মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – বংশগতি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘বংশগতি‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – বংশগতি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
মেন্ডেলের পরীক্ষা, সূত্র এবং সূত্রের বিচ্যুতি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

বংশগতি ও প্রকরণ, বংশগতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দের ব্যাখ্যা

প্রকরণ কাকে বলে? মানবদেহে বংশানুক্রমিকভাবে সঞ্চারিত প্রকরণ, দুটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

প্রকরণ – যৌন জনন ও পরিব্যক্তির ফলে, কোনো জীবপ্রজাতিতে যে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে প্রকরণ বা ভেদ বা ভ্যারিয়েশন বলে।

মানুষের ক্ষেত্রে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য বা প্রকরণ দেখা যায়। তার উদাহরণ নিম্নরূপ—

মুক্ত ও সংযুক্ত কানের লতি

  • মানুষের কানের লতির নীচের ডাপ মুক্তমন্ডলে সংযুক্ত অথবা মুক্ত প্রকৃতির হয়।
  • দেখা গেছে যে, একজোড়া প্রকট জিন মুক্ত কানের লতি সৃষ্টি করে।
  • পক্ষান্তরে একজোড়া মিউটেশনযুক্ত জিন সংযুক্ত কানের লতি সৃষ্টি করে।
  • অর্থাৎ, প্রকরণ বা ভ্যারিয়েশনের কারণেই মানুষের কানের লতিতে এই বাহ্যিক বৈচিত্র্য দেখা যায়।

রোলার ও স্বাভাবিক জিভ

  • 65-81% মানুষ তার জিভকে পার্শ্বীয়ভাবে গোটাতে বা রোল করতে পারে।
  • পক্ষান্তরে বাকি ব্যক্তিরা জিভ গোটাতে অক্ষম হয়।
  • জিভ গোটানোটি (রোলার জিভ) একটি প্রকট বৈশিষ্ট্য, যা দুটি প্রকট জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • অপরপক্ষে জিভ গোটাতে অক্ষম হওয়া (স্বাভাবিক জিভ) হল প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য, যা নিয়ন্ত্রণ করে একজোড়া মিউটেশন-যুক্ত প্রচ্ছন্ন জিন।
  • অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও বৈচিত্র্যের কারণ হল প্রকরণ।

মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ, মেন্ডেলের সাফল্যের কারণ, মেন্ডেলের নির্বাচিত মটর গাছের বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য, মেন্ডেলের পরীক্ষা, সূত্র এবং সূত্রের বিচ্যুতি

মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করো।

মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ –

বংশগতি-সংক্রান্ত সংকরায়ণ পরীক্ষায় মেন্ডেল মটর গাছ (Pisum sativum) নিয়ে কাজ করেন। তিনি মটর গাছের সাত জোড়া চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বেছে নেন যেগুলি খালি চোখে স্পষ্টভাবে পার্থক্যযোগ্য। সংকরায়ণের সময়ে তিনি যেসব ধাপে প্রক্রিয়াটি ঘটান, সেগুলি হল –

  1. মেন্ডেল ইতর পরাগযোগের সময়ে বেগুনি ফুলযুক্ত একটি মটর গাছের সব বেগুনি ফুলের পুংকেশর (পরাগরেণু পরিণত হওয়ার আগেই) কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। ফলে সেই ফুলগুলিতে স্বপরাগযোগ সম্ভব হয় না।
  2. এরপর বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত, অর্থাৎ সাদা ফুলযুক্ত একটি মটর গাছের ফুল থেকে পরাগরেণু তুলির সাহায্যে তুলে এনে বেগুনি ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করেন।
  3. আবার, একইভাবে তিনি একটি মটর গাছের সব সাদা ফুলের পুংকেশর বাদ দেন ও বেগুনি ফুলের পরাগরেণু নিয়ে পুংকেশরহীন সাদা ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করেন। এইপ্রকার পারস্পরিক ইতর পরাগযোগকে রেসিপ্রোকাল ক্রস বলে।
  4. এই রেসিপ্রোকাল ক্রসের ফলে উৎপন্ন মটরগুলি চাষ করে তিনি F₁ জনুতে সব বেগুনি ফুলযুক্ত মটর গাছ পান।
  5. মেন্ডেল F₁ জনুতে প্রাপ্ত অপত্য সংকর উদ্ভিদগুলির মধ্যে স্বপরাগযোগ হতে দেন। এইভাবে, তিনি পরবর্তী জনুর অপত্য উদ্ভিদ লাভ করেন।
  6. উৎপন্ন সমস্ত মটর গাছের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তিনি লিপিবদ্ধ করেন ও সংখ্যাতত্ত্বের সম্ভাবনা সূত্র দ্বারা তাঁর পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করেন।
  7. একইভাবে তিনি ভিন্ন ভিন্ন বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে মটর গাছের ওপর সংকরায়ণ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
মেন্ডেল কর্তৃক মটরগাছে ইতর পরাগযোগ
মেন্ডেল কর্তৃক মটরগাছে ইতর পরাগযোগ

মেন্ডেলের মটর গাছ নির্বাচনের কারণগুলি লেখো।

অথবা, সংকরায়ণের পরীক্ষার জন্য মেন্ডেল কর্তৃক মটর গাছ নির্বাচনের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করো।

সংকরায়ণ পরীক্ষায় মেন্ডেল কর্তৃক মটর গাছ নির্বাচনের কারণ –

সংক্ষিপ্ত জীবনচক্র –

মটর গাছ একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। তাই স্বল্প সময়ে একাধিক জনু ধরে বংশগতির পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো সম্ভব।

চাষযোগ্যতা –

মটর গাছ স্বল্প জয়গাতেই কম খরচে চাষ করা যেতে পারে।

উভলিঙ্গ ও স্বপরাগী উদ্ভিদ –

মটর গাছের ফুলগুলি উভলিঙ্গ হওয়ায় এবং পাপড়ি দ্বারা স্ত্রী ও পুংস্তবক ঢাকা থাকায় প্রাকৃতিকভাবে এতে স্বপরাগযোগ ঘটে। তাই সহজেই বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ পাওয়া সম্ভব হয়।

ইতর পরাগযোগে সক্ষম –

মটর গাছের ফুলগুলি উভলিঙ্গ হওয়ায় এবং আকারে বড়ো হওয়ায় প্রয়োজনে সহজেই কৃত্রিমভাবে ইতর পরাগযোগ সম্পন্ন করা যায়।

সংকর উদ্ভিদের প্রকৃতি –

ইতর পরাগযোগে উৎপন্ন সংকর অপত্য উদ্ভিদগুলি প্রজননক্ষম হয়। সে কারণে সহজেই একাধিক জনু ধরে অপত্য সৃষ্টি এবং অপত্য জনুগুলিতে বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়।

একাধিক ভেদ বা প্রকরণ –

মটর গাছে অনেকগুলি সুস্পষ্ট বিপরীতধর্মী ভেদ বা প্রকরণের সমাবেশের কারণে বিভিন্ন প্রকারভেদ দেখা যায়।

উৎপাদনশীলতা –

গাছ প্রতি মটর বীজ উৎপাদন সংখ্যা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় পরীক্ষার ফল বিচারে ভুলের সম্ভাবনা কমে। মটর গাছ বংশ পরম্পরায় নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে খাঁটি অপত্য উদ্ভিদ উৎপাদন করতে পারে।

মেন্ডেলের বংশগতিসংক্রান্ত পরীক্ষায় সাফল্যলাভের কারণ লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, বংশগতির বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে তুলতে মেন্ডেলের মটর গাছ সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলি যুগান্তকারী -এই পরীক্ষাগুলিতে তাঁর সাফল্যলাভের তিনটি কারণ উল্লেখ করো।

সংকরায়ণ পরীক্ষায় মেন্ডেলের লাফল্য লাভের কারণ –

মটর গাছ নির্বাচন –

মেন্ডেল তাঁর বংশগতি পরীক্ষার জন্য মটর গাছ নির্বাচন করেন। মটর গাছ সহজে চাষ করা যায়। এটি স্বপ্রজননক্ষম ও অনেকগুলি বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় মেন্ডেলের সংকরায়ণ পরীক্ষা করতে সুবিধা হয়েছিল।

বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্বাচন –

মেন্ডেল তাঁর সংকরায়ণ পরীক্ষার জন্য যে সকল বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়েছিলেন, সেগুলি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। ফলে তিনি সৃষ্ট অপত্যগুলির সহজেই শনাক্তকরণ ও শ্রেণিভুক্তকরণ করতে পেরেছিলেন এবং সঠিক অনুপাত নির্ধারণ করতে পেরেছিলেন।

দক্ষতা –

মেন্ডেল সংকরায়ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মটর গাছের মধ্যে ইতরপরাগযোগ ঘটিয়ে ছিলেন।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ –

মেন্ডেল একসঙ্গে এক বা দু-জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সংকরায়ণ পরীক্ষা করেন। এর ফলে তথ্যসংগ্রহ ও বিশ্লেষণে সুবিধা হয়েছিল। এছাড়া ওই একজোড়া বা দু-জোড়া বৈশিষ্ট্য নিয়ে উদ্ভিদগুলির মধ্যে রেসিপ্রোকাল ক্রস সম্পন্ন করেন ও তাদের পর্যবেক্ষণ করেন।

গাণিতিক বিশ্লেষণ –

মেন্ডেল সমস্ত পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন এবং সংখ্যাতত্ত্বের সাহায্যে নির্ভুলভাবে তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য কী কী?

অংশ প্রশ্ন, মেন্ডেল মটর গাছের ফুলের যে যে চরিত্রগুলি নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন তাদের প্রত্যেকটির বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য –

মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছের যে সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করেছিলেন তা নীচে সারণির আকারে দেখানো হল।

মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য-
মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য-

মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষাটি চেকার বোর্ডের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো ও এই পরীক্ষা থেকে তুমি কী সিদ্ধান্ত নিতে পারো?

অথবা, মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষাটি চেকার বোর্ডের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো এবং এই পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল যে সূত্র প্রণয়ন করেন তা লেখো।

মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষা –

এক জোড়া বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত দুটি একই প্রজাতির জীবের মধ্যে সংকারায়ণ ঘটানো হলে তাকে একসংকর জনন বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে। মটর গাছের ওপর মেন্ডেলকৃত একসংকর জননের পরীক্ষাটি নীচে বর্ণনা করা হল।

মেন্ডেল নির্বাচিত মটরগাছের বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য –

বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছ (প্রকট) এবং বিশুদ্ধ খর্ব বা বেঁটে মটর গাছ (প্রচ্ছন্ন)।

পরীক্ষা পদ্ধতি –

  1. একটি বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছ ও একটি বিশুদ্ধ খর্ব মটরগাছের মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটানো হয়। এদের ‘জনিতৃ জনু’ বা ‘P জনু’ বলা হয়।
  2. নিষেকের পর যে বীজ তৈরি হয় তা থেকে শুধুমাত্র লম্বা ফিনোটাইপের মটর গাছ তৈরি হয়। নতুন এই উদ্ভিদগুলি সংকর (Tt) প্রকৃতির হয়। এই জনুকে F₁ জনু বা প্রথম অপত্য জনু বলে।
  3. F₁ জনুর লম্বা যে কোনো দুটি মটরগাছের মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটালে যে নতুন উদ্ভিদ তৈরি হয়, মেন্ডেল তাদের দ্বিতীয় অপত্য জনু বা ‘F₂ জনু’ বলে অভিহিত করেন।

পর্যবেক্ষণ –

দ্বিতীয় অপত্য জনুর 3 ভাগ উদ্ভিদ (75%) লম্বা এবং 1 ভাগ উদ্ভিদ বেঁটে (25%) প্রকৃতির হয়।

ব্যাখ্যা –

F₁ জনুর সবগুলি উদ্ভিদের ফিনোটাইপ লম্বা হলেও তাদের জিনোটাইপ সংকর প্রকৃতির হয় (Tt)। অর্থাৎ, দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফ্যাক্টর তাতে একত্রিত হয়। F₁ জনুতে গ্যামেট গঠনের সময় T ও t ফ্যাক্টর দুটি আলাদা হয়ে যায়। F₁ উদ্ভিদের স্বপরাগযোগ ফলে এক ভাগ বিশুদ্ধ লম্বা (TT), দুই ভাগ সংকর লম্বা (Tt) এবং এক ভাগ বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) মটর উদ্ভিদ তৈরি হয়। অর্থাৎ, F₂ জনুতে উৎপন্ন মটর গাছগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত (লম্বা : খর্ব/বেঁটে) = 3 : 1। F₂ জনুতে উৎপন্ন মটর গাছগুলির জিনোটাইপিক অনুপাত (TT : Tt : tt) = 1 : 2 : 1।

মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষা-
মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষা-
F₂ জনুর চেকার বোর্ড।
F₂ জনুর চেকার বোর্ড।
F₂ জনুতে প্রাপ্ত মটর গাছের বৈশিষ্ট্য
F₂ জনুতে প্রাপ্ত মটর গাছের বৈশিষ্ট্য

সিদ্ধান্ত –

একসংকর জননের পরীক্ষা দ্বারা মেন্ডেল প্রমাণ করেন যে, জনিতৃ মটর উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য F₁ জনুতে সঞ্চারিত হলেও তারা মিশে যায় না। F₁ জনুতে গ্যামেট তৈরির সময় তারা পৃথক হয়ে যায়। এরভিত্তিতে মেন্ডেল এক সংকর জনন পরীক্ষা থেকে পৃথকীভবন সূত্রটি প্রণয়ন করেন। এটি মেন্ডেলের প্রথম সূত্র নামেও পরিচিত। সূত্রটি নিম্নরূপ।

পৃথকীভবন সূত্র –

কোনো জীবের নির্দিষ্ট একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি জনিতৃ থেকে অপত্যে সঞ্চারিত হলেও তারা পরস্পর মিশে যায় না, বরং অপত্যের গ্যামেট তৈরির সময়ে তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়।

মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষায় প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য এবং ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ ব্যাখ্যা করো।

প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা –

মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) সমস্ত গাছ লম্বা (সংকর লম্বা – Tt) হয়। মেন্ডেল, মটর গাছে প্রকাশিত লম্বা বৈশিষ্ট্যের নাম দেন প্রকট বৈশিষ্ট্য। পক্ষান্তরে, মটর গাছে প্রথম অপত্য জনুতে অপ্রকাশিত বেঁটে বৈশিষ্ট্যের নাম দেন প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।

ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ ব্যাখ্যা –

মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষায় দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F₂) দু-ধরনের গাছ দেখতে পান। এদের ক্ষেত্রে লম্বা ও বেঁটে মটর গাছের অনুপাত = 3 : 1। আবার, এই লম্বা মটর গাছগুলির জিনোটাইপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এদের এক ভাগ বিশুদ্ধ লম্বা এবং দু-ভাগ সংকর লম্বা মটর গাছ। সেক্ষেত্রে ফিনোটাইপিক, অর্থাৎ মটর গাছের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্যের অনুপাত = 3 : 1 [অর্থাৎ 3 ভাগ লম্বা (TT ও Tt) এবং 1 ভাগ বেঁটে (tt)] এবং জিনোটাইপিক, অর্থাৎ জিনঘটিত বৈশিষ্ট্যের অনুপাত = 1 : 2 : 1 [অর্থাৎ, একভাগ বিশুদ্ধ লম্বা (TT), দু-ভাগ সংকর লম্বা (Tt) এবং একভাগ বিশুদ্ধ বেঁটে (tt)]।

বিশুদ্ধ বেগুনি ফুল (প্রকট) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল (প্রচ্ছন্ন) ধারণকারী দুটি মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে F₂ জনুতে বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদের অনুপাত কী হবে ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা –

ধরা যাক, বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলযুক্ত (প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন) গাছের জিনোটাইপ = VV এবং বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন) গাছের জিনোটাইপ = vv।

এদের মধ্যে ইতর পরাগযোগের মাধ্যমে সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) যে গাছ জন্মাবে তার সবকটিই বেগুনি ফুল উৎপাদন করবে। কারণ, বেগুনি ফুল প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এবার এই F₁ জনুতে উৎপন্ন গাছের মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটালে F₂ জনুতে ফিনোটাইপ হিসেবে তিন ভাগ বেগুনি ফুলযুক্ত গাছ এবং এক ভাগ সাদা ফুলযুক্ত গাছ জন্মাবে। উপরোক্ত তিন ভাগ বেগুনি ফুলগাছের ভিতর জিনোটাইপ হিসেবে এক ভাগ বিশুদ্ধ বেগুনি এবং দু-ভাগ সংকর বেগুনি ফুল ধারণকারী উদ্ভিদ জন্মাবে। সুতরাং, এই পরীক্ষায় দেখা যায়, F₂ জনুতে এক ভাগ (25%) বিশুদ্ধ বেগুনি দু-ভাগ (50%) সংকর বেগুনি এবং এক ভাগ (25%) বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদ জন্মাবে। ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে উক্ত পরীক্ষাটি নীচে দেখানো হল।

বিশুদ্ধ বেগুনি ফুল (প্রকট) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল (প্রচ্ছন্ন) ধারণকারী দুটি মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ
বিশুদ্ধ বেগুনি ফুল (প্রকট) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল (প্রচ্ছন্ন) ধারণকারী দুটি মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ
F2 জনুর চেকার বোর্ড
F2 জনুর চেকার বোর্ড
F₂ জনুতে প্রাপ্ত মটর গাছের বৈশিষ্ট্য।
F₂ জনুতে প্রাপ্ত মটর গাছের বৈশিষ্ট্য।

সুতরাং, বিশুদ্ধ বেগুনি, সংকর বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের অনুপাত = 1 : 2 : 1 (জিনোটাইপিক)। এবং বেগুনি ও সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের অনুপাত = 3 : 1 (ফিনোটাইপিক)। অর্থাৎ, বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদের অনুপাত = 1 : 1।

গিনিপিগের তিনজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। একটি প্রাণীর ক্ষেত্রে মেন্ডেলের একসংকর পরীক্ষা চেকার বোর্ডের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, একটি বিশুদ্ধ কালো (BB) ও একটি বিশুদ্ধ সাদা (bb) গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে F₂ জনুতে গিনিপিগগুলির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ অনুপাত চেকার বোর্ডের সাহায্যে লেখো।

গিনিপিগের তিনজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য হল –

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যপ্রকটপ্রচ্ছন্ন
গায়ের লোমের বর্ণকালো (B)বিশুদ্ধ সাদা (b)
লোমের দৈর্ঘ্যখর্ব (S)দীর্ঘ (s)
লোমের প্রকৃতিঅমসৃণ (R)মসৃণ (r)

প্রাণীর একসংকর জননের পরীক্ষা –

বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে একসংকর জননের পরীক্ষা করলে মেন্ডেলের সূত্রের সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে একসংকর জননের পরীক্ষার জন্যে গিনিপিগকে নমুনা প্রাণী রূপে গ্রহণ করা হল। জনিতৃরূপে বিশুদ্ধ কালো গিনিপিগ (BB) এবং বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগ (bb) নির্বাচন করা হল।

পরীক্ষা –

  1. একটি বিশুদ্ধ কালো লোমযুক্ত গিনিপিগের (BB) সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগের (bb) সংকরায়ণ ঘটানো হয়।
  2. প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) সব গিনিপিগ কালো বর্ণের হয়।
  3. F₁ জনুতে প্রাপ্ত দুটি কালো (পুরুষ ও স্ত্রী) গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হয়।

পর্যবেক্ষণ –

দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F₂) তিন ভাগ কালো এবং এক ভাগ সাদা গিনিপিগ তৈরি হল।

ব্যাখ্যা –

প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) সৃষ্ট গিনিপিগগুলির বর্ণ কালো হলেও তারা সংকর প্রকৃতির (Bb) কারণ জনিতৃ জনুর বিশুদ্ধ কালো অ্যালিল যুক্ত গ্যামেট (B) বিশুদ্ধ সাদা অ্যালিলযুক্ত (b) গ্যামেটের সঙ্গে মিলিত হয়।

F₁ জনুর সংকর কালো গিনিপিগের গ্যামেট তৈরির সময় অ্যালিল দুটি পৃথক হয়ে যায়। ফলে F₂ জনুতে তিনরকম জিনোটাইপ, BB (বিশুদ্ধ কালো) Bb (সংকর কালো) bb (বিশুদ্ধ সাদা) সৃষ্টি হয়।

এক্ষেত্রে ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে – কালো : সাদা = 3 : 1 এবং জিনোটাইপিক অনুপাত হবে – বিশুদ্ধ কালো (BB) : সংকর কালো (Bb) : বিশুদ্ধ সাদা (bb) = 1 : 2 : 1।

সিদ্ধান্ত –

একসংকর জননের পরীক্ষাটি থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল মেন্ডেলের মটর গাছের একসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফলের অনুরূপ। এক্ষেত্রে মেন্ডেল প্রদত্ত প্রথম সূত্রটি অনুসৃত হয়েছে।

ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে উল্লিখিত পরীক্ষাটি নীচে দেখানো হল।

প্রাণীর একসংকর জননের পরীক্ষা-
প্রাণীর একসংকর জননের পরীক্ষা-
গিনিপিগের F₂ জনুর চেকার বোর্ড
গিনিপিগের F₂ জনুর চেকার বোর্ড
F₂ জনুতে প্রাপ্ত গিনিপিগের বৈশিষ্ট্য
F₂ জনুতে প্রাপ্ত গিনিপিগের বৈশিষ্ট্য

[উল্লেখ্য যে গিনিপিগের গায়ের রং বা অন্য যে-কোনো বৈশিষ্ট্য অটোজোমে উপস্থিত। তাই, বিশুদ্ধ কালো পুরুষ গিনিপিগ ও বিশুদ্ধ সাদা স্ত্রী গিনিপিগ অথবা বিশুদ্ধ কালো স্ত্রী গিনিপিগ ও বিশুদ্ধ সাদা পুরুষ গিনিপিগ উভয়ের মধ্যেই ক্রস করা যেতে পারে।]

একটি সংকর কালো লোমযুক্ত গিনিপিগের সঙ্গে বিশুদ্ধ সাদা লোমযুক্ত গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য (F₁) জনুর গিনিপিগগুলির ফিনোটাইপ কী হবে ও কেন – যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো।

অথবা, একটি সংকর কালো গিনিপিগের সঙ্গে বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগের মিলন ঘটালে যে যে ধরনের অপত্য গিনিপিগ উৎপন্ন হতে পারে তা চেকার বোর্ডের সাহায্যে নিরুপণ করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, হেটেরোজাইগাস লম্বা মটর গাছের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ খর্ব মটর গাছের সংকরায়ণে উৎপন্ন অপত্যগুলির জিনোটাইপিক ও ফিনোটাইপিক অনুপাত নির্ণয় করো।

গিনিপিগের সংকরায়ণ পরীক্ষা –

একটি সংকর কালো লোমযুক্ত (Bb) গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা লোমযুক্ত (bb) গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনু (F₁) -তে সৃষ্ট গিনিপিগগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে – সংকর কালো লোম : বিশুদ্ধ সাদা লোম = 1 : 1। ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে পরীক্ষাটি (সংকরায়ণ) নীচে দেখানো হল।

গিনিপিগের সংকরায়ণ পরীক্ষা-
গিনিপিগের সংকরায়ণ পরীক্ষা-
F₁ জনুর চেকার বোর্ড
F₁ জনুর চেকার বোর্ড

ব্যাখ্যা –

  1. জনিতৃ (P) জনুর সংকর কালো লোমযুক্ত গিনিপিগের (2n) জিনোটাইপ হল Bb। অর্থাৎ, সংকর কালো গিনিপিগের থেকে দুই প্রকার গ্যামেট (n) সৃষ্টি হবে।
  2. এগুলি হল কালো অ্যালিলযুক্ত (B) এবং সাদা অ্যালিলযুক্ত (b) গ্যামেট।
  3. পক্ষান্তরে বিশুদ্ধ সাদা লোমযুক্ত P জনুর বিপরীত লিঙ্গের গিনিপিগটির (2n) জিনোটাইপ হল bb। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র একপ্রকার অ্যালিল থাকায় উৎপন্ন সকল গ্যামেটই (n) হবে। এটি হল সাদা অ্যালিলযুক্ত (b) গ্যামেট।
  4. চেকার বোর্ডে সংকর কালো গিনিপিগের B এবং b গ্যামেটের বিপরীতে সাদা লোমের গিনিপিগের (b) স্থাপিত করলে দেখা যায় (চেকার বোর্ড লক্ষণীয়) প্রথম অপত্য জনু বা F₁ জনুতে কালো অ্যালিলযুক্ত (B) গ্যামেট এবং সাদা অ্যালিলযুক্ত (b) গ্যামেটের মিলনে F₁ জনুতে 50% গিনিপিগ কালো ফিনোটাইপযুক্ত হবে (যদিও তা সংকর কালো বা Bb জিনোটাইপবিশিষ্ট)।
  5. P জনুর সংকর কালো গিনিপিগের সাদা অ্যালিলযুক্ত (b) গ্যামেটটি P জনুর সাদা গিনিপিগের থেকে উৎপন্ন b গ্যামেটের সঙ্গে মিলিত হলে F₁ জনুতে বাকি 50% গিনিপিগ সাদা ফিনোটাইপযুক্ত হবে। (এই সাদা গিনিপিগগুলি বিশুদ্ধ বা bb জিনোটাইপযুক্ত হবে)।

[সংকর লম্বা (Tt) ও বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) মটর গাছের সংকরায়ণেও অনুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে লম্বা বৈশিষ্ট্যটি প্রকট ও বেঁটে বৈশিষ্ট্যটি প্রচ্ছন্ন।]

মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত দুটি সিদ্ধান্ত বিবৃত করো। গিনিপিগে খর্ব লোম প্রকট গুণ (S) এবং লম্বা লোম প্রচ্ছন্ন গুণ (s)। দুটি হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের মধ্যে জনন হলে তাদের সন্তানসন্ততি কী রকম হবে?

অংশ প্রশ্ন, গিনিপিগের কালো লোম প্রকট ও সাদা লোম প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য। দুটি সংকর কালো লোমবিশিষ্ট গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ণের ফলাফল চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখাও।

একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত দুটি সিদ্ধান্ত –

মটর গাছের একসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে মেন্ডেল যে দুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন তা হল

  1. পৃথকীভবনের সিদ্ধান্ত।
  2. প্রকটতা ও প্রচ্ছন্নতার সিদ্ধান্ত।

পৃথকীভবনের (সূত্র) সিদ্ধান্ত –

কোনো জীবের একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য একটি জনু (জনিতৃ জনু) থেকে অপর একটি জনুতে (অপত্য জনু) সঞ্চারিত হওয়ার সময়ে একত্রিত হলেও বৈশিষ্ট্যগুলি কখনোই মিশ্রিত হয় না বরং গ্যামেট উৎপাদনের সময়ে বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়।

প্রকটতা ও প্রচ্ছন্নতার (সূত্র) সিদ্ধান্ত –

কোনো জীবে দুটি বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী জিন উপস্থিত থাকলে, যে জিনটি হেটেরোজাইগাস অবস্থায় অপর জিনের বৈশিষ্ট্যকে অবদমিত করে নিজের বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায়, তাকে প্রকট জিন এবং এর দ্বারা নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। আবার, হেটেরোজাইগাস অবস্থায় যে জিনটি নিজ বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটাতে পারে না, তাকে প্রচ্ছন্ন জিন এবং এর দ্বারা নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে। মটর গাছের উচ্চতার ক্ষেত্রে লম্বা বৈশিষ্ট্যটি হল প্রকট এবং খর্বতার বৈশিষ্ট্যটি হল প্রচ্ছন্ন।

হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের মধ্যে একসংকর জনন –

ধরা যাক, গিনিপিগের খর্ব লোম প্রকট বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ S এবং লম্বা লোম প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ s।

এখানে হেটেরোজাইগাস গিনিপিগ বলতে বোঝানো হয়েছে খর্ব লোম ও লম্বা লোমের জিনযুক্ত সংকর গিনিপিগ (Ss)। দুটি হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের (Ss) মধ্যে জনন সম্পন্ন হলে প্রথম অপত্য জনুতে (F₁ জনু) কী প্রকার ফলাফল হবে তা চেকার বোর্ডের মাধ্যমে দেখানো হল।

হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের মধ্যে একসংকর জনন-
হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের মধ্যে একসংকর জনন-
গিনিপিগের F₁ জনুর চেকার বোর্ড
গিনিপিগের F₁ জনুর চেকার বোর্ড

অর্থাৎ, হেটেরোজাইগাস গিনিপিগের সন্তানসন্ততিদের ক্ষেত্রে, ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে – খর্ব লোম : লম্বা লোম = 3 : 1 এবং জিনোটাইপিক অনুপাত হবে – বিশুদ্ধ খর্ব লোম : সংকর খর্ব লোম : বিশুদ্ধ লম্বা লোম = 1 : 2 : 1।

[দুটি সংকর কালো লোমযুক্ত (জিনোটাইপ – Bb) গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালেও অনুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে। এখানে কালো লোম (B) প্রকট ও সাদা লোম (b) প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।]

দ্বিসংকর জনন কাকে বলে? মেন্ডেলের দ্বিসংকর জনন পরীক্ষা চেকার বোর্ড সহ উপস্থাপন করো এবং সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা সংক্রান্ত সূত্রটি বিবৃত করো।

অথবা, মেন্ডেলের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষা এবং তা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দাও।

অনুরূপ প্রশ্ন, বিশুদ্ধ হলদে, গোল এবং বিশুদ্ধ সবুজ, কুঞ্চিত মটর বীজযুক্ত গাছের মধ্যে সংকরায়ণ করা হল। পানেট বর্গ দ্বারা F₂ জনুর অপত্য ব্যাখ্যা করো ও জিনোটাইপিক ও ফিনোটাইপিক অনুপাত নির্ণয় করো।

দ্বিসংকর জনন –

দুইজোড়া বিপরীত চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যযুক্ত একই প্রজাতির দুটি জীবের মধ্যে সংকারয়ণ বা ক্রস ঘটানোকে দ্বিসংকর জনন বলে।

মেন্ডেলের দ্বিসংকর জনন পরীক্ষা –

মেন্ডেলকৃত মটর গাছের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষাটি নিম্নরূপ।

মেন্ডেল নির্বাচিত মটরগাছের বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য –

বিশুদ্ধ হলদে-গোলাকার বীজ (YYRR) যুক্ত মটর গাছ (প্রকট), সবুজ কুঞ্চিত বীজ (yyrr) যুক্ত মটর গাছ (প্রচ্ছন্ন)।

পরীক্ষা পদ্ধতি –

  1. মেন্ডেল একটি বিশুদ্ধ হলদে-গোলাকার (বা মসৃণ) বীজযুক্ত মটর গাছের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সবুজ-কুঞ্চিত বীজযুক্ত মটরগাছের ইতর পরাগযোগ ঘটান।
  2. প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) সমস্ত মটর গাছগুলি হলদে-গোলাকার বীজ বিশিষ্ট (সংকর) (YyRr) হল।
  3. এরপর F₁ জনুতে পাওয়া মটর গাছের মধ্যে (উভয়েই হলদে-গোলাকার বীজযুক্ত) স্বপারগযোগ ঘটালেন।

পর্যবেক্ষণ –

দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F₂ জনু) মেন্ডেল চারপ্রকার ফিনোটাইপযুক্ত মটর গাছ পেলেন। এগুলি হল – হলদে-গোল, হলদে কুঞ্চিত, সবুজ-গোল ও সবুজ-কুঞ্চিত বীজযুক্ত মটর গাছ।

ব্যাখ্যা –

F₁ জনুর সমস্ত উদ্ভিদ হলদে-গোলাকার হলেও তা সংকর প্রকৃতির হয়। এগুলির জিনোটাইপ হয় YyRr। F₁ জনুতে চারপ্রকার গ্যামেট (YR, Yr, yR, yr) তৈরি হয় যা স্বাধীনভাবে সমন্বিত হয়ে জনুতে চারপ্রকার ফিনোটাইপ তৈরি করে। F₁ জনুতে উৎপন্ন মটর গাছের ফিনোটাইপিক অনুপাত হল – হলদে-গোল বীজ : হলদে-কুঞ্চিত বীজ : সবুজ-গোল বীজ : সবুজ-কুঞ্চিত বীজ = 9 : 3 : 3 :1।

F₂ জনুর জিনোটাইপিক অনুপাত = 1 : 2 : 2 : 4 : 1 : 2 : 1 : 2 : 1।

ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে দ্বিসংকর জনন পদ্ধতি এখানে দেখানো হল।

মেন্ডেল নির্বাচিত মটরগাছের বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-
মেন্ডেল নির্বাচিত মটরগাছের বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-
মটরগাছের F₂ জনুর চেকার বোর্ড।
মটরগাছের F₂ জনুর চেকার বোর্ড।
দ্বিসংকর জননের F₂ জনুতে প্রাপ্ত মটর গাছের বৈশিষ্ট্য
দ্বিসংকর জননের F₂ জনুতে প্রাপ্ত মটর গাছের বৈশিষ্ট্য

সিদ্ধান্ত –

উক্ত পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে মেন্ডেল সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে বিপরীত বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি F₁ জনুতে মিশে যায় না। বরং F₁ জনুতে গ্যামেট তৈরির সময় তারা পৃথক হয়ে যায় এবং F₂ জনুতে সবরকম স্বাধীন সমন্বয়ে তারা সঞ্চারিত হতে পারে। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রে এ বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূত্রটি নিম্নরূপ –

মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্র –

দুই বা তার বেশি বিপরীতধর্মী যুগ্ম বৈশিষ্ট্যের অ্যালিলগুলি জনিতৃ থেকে অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হলেও তারা মিশ্রিত হয় না বরং গ্যামেট গঠনকালে এরা পরস্পর থেকে পৃথক হয় এবং সম্ভাব্য সকল প্রকার সমন্বয়ে স্বাধীনভাবে জনন কোশে সঞ্চারিত হয়।

প্রাণীর ক্ষেত্রে দ্বিসংকর জননের পরীক্ষাটি বিবৃত করো। এই পরীক্ষা থেকে কোন্ সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে?

অনুরূপ প্রশ্ন, প্রাণীদের ক্ষেত্রে (গিনিপিগের) দ্বিসংকর জননের পরীক্ষা ও তা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বর্ণনা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, একটি বিশুদ্ধ কালো ও অমসৃণ লোমযুক্ত গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা ও মসৃণ লোমযুক্ত গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ণের ফলাফল F₂ জনু পর্যন্ত চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখাও। এই সংকরায়ণের থেকে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা বিবৃত করো।

প্রাণীর দ্বিসংকর জনন পরীক্ষা –

একসংকর জনন পরীক্ষার মতো দ্বিসংকর জনন পরীক্ষার ক্ষেত্রেও, প্রাণীর ওপরে তা করা হলে মেন্ডেলের সূত্রের সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে গিনিপিগের ওপর দ্বিসংকর জনন পরীক্ষাটি আলোচনা করা হল। এক্ষেত্রে বিবেচ্য চরিত্র দুটি হল গায়ের লোমের বর্ণ ও লোমের দৈর্ঘ্য।

গিনিপিগের সংকরায়ণে নির্বাচিত বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য –

কালো ও খর্ব লোমযুক্ত (BBSS) গিনিপিগ (প্রকট), সাদা ও দীর্ঘ লোমযুক্ত (bbss) গিনিপিগ (প্রচ্ছন্ন)।

পরীক্ষা পদ্ধতি –

  1. একটি বিশুদ্ধ কালো খর্ব লোমযুক্ত গিনিপিগের সঙ্গে একটি সাদা দীর্ঘ লোমযুক্ত গিনিপিগের (জনিতৃ জনু) সংকরায়ণ ঘটানো হল।
  2. প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) সমস্ত গিনিপিগ সংকর কালো খর্ব লোমবিশিষ্ট হল (BbSs)।
  3. এরপর F₁ জনুতে পাওয়া দুটি সংকর কালো খর্ব (BbSs) লোমের গিনিপিগের মধ্যে প্রজনন ঘটানো হল।

পর্যবেক্ষণ –

দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F₂) উৎপন্ন গিনিপিগের মধ্যে 7 ভাগ কালো খর্ব লোমযুক্ত, 3 ভাগ কালো দীর্ঘ লোমযুক্ত, 3 ভাগ সাদা-খর্ব লোমযুক্ত হল।

ব্যাখ্যা –

প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) সমস্ত গিনিপিগ কালো খর্ব হলেও তা সংকর প্রকৃতির হয়। এগুলির জিনোটাইপ হয় BbSs। এই গিনিপিগগুলিতে চারপ্রকার গ্যামেট তৈরি হয়। যথা – BS, Bs, bs, bS। এগুলির প্রত্যেকটি স্বাধীনভাবে অন্য গ্যামেটের সঙ্গে সমন্বিত হয়। ফলে F₂ জনুতে চারপ্রকার ফিনোটাইপ তৈরি হয়। F₂ জনুতে উৎপন্ন গিনিপিগগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত হল কালো-খর্ব লোম : কালো-দীর্ঘ লোম : সাদা-খর্ব লোম : সাদা-দীর্ঘ লোম = 9 : 3 : 3 : 1। F₂ জনুর জিনোটাইপিক অনুপাত – 1 : 2 : 2 : 4 : 1 : 2 : 1 : 2 : 1।

গিনিপিগের সংকরায়ণে নির্বাচিত বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-
গিনিপিগের সংকরায়ণে নির্বাচিত বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-
F₂ জনুর চেকার বোর্ড
F₂ জনুর চেকার বোর্ড
F₂ জনুতে প্রাপ্ত গিনিপিগের বৈশিষ্ট্য।
F₂ জনুতে প্রাপ্ত গিনিপিগের বৈশিষ্ট্য।

সিদ্ধান্ত –

ওপরের পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে মেন্ডেল যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন তা হল বিপরীত বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি F₁ জনুতে মিশে যায় না। বরং F₁ জনুতে গ্যামেট তৈরির সময় পৃথক হয়ে যায় এবং F₂ জনুতে সবরকম স্বাধীন সমন্বয়ে তারা সঞ্চারিত হতে পারে। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রে এ বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে।

[বিশুদ্ধ কালো (BB) ও অমসৃণ বা কর্কশ লোম (RR) যুক্ত গিনিপিগের সাথে বিশুদ্ধ কালো (bb) ও মসৃণ লোম (rr) যুক্ত গিনিপিগের সংকায়ণের পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল এই রকমের হয়।]

অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলতে কী বোঝ? উপযুক্ত উদাহরণ দাও।

অনুরূপ প্রশ্ন, মেন্ডেলের বংশগতি সংক্রান্ত বিচ্যুতি একটি ক্রসের সাহায্যে আলোচনা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, প্রমাণ করো যে অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে F₂ জনুতে ফিনোটাইপিক ও জিনোটাইপিক অনুপাত সমান হয়।

অসম্পূর্ণ প্রকটতা –

দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিশুদ্ধ জীবের মধ্যে যৌন জনন বা সংকরায়ণ ঘটানো হলে যদি প্রথম অপত্য জনুতে (F₁ জনুতে) দুটি বৈশিষ্ট্যের কোনোটিই প্রকাশিত না হয়ে কোনো অন্তর্বর্তী বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে, তাহলে তাকে অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলে।

উদাহরণসহ ব্যাখ্যা –

অসম্পূর্ণ প্রকটতার ঘটনা নীচে সন্ধ্যামালতী (Mirabilis jalapa) উদ্ভিদের সাপেক্ষে ব্যাখ্যা করা হল। সন্ধ্যামালতী নামক উদ্ভিদে লাল এবং সাদা এই দুইপ্রকার ফুল হয়। এই উদ্ভিদে ফুলের লাল রং, সাদা রং -এর ওপর অসম্পূর্ণভাবে প্রকট। বিশুদ্ধ লাল ফুলযুক্ত (RR) সন্ধ্যামালতী উদ্ভিদের সঙ্গে বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (rr) সন্ধ্যামালতী উদ্ভিদের সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনুতে (F₁ জনু) উৎপন্ন উদ্ভিদগুলি লাল বা সাদা ফুলযুক্ত না হয়ে সবই গোলাপি ফুলযুক্ত হয়। এই F₁ জনুর উদ্ভিদগুলির মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটানো হলে দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F₂ জনু) তিনপ্রকার ফিনোটাইপ (লাল, গোলাপি ও সাদা) ও তিনপ্রকার জিনোটাইপযুক্ত উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়।

F₂ জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত-লাল : গোলাপি : সাদা = 1 : 2 : 1 এবং জিনোটাইপিক অনুপাত-বিশুদ্ধ লাল (RR) : সংকর গোলাপি (Rr) : বিশুদ্ধ সাদা (rr) = 1 : 2 : 1।

অর্থাৎ, অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে F₂ জনুতে উৎপন্ন অপত্য উদ্ভিদগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত ও জিনোটাইপিক অনুপাত একই (1 : 2 : 1)।

অসম্পূর্ণ প্রকটতা-
অসম্পূর্ণ প্রকটতা-
সন্ধ্যামালতী ফুলের F₂ জনুর চেকার বোর্ড
সন্ধ্যামালতী ফুলের F₂ জনুর চেকার বোর্ড

F₂ জনুতে প্রাপ্ত ফুলের বৈশিষ্ট্য –

ফিনোটাইপজিনোটাইপজিনোটাইপিক অনুপাতফিনোটাইপিক অনুপাত
লাল ফুলRR11
গোলাপি ফুলRr22
সাদা ফুলrr11
সন্ধ্যামালতী ফুল - লাল, সাদা, গোলাপি
সন্ধ্যামালতী ফুল – লাল, সাদা, গোলাপি

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ কীভাবে হয় তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও।

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ –

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ দুটি স্তরে নিয়ন্ত্রিত হয়, যথা – প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ ও গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণ। প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ নির্ভর করে যৌন ক্রোমোজোমের প্রকৃতির ওপর। পক্ষান্তরে, যৌন হরমোনের দ্বারা গৌণ লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।

প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ –

মানুষের দেহকোশে 23 জোড়া হোমোলোগাস ক্রোমোজোম বা 46টি ক্রোমোজোম থাকে। এর মধ্যে 2টি ক্রোমোজোম লিঙ্গ নির্ধারণ করে বলে তাদের যৌন ক্রোমোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলা হয়। অন্যান্য ক্রোমোজোমগুলি বিভিন্ন দেহজ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে বলে তাদের অটোজোম বলে। স্ত্রীদেহে যৌন ক্রোমোজোম দুটি অঙ্গসংস্থানগতভাবে একই প্রকারের হয়, এদেরকে X ক্রোমোজোম বলা হয়। কিন্তু পুরুষদের যৌন ক্রোমোজোম দুটি ভিন্ন প্রকৃতির হয়। এদের একটিকে X ক্রোমোজোম, অপরটিকে Y ক্রোমোজোম বলা হয়। স্ত্রীদেহের ক্রোমোজোম বিন্যাস – 44A + XX এবং পুরুষদেহের ক্রোমোজোম বিন্যাস – 44A + XY। পুরুষের দেহে শুক্রাশয় থেকে উৎপন্ন শুক্রাণুগুলি দুই প্রকারের – 22A + Y (অ্যান্ড্রোস্পার্ম) এবং 22A + X (গাইনোস্পার্ম)। কিন্তু স্ত্রীদেহের ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন ডিম্বাণু একপ্রকারের – 22A + X। এই কারণে পুরুষকে হেটেরোগ্যামেটিক এবং স্ত্রীকে হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়। ডিম্বাণু যদি অ্যান্ড্রোস্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে সেই ভ্রুণ পুরুষরূপে (44A + XY) বিকাশ লাভ করে। অপরপক্ষে কোনো ডিম্বাণু যদি গাইনোস্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে সেই ভ্রুণ স্ত্রী-রূপে (44A + XX) বিকাশ লাভ করে।

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ-
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ-
চেকার বোর্ড

গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণ –

প্রাথমিকভাবে লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়ার পরে বিভিন্ন প্রকার পুরুষ ও স্ত্রী যৌন হরমোনের প্রভাবে যথাক্রমে পুরুষ ও স্ত্রী গৌণ যৌন লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।


আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘বংশগতি‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল? দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দলিল বলতে কী বোঝায়?

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল?

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য লেখো।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য লেখো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল?

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য লেখো।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি প্রসঙ্গে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কৃতিত্ব লেখো। সর্দার প্যাটেলকে ‘ভারতের লৌহমানব’ বলা হয় কেন?

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – বিষয়সংক্ষেপ