার সমর্থক। কিন্তু মহাত্মা এ গান্ধি ছিলেন এর বিরোধী।
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিতে কী বলা হয়?
অনুন্নত হিন্দু বা দলিতদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে 1932 খ্রিস্টাব্দের 16 আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’ ঘোষণা করেন। দলিত নেতা ডঃ বি আর আম্বেদকর ছিলেন সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার পক্ষে এবং মহাত্মা গান্ধি ছিলেন এর বিরোধী।
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির বক্তব্য –
- এই নীতির মাধ্যমে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড বর্ণহিন্দু, অনুন্নত হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের নীতি ঘোষণা করেন।
- সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দু বা দলিত – এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
কোন্ পরিস্থিতিতে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড 1932 খ্রিস্টাব্দের 17 আগস্ট ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’ ঘোষণা করে দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি মেনে নেন।
পুনা চুক্তি স্বাক্ষর –
মহাত্মা গান্ধি দলিতদের পৃথক নির্বাচনের বিরোধিতা করেন এবং এর বিরুদ্ধে তিনি 1932 খ্রিস্টাব্দের 20 সেপ্টেম্বর জারবেদা জেলে অনশন শুরু করেন।
ডঃ বি আর আম্বেদকর এসময় তাঁর দাবি ত্যাগে অসম্মত হন। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্ত আসনের দ্বিগুণ লাভের বিনিময়ে গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে 1932 খ্রিস্টাব্দের 24 সেপ্টেম্বর পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পুনা চুক্তির শর্ত কী ছিল?
পুনা চুক্তি –
1932 খ্রিস্টাব্দের 25 সেপ্টেম্বর গান্ধিজি ও ডঃ বি আর আম্বেদকরের মধ্যে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পুনা চুক্তির শর্ত –
- হিন্দুদের মধ্যে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের নীতি পরিত্যাগ করা হয়।
- কেন্দ্রীয় আইনসভায় দলিতদের জন্য 18 শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
মতুয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয় কীভাবে?
হিন্দুসমাজের নিম্নবর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষ যারা তফশিলি জাতিভুক্ত, তারা প্রথমে চণ্ডাল ও পরে নমঃশূদ্র নামে পরিচিত হয়।
মতুয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি –
- ফরিদপুর জেলার প্রভু জগবন্ধু ও হরিচাঁদ ঠাকুর নমঃশূদ্রদের মধ্যে বৈষুবীয় ধারায় ভক্তিবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর শিষ্যদের ‘মতুয়া’ নামে ডাকতেন। সেখান থেকেই এরা মতুয়া সম্প্রদায় নামে পরিচিতি লাভ করে।
- আর্থিক উন্নতির জন্য তারা শিক্ষা ও সরকারি চাকরি লাভের উপর জোর দেন। এ ছাড়া ইংরেজ সরকারের কাছেও বিভিন্ন সুযোগসুবিধা প্রার্থনা করেন।
কারা, কোথায় মতুয়া মহাসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন?
‘মতুয়া মহাসংঘ’ প্রতিষ্ঠা –
নমঃশূদ্র আন্দোলনকে সংগঠিতভাবে পরিচালনার জন্য মতুয়া মহাসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
- প্রতিষ্ঠাতা – মতুয়া মহাসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর।
- প্রতিষ্ঠাস্থল – ‘মতুয়া মহাসংঘ’ প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। এরপর বিভিন্ন জেলার নমঃশূদ্ররা এই সংঘের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলে।
নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে কী জানো? পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্রের পেশা কী ছিল?
নমঃশূদ্র আন্দোলন –
বাংলায় দলিত আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল নমঃশূদ্র আন্দোলন। নমঃশূদ্ররা তাদের ধর্মগুরু শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করে। 1872-1873 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় এই আন্দোলনের সূচনা হয়।
নমঃশূদ্রদের পেশা –
পূর্ববঙ্গের যশোহর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা প্রভৃতি জেলায় বসবাসকারী নমঃশূদ্ররা মূলত কৃষিকাজ, জমিতে দিনমজুরের কাজ ইত্যাদি করত।
নমঃশূদ্র আন্দোলনের কারণ উল্লেখ করো।
নমঃশূদ্র আন্দোলনের কারণ –
- সামাজিক মর্যাদা – সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষের দ্বারা নমঃশূদ্ররা লাঞ্ছিত, অপমানিত হত। অভাবের জন্য তারা হীনবৃত্তি অবলম্বন করত, ফলে তাদের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না।
- শোষণ-বঞ্চনা – সমাজের উচ্চশ্রেণির দ্বারা তারা শোষিত হত।
- অধিকার দাবি – শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের জন্য তারা দাবি জানায়। এর পরিণতিতে নমঃশূদ্ররা শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার খুলনা, যশোহর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে আন্দোলন শুরু করে।
কবে, কোন্ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম নমঃশূদ্র আন্দোলন শুরু হয়?
বাংলায় দলিত আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল নমঃশূদ্র আন্দোলন।
নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা –
নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয় 1872 খ্রিস্টাব্দে বাংলার ফরিদপুর জেলার বাখরগঞ্জ অঞ্চলে। এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্র নেতার মায়ের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে উঁচু জাতের লোকেরা আসতে অস্বীকার করে। নমঃশূদ্ররা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঁচু জাতের লোকের বাড়ি কাজ করতে অস্বীকার করে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয়।
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল কে ছিলেন?
বাংলার দলিত আন্দোলনের ইতিহাসে নমঃশূদ্র আন্দোলন ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নমঃশূদ্ররা তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করে।
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ভূমিকা –
- নমঃশূদ্র আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল। তিনি প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ও অন্যান্য কয়েকজনের সঙ্গে মিলিতভাবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউলড কাস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
- পরবর্তীকালে তিনি পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা ও অবনীন্দ্রনাথের ভারতমাতার মাধ্যমে ভারতের নারী সমাজের কোনদিক ফুটে উঠেছিল?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসে দেশকে দেশমাতারূপে উপস্থাপন করেন। তিনি তাঁর অন্যান্য কয়েকটি উপন্যাসে নারী মহিমাকেও তুলে ধরেন। অন্যদিকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক অঙ্কিত ভারতমাতা ছবিতে ভারতমাতাকে দেবী ও মানবীরূপে চিহ্নিত করে নারী মহিমাকে তুলে ধরেন।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে নারী সমাজের অংশগ্রহণের ধরন কী ছিল?
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে নারীসমাজের অংশগ্রহণের ধরনগুলি হল –
ঘরের অভ্যন্তরে থেকেই নারীরা এই আন্দোলনে যোগ দেয়
বিদেশি বস্ত্র বর্জন ও পোড়ানো, দেশি কাপড়ের প্রচলন, অরন্ধন দিবস পালন প্রভৃতি কর্মসূচিতে নারীরা যোগ দেয়
বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গোপনে সংবাদ ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমেও নারীরা আন্দোলনে অংশ নেয়।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা কীরূপ ছিল?
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা হল —
নিজে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভারতী পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে নারী শক্তিকে উজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হন।
বীরাষ্টমী ব্রত, প্রতাপাদিত্য ব্রত, উদয়াদিত্য ব্রত প্রচলনের মাধ্যমে বাঙালি যুবকদের লাঠিখেলা, কুস্তি, তরবারি খেলা, শরীরচর্চায় উৎসাহ দান করেন।
সরোজিনী নাইডু বিখ্যাত কেন?
বিশ শতকে ভারতে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অগ্রণী নারী ছিলেন সরোজিনী নাইডু (1879-1949 খ্রি.)। জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি মুথুলক্ষ্মী রেড্ডির সঙ্গে ভারতীয় মহিলা সমিতি স্থাপন করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধি পরিচালিত জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং আইন অমান্য আন্দোলনে, ভারতছাড়ো আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় স্মরণীয় কেন?
জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট নেত্রী ছিলেন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় (1903-1988 খ্রি.)। তিনি ছিলেন নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনের প্রথম সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীকালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সভানেত্রী হন।
মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি কে?
মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি ছিলেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির একজন বিখ্যাত মহিলা চিকিৎসক। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা আইন সভার সদস্য। তিনি সরোজিনী নাইডুর সঙ্গে যৌথভাবে ভারতীয় মহিলা সমিতি স্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি ভারতীয় নারীর ভোটাধিকার প্রবর্তনের দাবি করেন ও দেবদাসী প্রথার বিলোপসাধনের জন্য বিল আনেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার নারীদের কর্মসূচি কি ছিল?
আইন অমান্য আন্দোলনকালে বাংলার নারীদের কর্মসূচির বিভিন্ন দিক হল –
মেদিনীপুরের ঘাটাল, কাঁথি, তমলুক প্রভৃতি স্থানের নারীরা সরকারি আইন অমান্য করে লবণ প্রস্তুত ও তা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে।
জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার পাশাপাশি নারীশিক্ষার প্রসার, গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ কর্মসূচির উপরেও নারীরা গুরুত্ব আরোপ করে।
কল্পনা দত্ত বিখ্যাত কেন?
কল্পনা দত্ত (1912-1995 খ্রি.) ছিলেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত বিপ্লবী নারী। বিপ্লবী নির্মল সেনের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে তিনি বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন এবং বিপ্লবী দলের গোপন কাগজপত্র ও অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব পান। তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তিনি বাংলার অগ্নিকন্যা নামে পরিচিত।
ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ রেজিমেন্ট কী?
সুভাষচন্দ্র বসু কর্তৃক গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনীর নাম ছিল ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ বিগ্রেড। 1943 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনীতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রায় 1500 নারী যোগ দেয়। যুদ্ধের কলাকৌশলে প্রশিক্ষিত এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন।
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের কর্মসূচি কী ছিল?
অসহযোগ আন্দোলনকালে ছাত্ররা –
স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে বয়কট কর্মসূচিকে সফল করতে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামে ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি দ্রব্য বয়কট করে।
ছাত্রদের অনেকে কংগ্রেস ও খিলাফৎ স্বেচ্ছাসেবকরূপে চাঁদা সংগ্রহ, গঠনমূলক কাজ ও চরকা ব্যবহারের কর্মসূচি প্রচার করে।
বিকল্প জাতীয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষায়তনগুলিতে ছাত্ররা যোগদানের কর্মসূচিও গ্রহণ করে।
আজাদ টেন কী?
ভারতছাড়ো আন্দোলনকালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ট্রেনের দখল নেয় এবং এর নাম দেয় আজাদ ট্রেন। এই ট্রেনে চড়ে তারা উত্তরপ্রদেশের শেরপুর অঞ্চলে পৌঁছায় এবং সেখানের কৃষক আন্দোলনের শক্তিবৃদ্ধি করে। তাই ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় আজাদ ট্রেন এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছিল।
মজফ্ফরপুর ঘটনা কী?
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধানতম উদাহরণ হল মজফ্ফরপুর ঘটনা। মজফ্ফরপুরের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী বোমা নিক্ষেপ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মিস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হন। এই ঘটনা মজফ্ফরপুর ঘটনা নামে পরিচিত।
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স কী?
1928 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনকালে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গঠিত এক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কিছু সদস্যকে নিয়ে বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ ঢাকায় একটি ভলান্টিয়ার্স দল গঠন করেন। এই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল বি. ভি. গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এই দলের দুঃসাহসিক কাজকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল। বিনয়-বাদল-দীনেশের অলিন্দ যুদ্ধ।
নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন কীভাবে গঠিত হয়?
1936 খ্রিস্টাব্দে লখনউতে সারা ভারত ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মহম্মদ আলি জিন্নাহ ও উদবোধন করেন জওহরলাল নেহরু। এই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন। এর উদ্দেশ্যগুলি হল –
বিভিন্ন প্রদেশ ও রাজ্যগুলির ছাত্রদের সমানাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কৃতি ও চি ব্লগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা
ছাত্রদেরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা সংগঠিত করে পূর্ণ জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা।
হরিচাঁদ ঠাকুর বিখ্যাত কেন?
পূর্ব বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের প্রধানতম সংগঠক ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি ব্রাক্ষ্মণ জমিদার ও পুরোহিত শ্রেণির অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং নমঃশূদ্রদের মধ্যে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হন। মানবতাবাদী হরিচাঁদ তাঁর শিষ্যদের মতুয়া নামে ডাকতেন।
আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” এর “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।
ধন্যবাদ সবাইকে।
মন্তব্য করুন