মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – অভিব্যক্তি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘অভিব্যক্তি‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – অভিব্যক্তি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাবলি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

অভিব্যক্তির ধারণা, জীবনের উৎপত্তি, অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাবলি

জৈব অভিব্যক্তি বলতে কী বোঝ?

অথবা, বিবর্তন কাকে বলে?

যে অতি মন্থর, অবিরাম ও গতিশীল পরিবর্তন প্রক্রিয়ার দ্বারা সরল জীব থেকে নতুন প্রকারের জটিলতর ও উন্নত জীবের উদ্ভব ঘটে তাকে বিবর্তন বা জৈব অভিব্যক্তি বলে।

কেমোজেনি বা রাসায়নিক বিবর্তনবাদ কাকে বলে?

প্রাচীন পৃথিবীর পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন সরল রাসায়নিক উপাদান (মৌল ও যৌগ) থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে জীবের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগ সৃষ্টির ধারাবাহিক ঘটনাকে কেমোজেনি বা জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি বলে। বিজ্ঞানী হ্যালডেন ও ওপারিন কেমোজেনির পর্যায়গুলি বর্ণনা করেন।

নগ্ন জিন কী?

জীবের রাসায়নিক উৎপত্তির পর্যায়ে সরল যৌগ থেকে জটিল যৌগের উৎপত্তির সময়ে মুক্ত নিউক্লিওটাইডগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে পলিনিউক্লিওটাইড বা নিউক্লিক অ্যাসিড সৃষ্টি করে। কোনো আবরণে আবৃত না থাকায় বিজ্ঞানীরা একে নগ্ন জিন বলে অভিহিত করেন।

RNA পৃথিবী প্রকল্প বা RNA ওয়ার্ল্ড হাইপোথেসিস কী?

মনে করা হয় প্রোটোসেল বা আদিকোশে প্রথম জেনেটিক উপাদান ছিল RNA। পরবর্তীকালে DNA মূল জেনেটিক উপাদানরূপে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ, RNA থেকে DNA -এর অবির্ভাব ঘটে। এই ধারণাকে বলে RNA পৃথিবী প্রকল্প বা RNA ওয়ার্ল্ড হাইপোথেসিস।

কোয়াসারভেট কী?

আদিম পৃথিবীতে সমুদ্রের উত্তপ্ত জলে শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রোটিন প্রভৃতি জটিল জৈব যৌগ যুক্ত হয়ে একটি কোলয়েড কণা গঠন করে। বিজ্ঞানী ওপারিন এই কণার নাম দেন কোয়াসারভেট। এগুলি পর্দাবেষ্টিত, গোলাকার ও বাইরের উপাদানের নির্বাচিত শোষণে সক্ষম। বিজ্ঞানী ওপারিনের মতে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়েছিল কোয়াসারভেট থেকে।

কোয়াসারভেট কী
কোয়াসারভেট কী

কোয়াসারভেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

  1. বৃহৎ জৈব যৌগ-সমন্বয় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে পৃথক হয়ে কোয়াসারভেট তৈরি করে।
  2. কোয়াসারভেট -এর বাইরে লিপিড অণু নির্মিত ‘পর্দা’ বিন্যস্ত থাকে।
  3. পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে উপাদানের নির্বাচিত শোষণে এরা সক্ষম হয়।

কোয়াসারভেটকে কোশের অগ্রদূত বলে – ব্যাখ্যা করো।

বিজ্ঞানী হ্যালডেন ও ওপারিনের মতে, কোয়াসারভেট নামক কোলয়ডীয় গঠন নানা জটিল জৈব যৌগ ও নিউক্লিক অ্যাসিড সমন্বিত হয় ও প্রোটোসেল তৈরি হয়। এ জন্য কোয়াসারভেটকে কোশের অগ্রদূত বলা হয়।

মাইক্রোস্ফিয়ার কী?

সিডনি ফক্সের মতে, প্রাচীন পৃথিবীতে সমুদ্রের মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে প্রথমে প্রোটিনয়েড সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীকালে প্রাণ সৃষ্টির প্রকৃত স্থান হিসেবে কাজ করে। এইগুলি একত্রিত হয়ে মাইক্রোস্ফিয়ার গঠন করে। এগুলি দ্বিস্তরীয় পর্দাবেষ্টিত, বিভাজনে সক্ষম এবং ATP ব্যবহারে সক্ষম। বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স -এর মতে প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল মাইক্রোস্ফিয়ার থেকে, কোয়াসারভেট থেকে নয়।

মাইক্রোস্ফিয়ার কী
মাইক্রোস্ফিয়ার কী

মাইক্রোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য লেখো।

  1. পলিপেপটাইডের উত্তপ্ত জলীয় দ্রবণ ঠান্ডা করা হলে মাইক্রোস্ফিয়ার উৎপন্ন হয়।
  2. মাইক্রোস্ফিয়ার কোয়াসারভেট -এর তুলনায় বেশি স্থায়ী গঠন।
  3. এগুলি দ্বিপর্দাবৃত।
  4. ঈস্ট কোশের মতো কোরক সৃষ্টি দ্বারা এগুলি বিভাজনে সক্ষম।
  5. ATP ব্যবহারে সক্ষম।
  6. বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

প্রোটিনয়েড কী?

উচ্চতাপ ও অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে প্রোটিন ভেঙে অথবা নিম্ন উষ্ণতায় শুষ্ক পরিবেশে অ্যামিনো অ্যাসিডের পলিমারাইজেশন দ্বারা উৎপন্ন প্রোটিনের মতো জৈব অণুকে প্রোটিনয়েড বলে। আদিকোশ গঠনে প্রোটিনয়েডের ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।

প্রোটোসেল -এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

কোয়াসারভেটগুলির মধ্যে নিউক্লিক অ্যাসিডের অনুপ্রবেশ ঘটলে তা প্রথম আদি কোশ বা প্রোটোসেলের আকার পায়। প্রোটোসেলের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  1. প্রোটোসেল দ্বিস্তরীয় পর্দাবৃত।
  2. এগুলি বৃদ্ধি ঘটাতে পারে ও বিভাজনের দ্বারা স্বপ্রতিলিপি গঠনে সক্ষম।

হট ডাইলিউট স্যুপ বা গরম তরল স্যুপ বলতে কী বোঝ?

আদি পৃথিবীতে জীবের রাসায়নিক উৎপত্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে সরল জৈব যৌগ থেকে বিভিন্ন বিক্রিয়ার দ্বারা জটিল জৈব যৌগ, যেমন – অ্যামিনো অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইড, ফ্যাট ইত্যাদি তৈরি হয়। এই যৌগগুলি সমুদ্রের জলে মিশে যে উত্তপ্ত তরল পদার্থ গঠন করে, তাকে ‘হট ডাইলিউট স্যুপ’ বা ‘গরম তরল স্যুপ’ বলা হয়। এই থেকে আদি কোশ সৃষ্টি হয় বলে একে প্রিবায়োটিক স্যুপও বলা হয়।

জীবনের উৎপত্তিতে প্রিবায়োটিক স্যুপের গুরুত্ব কী?

বিজ্ঞানী হ্যালডেন প্রথম প্রাচীন তপ্ত সমুদ্রকে ‘প্রিবায়োটিক স্যুপ’ বা ‘হট ডাইলিউট স্যুপ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি ও বিজ্ঞানী ওপারিনের মতে, প্রাচীন তপ্ত সমুদ্র ছিল বিশাল রান্নার পাত্র (huge cooking pot) -র মতো; সেখানে সূর্যালোক ও বিদ্যুৎপাতের প্রভাবে নানারকম জৈব যৌগ সৃষ্টি হয়েছিল। এই জৈব যৌগগুলি একত্রিত হয়ে কোয়াসারভেট গঠন করে, যা থেকে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়।

প্রোটোবায়োন্ট কাকে বলে?

জীবন সৃষ্টির প্রাক্কালে জৈব উপাদানপূর্ণ লিপিড দ্বিস্তর আবৃত যে গঠন থেকে প্রোক্যারিওটিক কোশের উদ্ভব হয়েছিল তাকে প্রোটোবায়োন্ট বলে। যেমন — মাইক্রোস্ফিয়ার।

পরিবেশে কীভাবে প্রথম মুক্ত অক্সিজেনের আবির্ভাব ঘটে?

রাসায়নিক স্বভোজী জীব পরবর্তীকালে ক্রমান্বয়ে সালোকসংশ্লেষকারী স্বভোজী জীবের উৎপত্তি ঘটায়। এই সালোকসংশ্লেষকারী স্বভোজীদের মাধ্যমেই বায়ুমণ্ডলে প্রথম মুক্ত অক্সিজেনের আবির্ভাব ঘটে।

মিলার ও উরের পরীক্ষায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থগুলির নাম ও উপজাত উপাদানের নাম লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি সংক্রান্ত মিলার ও উরের পরীক্ষায় ব্যবহৃত বিক্রিয়কগুলির এবং উৎপন্ন একটি জৈব যৌগের নাম লেখো।

মিলার ও উরের পরীক্ষায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ – মিথেন, আমোনিয়া ও হাইড্রোজেন (2 : 2 : 1 অনুপাত), জল (H2O)।

মিলার ও উরের পরীক্ষায় উৎপন্ন উপজাত পদার্থ – গ্লাইসিন, অ্যালানিন অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, আলফা অ্যামিনো বিউটাইরিক অ্যাসিড প্রভৃতি অ্যামিনো অ্যাসিড।

মিলার ও উরের পরীক্ষা থেকে আমরা কী সিদ্ধান্ত নিতে পারি?

মিলার ও উরের পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে –

  1. প্রাচীন পৃথিবীতে বিজারক পরিবেশে জটিল জৈব যৌগগুলির উৎপত্তি (অ্যামিনো অ্যাসিড) সম্ভবত সরলতর অজৈব যৌগ থেকে (NH3/CH4/H2/H2O) হয়ে থাকে।
  2. তাঁদের এই পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানী হ্যালডেন ও ওপারিনের জীবন উৎপত্তির তত্ত্বের ‘কেমোজেনি’ অংশকে সমর্থন করে।

কোয়াসারভেট ও মাইক্রোস্ফিয়ারের পার্থক্য লেখো।

কোয়াসারভেট ও মাইক্রোস্ফিয়ারের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়কোয়াসারভেটমাইক্রোস্ফিয়ার
স্বপ্রজনন ক্ষমতাসাধারণভাবে স্বপ্রজননক্ষমতা নেই।স্বপ্রজননক্ষমতা আছে।
ATP ব্যবহারATP শক্তি ব্যবহারে অক্ষম।ATP শক্তি ব্যবহারে সক্ষম।
স্থায়ীত্বতুলনামূলক কম স্থায়ী।তুলনামূলক বেশি স্থায়ী।

জৈব অভিব্যক্তির মতবাদ

ল্যামার্ক কী জন্য বিখ্যাত?

অভিব্যক্তির প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন ল্যামার্ক। জৈব অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র এবং অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ মতবাদের জন্য ল্যামার্ক বিখ্যাত।

বিজ্ঞানী ল্যামার্ক-
বিজ্ঞানী ল্যামার্ক-

নিও-ল্যামার্কিজম কাকে বলে?

ল্যামার্কের অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ মতবাদটির পরিবেশ-জীব আন্তঃক্রিয়ার আলোতে আধুনিক ব্যাখ্যাকে নয়া ল্যামার্কবাদ বা নিও-ল্যামার্কিজম বলে। বিজ্ঞানী ওয়াডিংটন, প্যাকার্ড, স্পেনসার প্রমুখ বিজ্ঞানীরা হলেন নয়া-ল্যামার্কবাদী।

ব্যবহার ও অব্যবহারের তত্ত্ব বলতে কী বোঝ?

অথবা, বিবর্তন সম্পর্কিত অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্রটি উল্লেখ করো।

ল্যামার্কের মতে, জীবদেহের কোনো অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ক্রমাগত ব্যবহৃত হতে থাকলে অঙ্গটি শক্তিশালী, সুগঠিত ও সবল হয়। পক্ষান্তরে, জীবদেহের কোনো অঙ্গ দীর্ঘদিন অব্যবহারের ফলে দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হয়ে অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন – ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে জিরাফের গ্রীবা ও অগ্রপদ লম্বা হয়েছে। অন্যদিকে, সাপের পূর্বপুরুষের ছোটো পা অব্যবহারের ফলে ক্ষয় পেয়ে অবলুপ্ত হয়েছে।

অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ বলতে কী বোঝ?

পরিবেশের প্রভাবে অভিযোজনগতভাবে জীব যেসব বৈশিষ্ট্য ক্রমাগত সজ্ঞান প্রচেষ্টা ও অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহারের দ্বারা অর্জন করে সেইসব বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয়। ল্যামার্কের এই মতবাদকে ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ বলা হয়।

ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিপাদ্যের প্রধান দুটি বিষয় বর্ণনা করো।

ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিপাদ্যের প্রধান দুটি বিষয় হল –

  1. ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র – জীবদেহের কোনো একটি অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ও ক্রমাগত ব্যবহৃত হতে থাকলে সেটি ক্রমশ সুগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অপরদিকে কোনো অঙ্গের ব্যবহার না হলে সেটি দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হতে থাকে এবং অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন – জিরাফের আদি পূর্বপুরুষদের গলা বেঁটে ছিল। ক্রমাগত উঁচু গাছের পাতা সংগ্রহের চেষ্টায় তা লম্বা হয়েছে। অপরদিকে মানুষের পূর্বপুরুষের দেহের সক্রিয় ল্যাজ ক্রমাগত অব্যবহারে নিষ্ক্রিয় কক্সিসে পরিণত হয়েছে।
  2. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ – জীব তার নিজের প্রচেষ্টায় জীবদ্দশায় কোনো অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার দ্বারা যে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তা পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। যেমন – বেঁটে গলাযুক্ত জিরাফের আদি পূর্বপুরুষরা উঁচু গাছের পাতা খাবার চেষ্টায় ক্রমশ লম্বা গলাযুক্ত হয়েছে এবং এই বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের ফলে বর্তমানের লম্বা গলাযুক্ত জিরাফ সৃষ্টি হয়েছে।

ল্যামার্কের – ব্যবহার অব্যবহার সূত্রকে কোন্ বিজ্ঞানী কীভাবে ভ্রান্ত প্রমাণ করেন?

অনুরূপ প্রশ্ন, ল্যামার্কের মতবাদের বিপক্ষে উদাহরণ দাও।

জার্মান বিজ্ঞানী অগস্ট ওয়াইসম্যান ইঁদুরের 5 জনুতে 68টি ইঁদুরের ল্যাজ কেটে দেখান যে তা সত্ত্বেও পরবর্তী জনুতে ল্যাজযুক্ত ইঁদুরের জন্ম হয়। অর্থাৎ ল্যামার্কের ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্র যে ভ্রান্ত, তা তিনি পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করেন।

জার্মপ্লাজমবাদ কী?

বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যানের মতে, জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি দেহকোশের মাধ্যমে পরবর্তী বংশে সংঞ্চারিত হয় না, বরং এই বৈশিষ্ট্যগুলি জননকোশের মাধ্যমে পুরুষানুক্রমে সঞ্চারিত হয়। এটিই জার্মপ্লাজমবাদ নামে পরিচিত।

চার্লস ডারউইন কী জন্য বিখ্যাত?

চার্লস ডারউইন 1859 খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিন্‌স্ অফ ন্যাচারাল সিলেকশন’ (On the Origin of Species by Means of Natural Selection) -এ বিবর্তন সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ মতবাদ আলোচনা করেন। এই মতবাদের জন্যই চার্লস ডারউইন বিখ্যাত।

জীবনসংগ্রাম বা অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম বলতে কী বোঝায়?

ডারউইন -এর মতে, জ্যামিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানের কারণে জীবেদের প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হয়। জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখার এই নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট লড়াইকে জীবনসংগ্রাম বলা হয়।

বিজ্ঞানী ডারউইনের মতে জীবনসংগ্রাম কয় প্রকার ও কী কী?

বিজ্ঞানী ডারউইন প্রজাতির জীবনসংগ্রামকে তিনভাগে ভাগ করেছেন –

  1. অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম (নিজ প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে প্রতিযোগিতা)।
  2. আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম (ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে প্রতিযোগিতা)।
  3. প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম।
বিজ্ঞানী ডারউইন-
বিজ্ঞানী ডারউইন-

অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কী?

একই প্রজাতির জীবেদের খাদ্য, বাসস্থান ও প্রজননের প্রকৃতি এক হওয়ায়, একই প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে উপযুক্ত আহার, বাসস্থান এবং প্রজননের জন্য যে সংগ্রাম চলে, তাকে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে। যেমন – খাদ্যের জন্য একাধিক কুকুরের মধ্যে লড়াই, মানুষের মধ্যে যুদ্ধ প্রভৃতি।

আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কী?

দুই বা ততোধিক প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে উপযুক্ত আহার ও বাসস্থানের জন্য অর্থাৎ নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য যে সংগ্রাম চলে তাকে আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে। যেমন – বিড়াল-ইঁদুর, সাপ-বেজি, মানুষ-পরজীবীর লড়াই।

বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথচ হরিণ প্রচুর আছে। এমন একটি জঙ্গলে অন্য অভয়ারণ্য থেকে এসে কয়েকটি বাঘ ছাড়া হল। – বেঁচে থাকতে গিয়ে ওই বাঘেদের যে যে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে তা ভেবে লেখো।

অভয়ারণ্য থেকে নিয়ে আসা বাঘেদের প্রধানত আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম ও পরিবেশগত সংগ্রাম -এ লিপ্ত হতে হবে।

  1. আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম – হরিণ শিকারে জন্য বাঘগুলিতে আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে।
  2. পরিবেশগত সংগ্রাম – প্রথমত, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে বাঘেদের অসুবিধা হবে। দ্বিতীয়ত, হরিণ বেশি থাকায় জঙ্গলে ঝোপ-ঝাড়ের পরিমাণ কম থাকবে ফলে বাঘেদের আত্মগোপনের জায়গার অভাব হবে।

অনুকূল ও প্রতিকূল প্রকরণ কাকে বলে?

ডারউইনের তত্ত্ব অনুসারে, জীবের যেসব বৈশিষ্ট্য তাকে জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে সাহায্য করে, তাদের অনুকূল প্রকরণ বলে। অপরপক্ষে, জীবের যেসব বৈশিষ্ট্য জীবকে কোনোভাবেই জীবনসংগ্রামে টিকে থাকায় সাহায্য করে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাদের প্রতিকূল প্রকরণ বলে।

ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদটি ব্যাখ্যা করো।

ডারউইনের মতে প্রতিটি জীবকে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। তাদের নির্দিষ্ট প্রকরণ বা ভ্যারিয়েশন থাকে। এদের মধ্যে অনুকূল প্রকরণগুলি জীবটিকে পরিবেশে অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, প্রকৃতি যেন সেই জীবগুলিকে নির্বাচিত করে। যেমন – লম্বা গলা-প্রকরণ যুক্ত জিরাফগুলি বেশি খাদ্য পেতে সক্ষম বলে তারা প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হয়। পক্ষান্তরে প্রতিকূল প্রকরণযুক্ত জীবগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে প্রকৃতিতে অনুকূল প্রকরণ জীবগুলি প্রতিষ্ঠা পায়, অর্থাৎ তাদের প্রাকৃতিক নির্বাচন হয় (ডারউইন)। উল্লেখ্য, বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার একে ‘যোগ্যতমের উদ্‌দ্বর্তন’ বলে ব্যাখ্যা করেন।

ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের ঘটনা ও সিদ্ধান্তগুলি একটি সারণি আকারে লেখো।

ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের ঘটনা ও সিদ্ধান্তগুলি নীচে সারণি আকারে দেখানো হল –

ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের ঘটনা ও সিদ্ধান্তগুলি একটি সারণি
ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের ঘটনা ও সিদ্ধান্তগুলি একটি সারণি

যোগ্যতমের উদবর্তন বলতে কী বোঝ?

বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার যোগ্যতমের উদবর্তন (Survival of the fittest) কথাটি প্রথম প্রবর্তন করেন। মূলত ডারউইন তত্ত্বের প্রাকৃতিক নির্বাচন এই ধারণাটি তিনি প্রণয়ন করেন। জীবন সংগ্রামে অনুকূল প্রকরণগুলি প্রজনন দ্বারা ক্রমশ ছড়িয়ে যায়। পক্ষান্তরে প্রতিকূল প্রকরণগুলি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়। অর্থাৎ যোগ্যতম জীব প্রকৃতিতে টিকে থাকে।

আধুনিক বিজ্ঞানীরা এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন না। কারণ জীবের নির্বাচনের জন্য উদবর্তন বা বেঁচে থাকা (survial) একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নয়। নির্বাচন নানাভাবে হয়ে থাকে।

যোগ্যতমের উদবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন কীভাবে ঘটে?

বিজ্ঞানী ডারউইন জীবের অভিব্যক্তির ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক নির্বাচন -এর ধারণা প্রনয়ণ করেন। জীবদেহে নানা বৈচিত্র্য বা প্রকরণ দেখা যায়। তাঁর মতে, অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামের সময় অনুকুল প্রকরণ যেসব জীবে দেখা যায়, তারাই কেবল পৃথিবীতে বেঁচে থাকে এবং নতুন জীব সৃষ্টিতে সাহায্য করে। প্রকৃতিই যেন তাদের নির্বাচন করে বা বেছে নেয় এবং তার ফলে তারা টিকে থাকে। এই নির্বাচনকে ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার যোগ্যতমের উদবর্তন অর্থাৎ যোগ্যতম জীবের আর্বিভাব তথা নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন।

নিও-ডারউইনিজম বা নয়া ডারউইনবাদ কাকে বলে?

পরিব্যক্তি তত্ত্ব ও মেন্ডেলীয় জেনেটিক্স দ্বারা ডারউইনের মতবাদটির আধুনিক ব্যাখ্যাকে বলা হয় নয়া ডারউইনবাদ বা নিও – ডারউইনিজম। মরগ্যান, দ্য ভিস, ডবজ্যানস্কি, হ্যালডেন প্রভৃতি বিজ্ঞানীরা এই মতবাদ প্রণয়ন করেন।

মিউটেশন কাকে বলে? মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা কে?

মিউটেশন –

ক্রোমোজোমে উপস্থিত কোনো জিনের গঠনের আকস্মিক ও স্থায়ী পরিবর্তনকে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি বলে।

প্রবক্তা –

মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন হুগো দ্য ভিস।

ডারউইনবাদ, ল্যামার্কবাদের থেকে কোন্ বিষয়ে অভিব্যক্তির উন্নত ব্যাখ্যা দেয়?

যে যে বিষয়ে ডারউইনবাদ, ল্যামার্কবাদের থেকে অভিব্যক্তির উন্নত ব্যাখ্যা দেয়, সেগুলি হল –

  1. ডারউইনের তত্ত্ব প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত নানা উদাহরণ দ্বারা সমষ্টিত হয়েছিল। ল্যামার্কের মতবাদ অনেকাংশেই তাত্ত্বিক, তাই ওয়াইসম্যান ও অন্যান্যদের পরীক্ষা দ্বারা ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ অংশ ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।
  2. ডারউইন প্রকরণ সৃষ্টি ও তার বংশানুসরণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর তত্ত্ব প্রকাশের সময়কালেই মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষা শুরু করেন। পরে তা আবিষ্কৃত হয় এবং আমরা জানতে পারি যে জিনই প্রকরণ সৃষ্টি ও পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয়। অর্থাৎ তাঁর তত্ত্বের ব্যাখ্যা না হওয়া অংশগুলি পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিক আলোকে বর্ণিত হয়।

পার্থক্য লেখো – ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদ।

ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদ -এর পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ল্যামার্কবাদডারউইনবাদ
মূল বক্তব্যঅর্জিত চরিত্রের বংশানুসরণ ঘটে, ফলে নতুন জীবের উৎপত্তি হয়।প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে নতুন জীবের উৎপত্তি ঘটে।
নতুন বৈশিষ্ট্যের উৎপত্তিপরিবেশ পরিবর্তনে নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়, ফলে নতুন বৈশিষ্ট্য আগত হয়।প্রকরণ সৃষ্টি দ্বারা নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা দেয়।
নতুন জীব সৃষ্টির কারণব্যবহার ও অব্যবহারের ফলে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে।অনুকূল প্রকরণের প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটে ও নতুন জীব সৃষ্টি হয়।
তত্ত্বের বর্তমান গ্রহণযোগ্যতাবর্তমানে তত্ত্বটি পরিত্যক্ত হয়েছে। কেবল অর্জিত চরিত্রের বংশানুসরণ অংশটি কিছু অংশে সত্য।অভিব্যক্তির আধুনিক ব্যাখ্যায় এর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

অভিব্যক্তির মতবাদের সপক্ষে প্রমাণ

বিবর্তনের অধ্যয়নে জীবাশ্মের দুটি তাৎপর্য লেখো।

অথবা, জীবাশ্ম কীভাবে বিবর্তনের সপক্ষে সাক্ষ্য দেয় তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

প্রাণীর ক্রমবিকাশের বেশ কিছু প্রমাণ জীবাশ্ম থেকে পাওয়া যায়। জীবাশ্ম থেকে প্রধানত যে সকল তথ্য জনা যায় সেগুলি হল –

  1. জীবাশ্ম পরীক্ষা করে পৃথিবীতে ওই জীবের বসবাসের সময়কাল, দৈহিক গঠন, অতীতের পরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।
  2. বর্তমান জীবের প্রাচীন প্রকৃতি কী ছিল সেই সম্বন্ধে জানা যায়। যেমন – হাতি বা ঘোড়ার জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় যে তাদের আদি পুরুষের প্রকৃতি কীরূপ ছিল এবং কীভাবে তার পরিবর্তন ঘটেছে।
  3. ভূ-পৃষ্ঠের গভীরে, প্রাপ্ত সরলতর জীবের জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় যে সুদূর অতীতে সরল জীব থেকেই ক্রমশ জটিল জীবের আবির্ভাব ঘটেছে।

ঘোড়ার বিবর্তনের শব্দচিত্রটি উপস্থাপন করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, ঘোড়ার বিবর্তনের ইতিহাসে চারটি প্রধান জীবাশ্ম পূর্বপুরুষের নাম সময়ের পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে লেখো।

ঘোড়ার বিবর্তনের শব্দচিত্রটি নিম্নরূপ।

ইওহিপ্পাস (ইওসিন) → মেসোহিপ্পাস (অলিগোসিন) → মেরিচিপ্পাস (মায়োসিন) → প্লিওহিপ্পাস (প্লিওসিন) → ইকুয়াস (আধুনিক)

ঘোড়ার বিবর্তনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো যা পরিবর্তিত হয়েছে।

ঘোড়ার বিবর্তনে যে সকল পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল –

  1. উচ্চতার ধারাবাহিক বৃদ্ধি।
  2. উভয় পদের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস (4টি থেকে 1টি) ও ক্ষুরের উৎপত্তি।
  3. পুরপেষক ও পেষক দাঁতের দন্তচূড় (crown) -এর আয়তন বৃদ্ধি।
  4. মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অংশের আকার বৃদ্ধি।

সমসংস্থ বা হোমোলোগাস অঙ্গ কী? উদাহরণ দাও।

সমসংস্থ অঙ্গ –

যে সমস্ত অঙ্গ উৎপত্তি বা অন্তর্গঠনগতভাবে এক হলেও বহিরাকৃতি ও কার্যগতভাবে পৃথক, তাদের সমসংস্থ বা হোমোলোগাস অঙ্গ বলে।

উদাহরণ –

পাখির ডানা ও মানুষের হাত। এই দুটি অঙ্গ উৎপত্তি ও গঠনগতদিক থেকে এক হলেও কার্যগত দিক থেকে ভিন্ন।

অন্তর্বর্তী জীব কাকে বলে?

জীবজগতে বিবর্তনের ধারা লক্ষ করলে দেখা যায় যে বেশ কিছু জীব কোনো একটি বিশেষ পর্ব বা শ্রেণির বৈশিষ্ট্য বহন না করে দুটি শ্রেণির বৈশিষ্ট্য সমভাবে বহন করে। এই ধরনের জীবগুলিকে ওই দুই পর্ব বা শ্রেণির মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী বা অন্তর্বর্তী জীব বলা হয়। যেমন – প্ল্যাটিপাস (সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী), পেরিপেটাস (অ্যানিলিডা ও আর্থ্রোপোডা) নামক প্রাণী এবং নিটাম (জিমনোস্পার্ম ও অ্যানজিওস্পার্ম), রাইনিয়া (ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা) নামক উদ্ভিদ হল সংযোগরক্ষাকারী বা অন্তর্বর্তী জীব।

সমবৃত্তীয় বা অ্যানালোগাস অঙ্গ কী? উদাহরণ দাও।

সমবৃত্তীয় অঙ্গ –

যে সমস্ত অঙ্গ উৎপত্তি বা অন্তর্গঠনগতভাবে ভিন্ন প্রকারের হলেও বহিরাকৃতি ও কার্যকারিতার দিক থেকে একই প্রকারের, তাদের সমবৃত্তীয় বা অ্যানালোগাস অঙ্গ বলে।

উদাহরণ –

বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম ও পতঙ্গের ডানা। এই দুটি প্রাণীর ডানার কাজ একই ধরনের হলেও এদের উৎপত্তি ও অন্তর্গঠন সম্পূর্ণ পৃথক।

বেল ও ক্যাকটাসের কাঁটা কীসের রূপান্তর?

বেলগাছের কাঁটা হল শাখার রূপান্তর এবং ক্যাকটাসের কাঁটা হল পাতার রূপান্তর। এই দুটি অঙ্গের উৎপত্তি ভিন্ন হলেও কার্যগত দিক থেকে এরা এক। তাই এদের পরস্পরের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলা যায়।

বেলের কাঁটা-
বেলের কাঁটা-

অভিসারী বিবর্তন বা অভিসারী অভিব্যক্তি কাকে বলে?

বিভিন্ন বাসস্থান থেকে জীবনসংগ্রামজনিত কারণে নানা জীব একটি সাধারণ বাসস্থানে কেন্দ্রীভূত হয়ে, ওই বাসস্থানে অভিযোজিত হলে তাকে অভিসারী বিবর্তন বা অভিসারী অভিব্যক্তি বলে। এক্ষেত্রে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার তাগিদে উৎপত্তি ও গঠনগতভাবে ভিন্ন জীবও একইপ্রকার কার্য সম্পাদন করে। যেমন – মটরগাছের আকর্ষ (রূপান্তরিত পত্রক) এবং কুমড়ো গাছের আকর্ষ (রূপান্তরিত শাখা) দুটি ভিন্ন অঙ্গের রূপান্তর হলেও একই পরিবেশে অভিযোজনের কারণে উভয়েই কোনো অবলম্বনকে জড়িয়ে ধরে গাছকে ওপরে উঠতে সাহায্য করে।

মটরের আকর্ষ, কুমড়োর আকর্ষ
মটরের আকর্ষ, কুমড়োর আকর্ষ

সমান্তরাল বিবর্তন বা সমান্তরাল অভিব্যক্তি কাকে বলে?

একই উদবংশীয় জীব থেকে উৎপন্ন দুটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত প্রাণীগোষ্ঠী একই পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার কারণে সদৃশ বৈশিষ্ট্য অর্জন করলে এই ধরনের অভিব্যক্তিজনিত অভিযোজনকে সমান্তরাল অভিযোজন এবং ওই প্রকার অভিব্যক্তিতে সমান্তরাল বিবর্তন বা সমান্তরাল অভিব্যক্তি বলে। উদাহরণ – অ্যান্টিলোপ ও হরিণদের দ্রুত দৌড়োনোর জন্য দ্বিখণ্ডিত ক্ষুরের উদ্ভব।

অপসারী বিবর্তন বা অপসারী অভিব্যক্তি কাকে বলে?

জীবনসংগ্রামজনিত কারণে একটি সাধারণ বাসস্থানের জীব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন বাসস্থনে অভিযোজিত হয়, তাকে অপসারী বিবর্তন বা অপসারী অভিব্যক্তি বলে। উদাহরণ – ঘোড়ার অগ্রপদ, মানুষের হাত, তিমির ফ্লিপার উৎপত্তি ও অন্তর্গঠনগত দিক থেকে এক হলেও বহিরাকৃতি ও কার্যগত দিক থেকে আলাদা।

সমসংস্থ বা হোমোলোগাস অঙ্গ অভিব্যক্তির প্রমাণরূপে কীভাবে কাজ করে?

হোমোলোগাস অঙ্গ থেকে বোঝা যায় যে জীবগুলির উৎপত্তি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশগত পার্থক্যর কারণে তাদের কাজও পরিবর্তিত হয়েছে। এই অভিযোজনগুলিই নানা নতুন জীবপ্রজাতি সৃষ্টি করেছে অর্থাৎ, অভিব্যক্তি ঘটেছে।

অ্যাডাপটিভ রেডিয়েশন বা অভিযোজনমূলক বিকিরণ কাকে বলে?

অভিব্যক্তির অন্তর্গত যে পদ্ধতিতে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ কতকগুলি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যায় ও তাদের পৃথক অভিযোজন ঘটে, তাকে অ্যাডাপটিভ রেডিয়েশন বা অভিযোজনমূলক বিকিরণ বলে। যেমন – ডারউইন বর্ণিত ফিঞ্চ পাখিগুলি নানা পরিবেশে ছড়িয়ে গিয়ে পৃথক পৃথক অভিযোজন ঘটে।

সমবৃত্তীয় অঙ্গ অভিসারী বিবর্তনের ফল – ব্যাখ্যা করো।

জীবনসংগ্রামের কারণে বিভিন্ন বাসস্থান থেকে নানা ধরনের জীব একটি স্থানে কেন্দ্রীভূত হয় এবং জীবগুলির মধ্যে সমপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একে অভিসারী বিবর্তন বলে। অর্থাৎ, একই পরিবেশে থাকার জন্য তাদের ভিন্ন দেহাংশ একই কাজের জন্য অভিযোজিত হয় বা নানা জীবে সমবৃত্তীয় অঙ্গের সৃষ্টি হয়।

সমসংস্থ অঙ্গ অপসারী বিবর্তনকে সমর্থন করে কেন?

জীবন সংগ্রামের কারণে একই উদবংশীয় জীব অনেক সময় নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। নানা স্থানে পরিবেশ ভিন্ন রকম হয় বলে তাদের অভিযোজনও ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়। তাই ওই জীবগুলির বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে উৎপত্তিগত ও অন্তর্গঠনগত মিল থাকলেও কাজ পরিবেশ অনুযায়ী বহির্গঠন ভিন্ন হয়। এই ধরনের অঙ্গগুলিই হল সমসংস্থ অঙ্গ। তাই সমসংস্থ অঙ্গ অপসারী বিবর্তনকে সমর্থন করে।

যে দুটি অন্তর্গঠনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তিমির ফ্লিপার ও পাখির ডানা -কে সমসংস্থ অঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয় তা উল্লেখ করো।

তিমির ফ্লিপার ও পাখির ডানা (এ ছাড়াও মানুষের অগ্রপদ, বাদুড়ের ডানা) উভয়ই মেরুদণ্ডী প্রাণীর অগ্রপদ, অর্থাৎ সমসংস্থ অঙ্গ। কারণ –

  1. মেরুদন্ডীয় অগ্রপদের প্রধান হাড়, হিউমেরাস, রেডিয়াস-আলনা, কারপাল, মেটাকারপাল, ফ্যালানজেস এতে বর্তমান।
  2. এদের অগ্রপদ পেক্টোরাল গার্ডল বা শ্রোণিচক্রের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে।
  3. এই অঙ্গটির পেশি, যেমন – বাইসেপস, ট্রাইসেপস প্রভৃতি উভয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
  4. অগ্রপদের স্নায়ু ও রক্তবাহগুলিও উভয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।

এগুলির গঠন ও উৎপত্তি এক হলেও বিভিন্ন পরিবেশে বসবাসের জন্য ছড়িয়ে পড়ায় (তিমি – জল, পাখি-বায়ু) তাদের কার্যগত পরিবর্তন (অর্থাৎ সাঁতার ও উড্ডয়ন) ঘটেছে। এই জন্য তারা সমসংস্থ অঙ্গ।

কোন্ বৈশিষ্ট্য দেখে উভচরের অগ্রপদ ও পাখির ডানাকে সমসংস্থ অঙ্গ বলে চেনা যায়?

উভচরের অগ্রপদ ও পাখির ডানা-উভয়ের গঠনে হিউমেরাস, রেডিও-আলনা, ফ্যালানজেস, কারপাল ও মেটাকারপাল হাড় এবং পেশি ও স্নায়ুবিন্যাসের সাদৃশ্য দেখা যায়, কিন্তু এদের বাহ্যিক গঠন ও কাজ আলাদা। তাই এদেরকে পরস্পরের সমসংস্থ অঙ্গ বলে।

ঘোড়ার অগ্রপদ ও মানুষের হাত সমসংস্থ অঙ্গ – ব্যাখ্যা করো।

ঘোড়ার অগ্রপদ ও মানুষের হাতে একইরকম হাড় হিউমেরাস, রেডিয়াস ও আলনা দেখা যায়। এ ছাড়া একইরকম গঠনকারী পেশি ও স্নায়ু থাকে, অর্থাৎ উভয়ের গঠন বা উৎপত্তি এক। তবে ঘোড়ার অগ্রপদ ছোটার কাজে আর মানুষের হাত ওজন তোলা বা সূক্ষ্ম কাজকর্মে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ তারা কাজের দিক দিয়ে ভিন্ন। এজন্য ঘোড়ার অগ্রপদ ও মানুষের হাত হল সমসংস্থ অঙ্গ।

লুপ্তপ্রায় অঙ্গ কী?

জীবদেহে যে সমস্ত অঙ্গ তাদের পূর্বপুরুষদের দেহে এবং সম্পর্কিত অন্য জীবের দেহে সক্রিয় থাকলেও সংশ্লিষ্ট জীবটির দেহে কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে সেইসব অঙ্গকে লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে। যেমন – মানুষের কক্সিস।

মানবদেহের মেরুদণ্ডে ও খাদ্যনালীতে অবস্থিত একটি করে নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম লেখো।

মানবদেহের মেরুদণ্ডে অবস্থিত একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হল কক্সিস ও খাদ্যনালীতে অবস্থিত একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হল ভার্মিফর্ম অ্যাপেনডিক্স।

অভিব্যক্তির প্রমাণরূপে নিষ্ক্রিয় অঙ্গের গুরুত্ব লেখো।

নিষ্ক্রিয় অঙ্গগুলি পূর্বে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহৃত হলেও পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে সেগুলির ক্রমশ কাজ হ্রাস পেয়েছে। অভিব্যক্তির ধারণা থেকে বলা যায় যে, লুপ্তপ্রায় অঙ্গগুলির উৎপত্তি ঘটেছে এমন একটি উদবংশীয় জীব থেকে যাদের দেহে উক্ত অঙ্গগুলি সক্রিয় ছিল। অর্থাৎ, নতুন জীব তৈরি হলেও এই অঙ্গগুলি উদবংশীয় জীব থেকে তাদের উৎপত্তি সূচিত করে।

উভচর ও স্তন্যপায়ী হৃৎপিণ্ডের গঠনগত পরিবর্তন বিবর্তনকে কীভাবে সমর্থন করে?

উভচর প্রাণীদের হৃৎপিন্ডে দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয় থাকায় বেশি অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ও কম অক্সিজেনযুক্ত রক্তের সামান্য মিশ্রণ ঘটে। কিন্তু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃৎপিন্ডে বেশি অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ও কম অক্সিজেনযুক্ত রক্ত কোনোভাবে মেশে না, কারণ এদের দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় থাকে। তবে উভয় গোষ্ঠীর প্রাণীদের হৃৎপিন্ডের মৌলিক গঠনগত সাদৃশ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে প্রাণীর গঠন সরল থেকে ধীরে ধীরে জটিল হয়েছে, যা বিবর্তনকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমর্থন করে।

বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীর হৃৎপিণ্ডের তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান থেকে অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত যে দুটি পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তা বিবৃত করো।

  1. অভিব্যক্তির পথে অঙ্গের (তথা জীবের) গঠনগত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জটিলতা বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায় যে মেরুদন্ডী প্রাণীগুলির আগমনের সঠিক ক্রম হল – মাছ → উভচর → সরীসৃপ → পাখি ও স্তন্যপায়ী।
  2. মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জানা যায়। এটি হল – জলজ জীবন → উভচর → পূর্ণ স্থলচর জীবন।

তুলনামূলক ভ্রুণতত্ত্বে হেকেল -এর অবদান ব্যাখ্যা করো।

জার্মান বিজ্ঞানী আর্নস্ট হেকেল ভ্রুণতত্ত্ব দ্বারা অভিব্যক্তি ব্যাখ্যার মাধ্যমে ডারউইনের অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত বক্তব্যকে আরও সম্প্রসারিত করেন। তিনি আটটি প্রাণীর 3টি ভ্রুণ পর্যায়ের (মোট 24টি) চিত্র প্রকাশ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে জীবজনি জাতিজনির পুনরাবৃত্তি করে। অর্থাৎ, কোনো প্রাণীর ভ্রুণপর্যায়গুলি প্রকৃতপক্ষে ওই প্রাণীটির অভিব্যক্তির ক্রমপর্যায়গুলিকে সূচিত করে। পরবর্তীকালে দেখা যায় যে, এই চিত্রগুলি অতিরঞ্জিত ছিল ও বর্তমানে তত্ত্বটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ভন বেয়ারের তুলনামূলক ভ্রুণতত্ত্বে অবদান কী?

1828 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ভন বেয়ার ভ্রুণতত্ত্বের নীতি প্রণয়ন করেন। এটি অনুযায়ী –

  1. কোনো ভ্রুণের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ পাওয়ার আগে যে শ্রেণি বা বিভাগের সাথে ভ্রুণটি সম্পর্কযুক্ত, সেই শ্রেণি বা বিভাগের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশ ঘটে। সকল সাধারণ বৈশিষ্ট্যের প্রকাশের পরই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশ শুরু হয়।
  2. বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন প্রজাতিতে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের আগমন ঘটে। ফলে পরিস্ফুরণের পর ভ্রুণগুলি পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে যায়।

চার্লস ডারউইনের তুলনামূলক ভ্রুণতত্ত্বে কী অবদান ছিল?

ভন বেয়ারের ভ্রুণতত্ত্বের নীতির ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ভ্রুণতত্ত্বকে অভিব্যক্তির ব্যাখ্যায় প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি বলেন যে বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রুণগত মিল তাদের একই পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি সূচিত করে। তিনি আরও বলেন যে, ভ্রুণে যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে প্রাণীটিকে পরিবেশে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে।

গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ বলতে কী বোঝ?

মুখছিদ্রের ঠিক পরে অবস্থিত খাদ্যনালীর অংশকে গলবিল বলে। কর্ডাটা পর্বের সমস্ত প্রাণীতে জীবনচক্রের কোনো না কোনো দশায় গলবিলে এই কয়েকটি খাঁজ গঠিত হয়। এই খাঁজগুলি থেকে পরবর্তীকালে মাছদের ক্ষেত্রে ফুলকা গঠিত হয়। অন্যান্য মেরুদন্ডীদের ক্ষেত্রে এর থেকে অন্যান্য গঠন তৈরি হয়। এই অংশকে গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ বলে।

বায়োজেনেটিক সূত্রটি লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, বায়োজেনেটিক সূত্রের প্রবক্তা কে? সূত্রটির মূল প্রতিপাদ্য লেখো।

ব্যক্তিজনি জীবজনির পুনরাবৃত্তি করে (Ontogeny Recapitulates Phylogeny) -এটিই বায়োজেনেটিক সূত্র। অর্থাৎ প্রতিটি জীবের ভ্রুণ পর্যায়গুলি (জীবগুলি) ওই জীবটির অভিব্যক্তি পর্যায়গুলির (জাতিগুলি) মতো হয়। বর্তমানে প্রমাণিত যে আর্নস্ট হেকেল প্রণীত সূত্রটি সঠিক নয় এবং তা প্রমাণের জন্য তিনি যে চিত্রগুলি উপস্থাপিত করেছিলেন তা অতিরঞ্জিত ছিল।

মাছ, মানুষ, ব্যাং -এর ভ্রুণের দুটি সাদৃশ্য লেখো।

অথবা, মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রুণগত সাদৃশ্যগুলি লেখো।

মাছ, মানুষ, ব্যাং -এর ভূণের দুটি সাদৃশ্য হল –

  1. গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ – সমস্ত প্রাণীগুলির ভ্রুণের প্রাথমিক পর্যায়ে গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ দেখা যায়। এটি অন্তঃস্থ যুগ্ম ফুলকাথলির সঙ্গে একত্রে গলবিলীয় ফুলকাযন্ত্র বা ফ্যারেনজিয়াল অ্যাপারেটাসরূপে বিন্যস্ত থাকে।
  2. ল্যাজসদৃশ গঠন ও মায়োটম পেশি – সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীগুলির ভ্রুণদশায় ল্যাজসদৃশ গঠন ও তাতে মায়োটম পেশি বিন্যস্ত থাকে।

জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্ম – পার্থক্য লেখো।

জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্মের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়জীবাশ্মজীবন্ত জীবাশ্ম
বর্তমান অবস্থা।প্রস্তরীভূত।সজীব।
জীবজগতে অবস্থান।অবলুপ্ত।প্রাচীন বৈশিষ্ট্যসমূহ অপরিবর্তিতভাবে ধারণ করে আজও জীবিত।
প্রাপ্তিস্থান।সাধারণত পাললিক শিলাস্তরে পাওয়া যায়।জীবগুলির স্বাভাবিক বিস্তারস্থানে পাওয়া যায়।
উদাহরণ।আর্কিওপটেরিক্স।প্রাণী – লিমিউলাস। উদ্ভিদ – গিংঙ্গো বাইলোবা।

ইওহিপ্পাস ও ইকুয়াস -এর পার্থক্য লেখো।

ইওহিপ্পাস ও ইকুয়াস -এর পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ইওহিপ্পাসইকুয়াস
সময়কাল।ইওসিন যুগের ঘোড়ার পূর্বপুরুষ।প্লিস্টোসিন থেকে বর্তমানে বিন্যস্ত আধুনিক ঘোড়া।
আকার ও উচ্চতা।আকার ছোটো (শিয়ালের মতো) ও উচ্চতা 28 cm।আকারে অনেক বড়ো, বর্তমান ঘোড়ার উচ্চতা 150 cm।
ক্ষুর।ক্ষুর ছিল না।ক্ষুর আছে।
বিস্তার।উত্তর আমেরিকা।সারা পৃথিবী।

সমসংস্থ অঙ্গ ও সমবৃত্তীয় অঙ্গ – পার্থক্য লেখো।

সমসংস্থ অঙ্গ ও সমবৃত্তীয় অঙ্গের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়সমসংস্থ অঙ্গসমবৃত্তীয় অঙ্গ
গঠন।অঙ্গগুলির অভ্যন্তরীণ গঠনগত মিল থাকে।অভ্যন্তরীণ গঠন ভিন্ন হয়।
উৎপত্তি।অঙ্গগুলির উৎপত্তিগত মিল থাকে।অঙ্গের উৎপত্তি ভিন্ন হয়।
কার্যকারিতা।পরিবেশের উপযোগিতার ওপর ভিত্তি করে অঙ্গগুলির কার্যকারিতা বিভিন্ন।একই পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার কারণে অঙ্গগুলির কার্যকারিতা একই প্রকারের হয়।
বিবর্তনের প্রকৃতি।অপসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে। উদাহরণ – বাদুড়ের ডানা, তিমির ফ্লিপার, মানুষের অগ্রপদ।অভিসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে। উদাহরণ – পতঙ্গ ও পাখির ডানা।

উভচরের হৃৎপিণ্ড ও স্তন্যপায়ীর হৃৎপিণ্ড – পার্থক্য লেখো।

উভচরের হৃৎপিণ্ড ও স্তন্যপায়ীর হৃৎপিন্ডের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়উভচরের হৃৎপিণ্ডস্তন্যপায়ীর হৃৎপিণ্ড
গঠন।উভচর প্রাণীর হৃৎপিন্ড তিন প্রকোষ্ঠযুক্ত-দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয়।স্তন্যপায়ী বা পাখির হৃৎপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ-দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয়।
O₂ যুক্ত ও CO₂ যুক্ত রক্তের মিশ্রণ।নিলয়ে O₂ যুক্ত CO₂ যুক্ত রক্ত মিশ্রিত হয়।O₂ যুক্ত ও CO₂ যুক্ত রক্ত কখনোই মিশ্রিত হয় না।
আনুষঙ্গিক প্রকোষ্ঠ।সাইনাস ভেনোসাস (অলিন্দের আগে) এবং কোনাস আর্টারিওসাস (নিলয়ের পরে) নামক আনুষঙ্গিক প্রকোষ্ঠ রয়েছে।আনুষঙ্গিক প্রকোষ্ঠ থাকে না।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘অভিব্যক্তি‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নাইট্রোজেন চক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – নাইট্রোজেন চক্র – বিষয়সংক্ষেপ

আচরণ এবং অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

আচরণ এবং অভিযোজন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – নাইট্রোজেন চক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – আচরণ এবং অভিযোজন – বিষয়সংক্ষেপ